বি ইসমেহি তায়ালা
কবর যিয়ারত
قبر زیارت
تالیف و ترجمه : مجید الاسلام شاه
সংকলন ও অনুবাদ
মজিদুল ইসলাম শাহ
সূচিপত্র
ওহাবীদের নিকট হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবর যিয়ারত: 1
ওহাবিদের দলিল সম্পর্কে পর্যালোচনা: 6
ইবনে তাইমিয়ার ভ্রান্ত ধারনার বিরুদ্ধে সুন্নী আলেমদের অবস্থান: 9
পবিত্র স্থান এবং কবর যিয়ারত: 11
কবর যিয়ারত সাহাবা ও তাবেয়ীনদের সিরতে: 14
সেই কবর জেগুলো মুসলমানদের নিকট যিয়ারতের স্থান হয়েছিল: 16
১- বিলাল ইবনে হামামা হাবশীর কবরে (মৃত্যু ২০ হিজরী): 16
২- সালমান ফারসীর কবরে (মৃত্যু ৩৬ হিজরী): 16
৩- আবু আইউয়ুব আনসারীর কবরে (মৃত্যু ৫২ হিজরী): 17
৪- মিশর দেশে ইমাম হোসায়েন (আ:)এর মাথা যেখানে রাখা হয়েছিল সেই স্থান থেকে: 17
৫- ইমাম মুসা কাযিম (আ:)এর কবর থেকে: 17
৬- ইমাম জাওয়াদ (আ:)এর কবর থেকে: 18
৭- ইমাম রেযা (আ:)এর কবর থেকে: 18
৮- ওমর বিন আব্দুল আযিয ওমাভীর কবর থেকে: (মৃত্যু ১০১ হিজরী) 18
৯- মুহম্মাদ বিন ইদ্রিস শাফেয়ীর কবর থেকে: 18
১০- আহমাদ বিন হাম্বালের কবর থেকে: 19
১১- যুননুন মিসরীর কবর থেকে: (মৃত্যু ২৪৬ হিজরী) 19
ওহাবীদের নিকট হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবর যিয়ারত:
এতে সন্দেহ নেই যে, পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবর যিয়ারত একটি শরয়ী এবং পছন্দনীয় আমল।
ইসলামী ইতিহাসে পাওয়া যায় যে, মুসলমান এই সুন্নতের উপর আমল করতেন এবং এই ভাবে বস্তুগত এবং আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা থেকে উপকৃত হয়েছেন।
যেমন ইবনে তাইমিয়ার বিশ্বাস অনুযায়ী, যদি হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবর যিয়ারতের নিয়ত করে সফর করা হারাম হয়, তাহলে অন্যত্র কবরের যিয়ারতও হারাম হবে। ইবনে তাইমিয়া এই ফতোয়ার জন্য হাদীসে ‘শাদ্দুর রেহাল’কে প্রমাণ হিসেবে বর্ণনা করেছে। এই হাদীসটি কাস্তালানীর লেখা ‘এরশাদুশ সারী’ [1] আর ইবনে হাজার আসকালানীর লেখা ‘আল জাওয়াহেরুল মওয়াযযাম’ নামক পুস্তকে বর্ণিত হয়েছে।
উক্ত মতামতের উত্তর:
আমি সর্ব প্রথম শরয়ী হুকুমের চারটি দলিলের দ্বারায় (কুরআন, সুন্নত, সাহাবীগণের নীতি, বিবেক ও বুদ্ধি) ইবনে তাইমিয়ার বাতিল মতামতকে প্রমাণিত করবো এবং ‘শাদ্দুর রেহাল’ হাদীসের গবেষণা ও তার উপর প্রতিন্ধকতা করে তা থেকে যে ভুল অর্থ নেওয়া হয়েছে বর্ণনা করবো আর এটা প্রমাণ করবো যে, চারটি দলিলের ভিত্তিতে যিয়ারত হল একটি শরয়ী আমল।
১– কোরআনের আলোকে:
আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন:
وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُواْ أَنفُسَهُمْ جَآؤُوكَ فَاسْتَغْفَرُواْ اللّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُواْ اللّهَ تَوَّاباً رَّحِيماً
এবং (হে রসূল!) যখন তারা (অবাধ্যতা করে) নিজেদের (আত্মার) প্রতি অবিচার করেছিল, যদি তোমার নিকট আসত এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত আর রসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইত, তবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে অতিশয় ক্ষমাশীল, অনন্ত করূণাময় পেত। [2]
উক্ত আয়াতের ভিত্তিতে যিয়ারতের অর্থ হল, যে ব্যক্তির যিয়ারত করা হচ্ছে তার কাছে ইস্তেগফার করার জন্য বা অন্য কোনো গুরুত্ব বিষয়ের জন্য উপস্থিত হওয়া। এই কাজ যখন হযরত মুহম্মাদ (স:)এর জীবিত কালে পছন্দনীয় ছিল তাহলে তার মৃত্যুর পরেও পছন্দনীয় থাকবে, যেমন ভাবে আমরা শাফাআতের আলোচনায় দলিল ও প্রমাণের সাথে বর্ণনা করেছি যে, হযরত মুহম্মাদ (স:)এর মৃত্যুর পরেও ‘আলামে বারযাখে’ জীবিত আছেন আর যায়েরদের সালাম শুনেন এবং তাদের আমল হযরত মুহম্মাদ (স:)এর সামনে পেশ করা হয়।
২- হাদীসের আলোকে:
স্বয়ং হযরত মুহম্মাদ (স:) থেকে, তাঁর কবরের যিয়ারত ও তাঁর সম্মান সর্ম্পকে অনেক বেশি রেওয়ায়েত বর্ণনা হয়েছে এবং আহলে সুন্নতের রেজালশাস্ত্রের আলেমগণ সেই সমস্ত রেওয়ায়েতগুলোকে নিশ্চিতরুপে গ্রহণ করেছেন। সেই গ্রহণযোগ্য হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, যিয়ারত সম্পর্কে যে রেওয়ায়েত গুলো বর্ণনা হয়েছে সে গুলোকে জালি বলা হযরত মুহম্মাদ (স:)এর উপর মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার সমতুল্য। আমি সেই সমস্ত হাদীস থেকে নমুনাস্বরূপ কিছু হাদীস বর্ণনা করছি:
প্রথম হাদীস: আহলে সুন্নতের বিভিন্ন পুস্তকে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত মুহম্মাদ (স:) বলেন:
من زار قبری وجبت له شفاعتیঅর্থ: যে ব্যক্তি আমার কবর যিয়ারত করবে তার শাফাআত করা আমার উপর ফরয।
বহু হাফেয এবং মুহাদ্দিস থেকেও উক্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে তাদের মধ্যে যেমন: ইবনে আবি আদ দুনিয়া, ইবনে খুযাইমা, দারে কুতনী, দুলাবী, ইবনে আসাকির এবং তকিউদ্দিন সাবকী। [3]
দ্বিতীয় হাদীস: আব্দুলাহ ইবনে ওমর একটি ‘মারফু’ রেওয়ায়েতে বর্ণনা করেন যে হযরত মুহম্মাদ (স:) বলেন:
(من جائنی زائرا لا تعلمه. لا تحمله. الاّ زیارتی کان حقا علیّ ان اکون له شفیعا یوم القیامة)
যে ব্যক্তি শুধু মাত্র আমার যিয়ারতের নিয়ত করে আমার কাছে আসবে তখন কেয়ামতের দিনে তার জন্য শাফাআত করা আমার উপর ফরয হয়ে যায় ।
উক্ত হাদীস আহলে সুন্নতের ষোলটি পুস্তকে বর্ণিত হয়েছে এবং তার রাভীদের মধ্যে তিবরানী, হাফিয, ইবনে সাবকী, বাগদাদী, দারে কুতনী, আর আবু নাঈম ইসফাহানীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। [4]
তৃতীয় হাদীস: আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর আর একটি ‘মরফু’ রেওয়ায়েতে বর্ণনা করেন যে, হযরত মুহম্মাদ (স:) বলেন: (من حجّ فزار قبری بعد وفاتی کان کمن زارنی فی حیاتی) যে ব্যক্তি কাবা ঘরের হজ্ব করেছে আর আমার মৃত্যুর পর আমার কবর যিয়ারত করেছে যেন সে আমার জীবিত কালে আমার যিয়ারত করেছে।
উক্ত হাদীস আহলে সুন্নতের পঁচিশটি পুস্তকে বর্ণিত হয়েছে যার রাভীদের মধ্যে শায়বানী, আবুল আলী, বাগবী, আর ইবনে আদীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। [5]
চতুর্থ হাদীস: আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর আরও বর্ণনা করেন যে হযরত মুহম্মাদ (স:) বলেন:
(من حجّ البیت و لم یزرنی فقد جفانی) যে ব্যক্তি কাবা ঘরের হজ্ব করে আর আমার যিয়ারত না করে, সে আমাকে যন্ত্রণা ও কষ্ট দিয়েছে।
উক্ত হাদীসকে বিভিন্ন হাফেয ও মহাদ্দেসীন বর্ণনা করেছেন যেমন: সামহুদী, দারে কুতনী, কাসতালানী এবং অনান্য লেখকগণ। [6]
৩– সাহাবীগণের নীতি:
যিয়ারতের জায়েয হওয়ার তৃতীয় দলিল হযরত মুহম্মাদ (স:)এর সাহাবীগণের নীতি আর তাদের চরিত্র। একটি রেওয়ায়েতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব যুদ্ধে জয়লাভ করে ‘শাম’ শহর থেকে ‘মদিনা’ শহরে ফিরে সর্ব প্রথম মসজিদে গেলেন আর হযরত মুহম্মাদ (স:)কে সালাম জানালেন। [7]
এই ঘটনাকে “ফুতুহাতুশ শাম” নামক পুস্তকে এই ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, যখন দ্বিতীয় খলিফা ওমর বাইতুল মকাদ্দাসের কর্মচারীদের সাথে সন্ধি করলো তখন ‘কাবুল আহবার’ নামক এক ব্যক্তি তার কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করলো আর ওমর তার ইসলাম গ্রহণ করা দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে তাকে বললো: তুমি কি আমার সঙ্গে মদিনা যেতে চাও, যাতে তুমি ওখানে গিয়ে হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবর যিয়ারত করে আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরণা অর্জন করতে পার ?
কাবুল আহবার সেই প্রস্তাব গ্রহণ করে। তারপর ওমর মদিনায় প্রবেশ করে সর্ব প্রথম যে কাজটি করলেন সেটি হল হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে গিয়ে সালাম জানানো। [8]
অন্য একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর যখনই কোনো সফর থেকে ফিরে আসতেন তখন প্রথমে হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে গিয়ে এই ভাবে সালাম জানাতেন:
السلام علیک یا رسولالله…. [9]
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর সব সময় হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরের ধারে দাঁড়িয়ে তাঁকে সালাম করতেন। [10]
আর একটি অন্য রেওয়ায়েতে ইবনে অউন বলেন: এক ব্যক্তি নাফেকে জিজ্ঞাসা করল: আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর কি হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে দাঁড়িয়ে তাকে সালাম করতেন? তখন নাফে বললো: আমি তাকে হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে দাঁড়িয়ে একশ’বারেরও অধিক বার সালাম করতে দেখেছি। [11]
হাফিয আব্দুল গনী বলেন: হযরত বেলাল হযরত মুহম্মাদ (স:)এর মৃত্যুর পর শুধু একবার আযান দিয়েছিলেন আর তাও ওই সময় যখন হযরত মুহম্মাদ (স:)এর যিয়ারতের জন্য মদিনায় গিয়েছিলেন। [12]
তকিউদ্দিন সাবকি বলেন: হযরত মুহম্মাদ (স:)এর যিয়ারত জায়েয হওয়া সম্পর্কে হযরত বেলালের নিদ্রিত অবস্থায় থাকা প্রমাণ নয়, প্রমাণ হচ্ছে তার আমল। আর এই আমল হযরত ওমর (র:)এর শাসনকালে ওই সমস্ত সাহাবিগণের উপস্থিতিতে হয়েছিল। আর এই কাজ গোপনও ছিল না। এই কারণে তারা হযরত বেলালের উপর কোনো ধরনের প্রতিবাদ করেননি। [13]
৪–বিবেক বুদ্ধির আলোকে:
যিয়ারত জায়েয হওয়া বিবেক বুদ্ধির দ্বারাও প্রমাণিত করা যেতে পারে, তার কারণ বিবেকের বিচার হল, মহান আল্লাহ তায়ালা যে জিনিসকে সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন, তার প্রতি সম্মান করা দরকার। যিয়ারতও এক ধরণের সম্মান, অতএব হযরত মুহম্মাদ (স:)এর যিয়ারত সম্মান হিসেবে গণ্য হওয়া এটি একটি শায়াইরে এলাহি (আল্লাহর নির্দেশন) এবং এক ধরনের পছন্দনীয় কাজ, যদিও ইসলামের শত্রুরা এটিকে পছন্দ করে না।
ওহাবিদের দলিল সম্পর্কে পর্যালোচনা:
পূর্বে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যে হাদীসগুলো হযরত মুহম্মাদ (স:)এর যিয়ারতকে হারাম প্রমাণ করে ফতোয়া দিয়েছেন ওই হাদীসগুলো সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত মুহম্মাদ (স:)বলেন:
لا تشدّ الرحال الا الی ثلاثة: المسجد الحرام مسجد النبی و مسجدالاقصی
অর্থ: তিনটি স্থান ছাড়া সফর করা হারাম, যথা: ‘মাসজিদুল হারাম’ ‘মাসজিদুন নবী’ ও ‘মাসজিদুল আকসা’। [14]
মুহম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহাব এই হাদীসটির ভুল ব্যাখ্যা করে বলেন: হযরত মুহম্মাদ (স:)এর মসজিদের যিয়ারত মুস্তাহাব। কিন্তু এক্ষেত্রে মসজিদের যিয়ারত এবং সেখানে নামাযের উদ্দেশ্যে সফর করতে হবে, কিন্তু হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরের যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে নয়।
মুহম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহাব এই হাদীসের ভিত্তিতে কবর যিয়ারতকে হারাম করেছে।
এই হাদীসের আলোচনায় আমাদের বক্তব্য হল যে, আরবী ভাষার নিয়ম অনুযায়ী হাদীসের সঠিক অর্থকে বোঝার জন্য ‘হাসর’ শব্দ যেমন (الا)’র আগে একটি শব্দকে (محذوف) মাহযুফ (উহ্য) ধরতে হবে আর এর ফলে দুই ধরনের সম্ভাবনা সামনে আসবে।
১- মাহযুফ শব্দটি হল ‘মসজিদ’ আর সেক্ষেত্রে ওই হাদীসের অর্থ হবে, নামায আদায় করার জন্য ওই তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোনো মাসজিদের দিকে যেও না।
২- মাহযুফ শব্দ হল ‘স্থান’ (مکان) আর এই ভাবে হলে হাদীসের অর্থ হবে, ওই তিনটি মাসজিদ ছাড়া অন্য কোনো স্থান সফর করোনা।
প্রথম সম্ভাবনা অনুযায়ী ‘হাসর’ শব্দ (الا) ‘ইল্লা’ থেকে যে অর্থ বোঝা যাচ্ছে সেটা হল ‘হাসরে ইযাফী’ (حصراضافی), তার অর্থ হল রসূলের(স:) হাদিসে সফরের বৈধতা ও অবৈধতার বিষয়টি মসজিদ কেন্দ্রিক। সুতরাং সার্বিক ভাবে রসূলের (স:) যিয়ারতের উদ্দেশ্য সফরের বিষয়টি ঐ আলোচনার (তিনটি মসজিদ ব্যতিক্রম হওয়ার বিধানের) উক্ত হাদীসের বিষয়ের বহির্ভূত। তার কারণ হাদীসের মতে, যে শহরে জামে মসজিদ আছে সেখান থেকে সফর করে অন্য শহরের জামে মসজিদে বা অন্য মাসজিদে নামায আদায় করার কোনো যুক্তি নেই। কারণ দুই স্থানের মাসজিদের সম্মান একই আর উভয়টিতে নামায আদায় করা সমান নেকি। কিন্তু উপরে বর্ণিত তিনটি মাসজিদ এই বিধানের ব্যতিক্রম তার কারণ ওখানে নামায আদায় করা বেশি নেকি।
অন্য দিকে যেহেতু মসজিদ শব্দটিকে মাহযুফ ধরার বিষয়টির ভিত্তি হল (তাবাদুরে ওরফি) অর্থাৎ (সাধারণ জ্ঞানে কোন শব্দকে শুনে তা থেকে প্রথমে যে অর্থটি মাথায় আসে) আর (شدا لرحال) হুকুম আর বিষয়ের মাঝে……
কিন্তু অন্য সম্ভাবনা অনুযায়ী- যা ইবনে তাইমিয়া এবং তার অবুসারীগণের মতামতের সাথে মিল রাখে- হাসর শব্দ থেকে যা বোঝা যায় তা হল হাসর হাকিকি, মানে হল ওই তিনটি মাসজিদ ছাড়া অন্য কনো যায়গায় সফর করো না। কিন্তু সমস্ত ইসলামী ফিরকাদের এর উপর ইজমা পাওয়া যায় যে ব্যবসা, শিক্ষা অর্জণ করা, জিহাদ, আলেমদের যিয়ারত বা সাক্ষাতের উদ্দেশ্য করে সফর করাতে কোন সমস্যা নেই।
এই ভাবে (مکان) শব্দকে মাহযুফ মানা ঠিক নয় তার কারণ তা থেকে এটা সামনে আসবে যে, ওই তিনটি মাসজিদ ছাড়া অন্য কোনো স্থানে সফর করা জায়েয না হওয়া। আর এটা স্পষ্ট যে এ কাজটি মুসলমানদের ইজমার বিপরীত। সুতরাং এই হাদীসে (الاّ) ইল্লার আগে মাসজিদ শব্দকে ‘মাহযুফ’ (উহ্য) ধরতে হবে
(لا یقصد با لسفر الی المسجد الاّ المسجد الثلاثة) অর্থাৎ তিনটি মসজিদ ব্যতীত কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা বৈধ নয়। সুতরাং হাদীসের মধ্যে পবিত্র কোন স্থান বিশেষত হযরত মুহম্মাদ (স:)এর যিয়ারত হারাম হওয়ার কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায় না।
কাসতালানীও তাঁর ‘ইরশাদুস সারী’ পুস্তকে এই অর্থের দিকে ইশারা করেছেন।[15]
তাছাড়া মাহযুফ শব্দ যদি মাসজিদও হয় তা সত্তেও এই হাদীসের বিষয়ের উপর আমল করা ঠিক হবে না কারণ প্রথম সম্ভাবনা অনুযায়ী হাদীসের অর্থ হবে যে, শুধু মাত্র ওই তিনটি মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা হোক; আর তা ছাড়া নামায আদায় করার জন্য কোনো স্থানে সফর করা জায়েয নয়। কিন্তু রেওয়ায়েত থেকে পরিস্কার ভাবে বোঝা যাচ্ছে যে, হযরত মুহম্মাদ (স:)আর সাহাবাগণ প্রতি শনিবার মাসজিদে কুবায় যেতেন কিন্তু এই মাসজিদ সেই তিনটি মাসজিদের মধ্য থেকে নয়। অথচ উক্ত হাদীস অনুযায়ী কুবা মাসজিদের দিকে সফর করাও হারাম হওয়া দরকার কিন্তু কোন মুসলমান কোন দিন একথা বলতে পারে না।
একটি রেওয়ায়েতে বর্ণনা হয়েছে যে, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর বলেন:(হযরত মুহম্মাদ (স:) প্রতি শনিবার পায়ে হেঁটে বা সাওয়ার হয়ে কুবা মাসজিদে যেতেন)
এজন্য আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর নিজেও এর উপর আমল করতেন। [16]
ইবনে তাইমিয়ার ভ্রান্ত ধারনার বিরুদ্ধে সুন্নী আলেমদের অবস্থান:
পূর্বের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে যিয়ারত একটি শরয়ী আমল। আর এ সম্পর্কে ইবনে তাইমিয়ার মতের কোন জ্ঞানগত মূল্য নেই কিন্তু আহলে সুন্নত আলেমগণ এই ফাসিদ আকিদার বিরুদ্ধে নিজেদের মতামত বর্ণনা করেছেন:
১-কাসতালানী বলেন:ইবনে তাইমিয়া থেকে যে সব মাসায়েল বর্ণিত হয়েছে তার মধ্যে জঘন্য বিষয় হল হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরযিয়ারত থেকে নিষেধ করা। [17]
২-নাবলুসী বলেন: এটা প্রথম সমস্যা নয় যাতে ইবনে তাইমিয়া এবং তার অনুসারীরা গ্রেফ্তার হয়েছে এবং তারা বাইতুল মুকাদ্দাসের যিয়ারতে যাওয়াকেও গুনাহ বলে বর্ণনা করেছেন আর হযরত মুহম্মাদ (স:)বা ওলিদের ওসিলা দিয়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে তাওয়াস্সুল করাকেও নিষেধ করেছেন।
এই ধরনের ফতোয়া ইবনে তাইমিয়ার লজ্জাজনক কুপমুন্ডকতার প্রমাণ, একারণে আলেমরা, ইবনে তাইমিয়া এবং তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছেন। এমন কি ‘হাসানী দামিশকী’ একটি স্বতন্ত্র পুস্তকে তার আকিদাকে বাতিল এবং তার কাফির হওয়াকে পরিস্কার ভাবে বর্ণনা করেছেন। [18]
৩-গাযালী বলেন: যে ব্যক্তি হযরত মুহম্মাদ (স:)এর জীবিত থাকাকালিন তার থেকে তাবার্রুক অর্জন করেছে সেই ব্যক্তিকে তার মৃত্যুর পরও যিয়ারত করে তাবার্রুক হাসিল করা দরকার। ঠিক এই ভাবে হযরত মুহম্মাদ (স:)এর যিয়ারতের জন্য সফর করা জায়েয আর (لا تشدّ الرحال) হাদীসটি এর জন্য বাধা হতে পারে না। [19]
৪-ইযামী শাফেয়ী বলেন: ইবনে তাইমিয়া হযরত মুহম্মাদ (স:)এর ব্যক্তিত্বের প্রতি অবমাননার স্পর্ধা দেখিয়েছে এবং বলেছে যে হযরত মুহম্মাদ (স:)এর যিয়ারতের নিয়ত করে সফর করা গুনাহর কাজ…।[20]
৫-হায়সামী শাফেয়ী হযরত মুহম্মাদ (স:)এর যিয়ারতের জায়েয হওয়াকে বিভিন্ন দলিলের ভিত্তিতে প্রমাণ করার পর লিখেছেন: যদি কেউ অভিযোগ জানায় যে, তোমরা কি রকম যিয়ারত জায়েয হওয়ার উপর আলেমগণের ইজমাকে দলিল বানিয়েছ, কিন্তু ইবনে তাইমিয়া তাকে অস্বীকার করে তখন আমরা তার উত্তরে বলবো ইবনে তাইমিয়া কে ? তার গুরুত্ব কি যে তাকে এত বড় স্থান দেওয়া হবে ও তাকে ইসলামী মাসায়েলে মারজা বলে গণ্য করা হবে? আর তার মতামত আলেমগণের ইজমাতে সমস্যা সৃষ্টি করবে? কয়েক জন মুসলিম গবেষক তাঁর দুর্বল দলিলের উপর অভিযোগ জানিয়েছে এবং তার মূর্খতা ও অযোগ্য মতামতকে স্পষ্ট করেছেন। [21]
সংক্ষিপ্ত এই যে, উক্ত বিষয় সম্পর্কে আহলে সুন্নতের হাফিযগণ ও মহাদ্দেসীন যে রেওয়ায়েতগুলো বর্ণনা করেছেন সে গুলো ‘ইস্তেফাযা’ বা ‘তাওয়াতুরের’ গন্ডি পর্যন্ত পৌঁছেছে। এছাড়া সাহাবাগণের অমল এবং তাদের নীতি ও হযরত বেলালের হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবর যিয়ারতের নিয়ত করে সফর করা যা সমস্ত সাহাবীগণের উপস্থিতিতে হয়েছিল আর যদি সাহাবীগণ নাও দেখে থাকতেন তবুও একথা তাদের কাছে পৌঁছে যেত কিন্তু তাঁর পরে কেউ তার এই আমলের উপর আপত্তি করেনি।
এই ভাবে হযরত ওমর কা’বুল আহবারকে হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবর যিয়ারত করার জন্য দাওয়াত দিলেন। কিন্তু সাহাবীগণের মধ্যে কেউ তার উপর আপত্তি করলেন না। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, যিয়ারত জায়েয হওয়ার উপর যে দলিলগুলো বর্ণিত হয়েছে সেগুলো খুবই শক্তিশালী দলিল। বিশেষ করে হযরত মুহম্মাদ (স:)এর যিয়ারত জায়েয হওয়াকে শুধু জায়েয নয় মুস্তাহাব হওয়াকেও বর্ণনা করছে, তার কারণ হল কিছু রেওয়ায়েতে যিয়ারতের আদেশ দেওয়া হয়েছে, আর অধিকাংশ আলেমগণ তা থেকে মুস্তাহাব অর্থ নিয়েছেন শুধু তাই নয় ইবনে হাযম আনদোলুসী এর থেকে ওয়াজিব অর্থ করেছেন যে, প্রতিটি মুসলমানের উপর জীবনে একবার হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবর যিয়ারত করাকে ওয়াজিব বলে বর্ণনা করেছেন। [22]
পবিত্র স্থান এবং কবর যিয়ারত:
পূর্বের আলোচনা হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবর যিয়ারত সম্পর্কে ছিল এবার আমরা বাকি অন্য কবর যিয়ারত জায়েয হওয়া সম্পর্কে কিছু আলোচনা করবো। ওই সমস্ত কবর যিয়ারত জায়েয হওয়াতেও হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবর যিয়ারতের মধ্যে কোনো রকম কোনো পার্থক্য নেই। হযরত মুহম্মাদ (স:)নিজে কবর যিয়ারতে যেতেন এবং মুসলমানদেরকে যেতে বলতেন। এমনকি হযরত মুহম্মাদ (স:)নিজের মা হযরত আমেনা বিনতে ওহাবের কবর যিয়ারতে যেতেন আর মুসলমানেরাও এই ভাবে অন্য মুসলমানের কবর যিয়ারত করতে যেতেন।
আর উক্ত বিষয় সম্পর্কে হযরত মুহম্মাদ (স:)থেকে রেওয়ায়েতও বর্ণনা করা হয়েছে যার কিছু নমুনা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি:
প্রথম হাদীস: হযরত মুহম্মাদ (স:) বলেন: (ائتواموتاکم فسلّموا علیهم او فصلّوا فانّ بهم عبرة)
নিজের মৃত আত্মীয়দের কাছে যাও আর তাদের উপর সালাম বা দারুদ পাঠাও কারণ তারা তোমাদের জন্য (ইবরাত) দৃষ্টান্ত বা শিক্ষাস্বরূপ। [23]
দ্বিতীয় হাদীস: হযরত মুহম্মাদ (স:)প্রতি বছরের আগমনে শহিদদের কবর যিয়ারতে যেতেন আর বলতেন: (السلام علیکم بما صبرتم، فعم عقی الدار)-সালাম হোক তোমার উপর যে তোমরা সবর করেছ, এবং আখেরতের ঘর কত ভাল। [24]
আবু বকর, ওমর ও উসমানও বছরের শুরুতে এরূপ করতেন, মুওয়াবিয়াও নিজের শাসণ কালে যখন হজ্বে যেতেন শহিদদের কবরে গিয়ে এই ভাবে সালাম করতেন।
রাভী বলেন: হযরত মুহম্মাদ (স:) যখন ‘দুর্রে’তে পৌঁছতেন ( সেই স্থান যেখানে শহিদদেরকে দাফন করা হয়েছিল) এই দোয়া পড়তেন (سلام علیکم بما صبرتم)-তোমাদের উপর সালাম তোমাদের সবরের কারণে। [25]
তৃতীয় হাদীস: হযরত আয়েশা (র:)বলেন: হযরত মুহম্মাদ (স:) রাতের শেষ অংশে বাড়ি থেকে বেরিয়ে জান্নাতুল বাকির যিয়ারত করতে যেতেন আর ওখানে গিয়ে এই দোয়া পড়তেন:
(السلام علیکم دار قوم مومنین، و آتاکم ماتوعدون غدا موجلون و انّا ان شاءالله بکم لاحقون. اللهم اغفر لاهل البقیع الغرفد)
হে মোমিনদের ঘর তোমার উপর সালাম, ভবিষ্যতে তোমাদের কাছে যে জিনিসের প্রতিশ্রুতি করা হয়েছিল সেটা এসে গিয়েছে, আর যদি আল্লাহ চায় আমিও তোমাদের পিছু পিছু আসছি। হে আমার আল্লাহ বাকিবাসীদের গারকাদ কে ক্ষমা করে দাও। [26]
চতুর্থ হাদীস: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত: হযরত মুহম্মাদ (স:) বলেন:
(الا فزوروا القبور، فانّها تزهّد فی الدنیا و تذکّر الاخرة)
সর্তক হয়ে যাও! এবং কবর যিয়ারত কর কারণ এই যিয়ারত তোমাদেরকে পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার কথা মনে করাবে আর আখেরতকে স্মরণ করাবে।[27]
কবর যিয়ারত সাহাবা ও তাবেয়ীনদের সিরতে:
রেওয়ায়েত ও ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে যে, সাহাবীগণ ও তাবেয়ীদের মাঝে কিছু কবর যিয়ারত করা প্রচলন ছিল কিন্তু কেউ সেটিকে শিরক বলেনি।
আমরা সেই সাক্ষীর কিছু নমুনা এখানে বর্ণনা করছি:
১- হযরত ইমাম মুহম্মাদ বাকের (আ:) থেকে বর্ণিত:
) انّ فاطمة بنت رسول الله (ص) کانت تزور قبر حمزة رضی الله عنه ترمّه و تصلحه و قد تعلّمته بحجر)
হযরত ফাতেমা যাহরা (স:) হযরত হামযা (আ:)এর কবর যিয়ারত করতেন, কবর পরিষ্কার পরিছন্ন করতেন এবং কবর চিহ্নিত করার জন্যে একটি পাথর কবরের উপর রাখতেন। [28]
২- রাযিন বলেন: হযরত ইমাম মুহম্মাদ বাকের (আ:) থেকে বর্ণিত:
ان فاطمه علیها السالم کانت تزور قبور الشهدا بین الیومین و الثلاثه) )
হযরত ফাতেমা যাহরা (স:) দুই তিনদিন ছাড়া একবার শহিদদের কবর যিয়ারত করতে যেতেন। [29]
৩- একটি রেওয়ায়েতে বর্ণনা করা হয়েছে যে হযরত আলী (আ:) বলেন:
ان فاطمه علیها السالم کانت تزور قبر عمَها حمزه رضی الله عنه کل جمعه فتصلَی و تبکی عنده) )
হযরত ফাতেমা যাহরা (স:) প্রতি জুমার দিন নিজের চাচা হযরত হামযা (র:)এর কবর যিয়ারত করতেন, ওখানে নামায আদায় করতেন এবং ক্রন্দন করতেন। [30]
৪- ইবনে আবি মালিকা বলেন: আমি হযরত আয়শাকে নিজের ভাই আব্দুর রহমানের (যে মক্কার বাহিরে হাবশী নামক স্থান মৃত্যুবরণ করেছিলেন তাকে মক্কায় দাফন করা হয়েছিল) কবর যিয়ারত করতেন। [31]
ঠিক অনুরূপ ভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, একদিন হযরত আয়েশাকে কবরস্থানের দিকে যেতে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম: হযরত মুহম্মাদ (স:) তোমাকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেন না? তখন তিনি বললেন: প্রথমে মানা করেছিলেন কিন্তু পরে আবার যিয়ারতের অনুমতি দেন। [32]
৫- যাহবী নিজের পুস্তক ‘সায়রে আলামুল নাবালা’তে লিখেছেন: এক ব্যক্তি বলেন: হারুন রশিদ হজ্ব আদায় করার পর মদিনায় আসে আর ইয়াহইয়া ব্নি খালিদকে বলে: এমন একজনকে আমার কাছে নিয়ে এসো যে এই শহরের পবিত্র স্থানগুলোর সম্পর্কে জ্ঞান রাখে আর আমাকে যেন বলতে পারে যে, হযরত জিব্রাইল(আ:) কি ভাবে হযরত মুহম্মাদ (স:)এর নিকটে অবতীর্ণ হতেন, এবং কবর যিয়ারত সম্পর্কে আমাকে জানাবে।
ইয়াহইয়া যার কাছে আসতো সবাই ইয়াহইয়ার দিকে ইশারা করতো এই ভাবে আমি হারুন রশিদের কাছে গেলাম এবং দ্বিতীয় দিন এশার পর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল আমি ওখানে এসে দেখলাম খাদিম প্রদ্বীপ নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, আমি যেখানেই নিয়ে যাই সেখানে হারুন রশিদ নামায আদায় করতো আর খুব বেশি দোয়া করতো এমনকি সকাল পর্যন্ত তাতেই মগ্ন থাকতো। [33]
সেই কবর জেগুলো মুসলমানদের নিকট যিয়ারতের স্থান হয়েছিল:
অতীত থেকে নিয়ে আজ পযর্ন্ত মুসলমানদের মধ্যে সাহাবীগণ, মোমিন, এবং সালেহিনের কবর যিয়ারতে যাওয়া সুন্নত ছিল এবং তাদের কাছে তাওয়াস্সুলও তাবার্রুক গ্রহণ করতো, আমি তার কিছু নমুনা এখানে বর্ণনা করছি:
১- বিলাল ইবনে হামামা হাবশীর কবরে (মৃত্যু ২০ হিজরী):
ইবনে জবায়ের থেকে বর্ণিত: হযরত মুহম্মাদ (স:) এর মোয়াজ্বিন হযরত বিলাল হাবশী ২০ হিজরী সনে দামিশকে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর কবরে তার নাম এবং মৃত্যু তারিখ লেখা আছে, ওই বরকতময় স্থানে দোয়া কবুল হয়। আওলিয়াও সালেহিন অনেকেই বিলালের কবর যিয়ারত করেছেন এবং তাবার্রুক গ্রহণ করেছেন তারা এর বাস্তবতা সম্পর্কে জানতেন। [34]
২- সালমান ফারসীর কবরে (মৃত্যু ৩৬ হিজরী):
খাতিবে বাগদাদী নিজের পুস্তক ‘তারিখে বাগদাদে’ লিখেছেন: হযরত সালমান ফারসীর কবর এখনো চিহ্নিত এবং বিখ্যাত, তার উপর রওযা বানানো হয়েছে এবং সব সময় খাদেম থাকে। আমি কয়েকবার যিয়ারত করেছি। [35]
ইবনে জৌযি বলেন: কালানসীও সামনুন বলতেন তাঁরা সালমান ফারসীর কবর যিয়ারত করে নিজের দেশে ফিরে এসেছিলেন। [36]
৩- আবু আইউয়ুব আনসারীর কবরে (মৃত্যু ৫২ হিজরী):
হযরত আবু আইউয়ুব আনসারী রুম শহরে মৃত্যুবরণ করেন। হাকিম নিশাবুরী বলেন: মানুষ তার কবরে নতুন চুক্তি করতেন এবং তার যিয়ারত করতেন আর যখন খরা দেখা দিত তখন তার ওসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য দোয়া চাইতেন।
৪- মিশর দেশে ইমাম হোসায়েন (আ:)এর মাথা যেখানে রাখা হয়েছিল সেই স্থান থেকে:
ইবনে জোবায়ের (মৃত্যু ৬১৪ হিজরী) নিজের সফরনামাতে লিখেছেন: ইমাম হোসায়েন (আ:)এর মাথা রুপার তাবুতে মিশর দেশে দাফন আছে, তার উপর বিরাট একটি রওযা বানানো হয়েছে যার প্রশংসা করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়…। আমি যখন ওই পবিত্র স্থানে প্রবেশ করলাম দেখলাম মসজিদের ভিতরের দেওয়ালের উপর কাল রঙ্গের ঝকঝকে পাথর লাগানো আছে আর সেই পাথর সামনের জিনিস গুলোর প্রতিবিম্ব আয়নার মতো দেখায়। আমি যায়েরদের দেখলাম সবাই দলে দলে কবরের দিকে এগিয়ে আসছে আর তার চাদর থেকে তাবার্রুক গ্রহণ করছে এবং তাদের অন্তরের চক্ষু থেকে ঝরা অশ্রু অন্তরকে আকৃষ্ট করছিল এবং পাথর গুলোকে যেন গলিয়ে দিচ্ছিল। তবুও ওই পবিত্র স্থানের বিবরন দেওয়া খুবই কঠিন। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ওই পবিত্র স্থানের যিয়ারত নসীব করুন। [37]
৫- ইমাম মুসা কাযিম (আ:)এর কবর থেকে:
ইমাম মুসা কাযিম (আ:) ১৮৩ হিজরী সনে শহীদ হন আর কাযমায়েনে দাফন করা হয়েছে। খতিবে বাগদাদী লিখেন: আমি ‘হাসান বিন ইব্রাহিম’ (সেই যুগের হান্বেলিদের বিখ্যাত ব্যক্তি) থেকে শুনেছি তিনি বলেছিলেন: যখনি আমি কোন সমস্যার সম্মুখীন হতাম তখন আমি ইমাম মুসা কাযিম (আ:)এর কবরে গিয়ে তাওয়াস্সুল করতাম, আল্লাহ তায়ালা আমার জন্য সমস্ত কাজ সহজ করে দিতেন। [38]
৬- ইমাম জাওয়াদ (আ:)এর কবর থেকে:
ইবনে এমাদ হাম্বালি বলেন: ইমাম জাওয়াদ(আ:) বাগদাদে মৃত্যুবরণ করেন এবং কাযমায়েনে দাফন করা হয়। মানুষ সব সময় এই ইমামের যিয়ারতের জন্য গিয়ে থাকে। [39]
৭- ইমাম রেযা (আ:)এর কবর থেকে:
মুহম্মাদ ইবনে মোয়াম্মাল বলেন: ৩০৯ হিজরীতে আহলে হাদীসের ইমাম আবুবকর বিন খুযাইমা, আবু আলী সাকাফী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে ইমাম রেযা (আ:)এর কবর যিয়ারতের জন্য তুস শহরে গেল আমি দেখলাম ইবমে খুযাইমা ওই রওযাকে বিশেষ ভাবে সম্মান জানাচ্ছেন আর বিশেষ করে সেখানে কাঁদছিলেন। আমরা সবাই তার এই কাজ দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম এবং মানুষেরা বলছিলেন যদি তার কাছে ইমামের সম্মান না হত তাহলে সে এই রূপ করতো না। [40]
৮- ওমর বিন আব্দুল আযিয ওমাভীর কবর থেকে: (মৃত্যু ১০১ হিজরী)
যাহাবী বলেন: ওমর বিন আব্দুল আযিযের কবর দামিশ্কের ‘দির সিমআন’ এলাকায় যেটা এখন যিয়ারতের একটি স্থান। [41]
৯- মুহম্মাদ বিন ইদ্রিস শাফেয়ীর কবর থেকে:
‘মুহম্মাদ বিন ইদ্রিস শাফেয়ী’ শাফেয়ীদের ইমাম ২০৪ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করে আর মিশরের ‘কেরাফা সুগরা’ নামক স্থানে দাফন করা হয়েছে। তাঁর কবর ‘মাকতুম’ নামি এক এলাকার কাছে যেটা যিয়ারতের একটি স্থান। [42]
১০- আহমাদ বিন হাম্বালের কবর থেকে:
হাম্বালিদের ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল ২৪১ হিজরী মৃত্যু বরণ করেন। যাহাবী বলেন: বাগদাদে তাঁর কবরের উপর রওযা বানানো হয়েছে আর সেটি এখন যিয়ারতের একটি স্থান। [43]
১১- যুননুন মিসরীর কবর থেকে: (মৃত্যু ২৪৬ হিজরী)
যুননুন মিসরীকে ‘কেরাফা’য় দাফন করা হয়েছে আর তাঁর কবরের উপর রওযা বানানো হয়েছে। [44]
১২- আবু হানিফার কবর থেকে:
হানাফীদের ইমাম আবু হানিফা নোমান বিন সাবিত ১৫০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর কবর বাগদাদের ‘আযানিয়া’ নামক এক এলাকায়, যেটা এখন যিয়ারতের একটি স্থান। এক সুত্র থেকে বলা হয়েছে যে, ইমাম শাফেয়ী প্রতি শনিবার আবু হানিফার যিয়ারতে যেতেন। [45]
ইসলামী ইতিহাসে মুসলমালদের মধ্যে এটি সুন্নত হিসেবে প্রচলন ছিল আর মানুষ আগ্রহ রাখতো এবং বারংবার এই কাজ করতো। পূর্বের আলোচনায় আমরা কবর যিয়ারত শারয়ী হওয়াকে পবিত্র কোরআনের আয়াত ও রেওয়ায়েত থেকে প্রমাণ করেছি এখন তার জায়েয হওয়া সম্পর্কে আহলে সুন্নত ফকীহগণের কিছু সূত্র এখানে তুলে ধরব:
১- আসকালানী ‘এরশাদুস সারী’ নামক পুস্তকে লিখেছেন যে আনাস বলেন: একদিন হযরত মুহম্মাদ (স:) একজন নারীর পাশ থেকে যাচ্ছিলেন যে নারী একটি কবরের পাশে কান্নাকাটি করছিল। হযরত মুহম্মাদ (স:) সেই নারীকে বললেন: اتقی الله و اصبری
আসকালানী উক্ত হাদীস বর্ণনা করার পর লিখেছেন: এই হাদীস থেকে কবর যিয়ারতের জায়েয হওয়ার উপর প্রমাণ দেওয়া হয়েছে; যিয়ারতকারী ছেলে হোক বা মেয়ে। আর ঠিক এই ভাবে যার যিয়ারত করা হচ্ছে সে মুসলমান হোক বা কাফির কোনো শর্ত নেই। তার কারণ ওই হাদীসে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়নি শুধু সার্বিক রায় দেওয়া হয়েছে। [46]
২- ইমাম মালিকের নিকট কবর যিয়ারত সন্পর্কে প্রশ্ন করা হল, তখন তিনি উত্তরে বললেন: হযরত মুহম্মাদ (স:) কবর যিয়ারত থেকে মানা করেছিলেন কিন্তু তার পরে অনুমতি দিয়েছিলেন। আর যদি কেউ কবর যিয়ারতে যায় আর কোনো ব্যক্তি বড় ছোট কথা না বলে তাহলে আমার নিকট কোনো সমস্যা নেই। [47]
৩- সামহুদি বলেন: পুরুষদের কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব এ সম্পর্কে আলেমগণের মধ্যে ইজমা (সর্বসম্মতমত) আছে। যেমন ভাবে নাওয়াভীও এই অর্থের দিকে ইশারা করেছেন। এর থেকে আরও উত্তম কিছু যাহেরী (ইব্রাহিম বিন মুহম্মাদ যাহেরীর অনুসারী) পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারতকে ফরয বলেছেন। [48]
ঊপরোক্ত বিষয়গুলো বর্ণনা করা হয়েছে, এগুলো ইতিহাসের, সীরতেরও হাদীসের অনুবাদ করা পুস্তকে থাকা বিষয়ের সারাংশ।
এই কারণে সাহাবীগণ ও তাবেয়ীগণ বিশেষ করে হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবর যিয়ারতের জন্য বারংবার যেতেন এবং ভীষন গুরুত্ব দিতেন। ঠিক এই ভাবে ইমামগণগণ, সালেহিন, আলেমগণ, আউলিগণের যিয়ারতের জন্য সফর করতেন কিন্তু কেউ এই আমলেকে অস্বীকার করেনি।
এখন প্রশ্ন হল: এই সমস্ত দলিলও প্রমাণ সত্ত্বেও ইবনে তাইমিয়া এবং তার অবুসারীগণের কাছে যিয়ারত এবং তার জন্য সফর করা হারাম হওয়ার উপর কি কোনো প্রমাণ আছে?
শিয়াগণ যে যিয়ারত করে পবিত্র নবীর সুন্নত আর মুসলমানদের সুন্নতের উপর আমল করছে তাহলে কি তারা গুণাহ করেছে?
এই সমস্ত কবর যেগুলিকে সমস্ত মুসলমানেরা যিয়ারত করে ইমামগণের কবর আলেমগণ আর সালেহীন এই গুলো সবকি শিয়াদের কাছে গুরুত্ব পূর্ণ? আর তার যিয়ারতকারী সবাই কি বার ইমামী শিয়া?
ইবনে খুযাইমা আর তার বন্ধু আবু আলী সাকাফী কি শিয়া ছিল?
হাম্বালিদের ইমাম যিনি ইমাম রেযা (আ:)এর যিয়ারত করেছেন তিনি কি শিয়া ছিলেন?
হযরত আয়েশা (র:)যিনি মক্কায় নিজের ভাই আব্দুর রহমানের যিয়ারত করেছিলেন, তিনি কি হযরত আলী (আ:)এর শিয়া ছিলেন?
তথ্যসূত্র:
১- এরশাদুশ সারী
২- সনানে দারে কুতনী
৩- সনানুল কুবরা
৪- আশ শিফা বেতারিফে হুকুকিল মুস্তাফা
৫- নেয়লুল আওতার
৬- আল গাদির
৭- আল মওজামুল কাবির
৮- আহইয়াও ওলুমুদ্দিন
৯- শিফাউস সেকাম
১০- ওফাউল ওফা বেআখবারে দারুল মুস্তাফা
১১- আল মওজামুল কাবির
১২- সনানে দারে কুতনী
১৩- ফুতুহুশ শাম
১৪- কামুসর রেজাল
১৪- শেফাউস সেকাম
১৫- সহীহ বুখারী
১৬- সহীহ মুসলিম
১৭- আল হাযরাতুল এনসিয়া ফি রাহলাতুল কুদসিয়া
১৮- আহইয়ায়ে ওলুমুদদিন
[1] (এরশাদুশ সারী খ:২ পৃ:৩২৯)
[2] (সুরা নিসা আয়াত ৬৪)
[3] (সনানে দারে কুতনী ক:২ পৃ:২৭৮; সনানুল কুবরা খ:৫ পৃ:২৪৫; আশ শিফা বেতারিফে হুকুকিল মুস্তাফা খ: ২ পৃ:৮৩,৮৪; নেয়লুল আওতার খ:১২ পৃ:১৭৯; আল গাদির খ:৫ পৃ:৯৩)
[4] (আল মওজামুল কাবির খ:১২ পৃ:২৯১; আহইয়াও ওলুমুদ্দিন খ:১ পৃ:২৫৮; শিফাউস সেকাম পৃ:৮৩; ওফাউল ওফা বেআখবারে দারুল মুস্তাফা খ:৪ পৃ:১৩৪০)
[5] (আল মওজামুল কাবির খ:১২ পৃ:৪০২; সনানে দারে কুতনী খ:২ পৃ:২৭৮)
[6] (নেয়লুল আওতার খ:৫ পৃ:১৮০; আল মুসনাফে আন্দুর রাজ্জাক খ:৩ পৃ:৫৬৯; আল মওয়াহেবুদ দানিয়া খ:৩ পৃ:৪০৪)
[7] (শিফাউস সেকাম পৃ: ১৪৪; মনে রাখবেন এখানে আমাদের আলোচনায় বিতর্ক আছে যেমন ভাবে আমরা জানি আমাদের নিকট শুধু মাত্র মাসুমদের নীতিই হুজ্জাত, সাহাবী হোক বা নাই বা হোক।)
[8] (ফুতুহুশ শাম খ:১ পৃ:২৪৪)
[9] (ওফাউল ওফা বেআখবারিল মুস্তাফা খ:৪ পৃ:১৩৪০)
[10] (ওফাউল ওফা বেআখবারিল মুস্তাফা খ:৪ পৃ:১৩৪০)
[11] (ওফাউল ওফা বেআখবারিল মুস্তাফা খ:৪ পৃ:১৩৪০)
[12] (কামুসর রেজাল খ:২ পৃ:৩৯৮,কিন্তু ইতিহাসে যা স্পষ্ট সেটা হল এই যে হযরত বেলাল হযরত মুহম্মাদ (স:)এর দুই বার মদিনায় আর এক বার শাম শহরে আযান দিয়েছিল.)
[13] (শেফাউস সেকাম পৃ:১৪২, তৃতিয় অধ্যায়)
[14] (সহীহ বুখারী খ:১ পৃ:৩৯৮,হাদীস ১১৩২; সহীহ মুসলিম খ:২ পৃ:১০১৪)
[15] (ইরশাদুস সারী ক:২ পৃ:৩৩২)
[16] (সহীহ বুখারী খ:২ পৃ:৩৯৯ হাদীস ১১৩৫)
[17] (ইরশাদুশ সারী খ:২ পৃ:৩২৯)
[18] (আল হাযরাতুল এনসিয়া ফি রাহলাতুল কুদসিয়া পৃ:১২৯)
[19] (আহইয়ায়ে ওলুমুদদিন খ:২ পৃ:২৪৭)
[20] (ফুরকানুল কুরআন পৃ:১৩৩, আল গাদির খ:৫ পৃ:১৫৫)
[21] (আল গাদির খ:৫ পৃ:১১৬, কাশফুল ইরতেয়াব পৃ:৩৬৯, জাওয়াহেরুল মুনায্যাম ফি যিয়ারতিল মুকার্রাম পৃ:১২)
[22] (আত তাজুল জামে লিল উসুল খ:২ পৃ:৫২)
[23] (আত তাজুল জামে লিল উসুল খ:২ পৃ:৩৮২)
[24] (ওফাউল ওফা বেআখবারিল মুস্তাফা খ:৩ পৃ:৯৩২)
[25] (ওফাউল ওফা বেআখবারিল মুস্তাফা খ:৩ পৃ:৯৩২)
[26] (ওফাউল ওফা বেআখবারিল মুস্তাফা খ:৩ পৃ:৯৩২)
[27] (ওফাউল ওফা বেআখবারিল মুস্তাফা খ:৩ পৃ:৯৩২)
[28] (সনানুল কুবরা খ: ৪ পৃ: ১৭৮)
[29] (আল মসান্নিফ খ: ৩ পৃ: ৫৭২)
[30] (আল মসান্নিফ খ: ৩ পৃ: ৫৭০)
[31] (আল মসান্নিফ খ: ৩ পৃ: ৫৭০ হাদীস ন: ৭১১)
[32] (সনানে কুবরা খ: ৪ পৃ:৭৮ হাদীস ৪৯৯৯, মাসনাদে আবি ইয়ালী খ:৮ পৃ:২৮৪ হাদীস ৪৮৭১)
[33] (সেয়রে আলামুন নাবলা খ: ৯ পৃ:৬৪২)
[34] (রাহলাতে ইবনে জবায়ের পৃ: ৯৫, আলগাদির খ: ৫ পৃ: ১৮৪)
[35] (তারিখে বাগদাদ খ:১ পৃ: ১৬৩ ন: ১২)
[36] (তারিখে বাগদাদ খ:১৩ পৃ: ১১৫ হাদীস ৭০৯৭, হিলইয়াতুল আওলিয়া খ:১০ পৃ: ৩১১)
[37] (শাযরাতুয যাহাব খ:২ পৃ:৪৮)
[38] (রাহলাতে ইবনে জবায়ের পৃ:৪৮)
[39] (তারিখে বাগদাদ খ:১ পৃ: ১২০)
[40] (তাহযিবুত তাহযিব খ:৭ পৃ: ৩৩৯, অফিয়াতুল আয়ান খ:৪ পৃ:১৬৫)
[41] (তারিখে ইসলাম ২৬, তাযকেরাতুল হুফ্ফায খ:১ পৃ: ১২১)
[42] (মেরাতুল জেনান খ:২ পৃ: ২৫)
[43] (মিযানুল এতেদাল খ:১ পৃ: ১১৪, তারিখে দামিশ্ক খ:৫ পৃ:৩৩৩)
[44] (অফিয়াতুল আয়ান খ:১ পৃ:৩১৮)
[45] (তারিখে বাগদাদ খ:১ পৃ:১২৩)
[46] (ফাতহুল বারী খ:৩ পৃ: ১৫০, উমদাতুল কারী খ:৮ পৃ:৬৮)
[47] (এরশাদুসসারী খ:৩ পৃ:৪০০)
[48] (ওফাউল ওফা বেআখবারিল মুস্তাফা খ:৪ হাদীস ১৩৬২, মাজমাউল বাহরায়েন খ:৩ পৃ:৩৯২)