সোমবার, 23 ডিসেম্বর , 2024 برابر با Sunday, 22 December , 2024

 বি ইসমেহি তায়ালা

 

(১) কবর বানানো (تعمیر قبر و ساخت گنبد)

(২) কবরে প্রদীপ জ্বালানো

  (روشن کردن چراغ بر روی قبر ها)

تالیف وترجمه: مجیدالاسلام شاه

সংকলন ও অনুবাদ:

 

মজিদুল ইসলাম শাহ

 

সূচিপত্র

কবর বানানো1

ওহাবীদের মতামত এবং তাদের ফতোয়ার কিছু নমুনাস্বরূপ: 1

উক্ত ফতোয়ার প্রত্যার্পণ: 2

উক্ত হাদীসের উপর আপত্তি: 3

অন্য ভাষায় এভাবে বলা যেতে পারে যে, উক্ত হাদীসে তিন ধরনের সম্ভবনা পাওয়া যায়: 6

সাহাবীগণের সুন্নত এবং মুসলমান: 7

সাহাবীগণ এবং তাবেয়ীনদের যুগে নতুন ভাবে কবর তৈরি করা: 8

সাহাবীগণ এবং অন্যান্যদের কবর: 9

আবু যোবায়েরহাদীস থেকে প্রমাণ: 11

উক্ত হাদীসের উপর আপত্তি: 11

(২) কবরে প্রদীপ জ্বালানো15

কবরে প্রদীপ জ্বালানো: 16

উক্ত মতামতের প্রত্যাখ্যান: 16

তথ্যসূত্র: 19

 

 

 

কবর বানানো

ওহাবীদের মতামত এবং তাদের ফতোয়ার কিছু নমুনাস্বরূপ:

কবর তৈরী করা শরিয়তের দৃষ্টিতে দিক থেকে জায়েয হওয়া সম্পর্কে উত্তম একটি প্রমাণ হল বাইতুল মাকদাসের চতুর্দিকে থাকা নবীগণের কবর। মুসলমানদের সমস্ত দল (ফেরকা) সর্বদা এই সব দলিলের উপর আমল করে এসেছে। তবে ওহাবীরা কবরের উপর সমাধি, মিনার, ইত্যাদিকে শিরক বলে এবং তার বিশ্বাসীদের কাফির বলে ফতোয়া দিয়ে থাকে, এবং সেগুলোকে ধ্বংস করা ফরয (ওয়াজিব) মনে করে।

১- সনআনী বলেন: রওযা তৈরী করার অর্থ হল মূর্তি তৈরীর সমতুল্য। তার কারণ যে কাজ ইসলামের পূর্বে মানুষ মূর্তির জন্য করতো সেই কাজ বর্তমানে কবরের খাদেমগণ আল্লাহর ওলিগণের কবরে করে থাকে। [1]

২- ইবনে তাইমিয়ার শিষ্য ইবনে কাইউম বলেন: কবরের উপরে তৈরি রওযাকে ভেঙ্গে দেওয়া ফরয (ওয়াজিব)। যা মূর্তি এবং শয়তানদেরকে লক্ষ্য করে ইবাদত করা হয়, যত শীঘ্রই হোক তাকে ধ্বংস করা উত্তম। কারণ এই দুটো ঘর দুই মূর্তি ‘লাত’ ও ‘উয্যা’র ন্যায় এবং সেখানে যত ধরণের শিরকজনিত কর্ম করা হয়। [2]

৩- মদিনার আলেমগণের দিকে সম্পৃক্ত উত্তর এই ভাবে বলা হয়েছে: কবরের উপরে সমাধি তৈরি করার নিষেধ হওয়ার উপর (ইজমা) সমষ্টিগতভাবে ঐক্যমত আছে যার নিষেধাজ্ঞার উপর সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়। এই কারণে বেশির ভাগ আলেমগণ তার ধ্বংস করারও ফতোয়া দিয়েছেন। তারা এই হাদীসে আবুল হাইয়াজের এই হাদীস থেকে প্রমাণ দেয়। হাদীসটি হযরত আলী (আ:) থেকে বর্ণিত হয়েছে:

(الا ان ابعثک علی ما بعثنی علیه رسول الله صلی الله علیه و اله و سلم ان لا تدع تمثالا الا طمسته ولا قربا مشرفا الاسویته )

অর্থ: সতর্ক থাকো! আমি তোমাকে এমন কাজে নিযুক্ত করবো যে, কাজে হযরত মুহম্মাদ (স:) আমাকে নিযুক্ত করেছিলেন এমন কোনো চিত্রকে ছাড়বে না যতক্ষন না তাকে নিশ্চি্হ্ন করে দাও এবং যে কবরগুলোকে উচুঁ দেখতে পাবে তাকে মাটির সাথে সমতল করে দেবে। [3]

উক্ত ফতোয়ার প্রত্যার্পণ:

আমরা উক্ত ফতোয়ার উত্তরে বলে থাকি, ওই সমস্ত আলেমগণের ঐক্যমত যা ওহাবীরা বর্ণনা করে থাকে সেটি বাতিল। কারণ ওই ফতোয়ার বিপরীত আমল করার জায়েয হওয়ার উপরে সমস্ত আলেমগণের ঐক্যমত আছে। এছাড়া ওহাবী ফেরকা প্রকাশ পাওয়ার পূর্বে সমস্ত মুসলিম ফেরকা প্রতিটি যুগে এই রীতির উপর ধারাবাহিকভাবে আমল করে এসেছে।

উক্ত বিষয় সম্পর্কে সনআনীর এই রীতিকে স্বীকার করাটাই আমাদের মতামতের সঠিক হওয়াকে স্পষ্ট করে। সনআনী নিজের ‘তাতহিরুল এতেকাদ’ পুস্তকে একটি প্রশ্নর দ্বারায় উক্ত বিষয় সম্পর্কে লিখেছেন।

উক্ত সুন্নত পূর্ব ও পশ্চিমা আলেমগণের সমস্ত শহরকে তাদের গন্ডির মধ্যে নিয়ে নিয়েছেন।

এমনকি ইসলামি দেশগুলোর কোনো স্থান অবশিষ্ট নেই যে, সেখানে কবর বা ‘মাকবারা’ নেই, এমনকি মুসলমানদের মসজিদও কবর থেকে শূন্য নেই। কোনো বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তি এটা গ্রহণ করতে সন্ত্তষ্ট নয় যে, এই কাজ করা হারাম। ইসলামী আলেমগণও উক্ত সম্পর্কে নিরব রয়েছেন।

আবার সনআনী বলেন: যদি সুবিচার করা হয় আর পূর্বের আলেমগণের অনুসরণ থেকে দূরে থাকা হয় তাহলে জানতে পারবো যে, সত্য ও এই প্রমাণের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, এগুলো ইজমার কারণে নয়। অতঃপর সেই কাজ মানুষ বিনা কোনো প্রমাণে তাদের পূর্বপুরুষের মতানুযায়ী স্বরণ করে অব্যহত রাখে। এমনকি ওই মানুষ যারা নিজেকে শিক্ষিত মনে করে বা সরকারী কোনো কর্মে কর্মরত আছেন বা শিক্ষকতা করে বা সমাজে ধনী ব্যক্তি, এই সমস্ত মানুষেরাও সাধারণ মানুষের ন্যায় কাজ করে থাকে।

তবে কোনো অজানা জিনিসের প্রচলনে আলেমগণের নিরব থাকা এটা তার জায়েয হওয়ার প্রমাণ নয়।

এই রীতিনীতি সমস্ত আলেম বা সাধারণ মানুষের মধ্যে পাওয়া যায় একথা সনআনী নিজের বক্তব্যে গ্রহণ করেছেন।

কিন্তু অন্যদিকে এটা বলা হচ্ছে যে, সত্য এটাই যা দলিলের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমরা তার উত্তরে বলে থাকি যে, প্রতিটি বংশ ও পরম্পরায় উম্মতের ঐক্যমত পোষণ করা থেকে বড় কোনো প্রমাণ হতে পারে?

উক্ত হাদীসের উপর আপত্তি:

উল্লেখযোগ্য হিসেবে যে হাদীসের মাধ্যমে ওহাবীরা দলিল নিয়ে আসে তাতে কিছু ‘ফিকাহ’গত দিক থেকে আপত্তি পাওয়া যায়।

১- ওহাবীদের নিকট কোনো হাদীস সহীহ হওয়া বা তার বিপরীতে কোনো হাদীস না পাওয়া একথার প্রমাণ হতে পারে না যে, ওই হাদীস অন্যদের কাছেও সহীহ বলে গণ্য হবে, এই কারণে এই বিষয়ে ইজমার দাবী করা ঠিক নয়।

২- মদিনার আলেমগণের দিকে সম্পৃক্ত উত্তরে পারস্পরিক বৈপরীত্য পাওয়া যায় কারণ একবার এটা বলা হচ্ছে যে, বেশির ভাগ আলেমগণ কবর নষ্ট করা ওয়াজিবের উপর ফতোয়া দেয় এবং দ্বিতীয় বার এটা বলেন যে, ওই হাদীস যার হারাম হওয়ার উপর সংকেত দেয় তার সঠিক হওয়ার উপর ইজমা আছে।

যদি সত্যিই ইজমা হয়ে থাকে তাহলে সমস্ত আলেমগণ কবরের উপর তৈরিকৃত মাজারের ধ্বংস করার ওয়াজিব হওয়ার উপর কেন কোনো ফতোয়া দেননি?

৩- উক্ত হাদীসের সংকেত এবং সনদ দুটোতেই প্রতিবন্ধকতা পাওয়া যায়।

উক্ত হাদীসের সনদে এমন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে যাদেরকে রেজাল শাস্ত্রের আলেমগণ দুর্বল বলেছেন, তাদের মধ্যে একজন হল ওয়াকি ইবনে জার্রাহ।

আব্দুল্লাহ ইবনে আহমাদ ইবনে হাম্বাল শিবানী তার সম্পর্কে বলেন: আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি যে, ইবনে মাহদীর ‘তাসহিফ’(লেখা পড়ায় কোনো রকম কোনো ভুলকে তাসহিফ বলা হয়) ওয়াকির থেকে বেশি আর ওয়াকির ভুল ইবনে মাহদীর থেকে বেশি।

আব্দুল্লাহ ইবনে আহমাদ ইবনে হাম্বাল শিবানী দ্বিতীয় স্থান বলেন: ইবনে মাহদী পাঁচশ হাদীসে ভুল করেছে। [4]

ইবনুল মাদাবী বলেন: ওয়াকির আরাবী ভাষার উপর দক্ষতা ছিল না আর যদিও সে কিছু বলতো মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিতো ও সব সময় বলতো:

(حدثنا الشعبی عن عائشه) [5]

উক্ত হাদীসের রাভীর মধ্যে আর একজন হল আবু সুফিয়ান সুরি।

যাহাবী ওয়াকির সম্পর্কে বলেন: সুফিয়ান সুরি প্রতারনা বা ছলনা করে দুর্বল রাভীদেরকে গ্রহণযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য বলে প্রচার করতেন। [6]

ইয়াহইয়া ইবনে মঈন ওয়াকির সম্পর্কে বলেন: আবু ইসহাকের হাদীসে সুফিয়ানের থেকে বেশি  জ্ঞানী কেউ নেই কিন্তু তিনি হাদীসে ‘তাদলিস’ (হাদীসের মধ্যে একধরনের মিথ্যা জিনিসকে মিশ্রিত করা) হাদীসের সঙ্গে প্রতারণা করতো। [7]

উক্ত হাদীসের রাভীদের মধ্যে একজন হলেন হাবিবুল্লাহ ইবনে আবু সাবিত। ইবনে হাব্বান হাবিবুল্লহর সম্পর্কে বলেন: সে হাদীসে তাদলিস করত এবং মানুষকে ধোকা দিত। [8]

ইবনে খুযাইমা তার সম্পর্কে বলেন: হাবিবুল্লাহ ইবনে আবু সাবিত হাদীসে তাদলিস করত এবং মানুষকে ধোকা দিত। [9]

উক্ত হাদীসের রাভীদের মধ্যে একজন হলেন আবু ওয়ায়েল, যে হযরত আলীর (আ:) সঙ্গে  শত্রুতা করতো। [10]

যেমন ভাবে গ্রহণযোগ্য হাদীসে হযরত মুহম্মাদ (স:) বলেন:

(یا علی لا یحبک الا مومن و لا یبغضک الا منافق)

অর্থ: হে আলী! যারা মোমিন ব্যতীত তোমাকে ভালবাসবে না আর যারা মোনাফিক ব্যতীত তোমার সাথে শত্রুতা করবে না। [11]

অন্য দিকে উক্ত হাদীসের মূল পাঠ সম্পর্কে ও গবেষণার দরকার আছে কারণ তার রাভী শুধু মাত্র আবুল হাইয়াজ এই কারনে এই হাদীসকে (شاذ) বিরল বলা হবে।

জালালুদ্দিন সুয়ূতী নাসায়ী পুস্তকে লিখেছেন: রেওয়ায়েতের পুস্তকে আবু হাইয়াজ থেকে শুধু মাত্র উক্ত রেওয়ায়েতটি বর্ণনা হয়েছে, এবং উক্ত হাদীস তার দাবীকেও প্রকাশ করে না, কারণ একদিকে কবর ধ্বংস করার কথা বলছে আবার অন্যদিকে তার অসমতল করা থেকে নিষেধ করছে। কারণ (شرف)’র অর্থ হচ্ছে উচুঁ এবং অভিধানিক অর্থে উটের পিঠকে বলা হয়।[12]

এই কারণে (شرف) শব্দে সমস্ত ধরনের উচুঁকে শামিল করা হবে। যেমন (سویه) শব্দের অর্থ হচ্ছে সমান করা এখানে স্পষ্ট যে এখানে (شرف) শব্দের অর্থ হচ্ছে উটের পিঠ বা মাছের উচুঁ পিঠ।

অন্য ভাষায় এভাবে বলা যেতে পারে যে, উক্ত হাদীসে তিন ধরনের সম্ভবনা পাওয়া যায়:

১- কবরের উপর তৈরী উচুঁ উচুঁ ঘরকে নষ্ট করা।

২- কবরকে জমিনের সমাতল করা।

৩- যে কবরের উপর উটের পিঠের মতো উচুঁ জিনিস দেখা দেবে তাকে সমাতল করা।

প্রথম সম্ভবনা গ্রহণযোগ্য নয় কারণ সাহাবীগণের আমল এবং মুসলামানদের ধারাবাহিক রীতিনীতির বিপরীত যার নমুনার দিকে পূর্বে ইশারা করেছি।

দ্বিতীয় সম্ভবানাও গ্রহণযোগ্য নয় কারণ চূড়ান্ত রীতিনীতি (সুন্নত কাতয়ী) কবর থেকে এক বিগত উচুঁ হওয়াকে বোঝায়।

তৃতীয় সম্ভবনা হল কবরের উপর যে কোনো অসমতল বা এবড়োখেবড়ো যা উটের পিঠের মতো হয়ে থাকে তাকে সমান করা হোক। অল্প সংখ্যক আহলে সুন্নত আলেম যেমন আসকালানী এবং নওয়াভী এই ধরনের ব্যাখ্যা করেছেন।

নাওয়াভী বলেন: কবরকে বেশি উচুঁ করতে নেই এবং তার উপর উটের পিঠের মতোও করা ঠিক নয় শুধু মাত্র কবর থেকে এক বিগত উচুঁ ও সমতল হওয়া দরকার। [13]

কাসতালানী কবরের সমতল হওয়ার দিকে ইশারা করে বলেন: আবুল হাইয়াজের হাদীসের অর্থ এটা নয় যে, কবরের জমিন সমান বা সমতল করে দিতে হবে বরং তার অর্থ হল কবর উপর থেকে সমতল হওয়া দরকার। [14]

সাহাবীগণের সুন্নত এবং মুসলমান:

বাইতুল মাকদাসের চতুর্দিকে বহু নবীগণের কবর আছে যেমন: কুদসে হযরত দাউদ (আ:), আল খালিলে হযরত ইব্রাহীম, ইসহাক, ইয়াকুব, ইউসুফ (আ:)এর কবর আছে যার উপর উচুঁ উচুঁ মাযার দেখতে পাওয়া যায়। ইসলামের পূর্বে তার উপর পাথর রাখা ছিল আর যখন ইসলাম সেই স্থান গুলোকে জয় করে নিজের আয়ত্তে নেয় তখনও ওই কবরগুলো এই ভাবেই ছিল। [15]

ইবনে তাইমিয়া উক্ত অর্থের ব্যখ্যায় বলেন: ‘খালিল’ শহর জয় হওয়া কালীন সাহাবীগণের উপস্থিতিতে হযরত ইব্রাহীম খালিল (আ:)এর কবরের উপর মাযার ছিল কিন্তু তার দরজা ৪০০ হিজরী পর্যন্ত বন্ধ ছিল। [16]

এটা সত্য যে, হযরত ওমর যখন বাইতুল মাকদাস জয় করে তখন এই ঘর ছিল, কিন্তু তখন সেটিকে ধ্বংস করার অনুমতি দেয়নি কিন্তু ইবনে বালহিদের কথা অনুযায়ী কবর তৈরীর প্রথা পাঁচ খ্রীঃ পরে চালু হয়।

এই দাবী সঠিক নয় কারণ অধিকাংশ কবরের সম্পর্ক প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় খ্রীঃ থেকে। [17] যার কিছু নমুনার দিকে ইশারা করছি:

১- ওই পবিত্র ঘর যাতে হযরত মুহম্মাদ (স:) দাফন রয়েছেন।

২- হযরত হামযা (আ:) এর কবরের উপর মসজিদ।

৩- মুহম্মাদ ইবনে যায়েদ ইবনে আলী (আ:) এর ঘরে হযরত মুহম্মাদ (স:) এর পুত্র ইব্রাহীমের কবর।

৪- হযরত আলী (আ:)এর পবিত্র রওযা ৩৭২ হিজরী সনে তৈরী হয়েছিল। [18]

৫- যোবায়ের (র:)এর কবর ৩৮৬ হিজরী সনে তৈরী হয়েছিল। [19]

৬- হযরত সাআদ ইবনে মাআয (র:)এর কবর দ্বিতীয় খ্রীঃ হিজরী সনে তৈরি হয়। [20]

৭- ২৫৬ হিজরী সনে ইমাম বুখারীর কবরের উপর ‘যরীহ’ বানিয়ে রাখা হয় । [21]

সাহাবীগণ এবং তাবেয়ীনদের যুগে নতুন ভাবে কবর তৈরি করা:

আমরা এই বিষয়কে এই প্রশ্নের দ্বারায় শুরু করে বলবো যে: সত্যি যদি কবর এবং রওযা তৈরি করা হারাম হতো তাহলে সাহাবীগণ হযরত মুহম্মাদ (স:)এর রওযাকে কেন ভেঙ্গে দেয়নি যেটি বর্তমান পর্যন্ত সুরক্ষিত আছে?

তাছাড়া ওই ঘর যেখানে হযরত মুহম্মাদ (স:)কে দাফন করা হয়েছিল সেই ঘরের দেওয়াল ছিল না আর যে ব্যক্তি সর্ব প্রথম ওই ঘরের দেওয়াল বানিয়ে ছিলেন তিনি হলেন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব। [22]

অন্য এক রেওয়ায়েতে বর্ণনা হয়েছে যে, হযরত আয়েশা (র:)ওই ঘরে নিজের এবং কবরের মাঝে একটি দেওয়াল বানিয়ে ছিলেন আর সেখানেই নামায পড়তেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে যোবায়ের নিজের শাসনকালে কবরের উপর রওযা বানিয়ে ছিলেন যেটা পরে খারাপ হয়ে যায়। তার পর মোতাওয়াক্কিল আব্বাসীর যুগে ওই রওযার উপর মার্বেল পাথর লাগানো হয়েছিল।

সাহাবীগণ এবং অন্যান্যদের কবর:

১- দ্বিতীয় খ্রীঃ হিজরী সনে হারুন রাশিদ হযরত আলী (আ:)এর পবিত্র কবরে গম্বুজ বানিয়ে ছিল। [23]

২- ২৩০ হিজরী সনে ‘নেহশাল ইবনে হামিদ তুসি’ বিখ্যাত কবি ‘আবু তামাম হাবিব ইবনে ওউস তাই’ এর কবর বানিয়েছিল। [24]

৩- হযরত সালমান ফারসী (র:)৩৬ হিজরী সনে মৃত্যুবরণ করেন, খাতিব বাগদাদী লিখেন: সালামান ফারসীর কবর ‘এওয়ানে কাসরা’ নামক স্থানে বর্তমানেও অবস্থিত…তার উপর রওযা তৈরী আছে। [25]

৪- ইবনে বাতুতা, তালহা ইবনে ওবাইদুল্লাহর ( যে নিজের যুগের ইমাম হযরত আলী (আ:)এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে মারা যায়)  কবর সম্পর্কে বলেন: তার কবর শহরের মধ্যে বর্তমানেও অবস্থিত রয়েছে এবং তার উপর গম্বুজ তৈরি করা হয়েছে। [26]

৫- ২০৪ হিজরী সনে ইমাম শাফেয়ী মৃত্যুবরণ করেন, যাহাবী বলেন: মুলকে কামিল শাফেয়ীর কবরের উপর গম্বুজ বানিয়ে ছিল। [27]

৬- যাহাবী বলেন: ২৩৬ হিজরী সনে মোতাওয়াক্কিল আব্বাসী আদেশ দিল যে, ইমাম হোসায়েন (আ:)এর কবর এবং তার চতুর্দিকে তৈরি ঘর গুলোকে ভেঁঙ্গে দেওয়া হোক। যখন ভেঁঙ্গে দেওয়া হল তখন মুসলমানদের মধ্যে বিক্ষোভ দেখা দেয় এবং বাগদাদবাসীরা মসজিদে এবং শহরের দেওয়ালের উপর তার বিরুদ্ধে শ্লোগান লেখে এবং কবিগণ কবিতার ভাষায় তার অনুমোদন করেন। [28]

তবে ইতিহাসে এর থেকেও বেশি স্পষ্ট নমুনা পাওয়া যায় যে মুসলমানদের জীবনে তাদের এটাই প্রথা ছিল যে, তারা কবরের উপর উচুঁ উচুঁ ঘর তৈরি করতো আর এই সুন্নত ওহাবীদের চিন্তা ধারার সঙ্গে সাদৃশ্য নয়, কিন্তু তার পরেও ‘আকরামুল বুশির’ এর মতো মানুষ যাহাবীর (সায়রে আলামুল নাবালা) পুস্তকের পাদটিকায় ওই ইতিহাস সম্পর্কে লেখেন: এই সমস্ত জিনিস সাধারণ মুসলমানদের নিজেদের তৈরি, যার সম্পর্কে তারা বিশেষ কোনো জ্ঞান রাখে না আর এই আমলগুলো বিদআত যা থেকে মানুষকে নিষেধ করা হয়েছে।

আল্লাহর অসংখ্য ধন্যবাদ আকরামুল বুশীর একথা বলেননি যে, এগুলো শিয়াদের কাজ বরং তিনি এই কাজকে সাধারণ মানুষের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন, তার অর্থ হল যে, তিনি নিজেকে বিশিষ্ট মনে করে আর অন্যান্য মুসলমানদেরকে সাধারণ মানুষ মনে করে।

আবু যোবায়েরর হাদীস থেকে প্রমাণ:

ওহাবীগণ নিজের দাবীকে প্রমাণ করার জন্যে আবু যোবায়েরের রেওয়ায়েত থেকে প্রমাণ স্বরূপ ঊপস্থাপন করেছেন, আবু যোবায়ের বলেন:

(نهي رسول الله ان يجصص القبر و ان يقعد عليه و ان يبني عليه)

অর্থ: হযরত মুহম্মাদ (স:) কবরে চুন (রং) করা বা কবরের কাছে বসা বা কবরের উপরে রওযা তৈরি করা থেকে নিষেধ করেছেন।

তবে এই হাদীস কয়েকটা মাধ্যম থেকে বর্ণনা হয়েছে। মুসলিম, তিরমীযি, ইবনে মাজা, নাসাঈ, আবুদাউদ, এবং আহমাদ ইবনে হাম্বাল এই রেওয়ায়েতটিকে সামান্য মতভেদের সাথে স্ব গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। [29]

উক্ত হাদীসের উপর আপত্তি:

উক্ত হাদীসেও সনদ ও নির্দেশনার দিক থেকে প্রতিবন্ধকতা পাওয়া যায়।

উক্ত হাদীসের সনদে ইবনে জরাঈ, আবু যোবায়ের, হাফস ইবনে গাইয়াস ও মুহম্মাদ ইবনে রাবিয়ার মতো রাভীদের কথা বলা হয়েছে, যাদের সম্পর্কে আহলে সুন্নতের ‘রেজাল’ শাস্ত্রের আলেমগণ সন্দেহ পোষণ করেছেন। সেই রাভীদের একজন হল ইবনে জরাই। আহমাদ ইবনে হাম্বাল তার সম্পর্কে বলেন: যদি ইবনে জরাই বলে যে উমুক ও উমুক এই ভাবে বলেছে, তাহলে মনে কর সে অগ্রহণীয় হাদীসগুলোকে বর্ণনা করেছে। ইবনে হাব্বান তাকে প্রতারক হিসেবে পরিচয় করিয়েছেন। [30]

দ্বিতীয় রাভী আবু যোবায়ের, যার সম্পর্কে নাঈম ইবনে হাম্‌মাদ বলেন: আমি ইবনে উয়ায়নার কাছ থেকে শুনেছি যে, তিনি আবু যোবায়েরকে দুর্বল মনে করেন।

আব্দুর রহমান ইবনে আবু হাতিম তার সম্পর্কে নিজের পিতার কাছে জিজ্ঞাসা করলো তখন আবু হাতিম বললো: আবু যোবায়েরের হাদীস লেখা যাবে কিন্তু তার হাদীস থেকে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে না। [31]

উক্ত হাদীসের আর এক রাভী হাফস ইবনে গাইয়াস, ইয়াকুব ইবনে শোবা হাফসের বর্ণনা করা হাদীস সম্পর্কে বলেন: তার কিছু সুরক্ষিত জিনিস সম্পর্কে সতর্ক থাকা ভাল।

দাউদ ইবনে রশায়েদ তার সম্পর্কে এই ভাবে মতামত দিয়ে বলেন: হাফস অতিরিক্ত ভুল করে থাকে। [32]

ওহাবীগণ কি ভাবে এই হাদীসের প্রতি বিশ্বাস করে মুসলমানদেরকে কাফির বা তাদের রক্ত ঝরানোকে হালাল মনে করে, যার সনদে এতো বেশি ভুল পাওয়া যায়।

সংকেত সম্পর্কেও এই হাদীসে অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতা পাওয়া যায়।

) এই হাদীস এটাই বলে যে, হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে রং করা বা কবরের নিকট বসা আর কবরের উপর রওযা তৈরি করা থেকে নিষেধ করেছেন। তাছাড়া নিষেধ করা সব সময় হারাম হওয়ার সংকেত দেয় না বরং কখনো কখনো অপছন্দর ও সংকেত দেয়, যার নমুনা বহু আছে তাই সর্বচ্চ পর্যায়ে এটাই বলা যেতে পারে যে, ওই হাদীসে নিষেধ করার ব্যাপারটা অপছন্দের সংকেত দেয়।

এই কারণে আহলে সুন্নত আলেমগণ এই হাদীসকে স্বরণে রেখে এই ধরনের ফতোয়া দিয়েছেন। শাফেয়ী এই হাদীস অনুযায়ী বলেন: কবর যমিন থেকে বেশি উচুঁ না হাওয়া মুস্তাহাব।

নাওয়াভী বলেন: মৃত ব্যক্তির নিজের টাকা দিয়ে কবরের উপর রওযা তৈরী মাকরুহ আর ওয়াকফ করা জমির উপরে রওযা করা হারাম। [33]

সানাদী, নিশাবুরীর সঙ্গে এই হাদীস বর্ণনা করার পর লেখেন: এই হাদীস সহীহ কিন্তু এর উপর আমল করা যাবে না কারণ পূর্ব ও পশ্চিমে পর্যন্ত ইসলামের নেতাগণ কবরের উপর কিছু লিখতেন আর এটা সেই জিনিস যা পূর্বাপুরুষদের কাছ থেকে ধারাবাহিকভাবে চলে এসেছে।[34]

) এই হাদীসগুলো কবর তৈরি করা বা তার উপর রওযা তৈরি করার আদেশ দেওয়াকে বর্ণনা করে না কারণ এই কাজ আল্লাহর নিদর্শণ যার সম্মান করা দরকার আর সেগুলোকে আল্লাহর নিদর্শণ এই জন্য বলা হয়েছে যে, ওই কবরগুলোতে হয় আল্লাহর নবীগণ দাফন আছেন বা আল্লাহর ওলীগণ, বা ওই কবরগুলোর উপরে রওযা তৈরী কোনো দর্শন বা দ্বীন ইসলামে কোনো গুরুত্বর কারণে হতে পারে। নিম্নলিখিত কিছু দলিল আমাদের দাবীকে প্রমাণ করবে:

ইবনে মাজা বলেন: হযরত মুহম্মাদ (স:) হযরত উসমান ইবনে মাযউনের কবরে একটি পাথর রেখে চিহ্নিত করেছিলেন। [35] হায়সামী ইবনে মাজার কথাকে বর্ণনা করার পর লেখেন: এই হাদীসের সনদ ‘হাসান’ এবং গ্রহণযোগ্য।

আসবাগ ইবনে নাবাতা বলেন: হযরত মুহম্মাদ (স:)এর মেয়ে হযরত ফাতেমা (স:), হযরত হামযার কবরে যেতেন আর কবরের উপর চিহ্নিত করে রাখতেন যাতে কবরটি শনাক্ত করা যায়।

এই ভাবে তিনি বলেন: হযরত মুহম্মাদ (স:), আবুবকর ও ওমারের কবরে ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথর রাখা ছিল। [36]

কবরের নিদর্শণ :

এটা স্পষ্ট যে, কবরের উপর রওয়া নির্মান করলে সমাজে বিভিন্ন উপকারে ব্যাবহার হয় যেমন:

১- এটা একটি আল্লাহর শায়ের (অনুষ্ঠান) আর এর দ্বারাই ইসলামের শত্রু বা অমুসলিমদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার একটি চিহ্ন।

২- এই স্থানগুলোতে ইবাদত করা তাদের মান-মর্যাদার জন্য পক্ষপাত রাখে। এই কারণে যায়েরদেরকে গ্রষ্ম ও শীত থেকে বাঁচানো, যায়েদের সুবিধা যেমন: নামায, কুরআন তেলাওয়াত, আর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য এই কাজগুলো করা যাতে যায়েরদের কোনো রকম কোনো সমস্যা বা অসবিধা না হয়।

৩- দ্বীন ইসলামের নিদর্শণ গুলোকে রক্ষা করার জন্যে।

আমার মনে হয় কবরগুলোর গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন এটাই যে, এই ভাবে দ্বীন ইসলামের প্রাথমিক নমুনাকে রক্ষা করা যায় আর যদি এই ধরনের সম্মান বা শ্রদ্ধা না থাকে তাহলে এই নমুনাগুলোকে মানুষ ভুলে যাবে।

আসলে ওহাবীদের লক্ষ্য কবরের উপর রওযা বানিয়ে দ্বীন ইসলামের নিয়মের প্রতি আমল করা নয় বরং ওহাবীরা দ্বিন ইসলামের ওই নমুনাগুলোকে নষ্ট করতে চায় কিন্তু আবার মানুষের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে এই ধরনের নমুনার প্রয়োজন পড়ে।

 

 

 

 

 

 

(২) কবরে প্রদীপ জ্বালানো

 

 

কবরে প্রদীপ জ্বালানো:   

ওহাবী জনসাধারণ কবরে প্রদীপ জ্বালানোকে মানা করে আর এই সম্পর্কে হযরত মুহম্মাদ (স:)এর হাদীস বর্ণনা করে।

(لعن رسول الله (ص) زائرات القبور و المتخذين عليها المساجد و السرج)

অর্থ: হযরত মুহম্মাদ (স:) কবর যিয়ারত করা নারীদের, এবং কবরকে মাসজিদ আর তাতে প্রদীপ জ্বালানো কারীদের উপর অভিশাপ করেছেন। [37]

উক্ত মতামতের প্রত্যাখ্যান:

ওহাবীদের এই মতাতের কয়েক দিক থেকে সমালোচনা ও প্রত্যাখ্যান করা যায়:

১- এই রেওয়ায়েত সনদের দিক থেকে দুর্বল।

হাকিম নিশাবুরী ‘আল মাস্তাদরাকুস সাহিহায়েন’ পুস্তকে এই রেওয়ায়েত দুই মাধ্যম থেকে ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু সেই রেওয়ায়েতের দুই মাধ্যমের একজন রাভী হচ্ছে আবু সালেহ বাযাম, যাকে রেজাল শাস্ত্রের আলেমগণ দুর্বল বলেছেন।

আবু হাতেম তার সম্পর্কে বলেন: বাযামের রেওয়ায়েত বর্ণনা করা যেতে পারে কিন্তু তার দ্বারা কোনো জিনিসকে প্রমাণিত করা যাবে না।

নাসায়ী বাযামের সম্পর্কে বলেন: আবু সালেহ বাযাম হাদীস বর্ণনা করার দিক থেকে বিশ্বাসযোগ্য নয়।

২- উক্ত হাদীসে বর্ণিত অভিশাপ ওই লোকেদের জন্য যারা সাধারণ মানুষের কবরে এই ধরনের আমল করে থাকে, নবীগণ ও ওলিগণের কবরে নয় কারণ তাদের কবরের সম্মান করার হুকুম দেওয়া হয়েছে। অতএব এই কারণে নবীগণ ও ওলিগণের কবর যিয়ারত করা আর সেখানে প্রদীপ জ্বালানো অপছন্দ-তো নই বরং এই ধরণের আমলে তাঁদের সম্মান জানানো হয় ও শরিয়তের দিক থেকে কোনো রকম নিষেধাজ্ঞা নেই।

৩- অভিশাপ ওই সময় হবে যখন প্রদীপ জ্বালানোয় কোনো উপকার হবে না বা কোনো দরকার থাকবে না বা যখন সেটাকে উদ্দেশ্যবিহীন কাজ হিসেবে গণ্য করা হবে। কিন্তু যদি কুরআন পড়া, দোয়া বা নামায আদায় করার জন্য বা রাত্রি জাগরণকারীদের জন্য প্রদীপ জ্বালানো হয় যাতে তারা সেই আলো থেকে লাভবান হতে পারে, তাহলে এই ধরণের কাজ হারাম তো দূরের কথা মাকরুহও নয়, তবে এটা বলা যেতে পারে যে, ভাল কাজের জন্য মানুষকে উৎসাহিত করা। কিছু আহলে সুন্নতের আলেমগণও এই উত্তরের দিকে ইশারা করেছেন।

আযিযী হযরত মুহম্মাদ (স:)এর এই কথার ব্যাখ্যায় বলেন: হযরত মুহম্মাদ (স:)এর অভিশাপ শুধুমাত্র সেই লোকেদের জন্য যারা কবরে প্রদীপ জ্বালায় কিন্তু কোনো মানুষ যদি তার আলো থেকে উপকৃত না হয়, আর যদি উপকৃত হয় তাতে কোনো সমস্যা নেই। [38]

সানাদী নাসায়ী পুস্তকের পাদটিকায় লেখেন: অভিশাপ সেই সময় হবে যখন উক্ত জিনিস থেকে উপকৃত হওয়ার আগে সেই জিনিস নষ্ট হয়ে যাবে, অর্থাৎ যদি মানুষ সেই প্রদীপ থেকে উপকৃত হয় তাহলে কোনো সমস্যা নেই। [39]

শেখ হানাফী ‘জামেউস সাগির’ পুস্তকের পাদটিকায় লেখেন: আল্লাহর ওলিগণের কবরে প্রদীপ জ্বালানো হারাম ওই সময় যখন কোনো মানুষ তা থেকে উপকৃত না হবে। [40]

কবরে প্রদীপ জ্বালানো জায়েয হওয়ার প্রমাণ হল হযরত মুহম্মাদ (স:)এর আমল। তিরমিযী লেখেন: ইবনে আব্বাস বলেন: হযরত মুহম্মাদ (স:) রাতের বেলা কবরস্থানে প্রবেশ করলেন এবং একটি কবরে প্রদীপ জ্বালালেন। [41]

৪- মুসলমানদের নীতি: ওহাবীগণের মতামত বাতিল হওয়ার চতুর্থ প্রমাণ হল মুসলমানদের নীতি যার উপর তারা ইবনে তাইমিয়ার জন্মের পূর্বে এবং পরে আমল করেছেন আর এই নীতি ওহাবীগণের মতামতের বিপরীত। আলেমগণ এ সম্পর্কে অনেক বেশি সাক্ষ্য বর্ণনা করেছেন।

খাতিবে বাগদাদী লেখেন: ওলিদের কথা অনুযায়ী আবু আইউব আনসারীর কবরে প্রদীপ রাখা থাকতো। [42]

ইবনে জওযি বলেন: ৬৮৩ হিজরী সনের ঘটনার একটি হল এই যে, বাসরাবাসীরা দাবি করলো যে, আমরা যোবায়ের ইবনে আওয়ামের কবর খুঁজে পেয়েছি, অতপর তারা সেই কবরের জন্য প্রদীপ আর চাঁটা নিয়ে গেলেন। [43]

 

খাতিবে বাগদাদী লেখেন: ইমাম মুসা কাযিম (আ:)এর কবর হল একটি যিয়ারতের স্থান। যার উপর বিশাল ইমারত তৈরি আছে আর এখানে সোনা ও রুপার প্রদীপ ও কালিন আছে এছাড়া ও আরো বিভিন্ন ধরনের জিনিস রাখা আছে। [44]

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

তথ্যসূত্র:

১- কাশফুল ইরতিয়াব

২- যাদুল মাদ

৩- কাশফুল ইরতিয়াব

৪- তাহযিবুল কামাল

৫- মিযানুল ইতেদাল

৬- আল জারহো ওয়াত তাদিল

৭- শারহে নাহজুল বালাগা ইবনে আবিল হাদিদ

৮- মাজমাউয যাওয়ায়েদ

৯- আল কামুস

১০- ইরশাদুস সারী

১১- মাজমুউল ফাতাভী ইবনে তাইমিয়া

১২- আখবারুল মদিনা

১৩- সেয়রে আলামুন নাবলা

১৪- আল মুনতাযিম

১৫- আত তাবকাতুশ শাফেয়াতুল কুবরা

১৬- ওফাউল ওফা বেআখবারিল মুস্তাফা

১৭- শাযরাতুয যাহাব

১৮- তারিখে বাগদাদ

১৯- সাফর নামে ইবনে বাতুতা

২০- মাআসেরুল আনাফা ফি মওয়ালেমুল খেলাফা, কালাকশানদী

২১- সহীহ মুসলিম

২২- তিরমীযি

২৩- ইবনে মাজা

২৪- নাসাঈ

২৫- আবুদাউদ

২৬- আহমাদ ইবনে হাম্বাল

 

 

[1] (কাশফুল ইরতিয়াব পৃ: ২৮৬)

[2] (যাদুল মাদ খ:৩ পৃ:৫০৬)

[3] (কাশফুল ইরতিয়াব পৃ: ২৮৮)

[4] (তাহযিবুল কামাল খ:৩০ পৃ:৪৭১)

[5] (মিযানুল ইতেদাল খ:৭ পৃ:১২৭)

[6] (মিযানুল ইতেদাল খ:৭ পৃ:১২৭)

[7] (আল জারহো ওয়াত তাদিল খ:৪ পৃ:২২৫)

[8] (তাহযিবুত তাহযিব খ:২ পৃ:১৫৬)

[9] (তাহযিবুত তাহযিব খ:২ পৃ:১৫৬)

[10] (শারহে নাহজুল বালাগা ইবনে আবিল হাদিদ খ:৪ পৃ:৯৯)

[11] (মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ:৯ পৃ:১৩৩)

[12] (আল কামুস খ:৩ পৃ:১৬২)

[13] (আল মাজমু খ:৫ পৃ:২৯৫, খ:১ পৃ:২২৯)

[14] (ইরশাদুস সারী খ:২ পৃ:৪৬৮)

[15] (কাশফুল ইরতেয়াব ৩০৬)

[16] (মাজমুউল ফাতাভী ইবনে তাইমিয়া খ:২৭ পৃ:১৪১)

[17] (আখবারুল মদিনা খ:১ পৃ: ৮১)

[18] (সেয়রে আলামুন নাবলা খ:১ পৃ:২৫১)

[19] (আল মুনতাযিম খ:১৪ পৃ:২৫১)

[20] (সেয়রে আলামুন নাবলা খ:১৩ পৃ:২৮৫)

[21] (আত তাবকাতুশ শাফেয়াতুল কুবরা খ:২ পৃ ২৩৪)

[22] (ওফাউল ওফা বেআখবারিল মুস্তাফা খ: ২ পৃ: ৫৪১)

[23] (সেয়রে আলামুন নাবলা খ:১৬ পৃ:২৫১)

[24] (শাযরাতুয যাহাব খ:২ পট: ৭৪)

[25] (তারিখে বাগদাদ খ:১ পর: ১৬৩)

[26] (সাফর নামে ইবনে বাতুতা খ: ১ পৃ: ২০৮)

[27] (দোওয়ালুল ইসলাম পৃ:৩৪৪)

[28] (মাআসেরুল আনাফা ফি মওয়ালেমুল খেলাফা, কালাকশানদী খ: ১ পৃ: ১২০)

[29] (সহীহ মুসলিম খ:২ পৃ: ৬৬, তিরমীযি খ: ৩ পৃ: ৩৬৮, ইবনে মাজা খ: ১ পৃ: ৪৯৮, নাসাঈ খ: ৪ পৃ: ৮৮, আবুদাউদ খ: ৩ পৃ: ২১৬, এবং আহমাদ ইবনে হাম্বাল খ:৩ পৃ: ২৯৫)

[30] (তেহযীবুল কামাল খ:১৮ পৃ: ৩৪৮)

[31] (তেহযীবুল কামাল খ:২৬ পৃ: ৪০৭)

[32] (তারিখে বাগদাদ খ:৮ পৃ: ১৯৯)

[33] (শারহে সহীহ মুসলিম খ:৭ পৃ: ২৭)

[34] (হাশিয়ায়ে সানাদী বার সনানে  নাসায়ী খ:৪ পৃ: ৭৮)

[35] (সনানে ইবনে মাজা খ: ১ পৃ: ৪৯৮)

[36] (আল মুসনিফ খ:৩ পৃ: ৫৭৪)

[37] (সনানে নাসায়ী খ: ৪ পৃ: ৯৪, আল মাস্তাদরাকুস সাহিহায়েন খ: ১, পৃ: ৫৩০, হাদীস ১৩৮৪)

[38] (শারহুল জামেউস সাগির খ: ৩ পৃ: ১৯৮)

[39] (হাশিয়ায়ে সনানে নাসায়ী খ:৪ পৃ:৯৫)

[40] (কাশফুল ইরতেয়াব পৃ:৩৩৮)

[41] (জামেউস সাহীহ খ:৩ পৃ:৩৭২)

[42] (তারিখে বাগদাদ খ:১ পৃ:১৫৪)

[43] (আল মুন্তাযাম খ:১৪ পৃ:৩৮৭)

[44] (ওয়াফিয়াতুল আয়ান খ:৫ পৃ:৩১০)

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।