বি ইসমেহি তায়ালা
তাওয়াস্সুল ও এর প্রতি বিশ্বাসের ভিত্তি
توسل و اعتقاد آن…
تالیف و ترجمه : مجید الاسلام شاه
সংকলন ও অনুবাদ
মজিদুল ইসলাম শাহ
সূচিপত্র
তাওয়াস্সুল ও এর প্রতি বিশ্বাসের ভিত্তি.. 1
তাওয়াস্সুল সম্পর্কিত রেওয়ায়েত.. 2
১- হযরত আদম(আ:)এর তাওয়াস্সুল করা: 2
২- হযরত মুহম্মাদ (স:)এর ভবিষ্যদ্বানীতে এর গুরুত্বের উল্লেখ: 2
৩- হযরত মুহম্মাদ (স:)এর আদেশ: 2
৪- হযরত ফাতেমা (স:)এর বানিতে তাওয়াস্সুলের গুরুত্ব: 2
৫- রসূল (স:)এর কবরে সাহাবাদের তাওয়াস্সুল করা: 3
৬- আবুল হোসেন ফকীহ শাফেয়ীর তাওয়াস্সুল করা: 3
৭- আবুল হোসায়েন ইবনে আবি বকর ফকীহির তাওয়াস্সুল করা: 3
৮- হাকিম নিশাবুরির তাওয়াস্সুল করা: 4
৯- যায়েদ ফারসির ইমাম রেযা (আ:)এর কবরে তাওয়াস্সুল করা: 4
১০- আবু নাসর মুয়াজ্জিন নিশাবুরীর তাওয়াস্সুল করা: 4
১১- খোরাসানের আমিরের ইমাম রেযা (আ:)এর কবরে তাওয়াস্সুল করা: 5
১২- আবু আলী খালালের ইমাম মুসা কাযিম(আ:)এর কবরে তাওয়াস্সুল করা: 5
১৩- মদিনাবাসীদের হযরত মুহম্মাদ (স:) এর কবরে তাওয়াস্সুল করা: 5
১- আল্লাহর নাম বা গুণের দ্বারা তাওয়াস্সুল করা: 7
২- কুরআনের দ্বারায় তাওয়াস্সুল করা: 8
৩- মানুষের নিজ ভাল আমলের দ্বারা তাওয়াস্সুল করা: 9
৪- একজন মুমিন ভাইয়ের দোওয়ার দ্বারায় তাওয়াস্সুল করা: 11
কিছু সভ্য ও ভদ্র মানুষের দ্বারা তাওয়াস্সুল করা, যার প্রমাণ ইতিহাসে পাওয়া যায়।. 14
তাওয়াস্সুল ও এর প্রতি বিশ্বাসের ভিত্তি
তাওয়াস্সুল কথার অর্থ হল আল্লাহর দরবারে নবীগণ (নবীগণ), ইমামগণ (ইমামগণ) সালেহীন (নেক বান্দা) ওলী, আউলীয়াকে মাধ্যম বানানো।
তাওয়াল শরীয়তে জায়েয কি না এ সম্পর্কে দুই ভাবে আলোচনা করা যেতে পারে:
১) কুরআনের আলোকে। ২) হাদীসের আলোকে।
১- কুরআন থেকে তাওয়াস্সুলের জায়েয হওয়ার ব্যাপারে কয়েকটি আয়াত তুলে ধরা হল:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَابْتَغُواْ إِلَيهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُواْ فِي سَبِيلِهِ
হে বিশ্বাসিগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর নৈকট্য (লাভের মাধ্যাম) অন্বেষণ কর এবং তাঁর পথে জিহাদ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। [1]
وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُواْ أَنفُسَهُمْ جَآؤُوكَ فَاسْتَغْفَرُواْ اللّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُواْ اللّهَ تَوَّابًا رَّحِيمًا۔
এবং (হে রসূল!) যখন তারা (অবাধ্যতা করে) নিজেদের (আত্মার) প্রতি অবিচার করেছিল, যদি তোমার নিকট আসত এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত আর রসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইত, তবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে অতিশয় ক্ষমাশীল, অনন্ত করূণাময় পেত। [2]
হযরত ইয়াকুব(আ:) এর পুত্রদের সম্পর্কে বলা হয় যে, তারা যখন তাদের কাজের জন্য লজ্জিত হয়ে পিতার নিকটে এসে বলল যে, তাদের তরফ থেকে তিনি যেন আল্লাহর নিকট ক্ষমা চান, তখন হযরত ইয়াকুব(আ:) তাদের সুফারিশকে কবুল করলেন এবং বললেন: খুব শীঘ্রই আল্লাহর নিকট তোমাদের জন্য দোয়া করবো, এই ঘটনাকে কোরআনে এই ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
قَالُواْ يَا أَبَانَا اسْتَغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا إِنَّا كُنَّا خَاطِئِينَ. قَالَ سَوْفَ أَسْتَغْفِرُ لَكُمْ رَبِّيَ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
তারা বলল, ‘হে আমাদের পিতা! তুমি আমাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় আমরা অপরাধী ছিলাম।
ইয়াকুব বলল, ‘অতি সত্বর আমি আমার প্রতিপালকের নিকট তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব। নিশ্চই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল, …..। [3]
তাওয়াস্সুল সম্পর্কিত রেওয়ায়েত
১- হযরত আদম(আ:)এর তাওয়াস্সুল করা:
জালালুদ্দীন সুয়ূতী (আহলে সুন্নাতের বিখ্যাত আলেম) নিজস্ব তাফসীর গ্রন্থে এরূপ লিখেছেন: হযরত আদম(আ:) আল্লাহ তায়ালার দরবারে এই ভাবে তাওয়াস্সুল করেছিলেন:
اللهم انی اسئلک بحق محمد وآل محمد سبحانک لااله الا انت عملت سوء وظلمت نفسی فاغفرلی انک انت الغفورالرحیم.
“হে আল্লাহ! তোমাকে মুহম্মাদ ও তার বংশধরের ওসিলা দিয়ে বলছি তুমি পাক ও পবিত্র তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নাই, আমি নিজের উপর অত্যাচার করেছি আমাকে মাফ করে দাও তুমি ক্ষমাশীল ও দয়াবান”। [4]
২- হযরত মুহম্মাদ (স:)এর ভবিষ্যদ্বানীতে এর গুরুত্বের উল্লেখ:
অন্য একটি রেওয়ায়েতে হযরত আয়েশা (র:) থেকে বর্ণিত হয়েছে: রসূল (স:) খাওয়ারিজদের সম্পর্কে বলেছেন:
شرالخلق والخلیقة یقتلهم خیر الخلق و الخلیقة ، واقربهم عندالله وسیلة. هم
“খাওয়ারিজ সব থেকে খারাপ মখলুখ (সৃষ্টি), যাদের সব থেকে ভাল মানুষ আর আল্লাহর সব থেকে নিকটতম ওসিলা হত্যা করবে”। [5]
আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত: রসূল (স:) হযরত আদম(আ:)এর তাওয়াস্সুলের সম্পর্কে বলেছেন: আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম(আ:) কে উদ্দেশ্য করে বললেন:
یا ادم! هولاء صفوتی…فاذا کان لک لی حاجة فبهولاء توسّل.
“হে আদম! এরা আমার নির্বাচিত বান্দা … যখনি কোন দরকার পড়বে তুমি এদের ওসিলা দিয়ে দোয়া করবে”।
তার পর রসূল (স:) বললেন :
نحن سفینة النجاة، و من تعلق بها نجا و من حاد عنها هلک، من کان له الی الله حاجة فلیسئلنا اهل البیت.
“আমরাই নাজাতের তরী এবং ঐ ব্যক্তিরা নাজাত পাবে যারা এই তরীতে প্রবেশ করবে, আর যারা এর থেকে বিমুখ হবে তারা হালাক হয়ে যাবে, আর আল্লাহর কাছে যদি কোন প্রয়োজন থাকে তাহলে আমাদেরকে মাধ্যম বানাও”।
৪- হযরত ফাতেমা (স:)এর বানিতে তাওয়াস্সুলের গুরুত্ব:
হযরত ফাতেমা (স:) নিজের খুতবায় বলছেন:
واحمد الله الذی بعظمته و نوره یبتغی من فی السماوات و الارض، الیه الوسیلة و نحن وسیلته فی خلقه.
“জমিন ও আসমানের মধ্যে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টায় আছে আর আল্লাহর মাখলুকের মধ্যে তাঁর নৈকট্যের মাধ্যম হলাম আমরা”। [6]
৫- রসূল (স:)এর কবরে সাহাবাদের তাওয়াস্সুল করা:
আসকালানি ‘ফাতহুল বারী’ পুস্তকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন যে, দ্বিতীয় খলিফার যুগে খরা দেখা দিয়ে ছিল তখন রসূল (স:)এর সাহাবী বিলাল বিন হারিস রসূল (স:)এর কবরের নিকট বললেন আপনার উম্মত মহা বিপদের সম্মখিন, আপনি আল্লাহর নিকট রহমতের বৃষ্টির জন্য দোয়া করুন, রসূল (স:)স্বপ্ন দেখালেন যে রহমতের বৃষ্টি বর্ষিত হবে। [7]
৬- আবুল হোসেন ফকীহ শাফেয়ীর তাওয়াস্সুল করা:
হাকিম নিশাবুরী বলেন আমি আবুল হোসেন ফকীহকে এই কথা বলতে শুনেছি:
ماعرض لی مهم من امر الدین والدنیا فقصدت قبر الرضا (علیه السلام) لتلک الحاجة ودعوت عند القبر الا قضیت لی تلک الحاجة و فرج الله عنی تک المهم …وقد صارت الیّ هذه العادۃ ان اخرج الیٰ ذلک المشهور فی جمیع ما یعرض لی فانه عندی مجرب.
“যখন আমি দুনিয়ায় কোন বিপদের সম্মুখীন হতাম তখন ইমাম রেযা (আ:)এর কবরে গিয়ে দোয়া করতাম যার ফলে সমস্ত বিপদ দূর হয়ে যেত।…শুধু তাই নয় যখন কোন বিপদে পতিত হতাম, তখন আমি ইমাম রেযা (আ:)এর যিয়ারত করতে যেতাম আর এটি আমার অভ্যাসে পরিনত হয়েছিল। কারণ এটি আমার দোয়া কবুল হওয়ার অভিজ্ঞতার স্থল হয়ে গিয়ে ছিল”। [8]
৭- আবুল হোসায়েন ইবনে আবি বকর ফকীহির তাওয়াস্সুল করা:
হাকিম নিশাবুরী বলেছেন: আবুল হোসেনকে বলতে শুনেছি:
قد اجاب الله لی کل دعوۃ دعوته بها عند مشهد الرضا علیه السلام حتی انی دعوت الله ان یرزقنی ولدا فرزقت ولدا بعد الیاس منه.
“আমি ইমাম রেযা (আ:)এর দরবারে যা দোয়া করেছি সবই কবুল হয়েছে সন্তান লাভের ব্যাপারে নিরাশ হওয়ার পরে আমি আল্লাহর নিকট তারঁ ওসিলা সন্তানের দিয়ে দোয়া করে ছিলাম, আল্লাহ সন্তান দান করেছেন”। [9]
৮- হাকিম নিশাবুরির তাওয়াস্সুল করা:
তিনি তাওয়াস্সুল করা সম্পর্কে বলেছেন: আল্লাহ তায়ালা আমাকে ইমাম রেযা (আ:)এর কবরের কেরামত থেকে জানিয়েছেন কারণ আমি অনেক কেরামত দেখেছি, উদাহরণসরূপ নিজের ব্যাপারে কিছু কেরামত বর্ণনা করছি, বহু দিন থেকে পায়ের যন্ত্রণায় ভুগছিলাম যার কারণে আমার জন্য চলা ফেরা অতি দুষ্কর ছিল, এই অবস্থায় ইমাম রেযা (আ:)এর কবর যিয়ারত করার জন্য গেলাম, সেখানে গিয়ে রাত কাটালাম সকাল বেলা উঠে দেখি আর ব্যথা নেই, এই ভাবে সুস্থ হয়ে নিশাবুর ফিরে গেলাম। [10]
৯- যায়েদ ফারসির ইমাম রেযা (আ:)এর কবরে তাওয়াস্সুল করা:
হাকিম নিশাবুরি দুই মাধ্যম থেকে র্বণনা করেছেন: আমি দুই বৎসর পায়ের ব্যাথার জন্য কষ্ট পাচ্ছিলাম এমন কি দাঁড়িয়ে নামাযও পড়তে পারতাম না, একজন ব্যক্তি স্বপ্নে আমাকে বললো তুমি ইমাম রেযা (আ:) এর যিয়ারত করতে কেন যাওনা? তাঁর কবরের মাটি পায়ে লাগিয়ে সুস্থতার জন্য দোয়া কেন করছো না? যখন আমার ঘুম ভাঙল উঠে তাড়াতাড়ি বাহনের ব্যবস্থা করে ‘তুস’ পৌঁছালাম, এবং কবরের মাটি পায়ে লাগালাম, আর রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দোয়া করলাম আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ হয়ে গেলাম, সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত দুই বছর হয়ে গেল কোন রকম কোন অসুবিধা নেই। [11]
১০- আবু নাসর মুয়াজ্জিন নিশাবুরীর তাওয়াস্সুল করা:
জোওয়ায়নী শাফেয়ী ‘ফরায়েদুস সিমতায়েন’ পুস্তকের লেখক স্বয়ং আবু নাসর নিশাবুরী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন আমি এক সময় বিশেষ একটি রোগে ভুগছিলাম এমন কি কথাও বলতে পারতাম না। হঠাৎ আমার মনের মধ্যে এক ধরনের আশা জাগলো যে, ইমাম রেযা (আ:)এর যিয়ারতে কেন যাচ্ছি না ? ওখানে গিয়ে তাওয়াস্সুল করবো আর রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দোয়া করবো, এই আশা নিয়ে সফর শুরু করলাম, কবর যিয়ারত করলাম এবং মাথার দিকে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়লাম, শেষে ইমামের মাধ্যম দিয়ে আল্লাহর দরবারে মুক্তির জন্য দোয়া করলাম। অতঃপর দেখলাম যে, হঠাৎ আমার বাক শক্তি ফিরে এল, যখন আমি সেজদা অবস্থায় বিনীত ভাবে দোয়া করছিলাম সেই সময় নিদ্রা অবস্থায় স্বপ্ন দেখলাম চাঁদ দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়ে তার ভিতর থেকে এক জন মানুষ বের হল, আমার কাছে এসে বললো: হে আবা নাসর! বল লাইলাহা ইল্লাললাহ, আমি ইশারায় বললাম কি ভাবে বলবো আমার কথা বলার শক্তি নেই, তিনি উচ্চৈস্বরে বললেন: আল্লাহর শক্তিকে কি অস্বীকার কর? বল ‘লাইলাহা ইল্লাললাহ’ হঠাৎ আমার কথা বলার শক্তি এসে গেল আর ঐ বাক্য পুনরাবৃত্তি করতে করতে নিদ্রা থেকে জেগে উঠলাম তার পরে বাড়ির দিকে রওনা হলাম, এবং সারা জীবনের সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পেলাম। [12]
১১- খোরাসানের আমিরের ইমাম রেযা (আ:)এর কবরে তাওয়াস্সুল করা:
জোওয়ায়নী শাফেয়ী মধ্যবর্তী তিন বর্ণনাকারীর মাধ্যমে খোরাসানের আমির হামবিয়া বিন আলীর খাদিমের বরাত দিয়ে বর্ণনা করেছেন: এক দিন আমি আমির হামবিয়ার সাথে বালখের বাজারে গেলাম ওখানে তিনি একজন ব্যক্তিকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার, একটি সাওয়ারি, দুইশ দিরহাম এবং খাবার কেনার জন্য আদেশ দিলেন। ওখান থেকে সস্পষ্ট গ্রেফতার কৃত ব্যক্তিকে বললেন: তুই আমার কাছে একটি চড়ের ঋণী আছিস যার বদলা আমি নিব, ওই ব্যক্তিটি আর্শ্চয হয়ে জিজ্ঞাসা করল কিসের বদলা? হামবিয়া স্মরণ করিয়ে দিল যে, আমরা দুজনে ইমাম রেযার(অ:) কবরে আর আমি আল্লাহর নিকট খোরাসানের শাসক হওয়ার জন্য দোয়া করেছিলাম আর তমি আমার দোয়া শুনে আমার ঘাড়ে আঘাত করেছিলে ভেবেছিলে আমার দোয়াটি পুরন হওয়ার নয়।
الهم ارزقنی حمارا وماتی درهم وسفرۃ فیها جبنة وخبزۃ،
“হে আল্লাহ! আমাকে একটি সাওয়ারী, দুইশ দিরহাম আর খাবারের ব্যবস্থা যার মধ্যে রুটি আর পনির থাকবে দান কর”।
আর আমি দোয়া করেছিলাম:
الهم ارزقنی قیادۃ خراسان
হে আল্লাহ! আমাকে খোরাসানের রাজত্ব দান কর। সেই সময় তুই নিজের স্থান থেকে ঊঠে আমাকে চড় মেরে বলেছিলি: এমন জিনিসের দোয়া করিস না যেটা পূরণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু দেখ, তোর দোয়া কবুল হয়েছে আর আমার দোওয়াও কবুল হয়েছে কিন্তু প্রতিশোধ বাকি আছে। [13]
১২- আবু আলী খালালের ইমাম মুসা কাযিম(আ:)এর কবরে তাওয়াস্সুল করা:
খাতিবে বাগদাদী নিজের ‘তারিখ বাগদাদী’ নামক পুস্তকে তাওয়াস্সুল সর্ম্পকে ইমামে কাযিম(আ:)এর কাছ থেকে একটি ঘটনা বর্ণনা করেছে তিনি বলেন:
ماهمّنی امر فقصدت قبر موسیٰ بن جعفر فتوسّلت به الاّ سهل الله تعالی ما احبّ۔
“আমি যখনি কোন সমস্যার সম্মুখীন হতাম তখন মুসা কাযিম(আ:)এর কবরে গিয়ে তাওয়াস্সুল করতাম, আল্লাহ আমাকে সমস্যা থেকে মুক্তি দিতেন”। [14]
১৩- মদিনাবাসীদের হযরত মুহম্মাদ (স:) এর কবরে তাওয়াস্সুল করা:
মাসউদী ‘মুরুজুযযাহাব’ এর মধ্যে র্বণনা করেছেন :
اتّصلت ولایته باهل المدینة، فاجتمع الصغیر والکبیر بمسجد رسول الله وضجّوا الی الله ولا ذوا بقبر النّبیّ ثلاثۃ ایّام لعلمهم بما هو علیه من الظلم والعسف.
৫৩ হিজরী ইরাকের হাকিম যিয়াদ বিন আবিয়া মোয়াবিয়ার নিকট চিঠিতে এই ভাবে লিখেছেন যে, আমি সম্পূর্ণ ইরাক শহরকে নিজের ডান হাতে দখল করেছি। এখন আমার বাম হাত খালি আছে অর্থাৎ আরও এলাকার রাজত্ব আমার হাতে দেওয়া হোক। অতঃপর মোয়াবিয়া হেজাজ শহরের রাজত্ব তার অধীনে করল। যখন মদিনাবাসীরা এই খবর শুনলো তখন শহরের শিশুরা ও বরিষ্ঠরা সবাই মিলে মসজিদে ‘নওয়াবীতে’ এসে জমায়াত করে কান্নাকাটি, দোয়া ও ফরিয়াদ করতে লাগলো আর তিন দিন পর্যন্ত রসূল (স:)এর কবরে গিয়ে তাওয়াস্সুল করতে লাগল। তার কারণ হল মদিনাবাসীরা জানতো যে, যিয়াদ একজন পাপী ব্যক্তি, এই তাওয়াসসুলের কারণে যিয়াদ বিন আবিহ তিন দিন পরে মারা যায়। [15]
সম্মানীয় শ্রোতাবৃন্দ! তাওয়াসসূল যায়েয হওয়ার সর্ম্পকে যে দলিলগুলো বর্ণনা করা হয়েছে আপনারা সেই দলিলগুলোকে ওহাবিদের দলিলের সাথে যাচাই করে দেখুন যে, কেন ওহাবিরা তাওসসূলকে শিরকে আকবর বলে? এবং আপনারাই বিচার করুন?
ইবনে তাইমিয়া বলেন:
الشرک شرکان: اکبر و له انواع و منه طلب الشفاعة من المخلوق و التوسل
শিরক দুই ভাগে বিভক্ত: শিরকে আকবর যা কয়েক ভাগে বিভক্ত তার মধ্যে থেকে একটি হল মানুষের কাছ থেকে তাওয়াসসূল ও শাফাআত চাওয়া।
ওহাবিদের বিশ্বাস অনুযায়ী ইসলামের প্রথম থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত সমস্ত মানুষ মুশরিক আর শুধুমাত্র নাজদি ওহাবি করনুশ শায়তান অর্থাৎ (শয়তানের সিং) এরাই সঠিক মুসলমান।
তাওয়াস্সুলের বিভিন্ন ভাগ:
আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য সেই সময় সম্ভব যখন মানুষ ওয়াজিব (ফরয) ও নাওয়াফিল (নাফেলা) কাজকে সম্পূর্ণ করবে।
হযরত আলী(আ:)এর কিছু বক্তব্য উক্ত বিষয়ের দিকে ইশারা করে। আমাদের কিছু রেওয়ায়েতে নাফেলা আমলকে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের জন্যে উত্তম মাধ্যম বলা হয়েছে।
ইমাম বাকের(আ:) বলছেন:
انّ الله جلّ جلاله قال: ما یتقرّب الیّ عبد من عبادی بشیء احبّ الیّ ممّا افترضت علیه و انّه لیتقرّب الیّ بالنافلة حتیّ احبّه فاذا احببته کنت سمعه الذی یسمع به و بصره الذی یبصر به و لسانه الذی ینطق به و یده الذی یبطش بها ان دعانی اجبته و ان سالنی اعطیته
“মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: আমার বান্দাদের জন্য কোনো জিনিস সর্বোত্তম ওয়াজিব(ফরয) ব্যতীত আমার নৈকট্য লাভের জন্য অন্য কিছু হতে পারে না আমি তাদের জন্য বেছে রেখেছি ওরা নাফেলার দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে, যাতে আমি তাদের ভালবাসি। বান্দাদেরকে এত ভালবাসি তাদেরকে কর্ণ দিয়েছি যার দ্বারা তারা শব্দ শ্রবণ করে, চক্ষু দিয়েছি যার দ্বারা তারা দর্শন করে, জিহ্বা দিয়েছি যার দ্বারাই কথা বলে আর হস্ত দিয়েছি যার দ্বারা ধারাণ করে আর যদি আমাকে ডাকে আমি তাদের ডাকে সাড়া দিই আর যদি আমার কাছে চায় আমি দান করি”।[16]
কিন্তু প্রত্যেক তাওয়াসসুলের দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় না, শুধুমাত্র সেই সমস্ত জিনিসের দ্বারায় যা শরীয়েতের মধ্যে স্মীকৃতি হয়েছে, বেদআত বা শরীয়েতের মধ্যে কোনো নতুন জিনিস প্রবেশ করানো বা হস্তক্ষেপ দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় না।
১– আল্লাহর নাম বা গুণের দ্বারা তাওয়াস্সুল করা:
আল্লাহ তায়ালা আদেশ করেন যে, আমাকে আমার নেক অর্থাৎ ভাল নামের দ্বারাই ডাকো, তার কারণ যেমন বলেছেন: ولله الاسماء الحسنی فادعوه بها আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে তাঁকে ভাল নাম ধরে ডাকো। [17]
ঠিক এমন ভাবে যে নাম গুলো কুরআনের মধ্যে বর্ণনা করা হয়েছে ও নবী যে নাম ধরে ডেকেছেন বা ডাকতে পারা যায়। সেই নাম গুলো প্রাকৃতিক গুণ হতে পারে যেমন আলিম (জ্ঞানী), ক্বাদীর (শক্তিশালী) বা বিরাজমান গুণ হতে পারে যেমন খালিক (সৃষ্টিকর্তা) ও রাযিক (রোযির মালিক)। ঠিক এই ভাবে পরিপূর্ণ গুণও হতে পারে যেমন সামী (শ্রবণকারী) ও বাসীর (সূক্ষ্মদর্শী) বা আল্লাহ তায়ালার পবিত্রতা বর্ণনাকারী যে আল্লাহ তায়ালার মধ্যে কোনো রকম ত্রুটি নেই যেমন কুদ্দুস (সকল দোষত্রুটি থেকে মুক্ত ও পবিত্র আল্লাহর অন্যতম গুণবাচক নাম), যেমন মানুষেরা বলে থাকেন:
یا الله یا رحمن یا رحیم یا خالق السماوات والارض ویا غافر الذنوب یا رازق الطفل الصغیر
“হে আল্লাহ! হে রহমান! হে রহিম! হে আসমান ও যমিনের সৃষ্টিকর্তার মালিক! ও হে গুনাহ মাফকরার মালিক ! হে ছোট্ট শিশুদের রোযির মালিক”।
আব্দুল্লা ইবনে বরিদা নিজের পিতার বরাত দিয়ে বর্ণনা করেছেন: হযরত মুহম্মাদ(স:) এক ব্যক্তির কন্ঠ শুনলেন-যে ব্যক্তি আল্লাহকে তাঁর নাম ধরে ডাকছিল, যেমন ভাবে সাধারণত মানুষ একে অপরের নাম ধরে ডেকে থাকে।
اللّهم انّی اسالک لا اله الاّ انت الاحد الصمد الذی لم یلد و لم یولد ولم یکن له کفوا احد
তখন হযরত মুহম্মাদ(স:) তাকে বললেন: তুমি আল্লাহকে তাঁর বৃহত্তম নাম ধরে ডেকেছো যদি কেউ এই নাম ধরে ডাকে আল্লাহ তায়ালা তার ডাকে সাড়া দেন আর যদি কেউ কিছু চায় আল্লাহ তায়ালা তাকে তা দান করেন।[18]
ইমাম বাকের ও ইমাম সাদিক(অ:) নিজের দোওয়াকে এই ভাবে দোওয়া শুরু করতেন:
اللهم انّی اسالک باسمک العظیم الاعظم الاعزّ الاجل الاکرام الذی اذا دعیت به علی مغالق ابواب السماء للفتح بالرحمة انفتحت، واذا دعیت به علی مضایق ابواب الارض للفرج انفرجت، واذا دعیت به علی العسر للیسر تیسّرت
“হে আমার আল্লাহ আমি তোমাকে তোমার বৃহত্তম, প্রিয়, ও মহান নাম ধরে ডাকি, আকাশের দরজা খুলার জন্যে যদি ওই নাম ধরে ডাকা হয় তাহলে রহমতের মাধ্যমে খুলে যাবে, আর যদি ওই নাম ধরে যমিনের বন্ধ রাস্তাকে খুলার জন্য ডাকা হয় সে পথও খুলে যাবে, আর যদি কোনো সমস্যার সময় ডাকা হয় সব রকম সমস্যা দূর হয়ে যাবে”। [19]
এই ভাবে যদি আল্লাহর নাম ধরে তাওয়াস্সুল করা হয় বা নিজেদের প্রয়োজন চাওয়া হয় নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তা গ্রহণ করবেন।
২– কুরআনের দ্বারায় তাওয়াস্সুল করা:
আল্লাহ তায়ালা কোরআন শরীফকে এক বিশেষ বৈশিষ্ট ও মর্যাদা দান করেছেন। তাই কোরআন এমন একটি মাধ্যম যার দ্বারা মানুষ তাওয়াস্সুল করতে পারে।
আহমাদ ইবনে হাম্বল ইমরান বিন হাসিন থেকে বর্ণনা করেছেন: হযরত মুহম্মাদ(স:) থেকে শুনেছি তিনি বললেন:
اقراوا القران واسالواالله تبارک و تعالی به قبل ان یجیء قوم یسالون به الناس
“কোরআন পাঠ কর এবং কুরআনের মাধ্যমে অন্য কেউ এসে মানুষের জন্য চাওয়ার আগে তুমি আল্লাহর কাছে চেয়ে নাও”। [20]
হরায়েয বিন আব্দুল্লাহ সাজেস্তানি ইমাম বাকের(আ:)এর কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন: শবেকদরের মুস্তাহাবের মধ্যে একটি হল মানুষ কোরআনকে উপরে তুলে খুলে বলুক:
اللهم انّی اسالک بکتابک المنزل و ما فیه اسمک الاکبر و اسماوک الحسنی وما یخاف ویرجی ان تجعلنی من عتقائک من النار
“হে আল্লাহ! আমি তোমার অবতীর্ণ করা গ্রন্থ এবং তোমার সেই মহান নাম যা তার মধ্যে অবতীর্ণ করেছো আর তোমার উত্তম নাম এবং যা কিছু ভয় প্রর্দশণ করার এবং যা কিছু মনে আশা জাগায় তার মাধ্যমে তুমি জাহান্নামের আগুন থেকে আমাকে পরিত্রাণ দান কর”। [21]
৩– মানুষের নিজ ভাল আমলের দ্বারা তাওয়াস্সুল করা:
মানুষ নিজের জীবনে সমস্ত ধরনের ভন্ডামি ও লোক দেখানো কাজ থেকে দূরে থেকে বহু ভাল আমল করে থাকে, এই ধরনের আমল দ্বারা মানুষ তাওয়াস্সুল করতে পারে এবং নিজের প্রয়োজনকে আল্লাহর কাছে চাইতে পারে। এই ধরনের তাওয়াস্সুল কিছু আয়াতের মধ্যে ইশারা করা হয়েছে। যেমন এই আয়াত:
وَ إِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَ إِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
“আর স্মরণ কর যখন ইব্রাহীম ও ইসমাইল কাবাগৃহের ভিত্তি স্থাপন করছিল। তখন তারা বলেছিল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের থেকে একে কবুল কর, নিশ্চয় তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ”। [22]
رَبَّنَا وَ اجْعَلْنَا مُسْلِمَينْ لَكَ وَ مِن ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ وَ أَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَ تُبْ عَلَيْنَا إِنَّكَ أَنتَ التَّوَّابُ الرَّحِيم
“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে তোমাার একান্ত অনুগত কর এবং আমাদের বংশধর হতে তোমার অনুগত এক উম্মত সৃষ্টি কর, আমাদের উপাসনার নিয়ম-পদ্ধতি দেখিয়ে দাও এবং আমাদেরকে ক্ষমা কর, নিশ্চয় তুমি তওবা কবুলকারী পরম দয়ালু”। [23]
এছাড়া অন্য আয়াতেও পড়ে থাকি যেমন:
الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا إِنَّنَا ءَامَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَ قِنَا عَذَابَ النَّارِ
“যারা বলে হে ‘আমাদের প্রতিপালক প্রভু! আমরা নিশ্চয়ই ঈমান এনেছি, অতএব আমাদের অপরাধ সমূহ ক্ষমা কর, আর আগুনের যাতনা থেকে আমাদের রক্ষা কর”। [24]
এই আয়াতের মধ্যে আন্তরিক আমল যার নাম হল ঈমান। ঈমান প্রস্তাব করার আগে দুটো সুপারিশ এক অপরের পর এসেছে যার বাস্তবতা তাওয়াস্সুল, সেই ভাল আমল ওই দুটো সুপারিশের জন্যে।
এছাড়া হাদীসের মধ্যে এই ধরনের তাওয়াস্সুল হযরত মুহম্মাদ(স:) থেকে বর্ণিত হয়েছে। হাসিন বিন ইমরান হযরত মুহম্মাদ(স:) থেকে বর্ণনা করেছেন: হযরত মুহম্মাদ(স:) বলেছেন: প্রাচীন যুগের তিনজন মানুষ প্রবল বৃষ্টির কারণে এক গুহায় আশ্রয় নিয়ে ছিল হঠাৎ গুহার মুখ ধ্বসের কারণে বন্ধ হয়ে গেল। তখন তারা একে অপরকে বলতে লাগলো আমাদেরকে সত্যের পথ ছাড়া অন্য কোনো জিনিস রক্ষা দেবেনা আমাদের মধ্যে যে যা জানো নিজের মতো মন দিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর, যাতে তার মাধ্যমে আমরা রক্ষা পাই। তাদের মধ্যে একজন বললো: হে আল্লাহ তুমি জানো আমার কাছে কয়েক জন শ্রমিক ছিল তারা কাজ করতো আর তাদের কাজের মজুরি এক অংশ শষ্য দিতাম। হাদীসে এসেছে (فرق من ارزّ) ফারাক এমন মাপ যা ১৬ রিতল এর সমতুল্য।[25]
সেই ব্যক্তি নিজের মজুরি না নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল আর আমি সেই শষ্য নিয়ে চাষ করলাম আর সেই চাষের টাকা দিয়ে গরু ক্রয় করলাম, হঠাৎ একদিন সেই ব্যক্তি এল এবং নিজের মজুরি চাওয়ার আগে আমি বললাম: এই গরুটা নিয়ে চলে যাও সেই ব্যক্তি উত্তরে বললো: আমার কিছু পরিমান শষ্য তোমার কাছে আছে আমি গরু নিয়ে কি করব, আমি বললাম: এই গরুটা সেই শষ্যের বিনিময়। হে আমার আল্লাহ! তুমি জানো এই কাজটা শুধু মাত্র তোমার জন্য করেছি, এই কাজের কিছু ফলাফল আমাকে দান কর, হঠাৎ গুহার মুখ কিছু অংশ খুলে গেল।
দ্বিতীয় জন বললো: হে আল্লাহ! আমার বৃদ্ধ মা বাবা আছেন প্রতিদিন রাত্রে তাদের জন্য ছাগলের দুধ নিয়ে যাই, একদিন রাত্রে আসতে দেরি হতে মা বাবা ঘুমিয়ে পড়েন, আসলে আমার পরিবার ক্ষুধার্ত ছিল, আমি ঘরে থাকলাম যাতে তারা দুধ পান করতে পারে, তাদেরকে ঘুম থেকে জাগানো ঠিক মনে করলাম না, আর দুধটা তাদের পাশে রেখে বাড়িও জেতে চাইলাম না এই ভাবে যে, হয়তো তারা দুধ খাবেনা এই কারণে সকাল পর্যন্ত সেইখানেই থাকলাম ও দুধটা তাদের হাতে দিলাম। হে আমার আল্লাহ! তুমি জানো আমি এই কাজটা শুধু মাত্র তোমার জন্যে করেছিলাম আমার কাজের বিনিময় আমাকে দান করো? সেই সময় দেখাগেলো গুহার আরও কিছু অংশ খুলে গেল।
তৃতীয় ব্যক্তি বললো: হে আল্লাহ! তুমি জানো আমার চাচাতো বোন আছে যাকে আমি খুব ভাল বাসি আর তাকে নিজের কাজের জন্য একশ দিনারের বিনিময়ে রাজি করেছি, আর যখন সমস্ত জিনিসের ভূমিকা তৈরি হয়ে গেছে তখন আমার চাচার মেয়ে বললো: আল্লাহকে ভয় পাও মেহের ভুলে যাও আমি এই নিয়ে গ্রহণ করলাম। হে আমার আল্লাহ! এই কাজ আমি তোমার জন্যে করেছি, সেই সময় গুহার মুখ পুরোপুরি খুলে গেল এবং সবাই রেহাই পেল। [26]
৪– একজন মুমিন ভাইয়ের দোওয়ার দ্বারায় তাওয়াস্সুল করা:
একজন মুমিন ভাইয়ের দোওয়ার দ্বারায় তাওয়াস্সুল করা এমন একটা মাধ্যম যার দ্বারা তাওায়াস্সুল করা যায় তার প্রমাণ কোরআনে পাওয়া যায়, যেমন: যারা আরশ বহন করে আর যারা এর চারপাশে রয়েছে তাঁরা তাঁদের প্রভুর প্রশংসায় জপতপ করছে আর তাঁর প্রতি বিশ্বাস করছে, আর পরিত্রাণ প্রার্থনা করছে তাদের জন্য যারা বিশ্বাস করেছে; [27]
আর যারা তাদের পরে এসেছিল তারা বলে- “আমাদের প্রভু ! আমাদের পরিত্রাণ করো আর আমাদের ভাই-বন্ধুদের যারা ধর্মবিশ্বাসে আমাদের অগ্রবর্তী রয়েছেন, আর আমাদের অন্তরে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ রেখো না তাদের প্রতি যারা ঈমান এনেছেন; আমাদের প্রভু! তুমিই নিশ্চয় পরম স্নেহময়, অফুরন্ত ফলদাতা” [28]
এই আয়াত গুলোর বিবরণ থেকে বুঝা যায় যে অন্যের জন্য দোওয়া করা একটি অনুকূল ও উত্তম বৈশিষ্ট্যসম্বলিত কর্ম। এর প্রমাণ হাদীস এবং রেওয়ায়েতেও পাওয়া যায়।
১- আব্দুল্লাহ বিন আমরে আস বলেছেন: হযরত মুহম্মাদ(স:)এর থেকে শুনেছি তিনি বললেন: যখনি আযানের শব্দ তোমাদের কানে আসবে তখন তোমরা সেটিকে পুনরাবৃত্তি কর এবং তার পর আমার উপর দরুদ পাঠ করবে। যে কেউ আমার উপর দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তার বিনিময়ে দশ গুণ পুরস্কার প্রদান করবেন, এবং সেই সময় আমার আল্লাহর কাছে (ওসিলা) চাও। জান্নাতের মধ্যে আল্লাহর সর্বোত্তম বান্দার জন্য একটি স্থান নিদিষ্ট আছে; আমি সেই বান্দা হতে চাই। যে কেউ আমার জন্য (ওসিলা) চাইবে আমার শাফাআত তার জন্য অবশ্যই আছে। [29]
২- মাসুম ইমামদের কাছ থেকে এই ধরণের তাওয়াস্সুল বর্ণিত হয়েছে, আবু বাসির ইমাম বাকের(আ:)এর কাছ থেকে বর্ণনা করছেন: ইমাম যয়নুল আবেদিন(আ:) নিজের এক দাসের সঙ্গে বললেন: যাও হযরত মুহম্মাদ(স:)এর কবরের পাশে দুই রাকাত নামায পড়ো এবং আমার জন্য ইস্তেগফার কর, দাস যখন এই কাজ করলো তখন তাকে স্বাধীন করে দিলেন। [30]
যাহিদ হোসায়েন বিন সাইদ আহওয়াযী নিজের পুস্তকে বর্ণনা করছেন: আলী বিন মুহম্মাদ আল হাজ্জাল ইমাম হাদি(আ:)এর কাছে পত্র লিখলেন: এক ধরনের রোগ আমার পায়ে দেখা দিয়েছে যার কারণে ওঠা ও বসা দুস্কর ও দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে, যদি আপনি ভাল হওয়ার রাস্তা জানেন তাহলে আল্লাহর কাছে রোগ ভালো হওয়ার প্রার্থনা করেন এবং আমার উপর যে ফরয কাজ আছে সেই কাজে এবং আমানত আদায় করায় আমার সাহায্য করেন। [31]
৫- হযরত মুহম্মাদ(স:)এর দোওয়ার মাধ্যাম তাওয়াস্সুল করা তাঁর মৃত্যুর পর:
উক্ত বিষয়ে দুই ভাবে আলোচনা করা হয়েছে:
১- হযরত মুহম্মাদ(স:)এর জীবন আলামে বরযাখে ২- হযরত মুহম্মাদ(স:) এবং আমাদের মধ্যে সর্ম্পক
প্রথমেই এ ব্যাপারে আমরা জানি যে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে:
وَ لَا تحَْسَبنََّ الَّذِينَ قُتِلُواْ فىِ سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتَا بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ
“আর যাদেরকে আল্লাহর পথে হত্যা করা হয়েছে তাদেরকে মৃত ভেবো না, বরং তাদের প্রভুর দরবারে জীবন্ত, তাদের রিযেক দেওয়া হয়”। [32]
يَسْتَبْشرُِونَ بِنِعْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ وَ فَضْلٍ وَ أَنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُؤْمِنِينَ
তারা আনন্দ করবে আল্লাহর কাছ থেকে অনুগ্রহের জন্য এবং করুণাভাণ্ডারের জন্য; আর নিঃসন্দেহ বিশ্বাসীদের প্রাপ্য বিফল করেন না। [33]
যতই শহীদরা বেঁচে থাকুক ও আল্লাহর কাছ থেকে রিযিক পান, কিন্তু শহীদ নবীগণ যাদের জীবন সম্পূর্ণ হয়নি তাদের থেকে সর্বত্তোম এবং তাদের ওই দুনিয়ায় একটা আলাদা জীবন আছে।
আসলে আলামে বারযাখের জীবন হল কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আল্লাহ ত্বায়ালা ওই ব্যক্তি যে হযরত মুহম্মাদ(স:) এর পাঠানোর সাক্ষী দিয়েছিলেন ও নিজের কওমের দ্বারা মৃত্যুবরণ করেছিলেন তার সর্ম্পকে বলছেন:
قِيلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَ قَالَ يَا لَيْتَ قَوْمِي يَعْلَمُونَ بِمَا غَفَرَ لِي رَبِّي وَجَعَلَنِي مِنَ الْمُكْرَمِينَ
“বলা হল- “জান্নাতে প্রবেশ কর।” তিনি বললেন-“হায় আফসোস! আমার স্বজাতি যদি জানতে পারত,- কি কারণে আমার প্রভু আমাকে পরিত্রাণ করেছেন, আর আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন”। [34]
শুধুমাত্র শহীদগণ আলামে বারযাখে এই ধরনের জীবন যাপন করে না, কাফিররাও তাদের আমল অনুযায়ী আলামে বারযাখে এই ধরনের জীবনযাপন করে, উক্ত বিষয় সর্ম্পকে একটি আয়াত বর্ণনা করছি:
النَّارُ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا غُدُوّاً وَعَشِيّاً وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ أَدْخِلُوا آلَ فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذَابِ
“আগুন-তাদের কাছে আনা হাবে সকালে ও সন্ধ্যায়; আর যেদিন হঠাৎ এসে দাঁড়াবে-“ফিরআউনের লোকেদের প্রবেশ করাও কঠোরতম শাস্তিতে।”[35]
কিছু সভ্য ও ভদ্র মানুষের দ্বারা তাওয়াস্সুল করা, যার প্রমাণ ইতিহাসে পাওয়া যায়।
১- ইতিহাসে পাওয়া যায় যে বেসাতের পূর্বে ও পরবর্তীকালে মক্কা শহরে খরা দেখা দেয়, হযরত মুহম্মাদ(স:) তখন ছোট ছিলেন, হযরত আব্দুল মুত্তালিব মুহম্মাদ(স:) কে হাতের উপর উঁচু করে আল্লাহর দরবারে বৃষ্টির জন্যে দোওয়া করলেন। সেই সময় হযরত আবুতালিব এই বিখ্যাত কবিতা পড়লেন:
وابیض یستسقی الغمام بوجهه ثمال الیتامی عصمة للارامل
“তাঁর শ্বেত মুখমন্ডলের মাধ্যমে সাদা বাদলের নিকটে বৃষ্টি চাওয়া হয় তিনি ইয়াতিম ও অনাথ বাচ্চাদের একটি আশ্রয়স্থল এবং বিধবাদের পাহারাদার”।
২- হঠাৎ আব্দুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর আবার একবার মক্কায় খরা দেখা দেয়। এবার আবুতালিব আলী(আ:) কে ধরে ক্বাবা ঘরে পিঠ ঠেকিয়ে দিয়ে আলীর দিকে ইশারা করে দোওয়া করলেন। হঠাৎ চারি দিক থেকে বৃষ্টির আশঙ্কা দেখাদিল, এবং কিছু সময় পরে মক্কার মাটি জলে পরিপূর্ণ হয়ে গেল।
৩- একদিন হযরত মুহম্মাদ(স:) স্বয়ং বৃষ্টির জন্য দোওয়া করলেন, যার ফলে মক্কা এবং মক্কার আসে পাশে বৃষ্টি দেখাদিল। হযরত মুহম্মাদ(স:) বললেন: যদি এই সময় আবুতালিব বেঁচে থাকতেন তাহলে তাঁর দৃষ্টি উজ্জ্বল হতো। কেউ আছে যে আমাকে আবুতালিবের সেই কবিতা এখন পড়ে শুনাবে? হযরত আলী(আ:) সেই কবিতা পড়ে শুনালেন এবং বললেন: আপনার উদ্দেশ্য এই কবিতা:
وابیض یستسقی الغمام بوجهه ثمال الیتامی عصمة للارامل
“তাঁর শ্বেত মুখমন্ডলের মাধ্যমে সাদা বাদলের নিকটে বৃষ্টি চাওয়া হয় তিনি ইয়াতিম ও অনাথ বাচ্চাদের একটি আশ্রয়স্থল এবং বিধবাদের পাহারাদার”।[36]
৪- আল্লাহ তায়ালার রহমতের আকর্ষণ, পবিত্র মানুষ ও বেগুনাহদের তাওয়াস্সুল করা, বয়ঃজ্যেষ্ঠ, শিশু ও পশুদেরকে নিজের সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য, নামাযে ইস্তেসকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। হয়তো আল্লাহ তায়ালা ওদের মাধ্যমে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন।
৫- ইমাম শাফেয়ী নামাযে ইস্তেসকারের পদ্ধতিতে বলছেন: আমি শিশু ও অন্ধ মহিলাদেরকে মরুভুমিতে নিয়ে যেতে চাই বিশেষ করে ওই মহিলা যারা হৃদয়গ্রাহী নয়।
সহি বুখারীতে বর্ণিত আছে যে, যে বছর মদিনায় খরা দেখা দিয়েছিল, ওমর বিন খাত্তাব আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে বৃষ্টির জন্য দোওয়া করলেন:
اللهم انا کنا نتوسل الیک بنبینا فتسقینا و انا نتوسل الیک بعم نبینا فاسقنا فیسقون
“হে আল্লাহ ! আমি তোমার নবীর দ্বারায় তাওয়াস্সুল করেছিলাম সেই সময় আমাদের পরিপূর্ণ তৃপ্ত করেদিলেন এখন হযরত মুহম্মাদের চাচার দ্বারা তাওয়াস্সুল করছি আমাদেরকে বৃষ্টির দ্বারা পরিপূর্ণ তৃপ্ত করুন”। [37]
উক্ত বিষয়ে যা কিছু আলোচনা হয়েছে তার থেকে বুঝা যায় যে, সভ্য, উচ্চ মর্যাদাবান ও ভদ্র মানুষের দ্বারা নিজের প্রয়োজন চাওয়া আল্লাহর কাছে গ্রহণীয়।
ইবনে হাজার বলছেন: আব্বাসের ঘটনা থেকে বুঝা যায় যে যারা সভ্য এবং উচ্চ সন্মানের অধিকারী যেমন আহলেবায়েত তাঁদের মাধ্যমে ইস্তেসকার দোওয়া করা মুস্তাহাব। এবং হযরত ওমারের থেকে আব্বাস উত্তম তার প্রমাণ এই হাদীস থেকে পাওয়া যায়। [38]
অনেক সময় মানুষ, সালেহীন এবং যারা উচ্চ স্থান, সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী তাদের দ্বারা আল্লাহ তায়ালার নিকট তাওয়াস্সুল করে থাকেন, যাতে আল্লাহ তায়ালা এই সালেহীনদের মাধ্যমে যেন তাদের প্রয়োজনকে পূরণ করেন। এই ধরনের তাওয়াস্সুল আবু সায়েদ খুদরী হযরত মুহম্মাদ(স:) থেকে বর্ণনা করছেন: হযরত মুহম্মাদ(স:) বলেছেন:
من خرج من بیته الی الصلاة فقال: اللهم انی اسالک بحق السائلین علیک واسالک بحق ممشای هذا، فانی لم اخرج اشرا ولا بطرا ولا ریاء ولا سمعة انما خرجت اتقاء سخطک وابتغاء مرضاتک ان تعیذنی من النار وان تغفر ذنوبی انه لایغفر الذنوب الا انت، الا اقبل الله علیه بوجهه واستغفر له سبعون الف ملک
“যে নামাযের জন্য বের হয় এবং বলে: হে আমার আল্লাহ! আমি প্রার্থনাকারীদের অধিকারের দ্বারা তোমার কাছে প্রর্থনা করছি, এবং আমি এই পদক্ষেপের অধিকারে তোমার কাছে কিছু চাই। আমি কখনও অধিক চাহিদা বা আনন্দময় জীবন যাপনের জন্য বাহ্যিক আচরণের দ্বারা মানুষকে প্রতারণা বা লোক দেখানো কাজের জন্য ঘরের বাইরে আসিনি। আমি বাইরে এসেছি তোমার ক্রোধ থেকে দূরে থাকার জন্য ও তোমার সন্তুষ্টি অনুসন্ধানের জন্যে আমাকে আগুনের হাত থেকে রক্ষা কর ও আমার দোষত্রুটিকে ক্ষমা করে দাও, কারণ তুমি ছাড়া অন্য কেউ আমার দোষত্রুটিকে ক্ষমা করতে পারবে না”। যদি কেউ এই দোওয়া পাঠ করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার সামনে সত্তর হাজার ফেরেস্তাকে পাঠাবে যারা তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে”।[39] এই হাদীসে বলা হয়েছে যে তাওসসুলের জন্য মাধ্যম বানানো প্রশ্নকারীদের অধিকারের জন্য, এই দায়িত্ব শুধু মাত্র আল্লাহর, ঐ অধিকার যা আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য দিয়ে রেখেছেন। কারণ মানুষ সে যতই বড় সন্মানের অধিকারী হোক না কেন আল্লাহর প্রতি কোনো অধিকার রাখে না। বরং আল্লাহ তায়ালার নিজ সিফাতের মধ্যেই রয়েছে মানুষের প্রতি করুনা যেটাকে ‘তাফায্যুল’ বলা হয়।
যে সময় হযরত আলী(আ:)এর মাতা মৃত্যুবরণ করলেন সেই সময় হযরত মুহম্মাদ(স:) মাইয়েতের কাছে গেলেন এবং দোওয়া করলেন। তার পর যখন কবর তৈরি হয়ে গেল তখন কবরে গিয়ে শুয়ে পড়লেন এবং একই দোওয়া পড়লেন: হে আমার আল্লাহ! তুমি মানুষের জীবন ও মৃত্যুদাতা এবং তুমি চিরজীবী ও চিরবিরাজমান। আমার মা ফাতেমা বিন্তে আসাদকে ক্ষমা করে দাও এবং কবরকে উন্মুক্ত কর নিজের প্রেরিত আমার পূর্ববর্তী নবীগনের মাধ্যমে, কেন না তুমি অতি দয়াবান। [40]
হযরত আলী(আ:) নিজের দোওয়ায় বলছেন:
بحق السائلین لک والراغبین الیک، والمتعوذین بک والمتضرعین الیک…) (
“তোমার প্রার্থনাকারীদের অধিকারের দ্বারা, অর্থাৎ যারা তোমার আগ্রহের সাথে তোমার দরবারে আশ্রয় নেয় এবং অশ্রু বর্ষণ করে তাদের অধিকারের দ্বারা…”।
[41] ( بحق محمد وال محمد علیک وبحقک العظیم علیهم ان تصلی علیهم کما انت اهله )
যখন রমযান মাসের চাঁদ দেখা দিল হযরত ইমাম যায়নুল আবেদিন(আ:) তখন এই দোওয়া পড়লেন:
اللهم انی اسالک بحق هذا الشهر وبحق من تعبد فیه [42]
হযরত মুহম্মাদ(স:) এর দ্বারা হযরত আদম(আ:)র তাওয়াস্সুল করা:
ওমর ইবনে খাত্তাব বর্ণনা করছেন: হযরত মুহম্মাদ(স:) বলছেন: সেই সময় যখন হযরত আদম(আ:) অপ্রত্যাশিত অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলেন তখন এই দোওয়া করেছিলেন:
ربی اسالک بحق محمد لما غفرت لی
“হে আমার প্রভু! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি মুহাম্মদের অধিকারের দ্বারা যে তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।[43]
এটা এক ধরনের তাওয়াস্সুল যেখানে আল্লাহর শপথ দেওয়া হয়েছে আল্লাহর আওলিয়াদেরকে। এই ধরনের তাওয়াস্সুল যেখানে শপথের কথা বলা হয়েছে উক্ত বিষয় সম্পর্কে কালাম শাস্ত্রে বিভিন্ন ভাবে আলোচনা করা যেতে পারে।
বি:দ্র: তাওয়াস্সুল (توسل) এর উপাদান হচ্ছে ওয়াসাল (وسل), উক্ত শব্দটির অর্থ হচ্ছে কোনো মানুষের নৈকট্য লাভ করা। এবং দ্বিতীয় হল ওসিলা (وسیله), উক্ত শব্দটির অর্থ হল এমন একটা জিনিস এবং কর্ম যার দ্বারা মানুষ অন্যের নৈকট্য লাভ করে।
কোরআন মুমিনদের আদেশ দেয় যে, মাধ্যমের অনুসন্ধান শুধুমাত্র আল্লাহর দিকে হওয়া চাই। তাওয়াসসুলের অর্থ এই নয় যে, প্রতিটি মাধ্যমের দ্বারা নৈকট্য লাভ করা যায়; সুতরাং ওই সমস্ত জিনিসের দ্বারা তাওয়াস্সুল করা সঠিক বলে বিবেচিত হবে শরীয়তে যেগুলোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে, এবং এছাড়া যেগুলোর অনুমতি দেওয়া হয়নি সেগুলোর দ্বারা তাওয়াস্সুল করা বেদআত, কেন না দ্বীন ইসলামের মধ্যে কোনো জিনিসকে প্রবেশ করানো হারাম।
[1] (সুরা মায়েদা ৩৫)
[2] (সুরা নিসা ৬৪)
[3] (সুরা ইউসুফ ৯৭,৯৮)
[4] (তাফসীরে দুর্রে মানসুর খ:১ পৃ:৬০)
[5] (ফারায়েদুস্সিমতায়েন খ:১ পৃ:৩৬ হাদীস ১)
[6] (শারহে নাহজুল বালাগা, ইবনে আবিল হাদীদ: খ:১ পৃ:২১১)
[7] (ফাতহুল বারী ফী শারহে সহীহ বুখারী খ:২ পৃ:৪১২)
[8] (ফারায়েদুস্সিমতায়েন খ:২ পৃ:২২০)
[9] (ফারায়েদুস্সিমতায়েন খ:২ পৃ:২২০)
[10] (ফারায়েদুস্সিমতায়েন খ:২ পৃ:২২০)
[11] (ফারায়েদুস্সিমতায়েন খ:২ পৃ:২১৯)
[12] (ফারায়েদুস্সিমতায়েন খ:২ পৃ:২১৭)
[13] (ফারায়েদুস্সিমতায়েন খ:২ পৃ:২১৯)
[14] (তারিখে বাগদাদ খ:১ পৃ:১২০)
[15] (মুরুজুয যাহাব খ:৩ পৃ:৩২)
[16] (ওসায়েলুশশীয়া ৪/৭২, বাব ১৭ বাবে নাওয়াফিল, হাদীস ৬)
[17] (সুরা আল আরাফ আয়াত ৮০)
[18] (সহীহ তিরমীযী খ: ৫ পৃ ৫১৫, হাদীস ৩৪৭৫)
[19] (মিসবাহুল মুতাহাজ্জাদ পৃ ৩৭৪)
[20] (মাসনাদে আহমাদ খ: ৪ পৃ ৪৪৫)
[21] (আল ইকবাল বিলআমাল পৃ ৪১)
[22] (সুরা বাকারা আয়াত ১২৭)
[23] (সুরা বাকারা আয়াত ১২৮)
[24] (সুরা আলে ইমরান আয়াত ১৬)
[25] (নেহায়া ইনে আসির /৩/৪৩৭; মাদ্দায়ে ফারাক)
[26] ( বুখারী শরীফ হাদীস নম্বর ৩৪৬৫ ; নুরুস সাকলায়েন খ: ৩ সুরা আল কাহাফ আয়াত ৯ ; মাজমাউল বায়ান খ:৩ পৃ: ৪৫২ সুরা কাহাফ আয়াত ৯)
[27] (সুরা আল গাফির আয়াত ৭)
[28] (সুরা আল হাশর আয়াত ১০)
[29] (সহীহ মুসলিম খ: ৩ কিতাবুসসালাত ৪)
[30] (বিহারুল আনওয়ার খ: ৪৬ পৃ:৯২)
[31] (কাশফুল গুম্মা খ: ৩ পৃ: ১৮২)
[32] (সুরা আলে ইমরান আয়াত ১৬৯)
[33] (সুরা আলে ইমরান আয়াত ১৭১)
[34] (সুরা ইয়াসিন আয়াত ২৬ ও ২৭)
[35] (সুরা আল গাফির আয়াত ৪৬)
[36] (ফাতহুল বারী খ: ২ পৃ: ৪৯৬, দালায়েলুল নাবুওয়াত খ: ২ পৃ: ১৬+১৭)
[37] (সহীহ বোখারী খ:২ পৃ:৩২)
[38] (আল বেদআত ফি মাফহুমোহাল ইসলামী পৃ:৪৬)
[39] (আল সনান খ:১ পৃ: ২৫৬, হাদীস ৭৭৮ ; মাসনদে আহমাদ খ:৩ পৃ: ২১)
[40] ( মোজামে আওসাত তিবরানী পৃ: ৩৫৬ও ৩৫৭; হিলিয়াতুল আওলিয়া খ: ৩ পৃ: ১২১; মুসতাদরাক খ: ৩ পৃ:১০৮; অদ্দরারুস্সানিয়া পৃ:৭)
[41] ( সাহিফায়ে আলাবিয়া দোওয়া ৫)
[42] (সহিফায়ে সাজ্জাদিয়া দোওয়া ১৯)
[43] (আদ্দুর্রুল মানসুর খ: ১ পৃ:১৪২)