হযরত ফাতেমা যাহরার কন্যা হযরত জয়নাব (স:) এর শুভ জন্মবার্ষিকী
পর্ব ১- হযরত জয়নাব (স:) র শুভ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আপনাদের সবার প্রতি রইল অনেক অনেক অভিনন্দন। এমন এক মহিয়সী রমণী ছিলেন তিনি,যাঁর সম্মান-মর্যাদা আর সাহসী ভূমিকার ঐশ্বর্যে ইসলামের ইতিহাসের পাতা স্বর্ণোজ্জ্বল হয়ে আছে। হযরত জয়নাব (স:) ষষ্ঠ হিজরীর ৫ই জমাদিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন হযরত আলী (আ:) এবং হযরত ফাতেমা (স:) এর তৃতীয় সন্তান। তাঁর জন্মের সময় নবীজী সফরে ছিলেন। তাই তাঁর মা ফাতেমা (স:) আলী (আ:) কে মেয়ের জন্যে একটা ভালো নাম দিতে বললেন। কিন্তু হযরত আলী (আ:) এটা নবীজীর জন্যে রেখে দিলেন এবং নবীজীর সফর থেকে ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললেন। নবীজী যখন সফর থেকে ফিরে এলেন তখন এই কন্যার জন্মের সংবাদে খুশি হয়ে বললেন: “আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,এই কন্যার নাম রাখো জয়নাব অর্থাৎ বাবার অলংকার। রাসূলে খোদা (স:) জয়নাবকে কোলে নিয়ে চুমু খেয়ে বললেন-সবার উদ্দেশ্যে বলছি,এই মেয়েটিকে সম্মান করবে,কেননা সে-ও খাদিজার মতো। ” ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে যে,সত্যি-সত্যিই জয়নাব (স:) খাদিজা (স:) র মতোই ইসলামের দুর্গম পথে অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন এবং দ্বীনের সত্যতাকে তুলে ধরার জন্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। জয়নাব (স:) তাঁর জীবন শুরু করেন এক আধ্যাত্মিকতার পরিবেশপূর্ণ পরিবারে। কেননা এই পরিবার রাসূলে খোদা (স:),আলী (আ:) এবং ফাতেমা (স:) এর মতো মহান ব্যক্তিত্ববর্গের অস্তিত্বের সান্নিধ্য পেয়ে ধন্য হয়েছে,পবিত্র হয়েছে। এঁরা ছিলেন পূত-পবিত্র জীবনের অধিকারী এবং মানবীয় মর্যাদা ও ফযিলতের গোড়াপত্তনকারী। জয়নাব (স:) সেই শিশুকাল থেকেই প্রত্যুৎপন্নমতি ছিলেন এবং আধ্যাত্মিকতাপূর্ণ মনের অধিকারী ছিলেন। সেই ছোট্ট বেলায় তিনি একবার তাঁর মা ফাতেমা (স:) এর গুরুত্বপূর্ণ একটা ধর্মীয় ভাষণ শুনেছিলেন। সেই ভাষণ তাঁর মুখস্থ হয়ে যায় এবং পরবর্তী ঐ ভাষণের একজন বর্ণনাকারী হয়ে যান তিনি। তাঁর এই সচেতনতার জন্যে এবং তীক্ষ্ম স্মৃতিশক্তির জন্যে বয়সকালে তাঁকে সবার কাছেই ‘আকিলা’ উপাধিতে পরিচিত ছিলেন। আকিলা মানে হলো বুদ্ধিমতী ও চিন্তাশীল রমণী। তাঁর জীবনে বিপদের ঘূর্ণিঝড় অতি দ্রুতই ঘনিয়ে আসে। তিনি শিশু বয়সে প্রিয় নানা হযরত মুহাম্মাদ (স:) কে হারান। তার অল্প পরেই হারান মা ফাতেমা (স:) কে। এরপর তাঁকে লালন পালন পরার দায়িত্বভার অর্পিত হয় প্রিয় পিতা হযরত আলী (আ:) এর ওপর। পিতার তীক্ষ্ম জ্ঞান-গরিমা, আধ্যাত্মিকতা,নীতি-নৈতিকতা আর সচেতন প্রজ্ঞার ঐশ্বর্যে নিজেও সমৃদ্ধি অর্জন করেন এবং এভাবেই তিনি বেড়ে ওঠেন। যে সময়টায় অধিকাংশ নারীই ছিল প্রায় মূর্খ এবং নিরক্ষর,সে সময়টায় হযরত জয়নাব (স:) ইসলামী সংস্কৃতির প্রচার ও প্রশিক্ষণে নিজেকে নিয়োজিত করেন এবং তাঁর জ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার কথা সবার কানে পৌঁছে যায়। তাঁর প্রশিক্ষণ ক্লাসে কোরআন তাফসিরের ক্লাসে যোগ দেওয়ার জন্যে নারীরা ছিল উদগ্রীব। তিনি যতদিন মদিনায় ছিলেন ততদিন মদিনার মানুষ তাঁর জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয় এবং যখন তিনি কুফায় অবস্থান করেছিলেন তখনো তিনি সেখানকার জনগণকে জ্ঞানের মহিমায় উদ্ভাসিত করেন। জয়নাব (স:) যখন বিয়ের বয়সে উপনীত হন, চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে জাফরের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর ছিলেন সে সময়কার আরবের একজন ধনী ব্যক্তি। কিন্তু জয়নাব (স:) কখনোই বস্তুতান্ত্রিক জীবনের সাথে নিজেকে জড়ান নি। উন্নত চিন্তাদর্শের অধিকারী ছিলেন বলে তিনি বস্তুতান্ত্রিক জীবনের বৃত্তে নিজেকে আবদ্ধ করেন নি। তিনি শিখেছিলেন,কখনোই এবং কোনোভাবেই অত্যাচারীদের লোভনীয় মোহের কাছে সত্যের মহামূল্যবান সম্পদকে বিসর্জন দেওয়া যাবে না। সে জন্যেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন,তাঁর ভাই ইমাম হোসাইন (আ:) এর সাথে দ্বীনকে উজ্জীবিত রাখার সংগ্রামে এবং সমাজ সংস্কারের পথে আত্মনিয়োগ করবেন। আব্দুল্লাহ ইবনে জাফরের সাথে বিয়ের সময় জয়নাব (স:) শর্ত দিয়েছিলেন যে তিনি সারাজীবন তাঁর ভাই ইমাম হোসাইন (আ:) এর পাশে থাকবেন। আব্দুল্লাহও তাঁর এই শর্ত মেনে নিয়েছিলো। সেজন্যেই তিনি ইমাম হোসাইন (আ:) এর মদিনা থেকে কারবালায় ঐতিহাসিক সফরকালে তাঁর সাথে গিয়েছিলেন এবং অত্যাচারী উমাইয়া শাসক ইয়াজিদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন।#