পর্ব ৬- ইসলামের অগ্রগতির ক্ষেত্রে হযরত খাদিজার (সা.) ধন-সম্পদের ভূমিকা
ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, হযরত খাদিজা (সা.) রাসূলের (সা.) সাথে পরিণয় হওয়ার পূর্বেও আরবদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ধণাঢ্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার প্রায় সত্তর হাজার উট ছিল ও বাণিজ্য কাফেলাগুলি দিবা-রাত্রি তায়েফে, ইয়েমেনে, শামে (সিরিয়ায়), মিশরে এবং অন্যান্য রাষ্ট্রে বাণিজ্যিক লেন-দেন করতো, তার অনেকগুলি ক্রীতদাস ছিল যারা তার ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল।
হযরত খাদিজার (সা.) বিস্ময়কর আত্মত্যাগসমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে রাসূলের (সা.) সাথে বিবাহের পর ইসলাম পূর্ব ও ইসলাম পরবর্তী যত সম্পদ ছিল সমস্ত সম্পদ রাসূলের (সা.) অধীনে দিয়ে দিয়েছিলেন যাতে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে তিনি সেগুলিকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে পারেন।
এমন অবস্থা দাঁড়ালো যে, রাসূল (সা.) দরিদ্র অবস্থা থেকে সম্পদশালী অবস্থাতে রূপান্তরিত হলেন এবং আল্লাহ তায়ালা তাঁর অনূগ্রহের অবদান সম্পর্কে রাসূলকে (সা.) উদ্দেশ্য করে বলতে গিয়ে এভাবে আয়াত অবর্তীর্ণ করেন:
আল্লাহ আপনাকে অভাবী অবস্থায় পেয়েছেন অতঃপর অভাবমুক্ত করেছেন।
বর্ণনানুসারে অর্থাৎ হযরত খাদিজার (সা.) সম্পদের মাধ্যমে আপনাকে অমুখাপেক্ষী করেছেন।
হযরত খাদিজার (সা.) ধন-সম্পদের ব্যয়ক্ষেত্র
রাসূল (সা.) বলেছেন: “দুনিয়ার কোন ধন-সম্পদই আমাকে এতটা লাভবান করেনি যতটা খাদিজার সম্পদ করেছে।” এমতাবস্থায় এ প্রশ্ন মনে ভেসে উঠতে পারে যে, রাসূল (সা.) খাদিজার (সা.) এই অঢেল সম্পদকে কোন পথে কিভাবে ব্যয় করলেন?
এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে রাসূল (সা.) খাদিজার (সা.) সম্পদ হতে ঋণগ্রস্থদের ঋণমুক্ত করার কাজে, রিক্তহস্তদেরকে সাহায্যের কাজে, ইয়াতীমদের প্রতিপালনের কাজে, মুসলমানরা যারা মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করত, মুশরিকরা তাদের মাল-সম্পদকে লুট করত, রাসূল (সা.) তাদেরকে খাদিজার (সা.) সম্পদ থেকে সাহায্য করতেন যাতে তারা মদীনায় পৌঁছতে পারে। এক কথায়, রাসূল (সা.) যেভাবে ভাল মনে করতেন সেভাবে হযরত খাদিজার (সা.) সম্পদকে ব্যয় করতেন।
রাসূল (সা.) সর্বদা হযরত খাদিজাকে (সা.) স্মরণ করতেন
যদিও পরবর্তীতে উল্লেখ করা হবে যে, হযরত খাদিজা (সা.) নবুয়্যত ঘোষণার দশ বছর পর ইন্তেকাল করেছেন, রাসূল (সা.) তার ইন্তেকালের দশ বছর অথবা তার কিছু বেশী দিন যাবৎ জীবিত ছিলেন। এই সময়গুলিতে তিনি (সা.) সারাক্ষণ হযরত খাদিজাকে (সা.) স্মরণ করতেন, তার আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করতেন। কখনো কখনো এমনও হয়েছে যে, তিনি হযরত খাদিজার (সা.) কথা স্মরণ করে এমনভাবে ক্রন্দন করতেন যে তার দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝড়তো। কারণ, রাসূল (সা.) হযরত খাদিজার (সা.) গভীর ভালবাসা ও দয়ার ঝর্ণাধারাকে অবলোকন করেছিলেন। হযরত খাদিজার (সা.) প্রতি রাসূলের (সা.) এই ধরনের আচরনের কথা ঐতিহাসিকভাবে স্মরণীয় হয়ে আছে। তার একটি উদাহরণ এখানে উল্লেখ করবো:
একদিন রাসূল (সা.) তাঁর কয়েকজন সহধর্মিনীর সাথে ছিলেন হঠাৎ করে হযরত খাদিজার (সা.) প্রসঙ্গে আলোচনা শুরু হল, রাসূল (সা.) এত বেশী স্পর্শকাতর হয়ে উঠলেন যে, তাঁর দু’চোখ থেকে অশ্রু ঝড়তে লাগলো।
হযরত আয়েশা তাঁকে বললেন: “আপনি কাঁদছেন কেন? একজন বয়োঃবৃদ্ধ মহিলার জন্য এভাবে কাঁদতে হবে?” রাসূল (সা.) প্রতিত্তোরে বললেন:
যে সময় তোমরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলতে সে সময় সে আমাকে সত্যবাদী হিসেবে মেনে নিয়েছিল ও যে সময় তোমরা কাফির ছিলে সে সময় সে আমার প্রতি ঈমান এনেছিল, সে আমাকে সন্তান দান করেছে আর তোমরা তো বন্ধ্যা।