মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স:)-এর কন্যা হযরত ফাতেমা যাহরা (স:)
পর্ব ৪- সন্তানাদি
হযরত ফাতেমা (স:) ছিলেন দুই পুত্রসন্তান ও দুই কন্যাসন্তান-এর মাতা। হযরত হাসান জন্মগ্রহণ করেন তৃতীয় হিজরিতে ও হযরত হোসাইন জন্মগ্রহণ করেন চতুর্থ হিজরিতে। তাঁর প্রথম কন্যা হযরত যায়নাব ষষ্ঠ হিজরিতে ও দ্বিতীয় কন্যা হযরত উম্মে কুলসুম সপ্তম হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন।
রাসূলে আকরাম (স:)-এর বংশধর বলতে হযরত ফাতেমা যাহরার বংশধারাকেই বুঝানো হয়।
কুরআন মজীদে ফাতেমা (স:)-এর ফযিলত
কুরআন মজীদের কিছুসংখ্যক আয়াত ফাতেমা (স:) ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যগণের উচ্চ মর্যাদার শানে অবতীর্ণ হয়েছে, যদিও আয়াতগুলোতে তাঁদের নাম উল্লেখ করা হয় নি। এর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দু’টি আয়াত হল সূরা আল্-আহযাবের ৩৩ নং আয়াত ও সূরা আলে ইমরানের ৬১ নং আয়াত। সূরা আল্-আহযাবের উক্ত আয়াতের শানে নুযুলে তাঁদেরকে (মহানবী, আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন) বলা হয়েছে ‘নবীর পরিবার’ (আহলে বাইত)। এ আয়াত দ্বারা সাধারণভাবে বোঝা যায়, রাসূলে আকরাম (স:) ফাতেমা (স:) ও তাঁর স্বামী আলী (আ.) এবং তাঁদের দুই পুত্রসন্তান একই পরিবারভুক্ত। দ্বিতীয় আয়াতে খ্রিস্টান প্রতিনিধিদলের সামনে চ্যালেঞ্জ (মুবাহালা) প্রসঙ্গে তাঁদের পূতপবিত্র সত্তার প্রতি ইঙ্গিত করে হযরত ফাতেমার মর্যাদার গুপ্ত রহস্যের প্রকাশ ঘটানো হয়েছে।
মুবাহালার আয়াত নাযিলের সেই সঙ্কটজনক সময়ে আল্লাহ তা‘আলা যাঁদেরকে বিশেষ মানুষ হিসেবে প্রদর্শন করেন এবং অন্য সকলের ধ্বংস হওয়ার বিপরীতে তাঁদের নিরাপত্তার জামিনদার হন তাঁদের একজন ছিলেন হযরত ফাতেমা যাহরা।
এক হাদীসের বর্ণনা মতে, কুরআনের সূরা আলে ইমরানের ৪২ নং আয়াতের তাফসীরে রাসূলুল্লাহ্ (স:) হযরত ফাতেমা যাহরাকে হযরত ঈসা (আ.)-এর মাতা হযরত মারইয়ামের প্রশংসার সাথে সম্পর্কযুক্ত করেছেন। এ হাদীস মতে, দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ চার নারী হলেন হযরত ঈসা (আ.)-এর মাতা হযরত মারইয়াম, ফিরআউনের স্ত্রী হযরত আছীয়া, মহানবী (স:)-এর স্ত্রী হযরত খাদীজা ও তাঁর কন্যা হযরত ফাতেমা। তবে বর্ণনাকারীদের মতে এ চারজন মহিলার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন হযরত ফাতেমা যাহরা।
ওফাত
বিদায় হজ্বের পর হযরত রাসূলে আকরাম (স:) হযরত ফাতেমাকে তাঁর ইন্তেকালের আগাম খবর দেন এবং বলেন, ‘আমার আহলে বাইতের সদস্যদের মধ্যে তুমি আমার সাথে শীঘ্রই মিলিত হবে।’ কিছুদিন পর মহানবী (স:) ইহধাম ত্যাগ করেন। হযরত ফাতেমা খুবই দুঃখভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন এবং এ অবস্থার মধ্য দিয়ে ওফাত পর্যন্ত তিনি তাঁর জীবনের প্রায় নব্বই দিন অতিবাহিত করেন ।
হযরত ফাতেমার দাসী আসমা বিনতে উমাইস তাঁর ওফাতের কাহিনী বর্ণনা করেন। ওফাতের দিন তিনি বাচ্চাদের জন্য খাবার প্রস্তুত করেন এবং আসমাকে কিছু নির্দেশনা দিয়ে তিনি তাঁর ইবাদাতের কক্ষে চলে যান। তিনি কিছুক্ষণ পর তাঁর কক্ষের মধ্যে জোরে জোরে তাকবীর ধ্বনি দিতে থাকেন। আসমা যখন তাঁর তাকবীর ধ্বনি আর শুনতে পেলেন না তখন মসজিদে গিয়ে আলী (আ.)-কে তাঁর স্ত্রীর ওফাতের খবর দিলেন।
আসমার প্রতি নির্দেশ ছিল ছেলে-মেয়েরা ঘরে ফিরে এলে এ খবর দেয়ার পূর্বেই তাঁদের খাবার খাইয়ে দিতে হবে। আসমা সে কাজটিই করলেন। ইমাম হাসান ও হোসাইন এলে তিনি তাঁদের খাবার দিলেন। তাঁরা তাঁদের মায়ের হাতে ছাড়া খাবেন না বলে বায়না ধরলে আসমা তাঁদের মায়ের ওফাতের খবর দেন। তাঁরা মায়ের ঘরে প্রবেশ করার পর পরই ইমাম আলী (আ.) সেখানে উপস্থিত হন এবং নিজেকে সামলে নিয়ে কাফন-দাফনের প্রস্তুতি নেন।
তাঁকে রাতের অন্ধকারে জান্নাতুল বাকী গোরস্তানে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। রাসূলে আকরাম (স:)-এর কন্যার জানাজায় কয়েকজন পারিবারিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। কিছুসংখ্যক ঐতিহাসিক মনে করেন, হযরত ফাতেমাকে তাঁর নিজ ঘরে সমাহিত করা হয়, যে অংশটি মসজিদে নববীর অন্তর্ভুক্ত।#