ইসলামের সকল মাযহাবের অভিন্ন ‘আক্বীদাহ্ অনুযায়ী (যা সর্বসম্মত হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত) শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মানবজাতির মধ্যকার চারজন শ্রেষ্ঠতমা মহিলার অন্যতম হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) -এর প্রথমা স্ত্রী উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজা (আ.)। তিনি খাদীজাতুল কুবরাহ (মহীয়সী খাদীজা) নামে সমধিক সুপরিচিতা।
ইসলামের বিকাশ-বিস্তারের জন্য যাদের অবদান সবচেয়ে বেশী হযরত খাদীজা (আ.) তাঁদের অন্যতম। কারণ, তিনি ছিলেন হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) -এর ওপর ঈমান আনয়নকারী প্রথম ব্যক্তি। শুধু তা-ই নয়, তিনি তাঁর প্রভূত ধন-সম্পদের সবই ইসলামের খেদমতে ব্যয় করার জন্য হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) -এর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। বস্তুতঃ ইসলামের সেই প্রাথমিক যুগে ইসলাম প্রচারের জন্যে হযরত খাদীজা (আ.)-এর সম্পদের সহায়তা না হলে ইসলামের যাত্রাপথ নিঃসন্দেহে অত্যন্ত কঠিন হতো।
হস্তীবাহিনী সহ আবরাহা কর্তৃক মক্কা আক্রমণের ১৫ বছর আগে ৫৫৫ খৃস্টাব্দে এ পবিত্র নগরীতে হযরত খাদীজা (আ.)-এর জন্ম। তাঁর পিতার নাম ছিলো খুওয়াইলিদ বিন আসাদ ও মাতার নাম ছিলো ফাতেমাহ্ বিনতে যায়েদাহ্ বিন আছেম।
হযরত খাদীজা (আ.) তৎকালে একজন মহীয়সী ও সচ্চরিত্রা ধনী মহিলা হিসেবে মক্কা নগরীতে সুপরিচিতা ছিলেন। তাঁকে বলা হতো খাদীজাতুত্ ত্বাহিরাহ্ (পবিত্রা/ সচ্চরিত্রা/ পূণ্যবতী খাদীজা)। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) -এর বয়স যখন ২৫ বছর ও হযরত খাদীজা (আ.)-এর বয়স ৪০ বছর তখন তাঁদের মধ্যে বিবাহ হয়।
হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) -এর পূর্বে হযরত খাদীজা (আ.)-এর আরো দুই বার বিবাহ হয়েছিলো। তাঁর প্রথম বার বিবাহ হয় বানূ উসাইয়্যাদ গোত্রের আবু হালাহ তামীমীর সাথে। আবু হালাহর ঘরে তাঁর একটি পুত্রসন্তান হয় যার নাম ছিল হিন্দ্ বিন আবি হালাহ। পরবর্তী কালে হিন্দ্ বিন আবি হালাহ (আ.) হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) -এর ছাহাবীগণের অন্তর্ভুক্ত হন। তিনি হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) -এর সাথে উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি হযরত আলী (আ.)-এর সাথে জঙ্গে জামালে (উটের যুদ্ধে) অংশগ্রহণ করেন ও শাহাদাত বরণ করেন।
হযরত খাদীজা (আ.) তাঁর স্বামী আবু হালাহর মৃত্যুর পরে মাখযূমী গোত্রের উতাইয়্যাক্ব বিন ‘আয়েদ বিন আবদুল্লাহর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এ স্বামীর ঘরে তাঁর একটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে যার নাম ছিল ‘হিন্দ্ বিনতে উতাইয়্যাক্ব’।
হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) -এর সাথে বিবাহ
উতাইয়্যাক্বের মৃত্যুর পরে হযরত খাদীজা (আ.) কিছুদিন একাকী জীবন যাপন করেন। তিনি ছিলেন একজন ধনবতী মহিলা। তিনি ব্যবসায়িক কাজে পুঁজি বিনিয়োগ করেন এবং অন্য লোকদের মাধ্যমে ব্যবসায় পরিচালনা করতেন, বিশেষ করে শামে (বৃহত্তর সিরিয়ায়) পণ্য পাঠাতেন। কিন্তু অনেক লোকই সততার পরিচয় দিতো না। এমতাবস্থায় তিনি হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) -এর (তখনো তিনি নবুওয়াতের দায়িত্বে অভিষিক্ত হন নি) সততা ও উত্তম চরিত্র সম্বন্ধে জানতে পেরে তাঁকে স্বীয় ব্যবসায়ের কাজে নিয়োগ করেন।
হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) হযরত খাদীজাহর (আ.) পণ্য নিয়ে শামে গমন করেন এবং প্রত্যাবর্তনের পরে যে হিসাব-নিকাশ দেন তাতে হযরত খাদীজা (আ.) তাঁর ধারণার চেয়েও অনেক বেশী লাভবান হন। এতে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) -এর আমানতদারীর যে প্রতিফলন ঘটে হযরত খাদীজা (আ.) তাতে অভিভূত হন এবং পয়গাম-বাহকের মাধ্যমে তাঁর নিকট বিবাহের প্রস্তাব পাঠান। জবাবে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) এ ব্যাপারে তাঁর অভিভাবক চাচা আবু তালিবের সাথে যোগাযোগ করতে বললে হযরত খাদীজা (আ.) পয়গাম-বাহককে আবু তালিবের নিকট পাঠান।
আবু তালিব হযরত খাদীজা (আ.) সম্বন্ধে পূর্ব থেকেই জানতেন এবং এ কারণেই তাঁর পূতচরিত্র ভ্রাতুষ্পুত্রের জন্য পূণ্যবতী খাদীজাহর (আ.) বিবাহের প্রস্তাব এক বাক্যে মেনে নেন। অতঃপর যথাবিহিত উভয়ের মধ্যে বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়।
হযরত রাসূলে আকরামের (সা.) সাথে বিবাহের পর হযরত খাদীজা (আ.) আরো ২৫ বছর বেঁচে ছিলেন। নবীজীর (সা.) ঔরসে তাঁর ছয় জন সন্তান জন্মগ্রহণ করেন : দু’জন পুত্রসন্তান ও চার জন কন্যাসন্তান। তাঁদের দুই পুত্রসন্তানের নাম ছিলো হযরত আল-ক্বাসেম (আ.) ও হযরত আবদুল্লাহ (আ.), তাঁরা যথাক্রমে হযরত ত্বাহের (আ.) ও হযরত ত্বাইয়্যেব (আ.) নামেও পরিচিত। তাঁদের উভয়ই শৈশবে ইন্তেকাল করেন।
হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) -এর ঔরসে হযরত খাদীজা (আ.)-এর গর্ভে জন্মগ্রহণকারী চারজন কন্যাসন্তান ছিলেন : হযরত যায়নাব (আ.), হযরত রুকাইয়াহ্ (আ.), হযরত উম্মে কুলসূম (আ.) ও হযরত ফাতেমাহ্ (আ.)। এঁদের মধ্যে প্রথম তিনজন যথাসময়ে বিবাহিত হলেও নিঃসন্তান অবস্থায় ইন্তেকাল করেন এবং হযরত ফাতেমাহ্ (আ.)-এর মাধ্যমে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) -এর বংশধারা অব্যাহত রয়েছে।
হযরত খাদীজা (আ.) তাঁর ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত ২৫ বছর হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) -এর সাথে দাম্পত্য জীবন যাপন করেন। দু’জনের মধ্যে পনর বছর বয়সের ব্যবধান সত্ত্বেও তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও সুসম্পর্ক ছিলো প্রশ্নাতীত।
হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) হযরত খাদীজা (আ.)-কে এতোই ভালবাসতেন যে, হযরত খাদীজা (আ.)-এর জীবদ্দশায় তিনি আর কোনো বিবাহ করেন নি যদিও তাঁদের দাম্পত্য জীবনের শেষ দিকে হযরত খাদীজা (আ.) ছিলেন বৃদ্ধা; ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স হয়েছিলো ৬৫ বছর এবং হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সা.) -এর বয়স ছিলো তখন ৫০ বছর।
ওয়াহী নাযিলের সূচনায় রাসূলুল্লাহ্ (সা.) -এর পাশে
হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) যখন হেরা গুহায় নবুওয়াতের দায়িত্বে অভিষিক্ত হবার পর এ নতুন অভিজ্ঞতা ও দায়িত্বভারের চাপে মানসিকভাবে অস্থির হয়ে পড়েন তখন হযরত খাদীজা (আ.) তাঁকে শক্তি ও সাহস যোগান।
হেরা গুহায় হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) -এর নিকট হযরত জিবরাঈল (আ.) সশরীরে আবির্ভূত হয়ে তাঁর নিকট আল্লাহ্ তা‘আলার ওয়াহী (সূরাহ্ আল-‘আলাক্বের প্রথম পাঁচ আয়াত) নাযিল করে চলে যাবার পর রাসূলুল্লাহ্ (সা.) সেখান থেকে ঘরে ফিরে আসেন। তিনি হযরত খাদীজা (আ.)-এর নিকট সব বিষয় খুলে বলেন।
হযরত খাদীজা (আ.) তাঁর স্বামীর উত্তম চরিত্র-বৈশিষ্ট্যের সাথে পুরোপুরি পরিচিত ছিলেন এবং তাঁর সত্যবাদিতার ওপর গভীর আস্থা পোষণ করতেন। তাই তিনি হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) কে উৎসাহ দিলেন ও তাঁর সাফল্য সম্পর্কে দৃঢ় আশাবাদ প্রকাশ করলেন এবং তাঁর নবুওয়াতের ওপর ঈমান এনে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিলেন। আর তিনিই হলেন হযরত মুহাম্মাদ (সা.) -এর নবুওয়াতের ওপর ঈমান আনয়নকারী প্রথম ব্যক্তি।
বস্তুতঃ এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ও লক্ষ্য করার বিষয় যে, গোটা মানবজাতির মধ্যে ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি হচ্ছেন হযরত খাদীজা (আ.)। তিনিই হলেন প্রথম মুসলমান। তখন তাঁর বয়স ছিলো ৫৫ বছর।
হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) -এর নিকট প্রথম বার ওয়াহী নাযিল হবার পর কয়েক দিন, মতান্তরে কয়েক মাস, ওয়াহী নাযিল বন্ধ থাকে। এতে তিনি খুবই মনমরা হয়ে যান। এ সময় হযরত খাদীজা (আ.) বিভিন্নভাবে তাঁকে সান্ত্বনা দেন।
এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সা.) হঠাৎ করে একদিন আবার জিবরাঈল (আ.)কে দেখতে পেলেন। এ সময় জিবরাঈল (আ.) একটি ভাসমান আসনে বসে আকাশে উড়ছিলেন।
এতে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) হতচকিত হলেন ও ছুটে ঘরে চলে গেলেন। তিনি তাঁকে ঢেকে দেয়ার জন্যে হযরত খাদীজাহ্কে (আ.) অনুরোধ জানালেন। হযরত খাদীজা (আ.) তাঁকে একটি চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন এবং তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। কয়েক মিনিট পরই হযরত খাদীজা (আ.) দেখলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) কেঁপে কেঁপে উঠছেন, বড় করে শ্বাস নিচ্ছেন এবং ঘামছেন। এ সময় জিবরাঈল (আ.) তাঁর নিকট দ্বিতীয় ওয়াহী নিয়ে এলেন। এতে বলা হয় : “হে চাদরাবৃত ব্যক্তি! উঠুন এবং (লোকদেরকে) সতর্ক করুন। আপনার রবের মাহাত্ম্য ঘোষণা করুন। আর আপনার পোশাককে পবিত্র করুন এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন। আর অধিক প্রতিদানের আশায় দান করবেন না এবং আপন রবের ওয়াস্তে ছবর করুন।” (সূরাহ্ আল-মুদ্দাছছির : ১-৭)
হযরত খাদীজা (আ.) হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) -এর অবস্থা দেখে তাঁকে আরো কিছুক্ষণ বিশ্রাম করতে বললেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ (সা.) দৃঢ় কণ্ঠে বললেন : “হে খাদীজা! আমার তন্দ্রা ও বিশ্রামের যুগ অতীত হয়ে গেছে। জিবরাঈল আমাকে লোকদেরকে সতর্ক করতে এবং আল্লাহ্ ও তাঁর ‘ইবাদতের দিকে আহ্বান করতে বলেছেন। কিন্তু আমি কা’দেরকে দাওয়াত করবো? কে আমার কথা শুনবে?”
হযরত খাদীজা (আ.)-এর ইসলাম গ্রহণ মক্কাবাসীদের মধ্যে ইসলাম প্রচারে খুবই সহায়ক হয়। তিনি সব সময়ই হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) কে সহায়তা প্রদান করেন। বিপদের সময় তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা.) কে সাহস যোগান ও সান্ত্বনা দেন। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা.) কে আল্লাহর দ্বীনের প্রচারের ক্ষেত্রে সাধ্যমতো সকল প্রকার সাহায্য প্রদান করেন।
হযরত খাদীজা (আ.) তাঁর ধন-সম্পদ ইসলামের খেদমতে ব্যয় করেন। শুধু তা-ই নয়, হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) সব সময় ইসলাম প্রচারের কাজে ব্যস্ত থাকতেন বিধায় সাংসারিক কাজে যথেষ্ট সময় দিতে পারতেন না। এমতাবস্থায় হযরত খাদীজা (আ.)ই তাঁদের সন্তানদের দেখাশোনা ও অন্যান্য সাংসারিক কাজকর্ম করতেন।
হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) ও হযরত খাদীজা (আ.)কে বিভিন্ন সময় বহু দুঃখ-বেদনা ও কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়। তাঁদের দুই প্রিয় পুত্র হযরত ক্বাসেম (আ.) ও হযরত আবদুল্লাহ্ (আ.) শৈশবেই ইন্তেকাল করেন। এছাড়া রাসূলুল্লাহ্ (সা.) -এর নবুওয়াত লাভের পঞ্চম বছরে তাঁদের কন্যা হযরত রুকাইয়াহ্ (আ.) তাঁর স্বামী হযরত উসমান বিন ‘আফফান (আ.)-এর সাথে আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। তখন হযরত রুকাইয়াহ (আ.)-এর বয়স ছিল মাত্র বারো বছর। কিন্তু ইসলামের খাতিরে এ বয়সেই তাঁকে পিতা-মাতার নিকট থেকে দূরে চলে যেতে হয়। (অবশ্য চার বছর পর তাঁরা ফিরে আসেন।) এভাবে স্বীয় সন্তান থেকে এ দীর্ঘ বিচ্ছেদ হযরত খাদীজা (আ.)-এর জন্যে খুবই বেদনাদায়ক ছিলো।
হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) নবুওয়াতে অভিষিক্ত হবার পর ক্বোরাইশ গোত্রের কাফের নেতারা তাঁকে ইসলাম প্রচার থেকে বিরত রাখার জন্য যারপরনাই চেষ্টা চালাতে থাকে। কিন্তু তাদের সকল অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এ ক্ষেত্রে হযরত খাদীজা (আ.)-এর ভূমিকা ছিলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি একদিকে যেমন রাসূলুল্লাহ্ (সা.) কে সান্ত্বনা দেন ও সাহস যোগান, অন্যদিকে তাঁর আর্থিক সহায়তা ইসলাম প্রচারে খুবই কার্যকর প্রমাণিত হয়।
এরপর মক্কা নগরীর কাফেররা যখন হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে সামাজিক বয়কট আরোপ করে তখন তাঁদের সকলকে শে‘বে আবি তালিব নামক গিরিখাতে আশ্রয় নিতে হয়। এখানে তাঁদেরকে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দীর্ঘ তিন বছর অবস্থান করতে হয়। তখন হযরত খাদীজা (আ.) ইসলামের তথা আল্লাহর সন্তুষ্টির খাতিরে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) -এর সাথে শে‘বে আবি তালিবের দুঃখ-কষ্ট বরণ করে নেন।
ইন্তেকাল
ইসলামের ইতিহাসের প্রথম মুসলিম মহীয়সী মহিলা হযরত খাদীজা (আ.) হযরত নবী করীম (সা.) -এর নবুওয়াতে অভিষিক্ত হবার পরবর্তী দশম বছরে (৬২০ খৃস্টাব্দে) ১০ই রামাযান, মতান্তরে ২০শে রামাযান তারিখে ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স হয়েছিলো ৬৫ বছর।
হযরত খাদীজা ত্বাহেরাহ্ (আ.)-এর ইন্তেকাল হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) -এর জন্য একটি বিরাট আঘাত ছিলো।
হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) হযরত খাদীজা (আ.)কে এতোই ভালবাসতেন যে, তাঁর ইন্তেকালের পর রাসূলুল্লাহ্ (সা.) প্রায়ই তাঁর কথা স্মরণ করতেন।
হযরত খাদীজা ত্বাহেরাহ্ (আ.) ছিলেন মানবজাতির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতমা চারজন মহিলার অন্যতম। হযরত জিবরাঈল (আ.) নিয়মিত আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট থেকে তাঁর জন্যে সালাম নিয়ে আসতেন।
হযরত খাদীজা (আ.)-এর ইন্তেকালে তাঁর কন্যা হযরত ফাতেমাহ্ (আ.) খুবই মর্মাহত হন। এর পর থেকে তিনি সব সময়ই পিতার কাছে থাকতেন এবং প্রায়ই মায়ের জন্যে অশ্রু বিসর্জন দিতেন ও বলতেন : “কোথায় আমার মা? কোথায় আমার মা?” হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সা.) তাঁকে সান্ত্বনা দিতেন এবং বলতেন যে, আল্লাহ্ তা‘আলা হযরত খাদীজাহ্কে (আ.) জান্নাতে স্থান দিয়েছেন।
মুসলিম নারীদের জন্যে হযরত খাদীজাতুল্ কুবরাহ (আ.) এক অনুসরণীয় আদর্শ। তিনি তাঁর স্বামী হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সা.) -এর প্রতি ছিলেন খুবই আন্তরিক। এছাড়া তিনি আল্লাহর পথে বহু চেষ্টা-সাধনা ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন যার দৃষ্টান্ত খুবই বিরল ও ব্যতিক্রম। হযরত খাদীজা (আ.)-এর ত্যাগ-তিতিক্ষা ছাড়া ইসলামের অগ্রযাত্রা সহজ হতো না। লেখক: নূর হোসেন মজিদী