বি ইসমেহি তায়ালা
সাহায্য প্রার্থনা (ইস্তেগাসা)এর নমুনা
استغاثة
تالیف و ترجمه : مجید الاسلام شاه
সংকলন ও অনুবাদ
মজিদুল ইসলাম শাহ
সূচিপত্র
সাহায্য প্রার্থনা (ইস্তেগাসা)এর নমুনা.. 1
১- হযরত মুহম্মাদ (স:) এর কবরে এক অন্ধ ব্যক্তির সাহায্য প্রার্থনা করা: 1
২- হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে হযরত আয়েশা (র:)এবং হযরত ওমর (র:)এর সাহায্য প্রার্থনার অনুমতি দেওয়া: 2
আহলে বায়েত (আ:)এর কবর থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা: 6
১- কায়রোয় মাকামে ইমাম হোসায়েন (আ:) থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা: 6
২- এক অন্ধ ব্যক্তির ইমাম হোসায়েন (আ:)এর দরবারে তাওয়াস্সুল করা: 7
৩- ইবনে হাব্বানের ইমাম রেযা (আ:)এর কবরে সাহায্য প্রার্থনা করা: 8
৪- ইবনে খুযাইমার ইমাম রেযা (আ:)এর কবরে প্রার্থনা করা: 9
দারেকুতনীও তার সম্পর্কে নিজের মতামত দিয়ে লিখেছেন: 10
কিছু সাহাবী এবং আহলে সুন্নত আলেমদের কবর থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা: 11
১- আবু আইয়ুব আনসারী(র:)এর কবর থেকে প্রার্থনা করা (মৃত্যু ৫২ হিজরী রুম শহরে): 11
২- আবু হানিফা (র:)এর কবর থেকে প্রার্থনা করা: 11
৩- আহমাদ ইবনে হাম্বাল(র:)এর কবর থেকে প্রার্থনা করা: 12
৪- ইবনে ফরাক ইসফাহানী(র:)এর কবর থেকে প্রার্থনা করা: (মৃত্যু ৪০৬ হিজরী) 12
৫- শেখ আহমাদ বিন আলওয়ান(র:)এর কবর থেকে প্রার্থনা করা: (জন্ম ৭৫০ হিজরী) 12
সাহায্য প্রার্থনা (ইস্তেগাসা)এর নমুনা
এখানে সাহাবা ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আলেমগণের মহানবী হযরত মুহম্মাদ (স:)এর পবিত্র কবরে সাহায্য প্রার্থনার কিছু উদাহরণ এখানে তুলে ধরছি:
১- হযরত মুহম্মাদ (স:) এর কবরে এক অন্ধ ব্যক্তির সাহায্য প্রার্থনা করা:
তিবরানী স্বয়ং হযরত মুহম্মাদ (স:)এর সাহাবী উসমান বিন হোনায়েফ থেকে বর্ণনা করেছেন: এক ব্যক্তি কয়েক বার নিজের সমস্যা সমাধান করার জন্য তৃতীয় খলিফা উসমান বিন আফ্ফানের নিকট এসেছিলো, কিন্তু তিনি কোনো গ্রাহ্য করলেন না ফলে ওই ব্যক্তি উসমান বিন হোনায়েফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমস্ত কথা প্রকাশ করলেন।
উসমান বিন হোনায়েফ বললেন: ওযু করে মসজিদে গিয়ে দুই রাকাত নামায আদায় কর এবং এই দোয়া পাঠ কর:
اللّهم انّی اسئلک واتوجّه الیک بنبیّنا محمّد نبیّ الرحمة، یا محمد! انّی اتوجّه بک الی ربیّ فتقضی لی حاجتی
“হে আল্লাহ! আমি আমার নবী হযরত মুহম্মাদ (স:)এর ওসিলা দিয়ে তোমার কাছে প্রশ্ন করছি এবং তোমার দরবারে মনোযোগী হয়ে আছি, হে মুহম্মাদ! আমি তোমাকে আমার আল্লাহর দরবারে ওসিলা বানালাম এবার তুমি আমার চাহিদা পূরণ কর”।
অতঃপর নিজের চাহিদা প্রকাশ কর। সেই ব্যক্তি উসমান বিন হোনায়েফের কথা অনুযায়ী আমল করে উসমান বিন আফ্ফানের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হল, দারোয়ান তাকে দেখা মাত্র তার হাত ধরে উসমানের কাছে নিয়ে গেল। উসমান তাকে মখমলের বিছানার উপর বসানোর পর নিজেও তার কাছে বসলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন তোমার সমস্যা কি ? তখন সেই ব্যক্তি নিজের সমস্যা বর্ণনা করলো এবং উসমান সমস্যার সমাধান করলেন।
অতঃপর সেই ব্যক্তি উসমানের বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা উসমান বিন হোনায়েফের কাছে গিয়ে বলল: আল্লাহ আপনার ভাল করুন, কেন না আপনি উসমান বিন আফ্ফানের কাছে আমার সুপারিশ করেছেন, উসমান বিন হোনায়েফ বললেন: আল্লাহর শপথ করে বলছি! আমি তো তোমার জন্য কোনো সুপারিশই করিনি। কিন্তু এক দিন আমি দেখেছিলাম যে, এক অন্ধ ব্যক্তি হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কাছে নিজের অন্ধ হওয়ার সম্পর্কে নালিশ করছিল। হযরত মুহম্মাদ (স:) বললেন: তুমি কি ধৈর্য ধারণ করতে পার? ওই ব্যক্তি বলতে লাগলো: হে আল্লাহর রসূল! আমার কাছে এমন কেউ নেই যে আমাকে সাহায্য করবে কিংবা লাঠি ধরে আমাকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যাবে এবং এটি আমার জন্যে খুবই কষ্টকর। হযরত মুহম্মাদ (স:) বললেন: যাও ওযু করে দুই রাকাত নামায আদায় কর এবং শেষে এই দোয়া পাঠ কর…।
উসমান বিন হোনায়েফ বললেন: আমরা হযরত মুহম্মাদ (স:)এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম এবং বেশি সময়ও অতিক্রান্ত হয়নি দেখলাম ওই ব্যক্তি আমাদের কাছে এমন ভাবে উপস্থিত হল যে, এর আগে সেই ব্যক্তি অন্ধই ছিল না। [1]
২- হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে হযরত আয়েশা (র:)এবং হযরত ওমর (র:)এর সাহায্য প্রার্থনার অনুমতি দেওয়া:
দারমী নিজের সুনানে এই ভাবে বর্ণনা করেছেন:
একদা মদিনাবাসীরা খরার সম্মুখীন হলে হযরত আয়েশা (র:)এর কাছে গিয়ে নালিশ করে। হযরত আয়েশা (র:)বললেন: হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে গিয়ে একটি ছিদ্র কর যাতে কবর এবং আসমানের মধ্যে কোনো বাধা না থাকে।
রাভী বললেন: যখন লোকেরা এরূপ করলো তখন ভীষণ বৃষ্টি বর্ষণ হল যার ফলে লতাপাতা জেগে উঠলো এবং পশুরা খেয়ে স্বাস্থ্যবান হয়ে গেল, শুধু তাই নয় ভেড়ার দুমবায় চর্বির কারণে স্পষ্ট হতে লাগলো এবং এত অন্নবৃদ্ধি হল যার ফলে সেই বছর ‘ফাতাক’ নামে বিখ্যাত লাভ করল। [2]
দ্বিতীয় রেওয়ায়েত ‘ইবনে আবি শায়বা’ সহীহ সানাদের সাথে ‘আবি সালেহ সামান’ থেকে এবং ও মালিকুদ্দার (হযরত ওমরের গুদামের তত্ত্বাবধায়ক) থেকে বর্ণনা করেছেন: দ্বিতীয় খলিফার শাসনকালে যখন খরা দেখা দিল তখন একজন ব্যক্তি হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে গিয়ে বলতে লাগলো: হে আল্লাহর রসূল! আপনার উম্মত খুবই কষ্টের মধ্যে আছে তাদের জন্যে বৃষ্টির দোয়া করেন। সপ্নে ওই ব্যক্তিকে বলা হল ওমরের কাছে যাও।
সায়েফ ‘আল ফুতুহ’ গ্রন্থে উক্ত রেওয়ায়েত বর্ণনা করার পর লিখেছেন: ওই ব্যক্তি বিলাল বিন হারিস এ মুযনি হযরত মুহম্মাদ (স:)এর সাহাবী ছিলেন।
মাসউদী (মৃত্যু ৩৪৬ হিজরী) ‘মুরুজুয যাহাব’ পুস্তকে লিখেছেন: সন ৫৩ হিজরীতে ইরাকের শাসক ‘যিয়াদ বিন আবিহ’ মোওয়াবিয়াকে এই ভাবে চিঠি লিখেছেন: আমি আমার ডান হাত দিয়ে ‘ইরাক’ শহরকে জয় করেছি এখন আমার বাম হাত খালি আছে এই কথা শুনে মোওয়াবিয়া ‘হেজায’ শহরেরও শাসন তার হাতে দিয়ে দিল। যখনি এই খবর মদিনাবাসীদের কানে পৌঁছালো তখন সমস্ত মদিনাবাসী ‘মসজিদে নববী’তে একত্রিত হয়ে কান্নাকাটি শুরু করলো এবং তিন দিন পর্যন্ত হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে ওই পাপীর বিরুদ্ধে নিরাপত্তা চাই তার কারণ মদিনাবাসীরা ওই পাপীর কার্যকালাপ থেকে অবগত ছিলেন। [3]
অন্য একটি রেওয়ায়েতে বর্ণনা হয়েছে যে ‘মুহম্মাদ বিন মানকাদর’ বলেছেন: এক ব্যক্তি আমার পিতার কাছে ৮০ দিনার আমানাতস্বরূপ রাখে এবং বলে যে, প্রয়োজনে এই দিনার খরচ করো, এই বলে সে নিজে জিহাদে চলে যায়।
সেই বছরটি মানুষের জন্য খুবই কষ্টকর ছিল, আমার পিতা ওই ৮০ দিনার খরচ করে দিয়েছিলেন, যখন দিনারের মালিক আসলো তখন আমার পিতা বললেন আগামী কাল এসো।
ওই রাত্রে আমার পিতা ‘মসজিদে নববী’তে গিয়ে কখনো কবরের দিকে লক্ষ্য করে আবার কখনো মিম্বারে নবীতে আশ্রয় নেয়, ফজরের নামাযের আগ পর্যন্ত হযরত মুহম্মদ(স:)এর কাছে সাহায্য প্রার্থনায় মগ্ন ছিলেন হঠাৎ অন্ধকারে এক ব্যক্তি দৃশ্যমান হলেন এবং বললেন: হে আবু মুহম্মাদ! এটা নাও।
আমার পিতা হাত বাড়িয়ে ওটা নিয়ে নিলেন এবং দেখলেন তাতে ৮০ দিনার আছে। যখন সকাল হল ওই ব্যক্তি নিজের দিনার ফেরত নেওয়ার জন্য এল, তখন আমার পিতা ওই ৮০ দিনার তাকে দিয়ে দিলেন। [4]
অন্যত্রে রেওয়ায়েতে আমরা পড়ে থাকি ‘আবুবকর বিন মকার্রী’ বলেছেন: এক দিন ‘আবুল কাসিম তিবরানী’ (মৃত্যু ৩৬০ হিজরী) এবং ‘আবু শেখ’ হযরত মুহম্মাদ (স:)এর মাযার যিয়ারত করলেন ওখানে আমরা ক্ষুধায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম, আমরা সেই দিন এই ভাবে কাটিয়ে দিলাম যখন রাত্রি হল তখন আমি হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরের কাছে গিয়ে বললাম: হে আল্লাহর রসূল! আমরা ক্ষুধার্ত।
তার পর আমি নিজের বন্ধুদের কাছে গেলাম, আবুল কাসেম তিবরানী আমার সঙ্গে বললেন: এখানে বসো! হয় আজকে খাদ্য আসবে, নইলে মৃত্যুবরণ করবো।
আবু বকর বলেছেন: আমি এবং আবু শেখ ওখান থেকে ওঠলাম কিন্তু তিবরানী ওখানে কিছু ভাবছিলেন, সেই সময় হঠাৎ এক ব্যক্তি মসজিদের দরজায় আঘাত করলো, আমরা দরজা খুলে দেখলাম একজন ‘আলাভী’ ব্যক্তি দুইজন দাসের সাথে হাতে খাদ্য ভর্তি ঝুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা তাদের কাছ থেকে খাদ্য নিয়ে খুব পেট ভরে খেলাম এবং চিন্তা করলাম অবশিষ্ট খাদ্যগুলো হয়তো নিজের সাথে নিয়ে যাবে কিন্ত তারা সেই খাদ্যগুলো রেখে চলে গেল। খাওয়া দাওয়ার পর ওই আলাভী ব্যক্তি বললেন: তোমরা কি হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কাছে ক্ষুধার্তের নালিশ করে ছিলে? আমি সপ্নে হযরত মুহম্মাদ (স:)কে দেখলাম তিনি আমাকে তোমাদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করতে বললেন।[5]
সামহুদি অন্য এক রেওয়ায়েতে বর্ণনা করেছেন যে, ইবনে জাল্লাদ বলেছেন: আমি ‘মদিনা’ শহরে প্রবেশ করলাম কিন্তু সেই সময় আমি খুব বেশি গরীব ও দরীদ্রতার সম্মুখীন ছিলাম। হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে গেলাম এবং বললাম: হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনার অতিথি।
ওই অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়লাম, সপ্নে হযরত মুহম্মাদ (স:)এর যিয়ারত করলাম তখন তিনি আমাকে একটি রুটি দিলেন যা থেকে আমি অর্ধেক খেলাম। যখন আমি নিদ্রা থেকে জাগ্রত হলাম দেখলাম অবশিষ্ট অর্ধেক রুটি আমার হাতে রয়েছে। [6]
সামহুদি আর একটি ঘটনাতে এই ভাবে লিখেছেন: ‘আবু আব্দুল্লাহ মুহম্মাদ বিন আবি যারয়া সুফি’ বলেছেন: আমি আমার পিতা এবং আব্দুল্লাহ বিন হোনায়েফের সাথে মক্কার সফর করছিলাম রাস্তায় দরিদ্রতার সম্মুখীন হলাম। যখন মদিনায় প্রবেশ করলাম তখন খুবই ক্ষুধার্ত ছিলাম এবং আমি সেই সময় নাবালক ছিলাম আমার পিতার কাছে গিয়ে বললাম: আমি ভীষণ ক্ষুধার্ত।
আমার পিতা হযরত মুহম্মাদ (স:)এর মাযারের কাছে গিয়ে বললেন: হে আল্লাহর রসূল! আজকের রাত্রে আমরা আপনার অতিথি!
এই ভাবে অপেক্ষায় বসে থাকলাম, কিছু সময় পরে হঠাৎ মাথা উঁচু করে কখনো কাঁদতাম আবার কখনো হাসতাম। যখন এর কারণ জিজ্ঞাসা করলাম তখন বললেন: হযরত মুহম্মাদ (স:)এর যিয়ারত করলাম তখন তিনি আমাকে কিছু দিরহাম দিলেন হঠাৎ মুঠো খুলে দেখলাম দিরহাম হাতে আছে। ওই দিরহামে এত বরকত ছিল যে ‘শিরায’ শহরে ফিরে আসা পর্যন্ত ওই দিরহাম থেকে খরচ করতে থাকলাম কিন্তু তা শেষ হল না। [7]
সামহুদি উক্ত ঘটনার মতো আর একটি ঘটনা লিখেছেন: শেখ আবু আব্দুল্লাহ বিন আবিল আমান বলেছেন: আমি মদিনায় হযরত ফাতেমা (স:)এর মেহরাবের পিছনে ছিলাম এবং জনাব সৈয়দ মাকসারুল কাসেমিও ওই মেহরাবের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন হঠাৎ হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরের দিকে গেলেন আবার ফিরে এলেন, তখন আমি দেখলাম তিনি হাসছেন।
শামসুদ্দিন সাওয়াব (হযরত মুহম্মাদ (স:)এর মাযারের খাদেম) জিজ্ঞাসা করলেন: কেন হাঁসছো? শেখ আবু আব্দুল্লাহ বিন আবিল আমান বললেন: আমি খুবই গরীব হয়ে গিয়েছিলাম বাড়ি থেকে বের হলাম এবং হযরত ফাতেমা (স:)এর বাড়ি গিয়ে হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে বললাম: আমি ক্ষুধার্ত। তার পর ঘুমিয়ে পড়লাম, সপ্নে হযরত মুহম্মাদ (স:)কে দেখলাম তিনি আমাকে এক বাটি দুধ দিলেন যা পান করে আমি তৃপ্তি পেলাম। [8]
‘ওফাউল ওফা’ পুস্তকের লেখক আর এক হৃদয়বিদারক ঘটনা এই ভাবে বর্ণনা করেছেন: জনাব ‘আবু মুহম্মাদ সৈয়দ আব্দুস সালাম বিন আব্দুর রহমান হোসায়েনী’ বলেছেন: আমি হযরত মুহম্মাদ (স:)এর শহরে তিন দিন কাটালাম কিন্তু তিন দিন পর্যন্ত কিছু খেলাম না। হযরত মুহম্মাদ (স:)এর মেম্বারের কাছে গিয়ে দুই রাকাত নামায আদায় করে বললাম: হে আমার পিতামহ! আমি ক্ষুধার্ত আমি ‘আবগুশত’(মাংস ঝোল) খেতে চাই।
এই বলে আমার ঘুম এসে গেল, হঠাৎ এক ব্যক্তি আমাকে ঘুম থেকে জাগালেন যার হাতে ‘আবগুশতে’ ভরা একটি কাঠের বাটি ছিল আমাকে বললেন: এটা পান কর।
আমি বললাম এ খাবার কোথায় থেকে এনেছ ?
ওই ব্যক্তি বললেন: তিন দিন ধরে আমার ছেলে এই খাবারের জন্য আদেশ করছিল, আজ তৃতীয় দিন আল্লাহর রহমতে কাজ পেলাম আর সেই টাকা দিয়ে এই খাবার তৈরি করে খেয়ে ঘুমিয়েছি, সপ্নে হযরত মুহম্মাদ (স:) বললেন: তোমার একজন ভাই এই খাবারের আশায় আছে, যাও তাকে দিয়ে এসো। [9]
আহলে বায়েত (আ:)এর কবর থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা:
চিন্তার বিষয় এই যে, দীর্ঘ ইতিহাসে আহলে সুন্নত আলেমরা আহলে বায়েত (আ:)এর কবর থেকে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন যার কিছু উদাহরণ এখানে তুলে ধরছি।
১- কায়রোয় মাকামে ইমাম হোসায়েন (আ:) থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা:
হামযাভী আদভী (মৃত্যু ১৩০৩ হিজরী) নিজের ‘মাশারেকুল আনওয়ার’ পুস্তকে ইমাম হোসায়েন (আ:)এর পবিত্র শির মোবারাক দাফনের স্থান সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করার পরে লিখেছেন: সর্বত্তোম কাজ তো এটাই যে, এই বিশাল মাযারের বেশি যিয়ারত করা হোক যাতে মানুষ তার ওসিলা দিয়ে আল্লহর কাছে তাওয়াস্সুল করতে পারে এবং এই ইমাম থেকে যেভাবে তার জীবিত অবস্থায় সাহায্য চেয়েছিল এখনো যেন চাইতে থাকে। তার কারণ তিনি সমস্যা সমাধানকারী এবং ইমামের যিয়ারত প্রত্যেক দুর্যোপ্রাপ্ত মানুষ থেকে অসন্তুষ্ট ঘটনাকে দূর করে। ইমামের নূর এবং ওসিলার দ্বারায় প্রত্যেক উদাসীন মানুষের অম্তর আল্লাহর সাথে যুক্ত হয়ে যায়।
এই রকমই এক ঘটনার উদাহরণ, যা আমার শিক্ষক ‘আরিফ বিল্লাহ মুহম্মাদ শিবলী’ (ইবনুল সত) নামে বিখ্যাত ‘আল আযিযিয়া’ পুস্তকের ব্যাখ্যাকারী’র সাথে ঘটেছে সেটা হল এই যে, তার সমস্ত পুস্তক চুরি হয়ে যায়। যার ফলে সে দুঃখে ভেঙ্গে পড়ে এবং খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। শেষে আমাদের নেয়ামতের ওলি ইমাম হোসায়েন (আ:)এর দরবারে পৌঁছলেন এবং কবিতার সুরে সাহায্য প্রার্থনা করলেন। কিছু সময় সেখানে দাঁড়িয়ে যিয়ারত করলেন। অতঃপর বাড়ি ফিরে দেখলেন সমস্ত পুস্তক বিনা কোনো ঘাটতিতে যথা স্থানে রয়েছে। [10]
২- এক অন্ধ ব্যক্তির ইমাম হোসায়েন (আ:)এর দরবারে তাওয়াস্সুল করা:
শাবরাভী শাফেয়ী (মৃত্যু ১১৭২ হিজরী) নিজের (আল ইত্তেহাফ বেহুব্বিল আসরাফ) পুস্তকে ‘মিশর’ শহরে ইমাম হোসায়েন (আ:)এর পবিত্র মাথা দাফনের স্থান সম্পর্কে একটি আলাদা অধ্যায় লিখেছেন যার এক অংশে ইমাম হোসায়েন (আ:)এর যিয়ারত এবং তার কিছু অলৌকিক ক্ষমতা বর্ণনা করেছেন। সেই অলৌকিক ক্ষমতার মধ্যে থেকে একটি অলৌকিক ক্ষমতা এই ভাবে বর্ণনা করেছেন।
শামসুদ্দীন কাবিনী নামক এক ব্যক্তি যে, এই মাযারের প্রতিবেশী এবং খাদেম ছিলেন একদিন চক্ষুর যন্ত্রনার সম্মুখীন হলেন শুধু তাই নয় চক্ষুদ্বয়ের জ্যোতিও হারিয়ে ফেলেছেন। শামসুদ্দীন প্রতিদিন ফজরের নামায ওই মাযারে আদায় করতেন। একদিন কবরের দিকে চেহারা করে বললেন: হে আমার মাওলা! আমি আপনার প্রতিবেশী অন্ধ হয়ে গেছি, আল্লাহর কাছে তোমার ওসিলা দিয়ে দোয়া করছি আমার চক্ষুদ্বয়ের জ্যোতি ফিরিয়ে দাও যদি এক চোখের জ্যোতি ফিরে আসে তাতেই আমি সন্তুষ্ট।
তিনি এক রাত্রী সপ্ন দেখলেন যে, একটি কাফেলা এই মাযারের দিকে আসছে জিজ্ঞাসা করলেন এরা কারা ?
উত্তরে বলা হল: ইনি আল্লাহর রসূল (স:) নিজের সাথীদের নিয়ে ইমাম হোসায়েন (আ:)এর যিয়ারত করতে এসেছেন। শামসুদ্দীনও তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হলেন এবং যে দোয়া সে জাগ্রত অবস্থায় করতেন সপ্নে ইমাম হোসায়েন (আ:)এর মাযারে সেই দোয়া করলেন।
ইমাম হোসায়েন (আ:) নিজের নানার দিকে ইশারা করে বললেন: এই ব্যক্তির শাফাআত করুন।
আল্লাহর রসূল (স:) ইমাম আলী (আ:)কে বললেন: হে আলী! এই ব্যক্তির চোখে সুরমা লাগিয়ে দাও।
ইমাম আলী (আ:) অনুমতি পালন করলেন সুরমাদানী বাহির করে ওই ব্যক্তিকে বললেন: আমার কাছে এসো তোমার চোখে সুরমা লাগিয়ে দিই।
শামসুদ্দীন কাছে গেলেন ইমাম তার চোখে সুরমা লাগিয়ে দিলেন। শামসুদ্দীন যন্ত্রনা অনুভব করে জোরে চিৎকার করলেন এবং ঘুম থেকে জেগে উঠলেন কিন্তু যন্ত্রনার অনুভব করছিলেন। এই অলৌকিক ক্ষমতার মাধ্যমে তার ডান চোখের জ্যোতি ফিরে পেলেন এবং যত দিন জীবিত ছিলেন এক চোখের মাধ্যামে দর্শন করতেন। [11]
৩- ইবনে হাব্বানের ইমাম রেযা (আ:)এর কবরে সাহায্য প্রার্থনা করা:
আহলে সুন্নত আলেমদের মধ্যে থেকে একজন আলেম যিনি আহলে বায়েত(আ:)এর কাছে তাওয়াস্সুল করেছেন, তিনি হলেন ইবনে হাব্বান। সেই অলৌকিক ক্ষমতা বর্ণনা করার পূর্বে আমি এই আলেমের ব্যক্তিত্ব এবং আহলে সুন্নতদের নিকট তার স্থান সম্পর্কে কিছু আলোচনা করতে চাই:
আহলে সুন্নতদের ‘রেজাল’ শাস্ত্রের আলেমরা ইবনে হাব্বানের সম্পর্কে এই ভাবে লিখেছেন: তিনি ইমাম, মহাপন্ডিত, হাফিয এবং খোরাসানের মান্য গণ্য ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ও বিখ্যাত পুস্তকের লেখক, ২৭০ হিজরীতে জন্ম। কিছু দিন ‘সামারকান্দ’ শহরের কাযীও ছিলেন, দ্বীনি ফকীহ এবং পূর্বের দ্বীনি নিদশর্নগুলোর হাফিয ছিলেন। ও ‘মাসনদে সহীহ’ নামক পুস্তককে ‘আল আনওয়ায়ে ওয়াত তাকসিম’ নামে পুস্তক সংরক্ষণ করেছেন এবং তার নিদশর্নের মধ্যে ‘আত তারিখ’ ও ‘আয যোফা’ নামক পুস্তকও আছে। ‘সামারকান্দ’ শহরের মানুষ তার কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করতেন…
আবুবকর খাতিব বাগদাদী তাকে বিশ্বাসযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য আলেমদের মধ্যে গণ্য করেছেন এবং বলেছেন যে, ইবনে হাব্বান নির্ভরযোগ্য, বিশিষ্ট, বুদ্ধিমান এবং স্পষ্ট ব্যক্তি ছিলেন।
হাকিম নিশাবুরি তার প্রশংসায় লিখেছেন: ইবনে হাব্বান ফিকাহ শাস্ত্রের জ্ঞান, সাহিত্য জ্ঞান, মোহাদ্দিস জ্ঞান, ওয়ায জ্ঞান, থেকে পূর্ণ এবং গভীর চিন্তার মালিক এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে অদ্বিতীয় ছিলেন এবং আমাদের এখানে নিশাবুরে থাকতেন। [12]
এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ইবনে হাব্বান কয়েক বার ইমাম রেযা (আ:)এর যিয়ারতের জন্য গিয়েছিলেন এবং সাহায্য প্রার্থনাও করেছিলেন। ইবনে তায়মিয়া এবং তার অনুসারীদের মধ্যে কি এত শক্তি আছে যে, তারা এই ধরনের মানুষের বিরুদ্ধে কাফির এবং মুশরিক বা অজ্ঞতার অনুপাত দিতে পারে ?
তিনি ইমাম রেযা (আ:)এর সম্পর্কে এই ভাবে লিখেছেন: ইমাম রেযা (আ:) মামুন আব্বাসীর তরফ থেকে দেওয়া বিষ পান করার ফলে ‘তুস’ শহরে শহীদ হন। তার কবর সানাবাদ, নৌকান থেকে বাইরে, বিখ্যাত এবং যিয়ারতের স্থান…আমি কয়েক বার সেই কবরের যিয়ারত করেছি। যখন আমি ‘তুস’ শহরে ছিলাম যখনই কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতাম ইমাম রেযা (আ:)এর যিয়ারত করতাম এবং সমস্যা থেকে বিরত থাকার জন্যে আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম, আমার সমস্ত সমস্যা দূর হয়ে যেত। যত দিন ‘তুস’ শহরে ছিলাম কয়েক বার এই ভাবে পরীক্ষা করেছি। আল্লাহ তায়ালা আমাকে হযরত মুহম্মাদ (স:) এবং তাঁর আহলে বায়েতের (আল্লাহ তায়ালার দারূদ ও সালাম তাঁদের উপর বর্ষণ হোক) ভালবাসার সাথে মৃত্যু দিক।
৪- ইবনে খুযাইমার ইমাম রেযা (আ:)এর কবরে প্রার্থনা করা:
মুহম্মাদ ইবনে মুআওল বলেন: আমি আহলে হাদীসের ইমাম আবুবকর ইবনে খুযাইমা, তার বন্ধু ইবনে আলী সাকাফী এবং শিক্ষক ও ওলেমাদের একটি দলের সাথে তুস শহরে ইমাম রেযা (আ:)এর কবর যিয়ারতে গেলাম। এই যিয়ারতি সফরে ইবনে খুযাইমাকে সেই স্থান বিশেষ ভাবে বিনয় ও সম্মান করতে দেখলাম এবং সেখানে বিশেষ ভাবে প্রার্থনা করছিলেন যা দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। [13]
যাহবী ইবনে খুযাইমার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে লিখেছেন: ইবনে খুযাইমা শায়খুল ইসলাম, ইমামুল ইমামগণ, হাফেয, হুজ্জাত, ফকীহ এবং জ্ঞানী পুস্তকের মালিক ছিলেন। তিনি ২২৩ হিজরী সনে জন্ম গ্রহণ করেন এবং হাদীস ও ফিকাহ শিক্ষায় এত গভির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন যার ফলে শিক্ষায় এবং কৌশলে পন্ডিত হয়ে গিয়েছিলেন।
ইমাম বুখারী এবং ইমাম মুসলীম নিজেদের এই দুটি পুস্তক ছাড়া অন্য পুস্তকে তার কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। [14]
তার সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা আবুবকর ইবনে খুযাইমার সম্মান ও মর্যাদার কারণে সেই শহর থেকে বালা মসিবত দূর করে দিয়েছিলেন।
দারেকুতনীও তার সম্পর্কে নিজের মতামত দিয়ে লিখেছেন:
ইবনে খুযাইমা এমন একজন নেতা ছিলেন যিনি শিক্ষাগত দিক থেকে সূক্ষ্মদর্শী ও নজিরবিহীন ছিলেন।
এছাড়া ‘রেজাল’ শাস্ত্রবিদ আলেমরাও ইবনে খুযাইমার সম্পর্কে বলেছেন: ইবনে খুযাইমা রসূল (স:)এর সুন্নতকে জীবিত রেখেছিলেন। এবং রসূল (স:)এর হাদীস থেকে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিন্দুদিক বের করতেন। ইবনে খুযাইমা এমন একজন আলেম ছিলেন যিনি হাদীসগুলোকে সব সময় সমালোচনামূলক নজরে দেখতেন এবং হাদীস বর্ণনাকারীদেরকে ভালোভাবে জানতেন এবং তিনি শিক্ষা ও ধর্মপরায়ণতার দিক থেকে রসূল (স:)এর সুন্নতের উপর আমল করার কারণে জনগণের মধ্যে সুসম্মানের অধিকারী ছিলেন। [15]
ইবনে আবী হাতিম, ইবনে খুযাইমার সম্পর্কে বলেছেন: ইবনে খুযাইমা এমন একজন নেতা যার অনুস্মরণ করা হয়। ইবনে খুযাইমা এমন একজন সম্মানীয় ব্যক্তি যার আহলে সুন্নতের নিকট বিশাল সুনাম আছে, ইমাম রেযা (আ:)এর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেছেন এবং ইমাম রেযা (আ:)এর কবরে অতি বিনয়ের সহিত দোয়াও করেছেন। এই ধরনের ব্যক্তির সম্পর্কে কি ইবনে তাইমিয়া এবং তার অনুসারীরা বলতে পারে যে ইবনে খুযাইমা মুশরিক বা কাফির ছিলেন?
ইবনে তাইমিয়ারা কি ইবনে খুযাইমা বা এই ধরনের অন্য ব্যাক্তির সম্পর্কে ভুল ধারনা রাখতে পারে?!!
কিছু সাহাবী এবং আহলে সুন্নত আলেমদের কবর থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা:
পূর্বের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ইসলাম এবং মুসলমানদের সুন্নতে সাহায্য প্রার্থনার গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা অবগত হলাম যে, উক্ত বিষয় ইসলামী ইতিহাসে মুসলমানদের মধ্যে প্রচলন ছিল। এবার আমরা কিছু সাহাবী এবং আহলে সুন্নত আলেমদের কবরের দিকে ইশারা করবো যাদের কবর থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়েছিল।
১- আবু আইয়ুব আনসারী(র:)এর কবর থেকে প্রার্থনা করা (মৃত্যু ৫২ হিজরী রুম শহরে):
হাকিম নিশাবুরী লিখেছেন: মানুষেরা আবু আইয়ুব আনসারীর কবর যিয়ারতে যেতেন এবং যখন খরার সম্মুখীন হতেন তখন তার কবরে গিয়ে বৃষ্টির জন্য দোয়া করতেন।[16]
২- আবু হানিফা (র:)এর কবর থেকে প্রার্থনা করা:
ইবনে হাজার লিখেছেন: ইমাম শাফেয়ী যত দিন ‘বাগদাদে’ ছিলেন আবু হানিফার যিয়ারতে যেতেন এবং তাওয়াস্সুল করতেন মাযারে গিয়ে যিয়ারত করতেন সালাম জানাতেন এবং তার ওসিলা দিয়ে নিজের প্রয়োজনের জন্য আল্লাহর কাছে তাওস্সুল করতেন।
ইবনে হাজার এটাও লিখেছেন: সঠিক প্রমাণের সহিত, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল ইমাম শাফেয়ীর নিকট তাওস্সুল করতেন, হঠাৎ আহমাদের পুত্র নিজের পিতার এই ধরনের কাজকর্ম দেখে অবাক হলেন, তখন আহমাদ নিজের ছেলের অবাক হওয়ার উত্তরে বললেন: শাফেয়ী, মানুষের জন্য সূর্যের সমতুল্য এবং তার স্থান ঠিক সেই রকমই যেমন শরীরের জন্য সুস্থতার সম্পর্ক থাকে।
যখন ইমাম শাফেয়ীর কাছে এই খবর পৌঁছালো যে পশ্চিমা (মরক্বো ও তিউনেশিয়ার) বাসীরা ইমাম মালিকের কাছে তাওয়াস্সুল করে তখন তিনি লোকেদের এই কর্মকে খারাপ বললেন না।
শাফেয়ী বলেন: আমি আবু হানিফার কবর থেকে বরকত পাই এবং প্রতিদিন তার কবরে যাই আর যদি কোনো প্রয়োজন থাকে তাহলে দুই রাকাত নামায আদায় করে তার কবরে গিয়ে আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজন পাওয়ার জন্য প্রর্থনা করি। [17]
৩- আহমাদ ইবনে হাম্বাল(র:)এর কবর থেকে প্রার্থনা করা:
ইবনে জোযী “মানাকিবে আহমাদ” নামক পুস্তকে লিখেছেন: আব্দুল্লাহ ইবনে মুসা বলেছেন: আমি এবং আমার বাবা একদিন অন্ধকার রাতে আহমাদ ইবনে হাম্বালের কবর যিয়ারত করার জন্য বের হলাম। সেই সময় আকাশ অন্ধকারে কালো হয়ে এল। আমার বাবা আমার সঙ্গে বললেন: এসো, আহমাদ ইনে হান্বালের ওসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে তাওয়াস্সুল করি যাতে আমাদের জন্য রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যায়। কারণ আমি তিরিশ বছর আগে থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত যখনি তাওয়াস্সুল করেছি আমি তার ফল পেয়েছি…[18]
৪- ইবনে ফরাক ইসফাহানী(র:)এর কবর থেকে প্রার্থনা করা: (মৃত্যু ৪০৬ হিজরী)
ইবনে ফরাক, মুহম্মাদ বিন হাসান, কালাম শাস্ত্রবিদদের শিক্ষক এবং আশয়ারী মাযহাবের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, ‘হিরা’ নামক স্থান (যা নিশাবুরের পাশে অবস্থিত) দাফন হয়েছেন। তার মাযার বিখ্যাত যিয়ারতের স্থান। যেখানে গিয়ে মানুষ বৃষ্টির জন্য দোয়া করে এবং তার কবরে দোয়া কবুল হয়। [19]
৫- শেখ আহমাদ বিন আলওয়ান(র:)এর কবর থেকে প্রার্থনা করা: (জন্ম ৭৫০ হিজরী)
ইয়াফয়ী বলেছেন: শেখ আহমাদ বিন আলওয়ানের কেরামতের মধ্যে থেকে একটি কেরামত এই যে, যে সকল ফকীহগণ তার মতামতের বিরোধীতা করতো তারাও কঠিন সময়ে তার কাছে তাওয়াস্সুল করতো এবং (জালেম) বাদশাহর ভয়ে তার কাছে আশ্রয় নিত। [20]
উপসংহার
আমরা উক্ত আলোচনার উপর খুবই সংক্ষিপ্ত ভাবে ইস্তেগাসা, তাওয়াস্সুল এবং দোয়া সম্পর্কে ঐতিহাসিক দলিল ও প্রমাণ উপস্থাপন করলাম যে, ইসলামী ইতিহাসে ইস্তেগাসা, তাওয়াস্সুল এবং দোয়া করা হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে এবং অনান্য কর্ম মুসলমানদের মধ্যে প্রচলন ছিল, তার কারণ: হাম্বেলী মাযহাবের মান্য গন্যরা যেমন আবু আলী খেলাল [21] যখনি কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতেন তখন তিনি ইমাম মুসা কাযিম(আ:)এর কবরে তাওয়াস্সুল করতেন। ইবনে খুযাইমা এবং ইবনে হাব্বান ইমাম রেযা (আ:)এর কবরে তাওয়াস্সুল করতেন এবং নিজের প্রয়োজন মেটাবার জন্য ইমামের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করতেন।
আহমাদ ইবনে হাম্বাল ইমাম শাফেয়ীর নিকট তাওয়াস্সুল করতেন।
শাফেয়ী নিজের প্রয়োজন মেটাবার জন্য আবু হানিফার নিকট তাওয়াস্সুল করতেন।
সামারকান্দবাসীরা ইমাম বুখারীর কবরে বৃষ্টির জন্যে দোয়া করতেন।
হযরত আয়েশা (র:)মুসলমানদের অনুমতি দিলেন যে, বৃষ্টির জন্যে হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে তাওয়াস্সুল কর এবং সাহায্য প্রর্থনা কর।
সাহাবাগণ এবং আহলে সুন্নতদের বিশিষ্ট আলেমগণ ও জনসাধারণ, নবীগণ, এবং সাহাবা ও নেক ব্যক্তিগণের কবরে গিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করতেন।
সুতরাং এই সমস্ত দলিল ও প্রমাণের ভিত্তিতে ইবনে তাইমিয়ার কী সাহস আছে যে, তিনি এই ধরনের ব্যক্তিদেরকে মুশরিক বা কাফির বলে ঘোষণা করবেন?
শেখ সালামা এযামি, ইবনে তাইমিয়ার চিন্তার বিষয়ে খুব ভাল কথা বলেছেন: ইবনে তাইমিয়া হযরত মুহম্মাদ (স:)এর সম্পর্কে কটুক্তি করার সাহস করেছে যেমন বলেন: কোনো ব্যাক্তি যদি হযরত মুহম্মাদ (স:)এর যিয়ারতের আশা করে সফর করে তাহলে সে গুনাহ করেছে আর যদি কেউ হযরত মুহম্মাদ (স:)এর মৃত্যুর পর তাকে স্বরণ করে বা তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে তাহলে সে মুশরিক হয়ে যাবে।
ইবন তাইমিয়া এক স্থানে উক্ত আমলকে শিরকে আসগার এবং দ্বিতীয় স্থানে শিরকে আকবর বলেছেন, তাছাড়া সাহায্য প্রার্থনাকারী এ বিশ্বাস রাখে যে, সত্যিকারে সৃষ্টি কর্তার মালিক এক মাত্র আল্লাহ এবং হযরত মুহম্মাদ (স:) শুধু মাত্র সমস্যা সমাধানের মাধ্যম। তার কারণ আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহম্মাদ (স:)কে সমস্ত ভালো জিনিসের উৎস বানিয়েছেন এবং তার শাফাআত ও দোয়াকে গ্রহণ করেন। আর সমস্ত মুসলমানের এটাই বিশ্বাস। [22]
সুতরাং! ইবনে তাইমিয়া, যিনি হযরত মুহম্মাদ (স:)এর মৃত্যুর পর তাকে স্বরণ করাকে শিরক বলে গণ্য করতো কিন্তু সেই ব্যক্তি প্রথম খলিফার যুগে ‘মুসায়লামা কাযযাবের’ সাথে যুদ্ধে ইসলামি সেনাদের শ্লোগান (হে মুহম্মাদ) সম্পর্কে নিজের উক্তি প্রকাশ করেনি। [23]
[1]. (মাসনদে আহমাদ খ: ৪ পৃ: ১৩৮ , সনানে তিরমিযি খ: ৫ পৃ: ৫২৯ হাদীস ৩৫৭৮ , সনানে ইবনে মাজা খ: ১ পৃ: ৪৪১ , আল মাআল মওজামুল কাবির খ: ৯ পৃ: ৩০ হাদীস ৮৩১১ , মওজামুস সাগির খ: ১ পৃ:৩১ হাদীস ৫০৮)
[2]. (সনানে দারমি খ: ১ পৃ: ৫৬ , সুবলুল হোদা ওয়া আল রেশাদ খ: ১২ পৃ: ৩৪৭, ওফাউল ওফা বেআখবারিল মুস্তাফা(স:) খ:৪ পৃ: ১৩৭৪)
[3] (মুরুজুয যাহাব খ: ৩ পৃ: ৩২)
[4] (ওফাউল ওফা বেআখবারিল মুস্তাফা(স:) খ:৪ পৃ: ১৩৮০)
[5] (ওফাউল ওফা বেআখবারিল মুস্তাফা(স:) খ:৪ পৃ: ১৩৮০)
[6] (ওফাউল ওফা বেআখবারিল মুস্তাফা(স:) খ:৪ পৃ: ১৩৮০)
[7] (প্রাগুক্ত : খ:৪ পৃ: ১৩৮১)
[8] (ওফাউল ওফা বেআখবারিল মুস্তাফা খ:৪ পৃ: ১৩৮৩)
[9]. প্রাগুক্ত : খ:৪ পৃ: ১৩৮৩
[10] (মাশারিকুল আনওয়ার খ:১ পৃ: ১৯৭, আল গাদির খ:৫ পৃ: ১৯১)
[11] (আল ইত্তেহাফ বেহুব্বিল আশরাফ খ:৭৫ থেকে ১১০, আল গাদির খ: ৫ পৃ: ১৮৭)
[12] সেয়রে আলামুন নাবলা খ:১৬ পৃ: ৯২ , মিযানুল এতেদাল খ: ৬ পৃ: ৯৮ , তাবকাতে সাবকি খ: ৩ পৃ: ১৩১ , আল আনসাব খ: ২ পৃ: ১৬৪
[13] (তাহযিবুত তাহযিব খ: ৭ পৃ: ৩৩৯, ফারায়েদুস সিমতায়েন খ:২ পৃ:১৯৮)
[14] (সেয়রে আলামুন নাবলা খ:১৪ পৃ: ৩৬৫)
[15] (সেয়রে আলামুন নাবলা খ:১৪ পৃ: ৩৭৪, ৩৭৭)
[16] (মুসতাদরাক আলাস সাহিহায়েন খ:৩ পৃ: ৫১৮ হাদীস৫৯২৯; সুফ্ফাতুসসুফুহ খ:১ পৃ:৪৭০ হাদীস ৪০)
[17] (খোলাসাতুল কালাম পৃ: ২৫২; তারিখে বাগদাদী খ:১ পৃ:১২৩; আখবারে আবি হানিফা পৃ: ৯৪)
[18] ( মানাকিবে আহমাদ পৃ:২৯৭)
[19] (ওয়াফিয়াতুল আয়ান খ:৪ পৃ:২৭২; সেয়রে আলামুন নাবলা খ:১৭ পৃ: ২১৫)
[20] (মেরাতুল জেনান খ:৪ পৃ:৩৫৭)
[21] (তারিখে বাগদাদ খ: ১ পৃ: ১২০),
[22] (ফুরকানুল কুরআন পৃ: ১৩৩ ; আল গাদির খ:৫ পৃ:১৫৫)
[23] (আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া খ:৬ পৃ: ৩২৬)