সোমবার, 23 ডিসেম্বর , 2024 برابر با Monday, 23 December , 2024

হযরত ফাতেমা যাহরার কন্যা হযরত জয়নাব (স:) এর শুভ জন্মবার্ষিকী

পর্ব ২- হযরত জয়নাব (স:) র ব্যক্তিত্বের সাথে পরিচিত হবার জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত উপায় হলো আশুরার ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে পড়ালেখা করা এবং নবীজীর আহলে বাইতের সদস্যদের বন্দী হবার ঘটনা নিয়ে পড়ালেখা করা। ইতিহাসের এই ক্রান্তিলগ্নে জয়নাব (স:) র ভূমিকা আজো জ্বলজ্বল করছে। তাঁর মাঝে ছিল নজিরবিহীন এক ব্যক্তিত্ব,আল্লাহকে তিনি যে কতোটা গভীরভাবে চিনেছিলেন,তা তাঁর ব্যক্তিত্বের মাঝে তাঁর কর্মতৎপরতায় ফুটে উঠতো। আল্লাহর ইবাদাতের প্রতি তাঁর ছিল প্রবল আকর্ষণ। নামায বা আল্লাহর স্মরণই ছিল তাঁর মানসিক প্রশান্তির কারণ। আল্লাহর নূর তাঁর অন্তরে এতোবেশি আলোকিত ছিল যে দুনিয়ার কোনো দুঃখ-কষ্টই তাঁর কাছে ততোটা গ্রাহ্য ছিল না। মনোবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে,রাগের সময় বা গভীর অনুভূতিশীল কোনো মুহূর্তে মানুষ তার ভেতরে যা লুকায়িত আছে সেসব প্রকাশ করে ফেলে। হযরত জয়নাব (স:) ও তাঁর ভাই ইমাম হোসাইন (আ:) এবং তাঁর প্রিয়জনদের শাহাদাতের পর কঠিন সেই মুহূর্তে অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে,বীরত্বের সাথে এবং সুস্পষ্টভাবে বক্তব্য রেখেছিলেন। আল্লাহর প্রতি তাঁর যে গভীর আস্থা এবং নির্ভরশীলতা,তাঁর ভেতরে যে স্বাভাবিক ধৈর্যশক্তি,সেসবেরই প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন তিনি। তিনি রক্তপিপাসু উমাইয়া শাসকদের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। নবীজীর আহলে বাইতের সত্যতাকে সংরক্ষণ করেছিলেন এবং কারবালায় ইমাম হোসাইন (আ:) ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের বিজয় হয়েছে বলে ঘোষণা করেছিলেন। ইয়াজিদের দরবারে যিনি যেরকম ওজস্বিতার সাথে বক্তব্য রেখেছেন,তা সবার অন্তরে এমনভাবে গেঁথে গিয়েছিল যে,আলী (আ:) এর স্মৃতিকে সবার সামনে জাগ্রত করে তুলেছিল। তিনি সবসময় কোরআনের উদ্ধৃতি তুলে ধরে বক্তব্য রাখতেন যাতে প্রামাণ্য হয়। ইবনে কাসির নামে একজন বাকপটু আরব ছিলেন। তিনি জয়নাব (স:) এর বক্তৃতা শুনে এতোবেশি প্রভাবিত হয়ে পড়েন যে,একবার কাঁদতে কাঁদতে উচ্চস্বরে বলেছিলেন: “আমার বাবা-মা তোমার জন্যে উৎসর্গিত, তোমার গুরুজনেরা সবচেয়ে উত্তম মুরব্বি,তোমাদের শিশুরা সবচেয়ে ভালো এবং তোমাদের রমণীরা সর্বোত্তম নারী। তোমাদের বংশ সকল বংশের উপরে এবং কখনোই পরাজিত হবে না।” হযরত জয়নাব (স:) তাঁর পিতা ইমাম আলী (আ:) থেকে শুনেছিলেন যে, মানুষ ঈমানের হাকিকত উপলব্ধি করতে পারে না,যতক্ষণ না তার মাঝে তিনটি বৈশিষ্ট্য না থাকে। দ্বীনের ব্যাপারে সচেতনতা,দুর্দশায় ধৈর্য ধারণ করা এবং সৎ জীবন যাপন করা। এই মহিয়সী নারী কঠিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং ধৈর্যের অলংকার দিয়ে তিনি তাঁর মন এবং আত্মাকে সাজিয়েছেন। জয়নাব (স:) র দৃষ্টিতে সত্যের পথে দাঁড়ানো এবং আল্লাহর পথে জীবন বিলানো এমন এক সৌন্দর্য যেই সৌন্দর্য মানবতার চিরন্তন প্রশংসার দাবিদার। এজন্যেই তিনি আশুরার ঐতিহাসিক ঘটনার পর অত্যাচারী শাসকদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন-“আমি তো সৌন্দর্য ছাড়া অন্য কিছু দেখি না।” হযরত জয়নাব (স:)’র শুভ জন্মবার্ষিকীতে আমাদের উচিত তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে সাহস সঞ্চয় করা। নিজের জীবনকে আল্লাহর কাছে সঁপে দিয়ে নির্বিঘ্নে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা। কায়েমি স্বার্থবাদীদের সাথে দ্বীনের ব্যাপারে কোনোরকম আপোষ না করার শিক্ষা লাভ করা এবং পার্থিব জগতের ধন-সম্পদকে তুচ্ছ জ্ঞান করে পরকালীন স্বার্থকে জীবনের সর্বোত্তম প্রাপ্তি হিসেবে গ্রহণ করা এবং তা অর্জনের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া। সকল কাজের ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেয়া। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দিন।#

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।