নাম : নামায পড়ার সঠিক পদ্ধতি (হাত ছাড়া নাকি বাঁধা?)
লেখক : আয়াতুল্লাহ নাজমুদ্দীন তাবসী
অনুদবাদ : মাওলানা মজীদুল ইসলাম শাহ
সম্পাদনায় : এম. এম. রিজওয়ান সালাম খান
প্রকাশক : আল-মুস্তাফা বিশ্ববিদ্যালয়, কুম, ইরান
প্রকাশকাল : ২০১৫
সূচীপত্র
নামাযে হাত খোলা নাকি বাঁধা?. 2
নামাযে হাত বাঁধার সূত্রপাত: 10
আহলে সুন্নাত ফকিহদের মতামত.. 11
এ বিষয় সম্পর্কে তিন ধরনের মতামত পাওয়া যায়: 13
রেওয়ায়েতের অর্থ সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা ও গবেষণা: 15
উক্ত হাদিসের সংকেত সম্পর্কে আলোচনা: 17
সনদের দৃষ্টিতে উক্ত হাদিস সম্পর্কে অলোচনা: 17
উক্ত রেওয়ায়েতের সনদ সম্পর্কে আলোচনা: 18
ভূমিকা
আফ্রিকা মহাদেশের মহান আলিমদের মধ্যে একব্যক্তি যিনি বিশ্ব বিদ্যালয়ের পণ্ডিতদের মধ্যে একজন, কয়েক বার টেলিফোনের মাধ্যমে গবেষকের কাছে “তাকাত্তুফ” অর্থাৎ নামাযের সময় ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখাকে রেওয়ায়াত ও ফতওয়া এবং ঐতিহাসিক দিক দিয়ে একত্রিত করে গবেষণা প্রণয়নের আবেদন করে, তারই ফলে হল এই সংকলন।
অনেক ব্যস্ততার মধ্যে পরিক্ষা নিরিক্ষা এবং গবেষণার পর অবশেষে উপস্থিত এই সংকলনকে একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছি।
নামাযে হাত খোলা নাকি বাঁধা?
নামাযে হাত খোলা এবং বাঁধা এটা এমন একটি প্রশ্ন যা সব সময় অনেক মানুযের মস্তিষ্কে ভেসে ওঠে সেটি হল এই যে, নামাযে হাত বাঁধা কি জায়েয?, নাকি জায়েয নয়?
খেলাফ, গুনিয়া এবং দুরুস এই সমস্ত পুস্তক গুলিতে বর্ণিত হয়েছে যে, শিয়া মতানুযায়ী নামাযে হাত বাঁধা জায়েয নয়।
সৈয়দ মুর্তাযা নিজস্ব পুস্তক আল ইন্তেসারে দাবী করেছেন যে, হাত বাঁধা জায়েয নয় এবং এ বিষয়ে এজমা রয়েছে। অনুরুপভাবে উক্ত বিষয়ের উপর আহলে বায়েত(আ🙂 থেকে অনেক রেওয়ায়েতও বর্ণনা করা হয়েছে। আহলে সুন্নাতের মধ্যেও ইমাম মালিক এবং কিছু ফকিহ হাত বাঁধাকে মাকরুহ জানতেন। শুধু তাই নয় তাবেইন এবং কিছু সাহাবা থেকে বর্ণনা হয়েছে যে, তাঁরা নামাযে হাত খোলার পক্ষে বিশ্বাস পোষণ করতেন। [1]
আহলে সুন্নতের মধ্যে উক্ত বিষয় সম্পর্কে মতভেদের মূল কারণ হল: পাওয়া যায় যে, হযরত মুহম্মাদ(স🙂 এর নামায সম্পর্কে সঠিক রেওয়ায়েত আছে যেমন, ইবনে রুশদ এই সত্যতার দিকে ইশারা করেছেন। যে, হযরত মুহম্মাদ(স🙂 নামাযের সময় হাত বাঁধতেন না।
ইবরাহিম নাখঈ (যিনি আহলে সুন্নাতের চারজন খলিফার পরে ৯৬ হিজরিতে মৃত্যুবরণ করেছেন) হাত খুলে নামায পড়ার পক্ষপাতি ছিলেন।
একইভাবে তাবেয়ী হাসান বাসরী যাকে আহলে সুন্নতের অনুসারীগণ ‘শিক্ষা ও আমলে’ সেই যুগের সরদার হিসেবে গ্রহণ করতেন তিনিও হাত ছেড়ে নামায পড়তেন। ইবনে সিরিন, লেইস বিন সা‘দ, আব্দুল্লাহ ইবনে যোবায়ের যারা সাহাবী ও মালেকী মাযহাবে বিখ্যাত ব্যক্তিগণ এবং পশ্চিমা বাসীরাও (হাত ছেড়ে নামায পড়া) এই মতের বিশ্বাসী ও এই মতের উপর আমল করতেন। [2]
আহলে সুন্নতের তিনটি মতামত
আহলে সুন্নতের মধ্যে নামাযে হাত বাঁধার সম্পর্কে তিনটি ভিন্ন মতামত পাওয়া যায়:
১- হাত বেঁধে নামায পড়া মাকরুহ। ২- হাত বেঁধে নামায পড়া অপছন্দ কর্ম নয় এবং হাত না বাঁধাও মুসতাহাব নয়। ৩- মুসতাহাব। [3] এখনও পযর্ন্ত আমরা আহলে সুন্নতের এমন কোনো পুস্তকের সন্ধান পাইনি যার মধ্যে লেখা আছে যে হাত বেঁধে নামায পড়া ওয়াজিব। এখানে ওয়াজিবের সম্পর্ক শুধু মাত্র আহলে সন্নতের সাধারণ অনুসারীদের মতামত হিসেবে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। [4]
আহলে সু্ন্নতের পুস্তকে উক্ত বিষয় সম্পর্কে যেসব রেওয়ায়েত ও সুত্র বর্ণনা করা হয়েছে যদিও রেওয়ায়েতগুলো দুর্বল তার সংখ্যা ২০ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে তার মধ্যে একটি রেওয়ায়েত আবুহাযিম থেকে সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে। [5] কিন্তু যেমন ভাবে আয়নী [6], শৌকানী [7] এবং অন্যান্য ফকিহগণ এই বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছেন যে, উক্ত হাদীসগুলোর মধ্যে মুরসাল ও মুনকাতে হবার সন্দেহ পাওয়া যায়।
একইভাবে দ্বিতীয় হাদীসটি সহীহ বুখারীতে আবুঅয়েল থেকে বর্ণনা হয়েছে এবং উক্ত হাদীসেও মুরসাল ও মুনকাতে হবার সন্দেহ পাওয়া যায়। তার কারণ আলকামা যে রেওয়ায়েত তার পিতার কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন সেটা মুরসাল এবং এবিষয়ে ইবনে হাজার পরিষ্কার ভাবে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন। [8]
আর অন্যান্য রেওয়ায়েত সম্পর্কে বলা যেতে পারে যে, আহলে সুন্নাতের নিকট সেসব হাদীস দুর্বল বলে বর্ণনা করা হয়েছে এবং আসহাবে সুনান, জওয়ামে ও উলামায়ে রেজাল এ বিষয় সত্যায়ন করেছেন, তাই উক্ত বিষয়ের উপর বিশ্বাস করা যায় না। একারণে নামাযে হাত বাঁধার উপর কোনো প্রমাণ ও দলিল পাওয়া যায় না।
এছাড়া এটা এমন এক ধরনের আমল যে আমল নামাযে জায়েয হবার বিষয়ে কোনো রকম প্রমাণ নেই। এ কারণে হাত বাঁধা জায়েয এবং সুন্নাত বা নামাযের আদব এই নিয়ত করে নামায আদায় করা অবশ্যই হারাম। কেননা হাত বেঁধে নামায আদায় করা জায়েয এই বিষয়ে শরিয়তে কোনো দলিল ও প্রমাণ পাওয়া যায়নি অধিকন্ত হাত বাঁধা থেকে বিরত রাখার জন্য বহু হাদীস বর্ণনা হয়েছে। [9]
আহলে বায়েত(আ🙂 হতে হাত বাঁধার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তাছাড়া নামাযে হাতের উপর হাত রাখা এটা এমন এক ধরনের আমল যা নামাযের মধ্যে জায়েয নয়। যেমন ভাবে ইবনে রুশদ্ উক্ত বিষয়ের জায়েয না হবার উপর পরিষ্কার ভাবে ইশারা করেছেন।
আর ইমামগণ এই কর্মকে (تکفیر) তাকফীর বলে নাম ধারণ করেছেন যা মাজুসিরা করে থাকতো। সুনিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে, এই কর্ম রসূল(স:)‘র সুন্নাত নয়। [10]
নামাযে হাত বাঁধা সম্পর্কে আহলে সুন্নতের ফকিহগণের মধ্যে বিভিন্ন মতভেদ পাওয়া যায় যে, হাত নাভির উপরে রাখা ঠিক, না নাভির নীচে? ডান হাত বাম হাতের উপর, না বাম হাত ডান হাতের উপর রাখা উচিত?
এখানে একটা প্রশ্ন ভেসে ওঠে যে, এমন একটা কর্ম যার গুণ বা পদ্ধতি নির্দিষ্ট নয়, সেই কর্ম কিভাবে সুন্নাতে মুয়াক্কেদা হতে পারে? এবং এটা কিভাবে হতে পারে যে, যে সাহাবীগণ মুস্তাহাব নামায, জানাযার নামাযে, ঈদের নামায ও পাঁচ ওয়াক্তের নামায রসূল(স:)‘র ইক্তেদায় আদায় করতেন, সেই সাহাবীদের কাছে (হাত বেঁধে নামায আদায় করা) এই পদ্ধতি কিভাবে গোপন থাকতে পারে?
এই সমস্ত সাক্ষ্য ও প্রমাণ থেকে বোঝা যায় যে, এরূপ বিষয় রসূল(স:)‘র যুগে ছিল না। একারণে বলা যেতে পারে যে, নামাযে হাত বাঁধা, ‘তারাবি নামায’ জামাতের সঙ্গে আদায় করা, আযানে ‘আসসালাতো খায়রুম মিনান নাওম’ প্রবেশ করানো, ‘হাইয়া আলা খায়রিল আমাল’ আযান থেকে সরানো, ‘মুতয়াতুল হজ্’ ও ‘মুতয়াতুন নিকাহ’ হারাম করা এবং হাদীস লেখা থেকে নিষেধ করা এই সমস্ত বিষয় রসূল(স🙂‘র যুগে ছিল না বরং পরবর্তীকালে এসব বিষয় গুলোকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
আহলে বায়েত(আ:)‘র রেওয়ায়েত
আহলে বায়েত(আ🙂 থেকে বহু রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে যেখানে নামাযে হাত বাঁধাকে নিষেধ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, এরুপ কাজ অগ্নিপুজারীদের:
১- (عن احدهما علیهما السلام قلت: الرجل یضع یده فی الصلاة ،وحکی الیمنی علی الیسری؟ فقال: ذلک التکفیر، لا تفعل.)
অর্থ: রাবী বলছেন: আমি ইমাম বাকের অথবা সাদিক(আ🙂‘র কাছে প্রশ্ন করলাম যে, এক ব্যক্তি নামাযে হাত বাঁধে এবং ডান হাত বাম হাতের উপর রাখে। ইমাম বললেন: এটা একটি অবিশ্বাসী কর্ম একর্ম করো না। [11]
আল্লামা মাজলিসী এই হাদীস বর্ণনা করার পর বলছেন: এই হাদীস ‘হাসান’ এবং সহীহ’র সমতুল্য। আর ‘তাকফির’ এর অর্থ হচ্ছে হাতের উপর হাত রাখা যা আহলে সুন্নাতেরা করে থাকে এবং এ কাজ নিষেধ করার কারণ হল এটাকে হারাম করা হয়েছে যেমন ভাবে আমাদের বেশির ভাগ আলেমদের বিশ্বাস এটাই।
২- (عن ابی جعفرعلیه السلام: وعلیک بلاقبال علی صلاتک…ولاتکفّرفانّما یفعل ذلک المجوس)
অর্থ: ইমাম বাকের(আ🙂 বলছেন: নামাযের সময় কিবলার দিকে মুখ কর…এবং নামাযে হাত বেঁধো না কারণ এটা অগ্নিপুজারীদের কর্ম। [12]
৩- (علی بن جعفر قال: قال اخی: قالعلی بن الحسین علیه السلام: وضع الرجل احد یدیه علی الاخری فی الصلاة عمل، ولیس فی الصلاة عمل)
অর্থ: আলী ইবনে জাফর বলেছেন আমার ভাই ইমাম মুসা কাযিম(আ🙂 বললেন যে, ইমাম যায়নুল আবেদিন(আ🙂 বলেছেন: নামাযে এক হাতকে অপর হাতের উপর রাখা একটি আমল আর নামাযে অন্য কোনো আমল করা জায়েয নয়। [13]
৪- (علی بن جعفر(عن اخیه موسی بن جعفر)وسالته عن الرجل یکون فی صلاته ایضع احد یدیه علی الاخری بکفّه او ذراعه؟ قال:لایصلح ذلک، فان فعل فلایعود له)
অর্থ: আলী ইবনে জাফর তার ভাই ইমাম মুসা কাযিম(আ🙂‘র সম্পর্কে বলেছেন যে, আমি তার কাছে এমন এক ব্যক্তির সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম যিনি নামাযের অবস্থায় আছেন সে কি নিজের হাতকে কুনই বা বাহুর উপরে রাখতে পারে? ইমাম বললেন: এই কাজ ঠিক নয় যদি তা করে থাকে তাহলে যেন পুনরাবৃত্তি না করে। [14]
৫- (عن علی علیه السلام فی حدیث اربعماة:قال: لا یجمع المسلم یدیه فی صلاته و هو قائم بین یدی الله عزّوجلّ ، یتشبّه باهل الکفر یعنی المجوس)
অর্থ: ইমাম আলী(আ🙂 হাদীসে ‘আরবায়ামেয়া’ নামক গ্রন্থে বলেছেন: মুসলমানদের জন্য জায়েয নয় যে, যখন তারা নামাযের জন্য আল্লাহর দরবারে দাঁড়াবে নিজের হাতকে গুটিয়ে নেবে, কারণ তারা নিজেদের এই কর্মের দ্বারা আহলে কুফর অর্থাৎ অগ্নিপুজারীদের মতো হয়ে যাবে। [15]
৬- (عن ابی عبدالله علیه السلام فی حدیث: انّه لمّا صلّی قام مستقبل القبلة، منتصبا، فارسل یدیه جمیعا علی فخذیه قد ضمّ اصابعه)
অর্থ: ইমাম সাদিক(আ🙂‘র সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন ইমাম নামাযের জন্য দাঁড়াতেন তখন কিবলার দিকে মুখ করে নিজের হাতকে রানের উপরে রাখতেন আর আঙ্গুলগুলোকে জড়ো করে নিতেন। [16]
৭- (عن ابی جعفر علیه السلام: قال: اذا قمت الی الصلاة فلا تلصق قدمک بالاخری…واسد منکبیک وارسل یدیک ولا تشبّک اصابعک ولیکونا علی فخذیک قبالة رکبتیک… لا تکفّر فانما یفعل ذلک المجوس)
অর্থ: ইমাম বাকের(আ🙂 বলেছেন: যখন নামাযের জন্য দাঁড়াবে তখন নিজের পা কে মিলাবে না, কাঁধকে সোজা করে নাও, হাত খুলে রাখো, আঙ্গুল গুলোকে একটি আরেকটির উপরে রাখবে না এবং নিজের হাতকে রানের উপরে রাখো…এবং হাত বেঁধো না তার কারণ তা অগ্নিপুজারীদের নিয়ম। [17]
৮- (المجلسی عن الجامع البزنطی عن ابی عبدالله علیه السلام:فاذا قمت فی صلاتک فاخشع فیها…ولا تکفّر)
অর্থ: আল্লামা মাজলিসী জামেয় বাযানতী থেকে ইমাম জাফর সাদিক(আ🙂‘র সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম বললেন: যখন নামায আদায় করার ইচ্ছে হবে তখন মনোযোগ ও বিনয়ের সাথে নামায আদায় করবে…এবং হাত বেঁধো না। [18]
৯- (القاضی نعمان المصری عن جعفر بن محمد علیه السلام انّه قال: اذا کنت قائما فی الصلاة فلا تضع یدک الیمنی، فانّ ذلک تکفیر اهل الکتاب، ولکن ارسلهما ارسلا ، فانّهاحری ان لایشغل نفسک عن الصلاة
অর্থ: কাযী নোমান মিসরী ইমাম সাদীক(আ:)’র থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম বললেন: যখন নামাযের জন্য দাঁড়াবে সেসময় নিজের ডান হাতকে বাম হাতে বা বাম হাত ডান হাতের উপর রাখবে না, কারন এটা আহলে কিতাবদের কাজ তোমরা হাত খুলে রাখো। সুতরাং তোমাদের জন্য এটাই ভাল যে, তোমরা নিজেকে নামায ছাড়া অন্য আমলের দিকে নিয়ে যেয়ো না। [19]
১০- (عن ابی جعفرعلیه السلام قال: قلت له (فصلّ لربک ونحر)؟ قال: النحرالاعتدال فی القیام ان یقیم صلبه و نحره . وقال: ولا تکفّر ، فانّما یصنع ذلک المجوس)
অর্থ: ইমাম বাকের(আ🙂 থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, ইমামের কাছে প্রশ্ন করা হল যে, (فصلّ لربک ونحر) এর উদ্দেশ্য কি? ইমাম বললেন: (نحر) এর অর্থ হল কিয়ামের সময় ভারসাম্যকে বজায় রাখা ঠিক এমন ভাবে যেন পিঠ আর গলা সোজা হয়ে থাকে, আরও বললেন: হাত বাঁধা থেকে দুরে থাকো কারণ এটা অগ্নিপুজারীদের নিয়ম।[20]
শিয়া ফকিহদের মতামত
১- শেখ মুফীদ(র🙂 বলেছেন: নামাযে হাত ছেড়ে রাখার বিষয়ে শিয়ারা এক মত। আর শিয়ারা আহলে কিতাবদের মতো (تکفیر) আমল অর্থাৎ এক হাতকে অন্য হাতের উপর রাখাকে জায়েয মনে করেন না। শুধু তাই নয় যারা এরুপ বিদআত করে থাকে তারা রসূল এবং আহলে বাইতের ইমামগণের সুন্নাতকে অস্বীকার করে। [21]
২- সৈয়দ মুর্তাযা(র🙂 বলেছেন: যে সমস্ত কর্ম সম্পর্কে ধারণা করা হয় যে, তা শিয়াদের জন্য নির্ধারিত হয়েছে। তার মধ্যে থেকে একটি হল নামাযে হাত না বাঁধা কারণ তারা ছাড়া অন্য ফির্কাদের বিশ্বাস হল নামাযে হাত বাঁধা মাকরুহ। তহাভি ‘ফকিহদের’ মতভেদকে বর্ণনা করে বলেছেন: ইমাম মালিকের দৃষ্টিতে যদি মুসতাহাব নামাযে কেরাত পড়তে বা কিয়াম দীর্ঘ হয়ে যায়, তাহলে ওই সময় হাত বাঁধা জায়েয কিন্তু আমার দৃষ্টিতে হাত না বাঁধা উত্তম। [22]
৩- শেখ তুসী(র🙂: নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর বা বাম হাত ডান হাতের উপর রাখা জায়েয নয়। ইমাম মালিক থেকে দুটি রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে যার মধ্য থেকে একটি হল ইমাম শাফেয়ীর কথা অনুযায়ী নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা জায়েয এবং ইবনে কাসিম থেকে যে রেওয়ায়েত এসেছে তাতে হাত খুলে রাখাকে উত্তম বলা হয়েছে।
আর ইমাম মালিকের কথা অনুযায়ী মুসতাহাব নামাযে যখন কিয়াম দীর্ঘ হয়ে যাবে তখন হাত বাঁধা জায়েয, আর যদি দীর্ঘ না হয় তাহলে জায়েয নয়। কিন্তু ওয়াজিব নামাযে তা জায়েয নয়। একইভাবে লায়েস বিন সায়াদেরও এই উক্তি যে, যদি ক্লান্তবোধ হয় তাহলে হাত বাঁধা ঠিক, আর যদি ক্লান্তবোধ না হয় তাহলে হাত বাঁধা ঠিক নয় এবং ইমাম মালিকেরও একই উক্তি।
আমাদের প্রমাণ: ইমামিয়া মাযহাবের ইজমা আছে যে, নামাযে হাত বাঁধা যা নামাযকে বাতিল করে দেয় এই উক্তিতে ইমামিয়া ফিরকাদের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই। তাছাড়া নামাযের কোনো অংশকে প্রমাণ করার জন্য শরীয়তি প্রমাণের দরকার হয় আর সেই প্রমাণ শরীয়তে নেই, তাই সতর্কতামুলক নামাযে হাত বাঁধা থেকে বিরত থাকা উত্তম। কারণ এতে সন্দেহ নেই যে, যে নামাযে হাত বাঁধা হয়নি তা সম্পূর্ণ ঠিক এবং দ্বিতীয় কথা এই যে, নামায সঠিক হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। [23]
৪- শেখ বাহায়ী(র🙂: (تکفیر) তাকফীর‘র অর্থ হচ্ছে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা যা আহলে সুন্নতের অনুসারীগণ করে থাকেন এবং আমাদের বেশির ভাগ ফকিহরা এ কাজ হারাম হবার কারণে নিষেধ করেছেন।
প্রশ্ন: তাকফীরের দ্বারাই কি নামায বাতিল হয়ে যায়?
আমাদের বেশীর ভাগ আলেমগণ বলেছেন তাকফীরের দ্বারাই নামায বাতিল হয়ে যায় শুধু তাই নয় এই বিষয়ের উপর ইজমা রয়েছে বলে শেখ তুসী ও সৈয়দ মুর্তাযা নিজেদের মত প্রকাশ করেছেন। [24]
নামাযে হাত বাঁধার সূত্রপাত:
বলা হয়ে থাকে যে, নামাযে হাত বাঁধা দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর(র🙂‘র সৃষ্ট বিদআত সমূহের একটি। যা তিনি অনারব বন্দিদের নিকট থেকে নিয়েছেন।
মহাক্কিকে নাজাফী থেকে বর্ণিত:
(حکی عن عمرلمّا جیء باساری العجم کفّروا امامه، فسأل عن ذلک، فأجابوه: بأنّا نستعمله خضوعاً و تواضعاً لملوکنا، فاستحسن هو فعله مع الله تعالی فی الصلاة، و غفل عن قبح التشبّه بالمجوس فی الشرع)
অর্থ: যখন দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর(র🙂‘র কাছে অনারব বন্দিদেরকে নিয়ে আসা হল তখন তারা খলিফার সামনে নিজের হাতকে অপর হাতের উপর রাখলো। খলিফা তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন, তারা বলল আমরা আমাদের বাদশাহর সামনে বিনয় দেখানোর জন্যে এরুপ করে থাকি, খলিফার এই কর্মটি পছন্দসই মনে হল এবং নামাযে আল্লাহর মোকাবেলায় তা করতে শুরু করলো কিন্তু ভুলে গিয়েছিল যে, শরিয়তে অগ্নিপুজারিদের কোনো জিনিসকে প্রবেশ করানো জায়েয নয়! কিন্তু উক্ত বিষয়ের উপর ইতিহাসের পুস্তকে আমরা কোনো রকম প্রমাণের সন্ধান পাইনি।
আহলে সুন্নাত ফকিহদের মতামত
১- মুদবেনাতুল কুবরা (ইবনে কাসীমের কথা আনুযায়ী ইমাম মালিকের মতামত):
ইমাম মালিক নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখার বিষয়ে বলেন যে, আমার দৃষ্টিতে ‘ওয়াজিব নামাযে’ তা জায়েয নয়। ইমাম মালিক এটাকে মাকরুহ বলেছেন, কিন্তু মুসতাহাব নামাযে জায়েয করেছেন, যে গুলোতে কিয়াম দীর্ঘ হয়। [25]
২- কুরতুবী বলেন: নামাযে এক হাত অপর হাতের উপর রাখা সম্পর্কে আলেমদের মধ্যে মতভেদ পাওয়া যায়। ইমাম মালিক ওটাকে ‘ওয়াজিব নামাযে’ মাকরুহ বলেন কিন্তু ‘মুসতাহাব নামাযে’ জায়েয বলেন। (جمهور اهل سنّت) অর্থাৎ আহলে সুন্নাতের সার্বিক মতামত এই যে, এক হাতকে দ্বিতীয় হাতের উপর রাখা এটা একটি মুসতাহাব কর্ম। তাদের এই মতভেদের কারণ হল যে, রসূল(স🙂‘র নামাযের সম্পর্কে ওই প্রমাণিত চিহ্ন যার মধ্যে কোনো ধরনের হাত বাঁধার সম্পর্কে ইঙ্গিত করা হয়নি। অন্য দিকে জনসাধারণকে এর আদেশ দেওয়া হল। আবু হামিদের রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূল(স🙂 এই ধরনের আমল করতেন।
এ কারণে কিছু আলেমদের মতামত এই যে, যে সমস্ত রেওয়ায়েত ও চিহ্ন গুলিতে নামাযে হাত বাঁধার প্রমাণ পাওয়া যায় তাতে অতিরিক্ত জিনিস পরিহারের আহবান করা হয়েছে, যার মধ্যে হাত বাঁধার প্রমাণ পাওয়া যায় না সুতরাং এটা সম্পাদন করা আমাদের প্রতি ওয়াজিব।
ঠিক এভাবে কিছু মানুষ বলেন যে, ওই চিহ্ন গুলির উপর আমল করা যাক যার মধ্যে অতিরিক্ত কোনো জিনিস নেই, কারণ ওই রেওয়ায়েত গুলোর সংখ্যা অনেক বেশী। এ কারণে নামাযে হাত বাঁধা জায়েয নয় বরং এটা আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাওয়ার একটি পন্থা এবং ইমাম মালিক এ কারণে মুসতাহাব নামাযে হাত বাঁধাকে জায়েয বলেছেন কিন্তু ওয়াজিব নামাযে হাত বাঁধাকে নিষেধ করেছেন। [26]
৩- কিতাবে বায়ান ও তাফ্সীল: এই পুস্তকে লেখা আছে আমি নামাযে হাত বাঁধার সম্পর্কে নিজের শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করলাম: ওয়াজিব বা মুসতাহাব নামাযের কেয়ামের সময় ডান হাত বাম হাতের উপরে রাখা কি ঠিক?
মুহম্মাদ ইবনে রুশদ বলেছেন: ইমাম মালিকের এই উক্তি (ডান হাত বাম হাতের উপরে রাখা আমার নজরে কোনো সমস্যা নেই) বর্ণনায় ওয়াজিব বা মুসতাহাব নামাযে হাত বাঁধা জায়েয এটা পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায় এবং মুদবেনাতুল কুবরায় ইবনে কাসীমের রেওয়ায়েতে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, নামাযে হাত না বাঁধাই উত্তম। কারণ ওই রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, আমি ওয়াজিব নামাযে হাত বাঁধাকে জায়েয মনে করি না। ইবনে মালিক এটাকে মাকরুহ মনে করেন কিন্তু মুসতাহাব নামাযে কিয়াম দীর্ঘ হবার কারণে যদি ক্লান্তি বোধ হয়, তাহলে হাত বাঁধা জায়েয এবং অন্য রেওয়ায়েত গুলোতে (হাত বাঁধাকে মাকরুহ মনে করে) এই বাক্য পাওয়া যায়নি, যদি এই বাক্যকে গ্রহণ না করি তাহলে জানা যায় যে, ইমাম মালিকের মাযহাব অনুযায়ী হাত বাঁধা থেকে বিরত থাকা অতি উত্তম কারণ তার এই উক্তির (لا اعرف ذلک فی الفریضة) অর্থ হল আমি ওয়াজিব বা ফরজ নামাযে হাত বাঁধাকে জায়েয মনে করি না।
আর যেখানে এটা বলা হয়েছে যে, যদি মুসতাহাব নামাযে কিয়াম দীর্ঘ হবার কারণে ক্লান্তি বোধ হয়, সেসময় তা দুর করার জন্যে হাত বাঁধলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যদি ওয়াজিব নামাযে কিয়াম দীর্ঘ হলেও হাত বাধা জায়েয নয় এ থেকে বুঝা যায় যে, মুস্তাহাব নামাযে কিয়াম দীর্ঘ না হলে তাতে হাত বাঁধা জায়েয নয়। আর যদি এই বাক্য (کان یکره) থাকে তাহলে আসল অর্থ স্পষ্ট হয়ে যায়; কারণ মাকরুহ বাক্যের অর্থ হল এমন একটি কর্ম যা না করলে সাওয়াব বা নেকী পাওয়া যায় এবং যদি করা হয় তাহলে কোনো গুনাহ নেই। [27]
৪- নাওয়াভী বলেছেন: নামাযে হাত বাঁধা আমাদের মাযহাবে সুন্নত…ইবনে মানযার আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের হতে হাসান বাসরী ও নাখয়ী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত মুহম্মাদ(স🙂 নামাযে হাত খুলে রাখতেন, বাঁধতেন না। কাযী আবু তাইয়াবও ইবনে সিরিন থেকে বর্ণনা করেছেন এবং লায়েস ইবনে সায়াদও বলেছেন যে, হযরত মুহম্মাদ(স🙂 নামাযে হাত খুলে রাখতেন কিন্তু যখন কিয়াম দীর্ঘ হয়ে যেত তখন অল্প আরামের জন্য ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখতেন। কিন্তু ইবনে কাসীম ইমাম মালিক থেকে হাত খুলে নামায পড়ার কথা বর্ণনা করেছেন এবং এটাই বিখ্যাত। তাছাড়া সমস্ত সাহাবা বা মানব সমষ্টি এই উক্তিকে গ্রহণ করেন এবং তারা নামাযে মাসী (ভুলে যাওয়া মানুষের নামায) থেকে বরাদ দেয় যেখানে হযরত মুহম্মাদ(স🙂 তাদেরকে নামায শিখিয়ে ছিলেন কিন্তু সেখানে হাত বাঁধা সম্পর্কে কিছু বলেননি…। [28]
এ বিষয় সম্পর্কে তিন ধরনের মতামত পাওয়া যায়:
প্রথমত: ওয়াজিব ও মুস্তাহাব নামাযে হাত বাঁধা জায়েয। এর অর্থ হচ্ছে হাত বাঁধা মাকরুহও নয় আবার হাত বাঁধা মুস্তাহাবও নয়। এই উক্তি ওই রেওয়ায়েত (নামাযে মাসী) থেকে বুঝা যায়।
দ্বিতীয়ত: মাকরুহ, ওয়াজিব ও মুস্তাহাব নামাযে হাত না বাঁধা মুস্তাহাব কিন্তু যদি মুস্তাহাব নামাযে কিয়াম দীর্ঘ হয়ে যায় তাহলে হাত বাঁধা জায়েয, ইমাম মালিকের মতে মাকরুহও নয় মুস্তাহাবও নয় এ কথা মুদবেনাতুল কুবরায় বর্ণনা করা হয়েছে।
তৃতীয়ত: ওয়াজিব এবং নফল নামাযে হাত বাঁধা মুস্তাহাব এবং না বাঁধা মাকরুহ। এ উক্তিও ইমাম মালিকের, যা মাতরুফ ইবনে মাজশুনের রেওয়ায়েতে বর্ণনা করেছেন। [29]
৫- আয়নী বলেন: আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের, হাসান বাসারী ও ইবনে সিরীন হতে ইবনে মানযার বর্ণনা করেছেন যে তারা নামাযে হাত খুলে রাখতেন, ঠিক এভাবে ইমাম মালিকও নামাযে হাত খুলে রাখতেন তবে কিয়াম দীর্ঘ হবার সময় সাচ্ছন্ন বোধের জন্য ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতেন।
একইভাবে লেয়েস ইবনে সায়াদ বলেন: আউযায়ীর মতে হাত বাঁধা ও খোলা বিষয়টা মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে তার অর্থ হল দুই ভাবেই পড়া যেতে পারে। [30]
৬- শওকানী দারে কুতনী থেকে বর্ণনা করেছেন: আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের, হাসান বাসারী এবং নাখয়ীর সম্পর্কে ইবনে মানযার বর্ণনা করেছেন যে, তারা নামাযে হাত খুলে রাখতেন, ডান হাতের উপর বাম হাত রাখতেন না। লায়েস ইবনে সায়াদ থেকে নাওয়াভী, কিতাবুল বাহরে কাসীমিয়া নাসীরিয়া ও বাকেরিয়া থেকে মাহদী এবং মালিক থেকে ইবনে কাসীম এভাবে বর্ণনা করেছেন। [31]
৭- যোহায়লী বলেন: মালেকী মাযহাব ছাড়া ওলেমাদের সামষ্টিক মত এই যে নামায আদায়কারীদের জন্য তাকবীরের পরে নিজের ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রাখা মুসতাহাব।
৮- ইমাম মালিক: মালেকী মাযহাবের উক্তি এটা যে, নামাযের মর্যাদার জন্য হাত খুলে রাখা উত্তম আর মুস্তাহাব নামাযে বিনা কোনো প্রয়োজনে হাত বাঁধা মাকরুহ।
তিনি মালেকী মাযহাবের বাস্তবতা বর্ণনা করতে গিয়ে আরো বলেন: মালেকী মাযহাবে নামাযে হাত বাঁধা মাকরুহ হবার ফতোয়া দেয়ার কারণ হল যে এটা বিশ্বাস নষ্ট করা কাজ, আর এটা এমন কর্ম যা হযরত মুহম্মাদ(স🙂 থেকে কোন প্রমাণ নেই। অথবা এটা সাধারন মানুষের বিশ্বাস যে, নামাযে হাত বাঁধা ওয়াজিব বা এমন বিশ্বাস রাখা ভুল আকিদার সাথে যুদ্ধ করার সমতুল্য। [32]
আহলে সুন্নাতের রেওয়ায়েত:
১- البخاری:(…عن ابی حازم، عن سهل:قال: کان النّاس یؤمرون ان یضع الرجل الیدالیمنی علی ذراعه الیسری فی الصلاة. قال ابوحازم: لا اعلمه الاّ ان ینمی ذلک النبی(ص) قال اسماعیل: ینمی ذلک، ولم یقلینمی
অর্থ: সহীহ বুখারী:…আবু হাযীম সাহাল ইবনে সায়াদ থেকে বর্ণনা করেছেন: জনগনকে আদেশ দেয়া হল যে, তারা যেন নামাযে নিজের ডান হাত বাম হাতের উপর রাখে। আবু হাযিম বলেছেন: আমার সন্দেহ নেই যে, এই কাজ হযরত মুহম্মাদ(স:) ছাড়া অন্যের দিকে সংযুক্ত করা হয়েছে। ইসমাইল বলেছেন: সম্পৃক্ত করা হল। কিন্তু এটা বলা হয়নি যে, এই সম্পৃক্ত কে করেছে? [33]
রেওয়ায়েতের অর্থ সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা ও গবেষণা:
এটা জানা নেই যে, কে জনগণকে নামাযে হাত বাঁধার অনুমতি দিয়েছেন? যেমন ভাবে এই হাদিসের বর্ণনাকারী হাযীমও নিশ্চিত নন যে, হযরত মুহম্মাদ(স:) এই অনুমতি দিয়েছেন। সেই কারণে হাযীম বলেন: আমি জানি না, কিন্তু হতে পারে যে, এই অনুমতি হযরত মুহম্মাদ(স:) দিয়েছেন।
অতএব এই হাদিস মুরসাল। এই হাদীসের নির্দেশনা পরিষ্কার করে দেয় যে, এই হাদিসেও সংশয় আছে, যেমন ভাবে আয়নী, শওকানী এবং এই হাদিসের অন্য ব্যাখ্যাকারীগণের বর্ণনা থেকে বোঝা যায়।
ক)- আয়নী: উক্ত হাদিসে (یمنی) বাক্য (ی) যাম্মা আর (م) ফাতহা আরবী ব্যকরন অনুযায়ী মাজহুলের সিগা কিন্তু (ی) ফাতহাকে মালুমের সিগা কখনো পড়া হয়নি। একারণে উক্ত হাদিসটি মুরসাল। কারণ আবু হাযীম নির্ধারিত করেনি যে কে তা সম্পৃক্ত করেছে? আর যদি মালুমের সিগা হয় তাহলে উক্ত হাদিস মুত্তাসিল হবে। [34]
অতএব এই ধরনের হাদিস যার মধ্যে বহু রকমের সম্ভাবনা পাওয়া যায় সেই হাদিস থেকে কোনো কর্মের সুন্নাত হওয়াকে প্রমাণ করা যায় না এবং সেই কর্মকে নিশ্চিত রুপে হযরত মুহম্মাদ(স:)‘র দিকে সম্পৃক্ত করাও যায় না।
খ)- সুয়ুতী: ইসমাইল বলেন: (یمنی) (ی)যাম্মা আর (م)‘র উপর ফাতহা) মাজহুলের সিগা, আর এটা বলেননি: (یمنی) শব্দ মালুমের সিগা। আর ইসমাইল হচ্ছেন ইবনে আবী উভাইস। [35]
গ)- শওকানী: কিছু মানুষ এই হাদিসটিকে ভুল মনে করেন। কারণ স্বয়ং আবু হাযীম এই হাদিস সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন…আর যদি এই হাদিস মারফু হাদিসের অর্থ (یمنی) সঠিক হত এবং হযরত মুহম্মাদ(স:) থেকে বর্ণিত হত, তাহলে আবু হাযীমের (لا اعلمه) আমি জানি না’ একথা বলার প্রয়োজন হত না।
২- صحیح مسلم:(زهیربن حرب، حدّثنا عفان، حدّثنا همام، حدّثنا محمد بن جحادة، حدّثنی عبدالجباربن وائل ومولی لهم، انّهما حدثاه عن ابیه وائل بن حجر، انّه رای النبّی(ص) رفع یدیه حین دخل فی الصلاة، کبّروصفّ همام حیال اذنیه، ثمّ التحف بثوبه، ثمّ وضع یده الیمنی علی الیسری.)
অর্থ: সহীহ মুসলিম…যুহায়ের ইবনে হারব, আফফান থেকে, ও হামাম থেকে, ও মুহম্মাদ ইবনে জাহাদা থেকে, ও আব্দুল জাব্বার ইবনে ওয়েল থেকে, ও আলকামা ইবনে ওয়ায়েল থেকে এবং তার দাস ওয়ায়েল ইবনে হাজার থেকে রেওয়ায়েত করেছেন যে, আমি হযরত মুহম্মাদ(স🙂 কে দেখেছি তিনি যখন নামায পড়ছিলেন নিজের হাত কর্ণ পর্যন্ত উচুঁ করে তকবীর বললেন তার পর হাত আবার ভিতরে লুকিয়ে নেয়ার পর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন…। [36]
উক্ত হাদিসের সংকেত সম্পর্কে আলোচনা:
উক্ত হাদিসের বিষয়ে এটা বলা অত্যন্ত প্রয়োজন যে, এই হাদিসের সংকেত উজ্জ্বল নয়। তার কারণ হযরত মুহম্মাদ(স🙂‘র বর্তমান সুন্নাতের সম্পর্কে বলা হয়েছে। যা থেকে নির্ধারণ করা যায় না যে, এই আমল ওয়াজিব বা মুস্তাহাব হবার কারণে বা নিজের ইচ্ছা বা নিরুপায় অবস্থায় করা হয়েছে। দ্বিতীয় এই যে, একর্ম করার কারণ কি? সেই কর্ম কি শরিয়তি আমল মনে করে করা হয়েছে, না অন্য কোনো কারণ ছিল বা যাতে আবা [37] কাঁধ থেকে পড়ে না যায় সেই জন্যে এই কাজ করা হয়েছিল?
সনদের দৃষ্টিতে উক্ত হাদিস সম্পর্কে অলোচনা:
উক্ত রেওয়ায়েতের সনদের দৃষ্টিতে বলা যেতে পারে যে, উক্ত রেওয়ায়েতটি হল মুর্সাল। কারণ রেওয়ায়েত বর্ণনাকারী আলকামা ইবনে ওয়ায়েল নিজের পিতার কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু এখানে অলোচ্য বিষয় এই যে, আলকামার পিতা আলকামার জন্মের পূর্বে মৃত্যুবরণ করেন। তাহলে এখান থেকে পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায় যে, উক্ত রেওয়ায়েত আলকামা নিজের পিতার কাছ থেকে কখনোই শুনেন নি। কারণ যখন তার পিতা মৃত্যুবরণ করেন তখন তিনি এই পৃথিবীতে ছিলেন না। কি করে হতে পারে একজন মানুষ তার জন্মের পূর্বে সে তার পিতার কথা শুনতে পারে! (আলকামাতো কোনো ইমাম বা নবীও ছিলেন না, তাহলে কিভাবে সম্ভব হতে পারে? তাই এ রেওয়ায়েত সম্পূর্ণ ভুল।)
ইবনে হাজার বলেছেন: ইবনে মুঈন থেকে আসকারী বর্ণনা করেছেন: আলকামা যে রেওয়ায়েতটি নিজের পিতার কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন সেটা হল মুর্সাল। [38] কিছু মানুষ বলেন যে, আলকামা খুবই ছোট ছিল, সেই অবস্থায় নিজের পিতার নামাযকে কিভাবে উপলব্ধি করতে পারে? [39]
সুতরাং দুই দিক থেকে ফলাফল একটাই সামনে আসে সেটা হল এই যে, যে নিজের পিতার নামাযকে উপলব্ধি করতে পারে না, সে এই হাদিসকে কিভাবে উপলব্ধি করতে পারে! তাছাড়া এই শব্দ (مولی لهم)‘র অর্থ হল তার দাস, রেওয়ায়েতের দলিলে আছে, যার সম্পর্কে এটা কেউ জানেনা যে, সেই দাস কে? [40]
৩- الموطّا: (حدّثنی یحیی بن مالک، عن عبدالکریم بن ابی المخارق البصریّ انّه قال: من کلام النبوّة) (اذا لم تستحیی فافعل ماشئت ووضع الیدین احداهما علی الاخری فی الصلاة (یضع الیمنی علی الیسری) وتعجیل الفطر…).
অর্থ: মুয়াত্তা: ইয়াহয়াহ ইবনে মালিক, ইবনে আনাস আব্দুল করীম ইবনে আবিল মখারাক বাসারী থেকে বর্ণনা করেছেন: নবুওতের মুল্যবান কথার মধ্যে থেকে একটি হল যদি লজ্জা না থাকে তাহলে যা ইচ্ছা তাই করো আর নামাযে এক হাতকে অপর হাতের উপর রাখো…।
ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত: (یضع الیمنی علی الیسری) ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা এটা মালিক ইবনে আনাসের নিজস্ব কথা এটা কোনো হাদীসের অংশ নয়। [41]
উক্ত রেওয়ায়েতের সনদ সম্পর্কে আলোচনা:
উক্ত রেওয়ায়েতের সনদে আব্দুল করিম ইবনে আবীল মখরাকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যিনি এমন একজন ব্যক্তি যার সম্পর্কে মুয়াম্মার আবু আয়ুব থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আব্দুল করীম নির্ভরযোগ্য নয় এবং আব্দুর রহমান তাকে পরহেযগার না হবার কারণে অভিযুক্ত করেছেন। এছাড়া আহমাদ ইবনে অহমাদ ও ইবনে মুঈন তাকে (ضعیف) দুর্বল বলেছেন। ইবনে হাব্বান তাকে (کثیرالوهم) অর্থাৎ খুব বেশী সন্দেহকারী ও (کثیرالخطا) অর্থাৎ খুব বেশী ত্রুটিকারী ও অপ্রতিরোধ গণ্য করেছেন… আর ইবনে আব্দুল বর বলেছেন তার দুর্বল হবার উপর ইজমা আছে একারণে ইমাম মালিক ওই সমস্ত রেওয়ায়েত যা আহকামের ব্যপারে ছিল তা গ্রহণ করেন নি শুধু মাত্র গ্রহণ করেছেন মুস্তাহাব গুলোকে। [42]
৪- নাসর ইবনে আলী, আবু আহমাদ থেকে ও আলা ইবনে যোরয়া ইবনে আব্দুর রাহমান থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন: আমি আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের কাছ থেকে শুনেছি তিনি বলতেন:
(صفّ القدمین ووضع الید علی الید من السنة) নামাযে পা দুটোকে জড়ো করে রাখো আর এক হাত দ্বিতীয় হাতের উপরে রাখা সুন্নাত। [43]
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
ক)- উক্ত রেওয়ায়েত এবং ইবনে যুবায়েরের নামাযের রেওয়ায়েতটি হল একে অপরের বিপরীত, যাতে বলা হয়েছে যে, তিনি নামাযে হাত খুলে রাখতেন।
খ)- উক্ত রেওয়ায়েত হযরত মুহম্মাদ(স🙂‘র সাথে সম্পৃক্ত করা হয়নি।
গ)- উক্ত রেওয়ায়েতের সনদে আলা ইবনে সালেহ তামিমী আসাদী কুফীর কথা বলা হয়েছে যার সম্পর্কে বুখারী বলেন: তার রেওয়ায়েত গ্রহণযোগ্য নয়। ইবনুল মাদিনী বলেন: তিনি অবৈধ রেওয়ায়েত গুলো বর্ণনা করেছেন…। [44]
৫- মুহম্মাদ ইবনে বুকার ইবনে রায়য়ান: হাশীম ইবনে বাশীর থেকে তিনি হুজ্জাজ ইবনে আবী যায়নাব থেকে, তিনি আবু উসমান নাহদী আর তিনি ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণনা করছেন:
(إنّه کان یصلّی فوضع یده الیسری علی الیمنی، فرآه النبّی(ص) فوضع یده الیمنی علی الیسری)
অর্থ: তিনি নামায পড়ার সময় নিজের বাম হাত ডান হাতের উপর রাখতেন, হযরত মুহম্মাদ(স🙂 এই অবস্থা দেখে তার ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন। [45]
উক্ত হাদিসের সনদে হাশীম ইবনে কাসীমের কথা বলা হয়েছে, যার উপর হাদিসে কম বেশী ও মিশ্রিত করার ব্যপারে বদনাম ছিল এবং শুধু তাই নয় নিজের শেষ জীবনে স্মরণ শক্তিও হারিয়ে ফেলেছিল।
ইয়াহইয়াহ ইবনে মুঈন বলেন: জ্ঞান তো তার মধ্যে ছিলনা, যা ভাবতো তাই মুখ দিয়ে বাহির করতো। [46]
অতএব এই ব্যক্তির সম্পর্কে বহু কিছু বলা হয়েছে এবং তার রেওয়ায়েতও গ্রহণযোগ্য নয়।
একইভাবে উক্ত রেওয়ায়েতের সনদে হুজ্জাজ ইবনে আবী যায়নাব সালমী (আবু ইউসুফ সাইকাল ওয়াসতী)‘র কথা বলা হয়েছে যাকে আহলে সুন্নাতের অনুসারীদের নিকট (ضعیف) দুর্বল বলা হয়েছে।
আহমাদ ইবনে হাম্বল বলেন: আমি তার রেওয়ায়েত দুর্বল হবার বিষয়ে ভয় পাই।
নাসায়ীও বলেন: সে দুর্বল (শক্তিশালী নয়) এবং দারে কুতনী বলেন: সে হাফিয ও শক্তিশালী নয়। [47]
৬- মুহম্মাদ ইবনে মেহবুব: হাফস ইবনে গাইয়াস থেকে তিনি আব্দুর রাহমান ইবনে ইসহাক থেকে, তিনি যিয়াদ ইবনে যাইদ থেকে, তিনি আবী জাহিফা থেকে এবং তিনি বর্ণনা করেছেন হযরত আলী(আ:) থেকে:
(السنة وضع الکفّ علی الکفّ فی الصلاة تحت السرة)
অর্থ: নাভির নীচে নামাযে এক হাতের তালু অপর হাতের তালুর উপর রাখা সুন্নাত। [48]
উক্ত হাদিসের সনদে যিয়াদ ইবনে যাইদের কথা বলা হয়েছে যাকে অজ্ঞাত বলে ঘোষণা করা হয়েছে যেমন ভাবে আসকালানীর কথা আবুহাতীম সেটা পরিষ্কার ভাবে বর্ণনা করেছেন। ‘তাহযিব আল তাহযিব’ পুস্তকেও বর্ণনা করা হয়েছে যে, যিয়াদ ইবনে যাইদ আসম কুফীর সম্পর্কে আবু হাতীম বলেছেন: সে অজ্ঞাত ব্যক্তি। আবু দাউদও তার কাছ থেকে হযরত আলী(আ:)‘র একই রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন, যেখানে হযরত আলী(আ:) বলেছেন: নামাযে নাভীর নিচে হাতের উপর হাত রাখা সুন্নাত। [49]
বুখারী বলেছেন: উক্ত রেওয়ায়েত সম্পর্কে গভীর ভাবে চিন্তা করার দরকার আছে। তাছাড়া উক্ত রেওয়াতের সনদে আব্দুর রাহমানের নাম বর্ণনা করা হয়েছে তাঁর দুর্বল হবার সম্পর্কে আলেমদের ঐক্য মত আছে। [50]
৭- মুহম্মাদ ইবনে কেদামা (ইবনে আয়ীন), আবী তালুত আব্দুস সালাম থেকে, আবু জারীর যাবী থেকে এবং সে নিজের পিতার কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন:
(رأیت علیا یمسک بیمینه علی الراسغ فوق السّرة)
অর্থ: আমি হযরত আলী(আ🙂 কে দেখলাম তিনি নিজের ডান হাতের কব্জিকে বাম হাত দিয়ে নাভীর নিচে ধরেছিলেন।
উক্ত রেওয়ায়েতের সনদে আবু তালুত অর্থাৎ আব্দুস সালাম নাহদীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার সম্পর্কে ইবনে সায়াদ বলেন: আব্দুস সালাম নাহদী রেওয়ায়েত বর্ণনাতে দুর্বল ছিলেন। [51]
এছাড়া উক্ত রেওয়ায়েতের সনদে ইবনে জারীর যাবীরের কথা বলা হয়েছে, তার সম্পর্কে ইবনে হাজার বলেন: আমি ‘মিযানুল এতেদাল’ পুস্তকটিতে যাহাবীর হাতের লেখা দেখলাম। আব্দুস সালাম নাহদী অজ্ঞাত ছিলেন। [52]
৮- মুসাদ্দাদ… , আব্দুর রাহমান ইবনে ইসহাক কুফী থেকে, সাইয়ার আবী হাকাম থেকে, আবু ওয়ায়েল থেকে, আবু হোরাইরা থেকে বর্ণনা করে বলেছেন:
(أخذ الاکف علی الاکف فی الصلاة من السنة)
অর্থ: নামাযে এক হাতের তালু অন্য হাতের উপর রাখা সুন্নাত। [53]
ঠিক এভাবে দারে কুতনী অল্প মতভেদের সাথে লিখেছেন: নামাযে হাতের তালু অন্য হাতের উপর রাখা সুন্নাত।[54]
এখানে এটা বলে দেওয়া প্রয়োজন যে, এই রেওয়ায়েতের সনদে আব্দুর রাহমান ইবনে ইসহাক কুফীর কথা বলা হয়েছে, যাকে ‘ওলেমায়ে রেজাল’(রেজাল শাস্ত্রের পন্ডিতগণ) (ضعیف) দুর্বল বলে ঘোষণা করেছেন।
ইবনে মুঈন বলেছেন: আব্দুর রাহমান ইবনে ইসহাক কুফী একজন দুর্বল, মূল্যহীন ও ক্ষুদ্র ব্যক্তি। ইবনে সায়াদ, ইয়াকুব ইবনে সুফীয়ান, আবু দাউদ, নাসায়ী এবং ইবনে হাব্বান তাকে দুর্বল বলেছেন এবং বুখারী বলেন এর সম্পর্কে গভীর চিন্তার প্রয়োজন আছে। [55]
এছাড়া আবু হোরাইরা এই আমলকে হযরত মুহম্মাদ(স:)’র প্রতি সম্পৃক্ত করেনি। এই ধরনের অনুরুপ বিষয় বহু আছে, যার সম্পর্কে গবেষণা ও প্রশ্ন করার পরে জানা গেল যে, সে এই আমল হযরত মুহম্মাদ(স:)’র কাছ থেকে শুনেনি বরং কেউ তার কাছে বর্ণনা করেছিল এবং আবু হোরাইরাও সেই ব্যক্তির নাম দেয়নি। উদাহরণ স্বরুপ এই হাদিস:(من اصبح جنبا فلا صیام له) যে ব্যক্তি সকাল পর্যন্ত জানাবতের অবস্থায় থাকবে তার রোযা হবে না।
(فانّه لمّا حوقق علیه قال: اخبرنیه مخبر ولم اسمعه من رسول الله(ص))
অর্থ: যখন তার কাছে জিজ্ঞাসা করা হল যে, তুমি নিজে এই হাদিস হযরত মুহম্মাদ(স🙂‘র কাছ থেকে শুনেছো? তখন বললেন: না আমাকে কেউ বলেছে। [56]
৯- হায়সামী (ইবনে হামীদ) থেকে আবু তওবা, সৌর থেকে, সুলায়মান ইবনে মুসা থেকে, তাউস থেকে বর্ণনা করছেন যে, তিনি বলেন:
(کان رسول الله(ص)یضع یده الیمنی علی یده الیسری ، ثمّ یشدّ بینهما علی صدره، وهوفی الصلاة)
অর্থ: হযরত মুহম্মাদ(স🙂 নামাযের সময় নিজের ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতেন: [57] এবং বুকের উপর রাখতেন ও নামায পড়তেন।
কিছু প্রতিবন্ধকতা
ক)- উক্ত রেওয়ায়েতটির রাবী হলেন তাউসে তাবেয়ী যে হযরত মুহম্মাদ(স🙂 কে দেখেনি একারণে উক্ত রেওয়ায়েতকে মুরসাল বলা হয়েছে।
খ)- উক্ত রেওয়ায়েতের সনদে হায়সাম ইবনে হামীদের কথা বলা হয়েছে, যাকে আবু দাউদ এবং আবু মুসাহ্হার (তাঁর পুরো নাম আব্দুল আলা ইবনে মুসাহ্হার গাস্সানিদ মাশকী তিনি ১৪০ হিজরী থেকে ২১৮ হিজরী পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন) (ضعیف) দুর্বল বলেছেন। আবু মুসহ্হার বলেন: হায়সাম ইবনে হামীদ হাদিস শিক্ষায় অভিজ্ঞ ছিল না এবং হাফীযও ছিল না, আমি তার কাছ থেকে হদিস বর্ণনা করি না এবং তাকে দুর্বল মনে করি। [58]
১০- তিরমিযী আবুল আহওয়াস থেকে, সামাক ইবনে হারব থেকে, কাবীসাহ ইবনে হালব থেকে এবং তিনি নিজের পিতার কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলছেন:
(کان رسول الله(ص) یومّنا فیاخذ شماله بیمینه)
অর্থ: হযরত মুহম্মাদ(স🙂 আমাদেরকে জামাতের সঙ্গে নামায পড়ালেন কিন্তু নিজের বাম হাতকে ডান হাত দিয়ে ধরে রেখেছিলেন। [59]
উক্ত রেওয়ায়েতের সনদে কাবিসাহ ইবনে হালব (কাবিসাহ ইবনে ইয়াযিদ তায়ী)‘র কথা বলা হয়েছে আর মাদিনী ও নাসায়ীর কথা অনুযায়ী তিনি একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি ছিলেন। [60]
১১- ইবনে মাজা: আব্দুল্লাহ ইবনে ইদরীস থেকে আলী ইবনে মুহাম্মদ, বাশার ইবনে মায়ায যারীর থেকে বাশার ইবনে মুফাযযাল থেকে, আসীম ইবনে কালিব নিজের পিতার কাছ থেকে, ওয়ায়েল ইবনে হাজার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বললেন: আমি হযরত মুহম্মাদ(স🙂 কে নামাযের অবস্থায় দেখলাম তিনি নিজের ডান হাত বাম হাত দিয়ে ধরে রেখেছিলেন। [61]
উল্লেখ্য যে, ‘ইবনে মাজা’ এর বেশির ভাগ রেওয়ায়েত (ضعیف) দুর্বল। ইবনে হাজার বলেন: তার কিতাব সুনান পূর্ণাঙ্গ এবং অধ্যায় ও আশ্চর্যজনক হাদিসের দিক দিয়ে ভাল কিন্তু তার বেশীর ভাগ রেওয়ায়েত (ضعیف) দুর্বল শুধু তাই নয় আমি শুনেছি সিররী বলেন: যখনি এই কিতাবের কোন রেওয়ায়েত এককভাবে দেখা হয়, ওই রেওয়ায়েতটি কয়েক ভাবে দুর্বল বলে বুঝা যায়।
আবু যারয়ে বলেন: (لیس فیه إلاَّ نحو سبعةأحادیث) এই কিতাবটির মধ্যে শুধু মাত্র সাতটি সহীহ হাদীস আছে…। [62]
যাহাবী বলেন: সুনানে ইবনে মাজার দলিলহীন রেওয়ায়েতে ভরপুর; আমার মনে হয় তার সংখ্যা প্রায় এক হাজার।[63]
অধিকন্ত আবু দাউদ: আসিম ইবনে কালিব নিজের পিতা ও দাদার কাছ থেকে যে রেওয়ায়েতগুলো বর্ণনা করেছিল সেগুলোকে গ্রহণযোগ্য নয় বলে বলেছেন। [64]
১২- দারমী: যুহাইর যয়াহের থেকে, আবু ইসহাক থেকে, আব্দুল জাব্বার ইবনে ওয়ায়েল থেকে, নিজের পিতার কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন:
(رأیت رسول الله (ص)یضع یده الیمنی علی الیسری قریبا من الرّسغ)
অর্থ: আমি রসুল(স🙂 কে নিজের ডান হাত বাম হাতের কব্জির কাছে রাখতে দেখেছি। [65]
এখানে এটা বলে দেওয়া প্রয়োজন যে, আব্দুল জাব্বার ইবনে ওয়ায়েল নিজের পিতার কাছ থেকে এই রেওয়ায়েত শুনেনি তার কারণ ওর পিতা ওর জন্মের আগে মৃত্যু বরন করেছিলেন।
ইবনে হাব্বান (আল সাক্কাত) পুস্তকে লিখেছেন: যে মানুষ এই সন্দেহ করে যে, ইবনে ওয়ায়েল নিজের পিতার কাছ থেকে শুনেছে এটা শুধু মাত্র সন্দেহ ছাড়া অন্য কিছু নয় তার কারণ ইবনে ওয়ায়েল তখন তার মায়ের গর্ভে ছিল যখন তার পিতা মারা যায়।
বুখারীও বলেন: এটা বলা ঠিক নয় যে, সে নিজের পিতার কাছ থেকে উক্ত রেওয়ায়েত শুনেছেন, কারণ তার পিতা তার জন্মের পূর্বে মৃত্যু বরন করেছিলেন।
ইবনে সায়াদও বলেন: …ইবনে ওয়ায়েলের সম্পর্কে একদিকে এটা বলা হয় যে, সে নিজের পিতার কাছ থেকে শুনেছে অন্য দিকে বলা হয় যে, শুনেনি!
আবু হাতেম, ইবনে জারির তাবারী, জারিরী, ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান, ইয়াকুব ইবনে শায়বা, দার কুতনী, হাকিম তাদের আগে ইবনে মাদানী প্রায় একই ধরনের কথা উল্লেখ করেছেন। [66]
১৩- দারেকুতনীতে আবু মুহম্মাদ, সাঈদ আলী ইবনে মুসলীম থেকে ইসমাইল ইবনে আবান ওর্রাক থেকে, মান্দল থেকে, ইবনে আবি লায়লা থেকে, কাসীম ইবনে আব্দুর রহমান থেকে, নিজের পিতার কাছ থেকে, আব্দুল্লা ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণনা করছেন:
( إنّ النّبی کان یأخذ شماله بیمینه فی الصَّلاة)
অর্থ: হযরত মুহম্মাদ(স🙂 নামাযে নিজের বাম হাতকে ডান হাত দিয়ে ধরে রাখতেন। [67]
উক্ত হাদীসের সনদে মান্দল অর্থাৎ (ইবনে আলী আনযী) আছে যে ব্যক্তি আহলে সুন্নাতের নিকট (ضعیف) দুর্বল বলা হয়েছে এছাড়া বুখারীও তাকে দুর্বল বলেছেন এবং নাসায়ীও বলেন: দুর্বল। ইবনে সায়াদ বলেন: তার মধ্যে দুর্বলতা পাওয়া যায়। জুযজানী বলেন: তার রেওয়ায়েত দুর্বল এবং সাজী বলেন: সে নির্ভরযোগ্য নয় কারণ সে অগ্রহণযোগ্য ও দুর্বল রেওয়ায়েত সমূহ বর্ণনা করেন। ইবনে কানে এবং দারেকুতনী বলেন: দুর্বল। ইবনে হাব্বান বলেন: ওর স্মরণ শক্তি কম হবার কারণে মুরসাল রেওয়ায়েত গুলোকে মারফু ও মওকুফ রেওয়ায়েত গুলোকে মাসনাদ বলে গণ্য করতেন। সুতরাং তার রেওয়ায়েতগুলোকে পরিত্যাগ করা হক্ব (যুক্তিযুক্ত)।
এছাড়া তাহাভীও বলেন: রেওয়ায়েত বর্ণনা করার কোন রকম যোগ্য নয় এবং তার রেওয়ায়েত দ্বারা ইস্তেদলাল (যুক্তি প্রর্দশন) করা সম্ভব নয়। [68]
১৪- দারে কুতনীতে আব্দুল্লাহ ইবনে মুহম্মাদ ইবনে আব্দুল আজিজ, শুজা ইবনে মুখাল্লাদ থেকে, মানসুর থেকে, মুহম্মাদ ইবনে আবান আনসারী থেকে, উম্মুল মুমেনীন আয়েশা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আয়েশা(র🙂 বলেছেন:
(ثلاثة من النبوّة …ووضع الید الیمنی علی الیسری فی الصلاة)
অর্থ: নবুয়তের বৈশিষ্ট্যসমূহ তিনটি : …(তার মধ্যে থেকে একটি) নামাযের সময় ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা। [69]
উক্ত হাদিসের সনদে মুহম্মাদ ইবনে আবানের কথা বলা হয়েছে যে ব্যক্তি আয়েশার কাছ থেকে এই হাদিস বর্ণনা করতেই পারে না সুতরাং এই রেওয়ায়েত মুরসাল। [70]
যাহাবী বুখারী থেকে বর্ণনা করে লিখেছেন তিনি বলেন: (لا یعرف له سماع منها) স্পষ্ট নয় যে, ও আয়েশা থেকে এই রেওয়ায়েত শুনেছে। [71]
ঠিক এভাবে হায়শাম (ইবনে মানসুর) যিনি এই রেওয়ায়েতের সনদে উপস্থিত আছেন যার (ضعیف) দুর্বল হবার বিষয়ে আগে আলোচনা করেছি। [72]
১৫- দারে কুতনী, যিয়াদ ইবনে আয়ূব থেকে, ইবনে সাঈদ নাসর ইবনে ইসমাইল থেকে, ইবনে আবি লায়লা থেকে, আতা থেকে, আবু হুরায়রা থেকে, সে হযরত মুহম্মাদ(স🙂 থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত মুহম্মাদ(স:) বলেন:
(أمرنا معاشرالانبیاء…ونضرب بایماننا علی شمائلنا فی الصلاة)
অর্থ: আমরা নবীগণ আদিষ্ট হয়েছি যেন… আমরা নামাযে আমাদের ডান হাত বাম হাতের উপর রাখি। [73]
উক্ত হাদিসের সনদে নাযর ইবনে ইসমাইল অর্থাৎ (আবু মোগাইরা) আছে। আহমাদ, নাসায়ী, আর আবু যারয়া তার সম্পর্কে বলেন: সে নির্ভরযোগ্য নয় কোন এক বর্ণনা অনুযায়ী ইবনে মুঈনও তাকে দুর্বল বলেছেন।
ইবনে হাব্বান বলেন: তার ভুল স্পষ্ট এবং তার সন্দেহ ও চিন্তা ধারা অনেক বেশী সুতরাং তাকে পরিত্যাগ করাই উত্তম।
হাকিম নিশাপুরী বলেন: নাযর ইবনে ইসমাইল আহলে সুন্নাতের নিকটও নির্ভরযোগ্য নয়। সাজী বলেন: নাযর ইবনে ইসমাইলের রেওয়ায়েত সমূহ অচেনা ও গরিব। [74]
১৬- দারে কুতনী, আব্দুল হামীদ ইবনে মুহম্মাদ থেকে, ইবনে সিক্কিন থেকে, মুখাল্লাদ ইবনে ইয়াযিদ থেকে, আতা থেকে, ইবনে আব্বাস থেকে, হযরত মুহম্মাদ(স:) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বললেন:
(أمرنا معاشرالانبیاء…ونمسک بایماننا علی شمائلنا فی الصلاة)
অর্থ: আমরা নবীগণ আদিষ্ট হয়েছি যেন… আমরা নামাযে আমাদের ডান হাত বাম হাতের উপর রাখি। [75]
উক্ত হাদীসের সনদে তালহা অর্থাৎ (ইবনে আমর ইবনে উসমান হাযারমী কুফী) আছে যাকে সমস্ত ওলায়েমায়ে রেজাল দুর্বল বলে ঘোষণা করেছেন।
আহমাদ বলেন: তালহা এমন একজন ব্যক্তি যার সমাজে কোন গুরুত্ব নেই এবং তার রেওয়ায়েত সমূহ পরিত্যাগ করা হয়েছে।
ইবনে মুঈন বলেন: তালহার বর্ণিত হাদিসের কোন মূল্য নেই ও দুর্বল আর জুযজানী বলেন: তার রেওয়ায়েত থেকে কেউ সন্ত্তষ্ট নয়।
আবু হাতেম বলেন: প্রভাবশালী নয় এবং আহলে সুন্নাতের নিকট দুর্বল বলে গণ্য করা হয়েছে। আবু দাউদ বলেন: দুর্বল। নাসায়ী বলেন: তার হাদিসগুলোকে পরিত্যাগ করা হয়েছে। বুখারী বলেন: তার কোন গুরুত্ব নেই। ইয়াহইয়া ইবনে মুঈন তার সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টি রাখে। ইবনে সায়াদ বলেন: তার অনেক দূর্বল হাদিস রয়েছে।
ইবনে মাদিনী বলেন: তার বর্ণিত হাদিস দুর্বল এবং কোন স্থান নেই। আবুযারয়া, আজলীও দারে কুতনী বলেন: সে দুর্বল। ফাসভী তাকে ওই ব্যক্তির সাথে তুলনা করেছেন যার রেওয়ায়েতের দিকে কেউ লক্ষ্য করে না।
ইবনে হাব্বান বলেন: তালহা কোন গ্রহণযোগ্য আলেমদের কাছ থেকে রেওয়ায়েত বর্ণনা করেনি কিন্তু এমন কিছু বর্ণনা করেছেন যা লেখা জায়েয ছিল না আর তার রেওয়ায়েত গুলোকে আশ্চর্যজনক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। [76]
১৭- দারে কুতনী: মুহম্মাদ ইবনে ইসমাইল হাস্সানী থেকে, মুহম্মাদ ইবনে মখাল্লাদ ওয়াকী থেকে, ইয়াযিদ ইবনে যিয়াদ ইবনে আবী জাহাদ থেকে, আসীম জাহদারী থেকে, আকবা ইবনে যাহির থেকে, হযরত আলী(আ:) থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন: যেখানে তিনি
(فصلّ لربّک وانحر) এর সম্পর্কে বললেন: ((وضع الیمین علی الشمال فی الصلاة এর অর্থ হল নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা। [77]
উক্ত রেওয়ায়েতের সনদে ওয়াকী আছে যার সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, ওয়াকী পাঁচশো রেওয়ায়েতে ভুল করেছে।[78]
এছাড়া মারুযী বলেন: ওয়াকী নিজের শেষ বয়সে মুখস্ত হাদীস বর্ণনা করতো এবং সেই হাদীসের অক্ষর বদলে ফেলতো, সুতরাং ঠিক যেন হাদীসের আর্থিক বর্ণনা করতো এবং সে আরবী ভাষা জানতো না। [79]
১৮- দারে কুতনী আহমাদ ইবনে মুহম্মাদ ইবনে জাফার জোযী, মাযর ইবনে মুহম্মাদ থেকে, ইয়াহইয়া ইবনে মুঈন থেকে, মুহম্মাদ ইবনে হাসান ওয়াসতী থেকে, হাজ্জাজ ইবনে আবী যায়নাব থেকে, আবুসুফিয়ান থেকে, জাবীর থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন:
(مرّرسول الله (ص) برجل وضع شماله علی یمینه…مثله)
অর্থ: হযরত মুহম্মাদ(স🙂 এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যে ব্যক্তি নিজের ডান হাত বাম হাতের উপর রেখেছিল…তারপর হযরত মুহম্মাদ(স🙂 তার ডান হাত ধরে বাম হাতের উপর রাখলেন। [80]
উক্ত হাদিসের সনদে হাজ্জাজ ইবনে আবী যায়নাবের কথা বলা হয়েছে যার দুর্বল হবার কথা পূর্বে বর্ণনা করেছি।
১৯- দারে কুতনী আরএক জায়গায় হাজ্জাজ ইবনে আবী যায়নাবের বরাত দিয়ে ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণনা করেছেন আর এই রেওয়ায়েতটিও আগের রেওয়ায়েতের মতো যা ইবনে আবী যায়নাবের কারণে দুর্বল ঘোষণা করা হয়েছে। [81]
২০- হাসান ইবনে খাযর, মুহম্মাদ ইবনে আহমাদ আবুল আলা থেকে, মুহম্মাদ ইবনে সাওয়ার থেকে, আবু খালিদ আহমাদ থেকে, হামিদ থেকে, আনাস থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন:
(کان رسولالله(ص) إذا قام فی الصلاة، قال: هکذا وهکذا عن یمینه وعن شماله)
অর্থ: হযরত মুহম্মাদ(স🙂 যখনই নামাযের জন্য দাঁড়াতেন তখন নিজের ডান বা বাম দিকের লোকেদের এটাই বলতেন যে এভাবে এভাবে দাঁড়াবে… [82]
উক্ত রেওয়ায়েতের সনদে আবু খালিদ আহমাদ (সুলায়মান ইবনে হায়য়ান আযদী) এর কথা বলা হয়েছে যার হাফিয ও স্মরণশক্তির মালিক হবার সম্পর্কে কিছু আলেম আপত্তি জানিয়েছেন।
ইবনে মুঈন বলেন: আবু খালিদ আহমাদ হুজ্জাত নয়, আবু বাকার বাযায নিজের পুস্তক সুনানে বলেছেন: আবু খালিদ আহমাদ ওই ব্যক্তিদের মধ্যে নয় যার রেওয়ায়েত হুজ্জাত হতে পারে কারণ এবিষয়ে আলেমদের মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে যে, সে হাফিয ছিল না। ঠিক এভাবে আয়ামাশ ও অন্যদের কাছ থেকে রেওয়ায়েত বর্ণনা করতো যার রেওয়ায়েতের দিকে কেউ দেখতো না। [83]
এছাড়া এই হাদিস এবিষয়ে আলোচ্য নয় কারণ উক্ত হাদিসে বলা হয়েছে যে, হযরত মুহম্মাদ(স:) নিজের ডান বা বাম দিকের মানুষদের বললেন যে, এই এভাবে দাঁড়াবে, কিন্তু একথা আর নামাযে হাত বাঁধার কথার মধ্যে কোন মিল নেই।
২১- আহমাদ ইবনে হাম্বল: মুহম্মাদ ইবনে হাসান ওয়াসতী (মাযনী) থেকে, আবু ইউসুফ হাজ্জাজ থেকে, ইবনে আবী যায়নাব সায়কাল থেকে, আবু সুফিয়ান থেকে, জাবির থেকে বর্ণনা করেছেন।
(مرّرسول الله(ص) برجل وهو یصلی وقد وضع یده الیسری علی الیمنی فانتزعها ووضع الیمنی علی الیسری)
অর্থ: হযরত মুহম্মাদ(স🙂 একজন ব্যক্তিকে দেখলেন যে নিজের বাম হাতকে ডান হাতের উপর রেখেছিল, হযরত মুহম্মাদ(স🙂 সঙ্গে সঙ্গে তার ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে দিলেন। [84]
প্রথমত: এটি সেই দারে কুতনী বর্ণিত আঠার নম্বর হাদীস।
দ্বিতীয়ত: এই হাদীসের সনদে আবু ইউসুফ হুজ্জাজের নাম উল্লেখ করা হয়েছে যার সম্পর্কে ওলামায়ে রেজাল বিশেষ ভাবে সংশয়বোধ করেছেন।
আহমাদ ইবনে হাম্বল আবু ইউসুফ হুজ্জাজের সম্পর্কে বলেন: তার রেওয়ায়েত দুর্বল হবার কারণে আমি ভয় পাই, ইবনে মাদিনী বলেন: সে দুর্বল।
নাসায়ী বলেন: সে নির্ভরযোগ্য নয়, দারে কুতনী বলেন: না সে তো রেওয়ায়েত বর্ণনাতে নির্ভরযোগ্য ছিল আর না হাফীয ছিল। [85]
একইভাবে এই রেওয়ায়েতের সনদে মুহম্মাদ ইবনে হাসান ওয়াসতীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে যার সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে এবং ইবনে হাব্বান তাকে খুব বেশী দুর্বল হিসেবে ধরে বলেছেন: সে হাদীসের সনদে কম বেশী করতো। [86]
যে সমস্ত রেওয়ায়েত যে গুলোকে নামাযে হাত বাঁধার দলিল হিসেবে ব্যবহার করা হয় সেগুলোর মধ্যে সংকেত এবং সনদ হিসেবে দুর্বল ও প্রতিবন্ধকতার গন্ধ পাওয়া যায়।
আলোচনার সারসংক্ষেপ
১- প্রথম রেওয়ায়েত: যেটা বুখারী থেকে বর্ণিত তার নির্দশনায় প্রতিবন্ধকতা ছাড়া তার মধ্যে মুরসাল হবার সন্দেহ পাওয়া যায় তাছাড়া এই হাদীস সম্পর্ক হযরত মুহম্মাদ(স:)’র প্রতি সংযোগের (যেমন ভাবে আইনী ও শওকানী এটাকে সুস্পষ্ট করেছে) প্রমাণও পাওয়া যায় না।
২- দ্বিতীয় রেওয়ায়েত: যেটা সহীহ মুসলিম থেকে বর্ণিত যার সনদে আলকামা ইবনে ওয়ায়েলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে যে ব্যক্তি নিজের পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। সুতরাং এই রেওয়ায়েতও মুরসাল কারণ তার পিতা তার জন্মের পূর্বে মারা যায়।
৩- তৃত্বীয় রেওয়ায়েত: যেটাকে ইবনে মালিক বর্ণনা করেছেন যার সনদে ইবনে আবীল মাখারেকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে যে ব্যক্তিকে দুর্বল বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
৪- চতুর্থ রেওয়ায়েত: যেটাকে আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন যার রাবীদের মধ্যে একজন আলাবিন সালেহ আছেন যার রেওয়ায়েতের প্রতি কেউ তাকায় না অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন ভাবে বুখারী তার সম্পর্কে পরিষ্কার ভাবে বলেছেন এবং এই রেওয়ায়েত ইবনে যুবায়েরের রেওয়ায়েতের বিপরীত।
৫- পঞ্চম রেওয়ায়েত: এটাকেও আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন যার সনদে হাশিমের নাম উল্লেখ করা হয়েছে যে ব্যক্তি রেওয়ায়েতের মধ্যে ভেজাল ও কম বেশী করতেন এবং শেষ জীবনে স্মরণ শক্তিও হারিয়ে ফেলে ছিলেন। একইভাবে এই রেওয়ায়েতের রাবী হাজ্জাজও আছে যাকে দুর্বল বলা হয়েছে।
৬- ষষ্ঠ রেওয়ায়েত-এটাকেও আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন যার সনদে যিয়াদ ইবনে যাইদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে যিনি অজ্ঞাত, এছাড়া এই রেওয়ায়েতে আব্দুর রহমান ইবনে ইসহাকও আছে যার দুর্বল হবার উপর আলেমদের ঐকমত্য রয়েছে।
৭- সপ্তম রেওয়ায়েত-টিও আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন যার সনদে তালুতের নাম উল্লেখ করা হয়েছে যার হাদিসগুলো দুর্বল। একইভাবে যিব্বিও এর সনদে আছে যে ব্যক্তি অজ্ঞাত ও অচেনা।
৮- অষ্টম রেওয়ায়েত-টিও আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন যার সনদে আব্দুর রহমান ইবনে ইসহাকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে যিনি দুর্বল।
৯- নবম রেওয়ায়েত টিও আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন যার সনদে হাশিমের নাম উল্লেখ করা হয়েছে যে দুর্বল, এছাড়া এই রেওয়ায়েতকে মুরসালও বলা হয়েছে কারণ তাউস তাবেয়ী এর সনদে আছে যে ব্যক্তি হযরত মুহম্মাদ(স:) কে দেখেনি এবং তার কাছ থেকে রেওয়ায়েত বর্ণনা করেনি।
১০- দশম রেওয়ায়েতটি তিরমিযী বর্ণনা করেছেন যার সনদে কাবিসার নাম উল্লেখ করা হয়েছে যে ব্যক্তি অচেনা।
১১- একাদশ রেওয়ায়েতটি ইবনে মাজা বর্ণনা করেছেন যদিও সুনানে ইবনে মাজার রেওয়ায়েত সাতটি ছাড়া সবটাই দুর্বল, এছাড়া এর রাবী আসিম ইবনে কুলায়েব যাকে দুর্বল বলা হয়েছে।
১২- দ্বাদশ রেওয়ায়েতটি দারমী বর্ণনা করেছেন যার সনদে আব্দুল জাব্বারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে যে নিজের পিতার কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন সুতরাং এই রেওয়ায়েত মুরসাল তার কারণ হল আব্দুল জাব্বার পৃথিবীতে আসার পূর্বে তার পিতার মৃত্যু হয়ে যায় অতএব সে কিভাবে নিজের পিতার কাছ থেকে রেওয়ায়েতটি শুনতে পারে।
১৩- ত্রুয়োদশ রেওয়ায়েতটি দারে কুতনী বর্ণনা করেছেন যার সনদে মান্দলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে যে ব্যক্তি দুর্বল।
১৪- চতুর্দশ রেওয়ায়েত এটাকে দারে কুতনী বর্ণনা করেছেন যার সনদে মুহম্মাদ ইবনে আবান আনসারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে যে ব্যক্তি হযরত আয়েশা(র:) থেকে রেওয়ায়েতটি বর্ণনা করেছেন কিন্তু এটা ঠিক নয়। অতএব এই রেওয়ায়েত মুরসাল। এছাড়া এই রেওয়ায়েতের সনদে হায়শাম আছে যে ব্যক্তি দুর্বল।
১৫- পঞ্চদশ রেওয়ায়েত-এটাও দারে কুতনী বর্ণনা করেছেন যার সনদে নাযর ইবনে ইসমাইলের নাম উল্লেখ করা হায়েছে যে ব্যক্তি দুর্বল।
১৬- ষষ্ঠদশ রেওয়ায়েতের সনদে তালহার নাম উল্লেখ করা হয়েছে যাকে সমস্ত আলেমগণ দুর্বল বলেছেন।
১৭- এই সপ্তদশ রেওয়ায়েতটি দারেকুতনী বর্ণনা করেছেন যার সনদে ওয়াকীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে যে ব্যক্তি পাঁচশো হাদিসের মধ্যে ভুল করেছে।
১৮-ও ১৯- এই রেওয়ায়েত দু’টি দারে কুতনী বর্ণনা করেছেন এই দুইটি রেওয়ায়েতের সনদে হুজ্জাজ ইবনে আবী যায়নাবের নাম উল্লেখ হয়েছে যে ব্যক্তি দুর্বল।
২০- এই রেওয়ায়েতটিও দারে কুতনী বর্ণনা করেছেন আর রেওয়ায়েতের সনদে আবুখালিদ আহমাদের নাম আছে যার সম্পর্কে অনেক কিছু বলা হয়েছে এবং তার হাদিস সমূহ গ্রহণযোগ্য নয়।
২১- এটা ওই আঠারো নম্বর রেওয়ায়েত যেটাকে দারেকুতনী দ্বিতীয়বার বর্ণনা করেছেন এবং তার সনদে আবু ইউসুফ হাজ্জাজের নাম আছে যাকে দুর্বল বলা হয়েছে।
একারণে ওই সমস্ত দলিল যার উপর বিশ্বাস করে নামাযে হাত বাঁধার সম্পর্ক হযরত মুহম্মাদ(স:)’র দিকে দেওয়া যায় তার কোন অস্তিত্ব থাকে না। আর খুবই অবাকের বিষয় যে, বুখারী ও মুসলীমও এই ধরনের রেওয়ায়েতের উপর চিন্তা ভাবনা করে নিজেদের পুস্তকে জায়গা দিতে এড়িয়ে গিয়েছেন। আর এখান থেকে বুঝা যায় যে বুখারী ও মুসলীম নিজেদের পুস্তকে এই হাদীসগুলোকে বর্ণনা না করে এটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, এই হাদিসগুলো সহীহ নয় এগুলো দুর্বল হাদিস।
এছাড়া কিছু সাহাবায়ে কেরাম এবং মাযহাবের ইমাম যেমন যোবায়ের, ইমাম মালিক, ইবনে সিরিন, হাসান বাসারী, এবং নাখয়ী ইত্যাদি…এই হাদিসগুলোকে সঠিক বলে ধরেন নি এবং নামাযে হাত খোলার আকিদা রাখতেন। আহলে বাইতের মাযহাবে রেওয়ায়েত আর ফতোয়া থেকে স্পষ্ট হয় যে, নামাযে হাত বাঁধা না জায়েয এবং এরূপ কাজকে শরিয়তের বিরোধি বলা হয়েছে।
অতএব এটা বলা যায় যে, নামাযে হাত বাঁধা বেদআত, সুন্নতের চেয়ে বেদআতের অনেক নিকটবর্তী।
والسلام علی من اتّبع الهدی
সংযুক্তি :
১- مرسل: হাদিস-এ-মুরসাল: সেই হাদিসকে বুঝায় যার সনদের পরিশিষ্ট কোন মাসূমের দিকে সম্পর্কিত করা হয়েছে, চাই তার অগ্রে মাসূম পর্যন্ত (মুত্তাসিল) সংযুক্ত থাকুক কিংবা (মুনকাতে) বিচ্ছিন্ন থাকুক।
২-منقطع : হাদিস-এ-মুনকাতে: এই হাদিসে মুরসালের প্রকারভেদের একটি, একে দুই ধরনের অর্থে বুঝানো হয়েছে একটি সাধারণ আরেকটি সুনির্দিষ্ট এবং বিশেষ যেখানে দুই বাড়ির মাধখানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
৩- متصل : হাদিস-এ-মুত্তাসিল: সেই হাদিসকে বা খবরকে বলা হয় যাকে প্রত্যেক রাবী তার পূর্বের রাবী থেকে বিনা মাধ্যামে স্বয়ং রেওয়ায়েত বর্ণনা করে। চাই সে মাসূম কিংবা নবী(স:)’র নিকট পৌঁছাক বা না পৌঁছাক।
৪- مرفوع : হাদিস-এ-মরফু: সেই হাদিসকে বলে হয় যার শেষে সংযোগ ছাড়াই মাসূমের দিকে সম্পর্কিত করা হয়েছে।
৫- موقوف : হাদিস-এ-মাওকুফ: মাওকুফ দুই ধরনের হয়: একটি (মুতলাক) শর্তহীন অপরটি (মুকাইয়াদ) শর্ত সাক্ষেপে। কিন্তু অধিকাংশ সময় যখন মাওকুফ শব্দ ব্যবহার করা হয় তখন মাওকুফে মুতলাক বুঝানো হয়। মাওকুফ সেই হাদিসকে বলা হয় যে হাদিস সাহাবীদের থেকে বর্ণিত হয়েছে চাই সে নবী(স:)’র সাহাবী হোক কিংবা কোন মাসূমের সাহাবী থেকে বর্ণনা হোক। স্বয়ং নবী ও মাসূমের সাথে সম্পর্কিত করা হয়নি। চাই সে রাবিদের সনদের ধারাবাহিকতায় (মুত্তাসিল) সংযুত্ত থাকুক কিংবা (মুনকাতে) বিচ্ছিন্ন থাকুক।
তথ্যসূত্র:
১- কোরআন কারিম
২- আল এলাম (শেখ তুসি)
৩- এনতেসার (সাইয়েদ মুর্তাযা)
৪- আইনায়ে মুযদিসিনী (কিখসরো)
৫- বিহার (আল্লামা মাজলিসী)
৬- বেদায়াতুল মুজতাহিদ (কুরতবী)
৭- আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া (ইবনে কাসির)
৮- আল বায়ান ওয়াত তাহসিল (কুরতবী)
৯- তাহযিবুল কামাল (হাফিয মিয্যি)
১০- তাহযিবুত তাহযিব (আসকালানি)
১১- তারিখে মাদিনাতে দামিশক (ইবনে আসাকির)
১২- আত তাওশিহ (সূয়ূতী)
১৩- তানকিহুল মাকাল (মামকানি)
১৪- তাযকেরাতুল ফুকাহা (আল্লামা হিল্লি)
১৫- জাওয়াহেরুল কালাম (মুহাক্কিক নাজাফী)
১৬- আল হাবলুল মাতিন (শেখ বাহায়ী)
১৭- আল খেলাফ (শেখ তুসি)
১৮- দায়ায়েমুল ইসলাম (কাযি নোমান মিসরী)
১৯- আদ দুরুসুশ্শারয়িয়া (শাহিদে আওয়াল)
২০- সুনানে ইবনে মাজা (কাযবিনি)
২১- সুনানে ইবনে দাউদ (দারে কুতনী)
২২- সুনানে ইবনে তিরমিযি (তিরমিযি)
২৩- আস সুনানুল কুবরা (বেহকি)
২৪- সেয়রে আলামুন নোবালা (যাহাবি)
২৫- আশ শারহুল কাবির (দারদির)
২৬- সহিহ মুসলিম (নিশাপুরি)
২৭- সহিহ বুখারী (মুহম্মাদ ইবনে ইসমাইল)
২৮- উমদারুল কারি (আয়নী)
২৯- গুনয়াতুন নাযু (ইবনে যোহরা)
৩০- আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতে (যুহেলি)
৩১- কামুসুর রেজাল (আল্লামা তুসতারি)
৩২- আল কাফি, আল ফুরু, (সেকাতুল ইসলাম কুলায়নী)
৩৩- আল মুগনী (ইবনে কেদামা)
৩৪- আল মাবসুত (সারখাসি)
৩৫- মুসতাদরাকুল ওয়াসায়েল (মুহাদ্দিসে নুরি)
৩৬- মেরাতুল উকুল (আল্লামা মাজলিসী)
৩৭- মিসবাহুল ফাকিহ (হামদানি)
৩৮- মিরকাতুল মাফাতিহ
৩৯- মুদবেনাতুল কুবরা (মালিক…ইবনে কাসিম)
৪০- আল মুয়াত্তা (মালিক ইবনে আনাস)
৪১- মুসনাদে আহমাদ (ইবনে হাম্বাল)
৪২- আল মাজমু (নাবাভী)
৪৩- মালাযুল আখবার (আল্লামা মাজলিসী)
৪৪- নেয়লুল আওতার (শাওকানি)
৪৫- ওয়াসায়েলুশ শিয়া (হুর্রে আমলী)
লেখকের অবদান
১- মোজামে আহাদিসিল ইমাম আল-মাহদী (আ:) (সহযোগি)
২- নিশানায়ী আয দাওলতে মাওউদ
৩- চাশম আনদাযী বে হুকুমতে হযরতে মাহদী (আ:)
৪- ফি রেহাবে হুকুমাতুল ইমামুল মাহদী (আs:) ( আরাবী, ফার্সী, উর্দূ, জার্মানী ও ইংরাজি)
৫- মাওয়ারেদুস সিজনে ফিন নুসুসে ওয়াল ফাতাওয়া
৬- আন নাফি ওয়াত তাগরিব ফি মাসাদেরুত তাশরিউল ইসলামী
৭- আস সিজনো ওয়ান নাফি ফি মাসাদেরুত তাশরিউল ইসলামী
৮- আল আইয়ামুল মাক্কিয়া মিন উমরিন নাহযাতুল ইসলামী
৯- দেরাসাতুন ফিকহিইয়া ফি মাসায়েলুল খিলাফিয়া
১০- রাওয়াফেদুল ইমান ইলা আকায়েদুল ইসলাম
১১- রুইকারদে আকলানী বে বাওয়ারহায়ে ওয়াহাবিয়াত
১২- আশুরা বাইনাস সুন্নাহ ওয়াল বিদয়া
১৩- সালাতুত তারাবী বাইনাস সুন্নাহ ওয়াল বিদয়া
১৪- আয যাওয়াজুল মওয়াক্কাত ইনদাস সাহাবা ওয়াত তাবেয়িন
১৫- হুকুকে যিনদানী ওয়া মাওয়ারিদে যিনদান দার ইসলাম
১৬- আহলে বায়েত সাফিনাতুন নাজাত
১৭- আর রাজায়াত ফি মাসাদেরুল ফারিকায়েন
১৮- দেরাসাতো হাওলে সাওমে আশুরা
১৯- রাজায়াত আয নাযারে শিয়া
২০- নামাযে তারাবী বাইনে সুন্নাত ওয়া বিদআত
২১- সালাফিয়ান দার গুযারে তারিখ
২২- আস সালাফ ওয়াস সালাফিউন
২৩- নাকদ ওয়া বার্রেসি জোয়ামে হাদিসীয়ে আহলে বাইত
২৪- আল জাম বাইনাস সালাতায়নে
২৫- ঈলাম দিয়ারে শিয়ায়ানে গুমনাম
২৬- নেযামে আরতিশ দার ইসলাম
২৭- মোবাহিসী পেয়রামুনে মেহদাবিয়াত
২৮- লেমাযাল বোকায়া আলাল হোসায়েন(আ.)
২৯- চেরায়িএ গিরিয়া ওয়া সোগওয়ারী
৩০- পাসুখ বে বারখী শুবহাতে মাযহাবী
৩১- ইমাম হোসায়েন (আ.) দার মাক্কা মুকার্রামা
৩২- রেজালে মাকারিন
৩৩- হুকম বে কারগিরি মোওয়াদ্দে সাম্মী দার জিবহে
৩৪- ওসুলে জাঙ্গ
৩৫- পাসুখী বে তাহাজুম(সহযোগি)
৩৬- কেতাবিল্লাহ ওয়া আহলুল বায়েত ফি হাদিসুস সাকলায়েন(সহযোগি)
৩৭- যারুরাতে ওয়াজুদে আরতিশ দার ইসলাম
৩৮- তাখাল্লুফ আয জাঙ্গ
৩৯- ফারার আয জাঙ্গ
৪০- তাশরিউল আযান ওয়া ফুসুলুহু
৪১- হাদিসুল আশারাতুল মোবাশ্শেরা
৪২- দারসহায়ে পেয়রামুনে মাহদাবিয়াত
১- সেফারত ওয়া নেয়াবতে খাস্সা
২- বার্রাসিয়ে ইমামত ওয়াত তাবসেরা মিনাল হেয়রাতে
৩- বার্রাসিয়ে আহাদিসে আদালাতে মাহদায়ী
৪- কাবিশে দার জিরয়ানে নারগিস খাতুন
৫- হুকমে তাসমিয়া ওয়া যিকরে নামে হযরতে ওলী আসর (আ:)
৬- দালায়েলে গায়বাতে হযরতে মাহদী (আ:)
৭- নাই আয কেয়াম দার বুতে নাকদে ওয়াত তাহলিলে
৮- দারান্গী দার রেওয়ায়েতে কাতলহায়ে আগাযিনে দাওলাতে মেহদী (আ:)
৯- সিরায়ে দার কেতাবে কামালুদ্দিন
১০- তাহকিকিয়ে পেয়রামুনে জাযিরায়ে খাযরা
১১- তাহকিকিয়ে পেয়রামুনে যিয়ারতে নাহিয়া
১২- বেহসি পেয়রামুনে হুকুমতহায়ে পাস আয হযরতে মেহদী (আ:)
১৩- আলকাবে হযরতে মেহদী (আ:)
১৪- বার্রাসিয়ে রেওয়ায়েতে আলী ইবনে মেহযিয়ার
১৫- বার্রাসিয়ে সারদাবে গায়বাত
১৬- ইরতেবাতে কারকিসিয়া বা হার মাকদুন
১৭- বার্রাসিয়ে রেওয়ায়েতে দাজ্জাল (শাকস আসত ইয়া জিরইয়ান)
১৮- কুম দার আসরে গায়বাত
১৯- আয়া দার বারাবারে ইয়ামানি, ওয়াযিফায়ী দারিম
২০- বিযগিহায়ে হুকুমতে মেহদাবী (আ:)
৪৩- দেরাসা ওয়া তাহলিলে হাওলে আয়াতেল ওয়াযু
৪৪- আল ইমামুস সাদিক (আ:) ওয়া মাওকুফুল বুখারী মিন রাওয়ায়াতেহি
৪৫- রাহবারে আযাদগান
৪৬- বার্রাসিয়ে তাফসিরে ইমামে হাসানে আসকারী (আ:)
৪৭- দুরুস ফি রেজালিল হাদিস
৪৮- চাকিদায়ি আয চাশম আনদাযি বে হুকুমতে হযরত মাহদী (আ:)
৪৯- আয যাহরা ফিল কেয়ামা
৫০- রাওয়াবিতে আহলে বায়েত (আ:) বা খুলফা
৫১- আল ইহুদ ফিল কোরআন ওয়াত তারিখ
৫২- বেহেশ্তি পেয়রামুনে হযরতে মাসুমে (আ:)
৫৩. নামায বা দাসতে বাসতে ইয়া বায
[1] (বেদায়াতুল মুজতাহিদ খ: ১ পৃ: ১৩৬)
[2] (সায়রে আলামুল নাবালা খ: ৪ পৃ: ৫৭১)
[3] (আল বায়ান ওয়াততাহসিল খ: ১ পৃ: ৩৯৪)
[4] (আল ফিকুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতেহ খ: ৪ পৃ: ৮৭৪, আল মাজমু খ: ৩ পৃ: ৩১৩, আল মাবসুত সারাখসী খ: ১ পৃ: ২৩)
[5] (সহীহ বুখারী খ: ১ পৃ: ১৩৫)
[6] (উম্দাতুল কারী ফি শারহে সহীহ বুখারী খ: ৫ পৃ: ২৮০)
[7] (নেইলুল আওতার খ: ২ পৃ: ১৭৮)
[8] (তাহযীব আল তাহযীব খ: ৮ পৃ: ৩১৪)
[9] (মিসবাহুল ফাকিহ খ: ১ পৃ: ৪০১)
[10] (আয়নায়ে আয়ীনে মাযদিসনী পৃ: ২০)
[11] (ওসায়েলুশিয়া খ: ৭ পৃ: ২৬৬ বাব ১৫, মিরাতুল উকুল খ: ১৫ পৃ: ৭৪)
[12] (প্রাগুক্ত : খ: ৫ পৃ: ৫১১ বাব ১৭, হাদীস ২ পৃ: ৪৬৩; মিরাতুল উকুল খ: ১৫ পৃ: ৭৪)
[13] (ওসায়েলুশিয়া খ: ৫ পৃ: ৫১১ বাব ১৭,হাদীস ২ পৃ: ৪৬৩; মিরাতুল উকুল খ: ১৫ পৃ: ৭৪)
[14] (প্রাগুক্ত খ: ৫ পৃ: ৫১১ বাব ১৭,হাদীস ২ পৃ: ৪৬৩; মিরাতুল উকুল খ: ১৫ পৃ: ৭৪)
[15] (প্রাগুক্ত খ: ৫ পৃ: ৫১১ বাব ১৭,হাদীস ২ পৃ: ৪৬৩; মিরাতুল উকুল খ: ১৫ পৃ: ৭৪)
[16] (প্রাগুক্ত খ: ৫ পৃ: ৫১১ বাব ১৭,হাদীস ২ পৃ: ৪৬৩; মিরাতুল উকুল খ: ১৫ পৃ: ৭৪)
[17] (প্রাগুক্ত খ: ৭ পৃ: ২৬৭ বাব ১৫ হাদীস ৭)
[18] (বেহারুল আনওয়ার খ: ৮৪ পৃ: ১৮৬ হাদীস ১; মুসতাদরাকুল ওসায়েল খ: ৫ পৃ: ৪২০)
[19] (দায়ায়েমুল ইসলাম খ: ১ পৃ: ১৫৯; মুসতাদরাকুল ওসায়েল খ: ৫ পৃ: ৪২০)
[20] (উসুলে কাফী খ: ৩ পৃ: ৩৩৭)
[21] (কিতাবুত তাযকেরা খ: ৩ পৃ: ২৫৩)
[22] (আল ইনতেসার পৃ: ২২)
[23] (আল খেলাফ খ: ১ পৃ: ১০৯)
[24] (আল হাবলুল মাতিন পৃ: ২১৪; মালাযাল আখিয়ার খ: ৩ পৃ: ৫৫৩)
[25] (মুদবেনাতুল কুবরা খ: ১ পৃ: ৭৬)
[26] (বেদায়েতুল মজতাহিদ খ: ১ পৃ: ১৩৬, ইবনে রুশদে কুরতাবী মৃত্য ৫৯৫ হিজরী)
[27] (আল বায়ান ওয়াত্তাফসীল খ: ১ পৃ: ৩৯৪; মিরকাতুল মুফাতী কারী খ: ২ পৃ: ৫০৮)
[28] (আল জুমুয় খ: ৩ পৃ: ৩১৩)
[29] (সেয়রে আলাম আলনাবলা খ: ১০ পৃ: ৩৬০, আল বেয়ান ওয়াতাহসীল খ: ১ পৃ: ৩৯৪; মিরকাতুল উসুল কারী খ: ২ পৃ: ৫০৮)
[30] (উম্দাতুল কারী ফি শারহে সহীহ বুখরী খ: ১ পৃ: ২৭৮, আল মুগনী খ: ১ পৃ: ৪৭২)
[31] (নেয়লুল আওতার খ: ২ পৃ: ১৮৬, আল জুমুহ খ: ৩ পৃ: ৩১১, আল মুগনী খ: ১ পৃ: ৫৪৯, শরহে কাবীর খ: ১ পৃ: ৫৪৯, আল মাবসুত সারখাসী খ: ১ পৃ: ২৩, আল আলাল মাযাহিবুল আরবায়া খ: ১ পৃ: ১৫১)
[32] (আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতে খ: ২ পৃ: ৮৭৪)
[33] (সহীহ বুখারী খ: ১ পৃ: ১৩৫, মুয়াত্তা ইমামে মালিক খ: ১ পৃ: ১৫৮)
[34] (উম্দাতুল কারী খ: ৫ পৃ: ২৭৮)
[35] (আল তাওশী আলা আল জামেয়ুস সহীহ বুখারী খ: ১ পৃ: ৪৬৩)
[36] (সহীহ মুসলীম খ: ১ পৃ: ১৫০, দারে কুতনী খ: ১ পৃ: ২৮৬ হাদীস ৮ ও ১১)
[37] আরবরা যেটি নিজের পোষাকের উপর পরে থাকে।
[38] (তাহযীব আল তাহযীব খ: ৭ পৃ: ২৪৭, তাহযীবুল কামাল খ: ১৩ পৃ: ১৯৩ (পৃষ্টারের উপরে))
[39] (প্রাগুক্ত খ: ৮ পৃ: ৩১৪)
[40] (হতে পারে এখানে মাওলা থেকে উদ্দেশ্য ওলায়ে যামান জারিরা হতে পারে বা অন্য কেউ হতে পারে)
[41] (মুয়াত্তা ইমামে মালিক খ: ১ পৃ: ১৫৮, সহীহ বুখারী খ: ২ পৃ: ২৬৩, কিতাবুল আন্বিয়া)
[42] (তাহযিবুল কামাল খ: ১২ পৃ: ১১, তাহযিবুত তাহযিব খ: ১৬ পৃ: ৩২৬)
[43] (সুনানে আবু দাউদ খ: ১ পৃ: ২০১)
[44] (তাহযিব আল তাহযিব খ: ৮ পৃ: ১৬৪, সুনানে আবু দাউদ খ: ১ পৃ: ২০১)
[45] (সুনানে আবু দাউদ খ: ১ পৃ: ২০০, সুনানে ইবনে মাজা খ: ১ পৃ: ২৬৬)
[46] (তাহযিবুত তাহযিব খ: ১১ পৃ: ৫৬)
[47] (প্রাগুক্ত খ: ৩ পৃ: ৩১৮)
[48] (সুনানে আবু দাউদ খ: ১ পৃ: ২০১, দারে কুতনী খ: ১ পৃ: ২৮৬, সুনানে কুবরা খ: ২ পৃ: ৪৩)
[49] (তাহযিব আল তাহযিব খ: ৩ পৃ: ৩১৮)
[50] (তাহযিবুল কামাল খ: ১১ পৃ: ৯৯)
[51] (সুনানে আবু দাউদ খ: ১ পৃ: ২০১, নেয়লুল আওতার খ: ২ পৃ: ১৮৮)
[52] (তাহযিব আল তাহযিব খ: ২ পৃ: ৬৭)
[53] (সুনানে আবু দাউদ খ: ১ পৃ: ২০১, নেয়লুল আওতার খ: ২ পৃ: ১৮৮)
[54] (সুনানে দারে কুতনী খ: ১ পৃ: ৮৪)
[55] (তাহযিব আল তাহযিব খ: ৬ পৃ: ১২৪)
[56] (তারীখে দামিশ্ক খ: ১৯ পৃ: ১২২, আল বেদায়া ওয়াননেহায়া খ: ৮ পৃ: ১০৯, সেয়রে আলামুননোবালা খ: ২ পৃ: ৬০৮)
[57] (সুনানে আবু দাউদ খ: ১ পৃ: ২০১)
[58] (তাহযীব আল তাহযীব খ:১১ পৃ: ৮২)
[59] (জামেয়ুত তিরমীযি খ: ২ পৃ: ৩২)
[60] (তাহযীব আল তাহযীব খ: ৭ পৃ: ২৪৭, তাহযীবুল কামাল খ: ১৫ পৃ: ২২১)
[61] (সুনানে ইবনে মাজা খ: ১ পৃ: ২৬৬)
[62] (তাহযীব আল তাহযীব খ: ৯ পৃ: ৪৬৮)
[63] (সেয়রে আলামুল নোবালা খ: ১৩ পৃ: ২৭৯)
[64] (তাহযীবুল কামাল খ: ১৫ পৃ: ৪১২) (عاصم بن کلیب عن ابیه عن جده لیس بشئ)
[65] (সেয়রে আলামুল নোবালা খ: ১৩ পৃ: ২৭৯)
[66] (তাহযীব আল তাহযীব খ: ৬ পৃ: ৯৬)
[67] (দারেকুতনী খ: ১ পৃ: ২৮৩ হাদীস ১)
[68] (তাহযীব আল তাহযীব খ: ১ পৃ: ২৬৬)
[69] (দারে কুতনী খ: ১ পৃ: ২৮৪ হাদীস ২)
[70] (প্রাগুক্ত খ: ১ পৃ: ২৮৪)
[71] (মিযানুল য়েতেদাল খ: ৩ পৃ: ৪৫৪)
[72] (তাহযীব আল তাহযীব খ: ১১ পৃ: ৫৬)
[73] (দারে কুতনী খ: ১ পৃ: ২৮৪ হাদীস ৩)
[74] (তাহযীব আল তাহযীব খ: ১০ পৃ: ৩৮৮)
[75] (দারে কুতনী খ: ১ পৃ: ২৮৪ হাদীস ৩)
[76] (তাহযীব আল তাহযীব খ: ৫ পৃ: ২১)
[77] (প্রাগুক্ত খ: ১১ পৃ: ১১৪)
[78] (দারে কুতনী খ: ১ পৃ: ২৮৫)
[79] (তাহযীব আল তাহযীব খ: ১১ পৃ: ১১৪)
[80] (দারে কুতনী খ: ১ পৃ: ২৮৭ ও ১৩ হাদীস ১৪, মুসনাদে আহমাদ খ: ৩ পৃ: ৩৮১)
[81] (প্রাগুক্ত খ: ১ পৃ: ২৮৭ ও ১৩ হাদীস ১৪)
[82] (প্রাগুক্ত খ: ১ পৃ: ২৮৭ হাদীস ১৫)
[83] (তাহযীব আল তাহযীব খ: ৪ পৃ: ১৬০)
[84] (মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল খ: ৩ পৃ: ৩৮১)
[85] (তাহযীব আল তাহযীব খ: ২ পৃ: ১৭৭, সেয়রে আলামুন নোবালা খ: ৭ পৃ: ৭৫)
[86] (প্রাগুক্ত খ: ৯ পৃ: ১০৪)