বি ইসমেহি তায়ালা
(২) হযরত মুহম্মাদ (স🙂এর কবর এবং অন্য কবরে দোয়া এবং নামায আদায় করা
تالیف و ترجمه : مجید الاسلام شاه
সংকলন ও অনুবাদ
মজিদুল ইসলাম শাহ
সূচিপত্র
হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবর এবং অন্য কবরে দোয়া এবং নামায আদায় করা.. 5
১- ওমর ইবনে খাত্তাবের কাজ করার পদ্ধতি: 8
৫- বুকরাভী হানাফীর কবরে (মৃত্যু ৪০৩): 10
৬- হাফিয আমিরীর কবরে (মৃত্যু ৪০৩): 10
৭- আবুবকর ইস্ফাহানীর কবর (মৃত্যু ৪০৬): 10
ইবনে তাইমিয়ার দ্বিতীয় ফতোয়া: 11
৩- মহাক্কিকে হানাফির ফতোয়া: 13
৫- আবু মুসা ইস্ফেহানীর মতামত: 14
ইবনে তাইমিয়ার আর একটি কথা এবং তার উত্তর: 16
তার দলিলের উপর গবেষণা এবং তার উপর সমালোচনা: 16
আমরা দ্বিতীয় হাদীসের কয়েকটা দিক থেকে উত্তর দিচ্ছি: 17
২- আব্দুল গনী নাবলুসীর মতামত: 18
নারীদের কবর যিয়ারত করা:
কবর যিয়ারতের আলোচনার মধ্যে যে বিষয়টি উঠে আসে সেটি হল ‘নারীদের কবর যিয়ারত করা’। এই বিষয় সম্পর্কে (বুখারী ও মুসলিম ছাড়া) সুনানের লেখকগণ বহু রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন, তার একটি রেওয়ায়েত হল হযরত মুহম্মাদ (স:) থেকে বর্ণিত:
لعن الله زائرات القبور
অর্থ: আল্লাহ তায়ালা যিয়ারতকারী নারীদের প্রতি অভিশাপ করেছেন। [1]
ওহাবীগণ উক্ত হাদীস দ্বারা নারীদের উপর কবর যিয়ারত করাকে হারাম করেছে।
ওহাবী মতামতের প্রত্যাখ্যান:
আমরা এই মতামতকে একটি কল্পনা ছাড়া অন্য কিছু মনে করি না, আর এর চার ধরনের উত্তর দিতে পারি:
প্রতমত:- উক্ত হাদীস বোরায়দা থেকে ‘নাসখ’ হয়ে যাবে। বোরায়দা বলেন: হযরত মুহম্মাদ (স:) থেকে বর্ণিত:
(نهیتکم عن زیاره القبور الا فزوروها) অর্থ: আমি তোমাকে কবর যিয়ারত থেকে বিরত রেখেছিলাম কিন্তু সচেতন হয়ে যাও আজকের পর থেকে যিয়ারত করবে।
হাকিম নিশাবুরী আর যাহাবী এই হাদীসকে সহীহ বলেছেন। ঠিক অনুরূপ ভাবে উপরের হাদীস এই হাদীসের সঙ্গে কোনো মিল নেই যেটি হযরত আয়েশা (র:)বর্ণনা করেছেন।
(نهی رسول الله عن زیاره القبور ثم امر بزیاتها)
অর্থ: হযরত মুহম্মাদ (স:) কবর যিয়ারত করা থেকে নিষেধ করেছিলেন তবে পরে আবার অনুমতি দিয়েছেন। [2]
উক্ত হাদীস যাহাবী ‘মোসতাদরাক আলাস সাহিহায়েন’ পুস্তকের পাদটীকায় সহীহ বলে বর্ণনা করেছেন।
দ্বিতীয়ত:- হযরত আয়েশা (র:)এর থেকে বর্ণিত হাদীস এবং হযরত আয়েশা আমলে কর্মের সাথে এক অপরের বিপরীত দেখা যাচ্ছে। কেন না উপরোক্ত যে রেওয়ায়েত বর্ণনা করা হয়েছে সেই রেওয়ায়েত অনুযায়ী হযরত আয়েশা (র:)নিজের ভাই আব্দুর রহমানের কবর যিয়ারত করতে যেতেন।
ইবনে আবী মালিকা বলেন : আমি হযরত আয়েশাকে নিজের ভাইয়ের হুবশা নামক এলাকায় যেখানে আব্দুর রহমানের হঠাৎ মৃত্যু হয়ে গিয়েছিল (মক্কার দক্ষিণাঞ্চলে) কবর যিয়ারত করতে দেখেছি।
অনুরূপ বলেন: একদা আমি হযরত আয়েশাকে কবরস্থানের দিকে যেতে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম: হযরত মুহম্মাদ (স:) কি কবর যিয়ারত করা কি নিষেধ করেন নি? তখন আয়েশা (র:)বললেন: হ্যাঁ নিষেধ করেছিলেন তবে পরে আবার অনুমতি দিয়েছেন। [3]
হযরত আয়েশা (র:)কি নিজের এই আমল (কর্মের) দ্বারায় হযরত মুহম্মাদ (স:)এর বিরোধিতা করতে চেয়েছিলেন? যার ফলে ‘নায়ুযুবিল্লাহ’ আল্লাহ তাআলার অভিশাপের শিকার হতেন যেমন ভাবে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে?
তৃতীয়ত:– উপরের বর্ণিত হাদীসটি হযরত ফাতেমা যাহরা (স:)এর নীতি তাঁর আমলের সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ হযরত ফাতেমা (স:) নিজের পিতার কবর যিয়ারত করতেন এবং প্রতি জুমার দিন এবং প্রতি সপ্তাহতে দুইবার হযরত হামযার কবর যিয়ারত করতে যেতেন।
হযরত ফাতেমা যাহরা (স:) নিজের পিতার সু্ন্নতের বিরোধিতা করবেন এটা কি গ্রহণযোগ্য বা যুক্তি যুক্ত হতে পারে? হযরত ফাতেমা যাহরা (স:) কি নিজের পিতার সুন্নত থেকে অবগত ছিলেন না?
হযরত ফাতেমা যাহরা (স:) হলেন আহলে বায়েতের মধ্যে একজন সদস্য। আর বাড়ির মধ্যে যা কিছু হয় বাড়ির সদস্যরা অন্যের তুলনায় বেশি অবগত হবে। এছাড়াও নিজের পিতার জীবনে ‘ওহোদ’ যুদ্ধের শহীদ হযরত হামযার কবর যিয়ারত করতে যেতেন এবং নিজের পিতার জীবদ্দশায় সাত বছর পর্যন্ত ফাতেমা যাহরা (স:)এর এই সুন্নত (নীতি) ছিল। তাহলে কেন আল্লাহর নবী (স:) দীর্ঘ দিনের এই আমলকে বারণ করেননি?
অনুরূপ হযরত ফাতেমা যাহরা (স:) নিজের পিতার মৃত্যুর পর তাঁর কবর যিয়ারত করতে যেতেন যেমন ভাবে হযরত আলী (আ:) হতে বর্ণিত হয়েছে : (যখন হযরত মুহম্মাদ (স:) ইহকাল ত্যাগ করলেন তখন হযরত ফাতেমা যাহরা নিজের পিতার কবরের কাছে দাঁড়িয়ে একমুঠো মাটি নিয়ে চোখে লাগালেন এবং ক্রন্দনরত অবস্থায় এই মর্সিয়া (কবিতা) পড়লেন:….)
সত্যিই যদি কবর যিয়ারত নারীদের জন্য হারাম হত তাহলে হযরত আলী (আ:) বা সাহাবীগণ কেন ফাতেমা যাহরাকে এই আমল হতে নিষেধ করেননি?
চতুর্থত:– ইবনে তাইমিয়ার পূর্বে এবং পরবর্তীকালে আহলে সুন্নতের আলেমগণ নারীদের কবর যিয়ারতের জায়েয হওয়ার উপর ফাতোয়া দিয়েছেন। যেহেতু নারীরা নিজের আত্মীয়-স্বজনদের মৃত্যুর পর ধৈর্য্য ধারণ করতে পারে না তাই হাদীসে অভিশাপ কথা উল্লেখ হয়েছে। কিন্তু যদি কোনো নারী কোনো পরপুরুষের সামনে ক্রন্দন না করে ধৈর্য্য ধারণ করে তাহলে তার কবর যিয়ারত করতে কোনো বাধা নেই।
তবে কিছু আহলে সুন্নতের আলেমগণ যেমন : মনসুর আলী নাসিফ নিজের ‘আত তাজুল জামেউন লিল উসুল’ নামক গ্রন্থে মুল্লা আলী কারী, নাওয়াভী, কুরতুবী, কাসতালানী, ইবনে আব্দুল বর, ইবনে আবদিন এবং তিরমিযি উক্ত হাদীসকে ঠিক এই ভাবে বর্ণনা করেছেন। এবং দুর্বল বলেছেন, তার কারণ এই তিনটি সূত্র হেসান বিন সাবিত, ইবনে আব্বাস, বা আবুহরাইরা পর্যন্ত গিয়ে সমাপ্তি ঘটে। তার মধ্যে এমনকিছু রাভীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে যাদেরকে আহলে সুন্নতের রেজাল শাস্ত্রের আলেমগণ দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। এই কারণেই মনে হয় ইমাম বুখারী ও মুসলিম এই হাদীসকে নিজেদের পুস্তকে স্থান দেন নি।
এই সমস্ত আভিযোগ ও প্রতিবন্ধকতা সত্বেও ফকীহগণ এই হাদীসের ব্যাখ্যায় পুরুষ এবং নারীদের কবর যিয়ারত করাকে মুস্তাহাব বলে ফাতোয়া দিয়েছেন।[4]
হযরত মুহম্মাদ (স🙂এর কবর এবং অন্য কবরে দোয়া এবং নামায আদায় করা
যে দলিলগুলো বর্ণনা করা হবে তার পরিপ্রেক্ষিতে হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবর এবং অন্য কবরে দোয়া ও নামায আদায় করা জায়েয। ইতিহাসে মুসলমানদের প্রথা এই ভাবে ছিল এবং বর্তমানেও আছে। কিন্তু উক্ত আলোচনা সম্পর্কে ওহাবীদের মতামত অন্যান্য মত এবং সমস্ত মুসলমানদের মতামতের বিপরীত।
ওহাবীদের মতামত:
ওহাবীগণ কবরের কাছে দোয়া ও নামায আদায় করা থেকে বারণ করে এবং এই কর্মকে শিরকও কুফর মনে করে। ইবনে তাইমিয়া থেকে বর্ণিত: (সাহাবীগণ যখনি হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে যেতেন সালাম করতেন আর দোয়া করার সময় কিবলার দিকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন এবং অন্য কবরেও এই ভাবে দোয়া বা আচারণ করতেন…)।
উক্ত দলিলের কারণে পূর্বের ফকীহগণের কেউ একজনও কবর যিয়ারত বা ওলিগণের পবিত্র স্থানে নামায আদায় করার মুস্তাহাব হওয়ার সম্পর্কে ফতোয়া দেয়নি এবং এটাও বলেনি যে, সেখানে দোয়া করা ও নামায আদায় করা অন্য স্থানের থেকে উত্তম। কিন্তু সবার মতামত একই যে, ঘরে বা মাসজিদে দোয়া করা ও নামায আদায় করা ওলিগণের ও সালেহীনদের কবরের কাছে আদায় করা থেকে উত্তম। সেই কবর গুলোকে পবিত্র স্থানের নাম দেওয়া হোক বা নাই বা দেওয়া হোক। [5]
উক্ত সন্দেহের উত্তর:
আমরা ইবনে তাইমিয়ার এই মতামতের উত্তর কয়েক ভাবে দিতে পারি:
ক– আহলে সুন্নতের রেওয়ায়েত থেকে বোঝা যায় যে, যে কোনো স্থানে দোয়া ও নামায আদায় করা জায়েয, তাহলে হযরত মুহম্মাদ (স:) এবং অন্য নবী ও সালেহীনদের কবরে দোয়া ও নামায আদায় করা জায়েয হবে, আমরা এই সমস্ত রেওয়ায়েত অনুযায়ী জায়েয হওয়ার অনুমতি দেবো।
খ– দ্বীন ইসলাম থেকে যা কিছু বোঝা যায় সেটা হল এই যে, ওই সমস্ত স্থান যা শরীয়তের দিক থেকে পবিত্র বা মর্যাদাবান সেখানে দোয়া বা নামায আদায় করা বা সমস্ত ধরনের ইবাদত করা ফযিলতসরূপ।
দ্বিতীয়ত প্রতিটি স্থানকে তার অধিবাসীর কারণেই মর্যাদা দেওয়া হয় এবং প্রতিটি কবরকেও তাই একই ভাবে মর্যাদা দেওয়া হয়।
(وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُواْ أَنفُسَهُمْ جَآؤُوكَ فَاسْتَغْفَرُواْ اللّهَ)
এবং (হে রসূল!) যখন তারা (অবাধ্যতা করে) নিজেদের (আত্মার) প্রতি অবিচার করেছিল, যদি তোমার নিকট আসত এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত। [6]
উক্ত আয়াত থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে দোয়া বা নামায আদায় করা ফযিলত ও পূন্যের কাজ, তার কারণ (جَآؤُوكَ) শব্দ হযরত মুহম্মাদ (স:)এর জীবন ও মৃত্যু দুটোরই অন্তর্ভুক্ত। এবং হযরত মুহম্মাদ (স:)এর সম্মান তার জীবন ও মৃত্যু দুটোতেই বোঝায়।
কিন্তু চিন্তার বিষয় এটাই যে, ইমাম মালিক মানসুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সময় উক্ত বিষয় সম্পর্কে সমালোচনা করেন। [7]
শামস্সুদ্দিন যুযরী বলেন: যদি হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে দোয়া কবুল না হয় তাহলে কোথায় কবুল হবে?
গ– হযরত ফাতেমা যাহরার সুন্নত ওহাবীদের মতামতের সম্পূর্ণ বিপরীত তার কারণ প্রতি জুমায় নিজের চাচা হামযার কবর যিয়ারতে যেতেন নামায আদায় করতেন এবং ক্রন্দন করতেন। [8]
তিনি ফাতেমা যাহরা যার রাগান্বীত আল্লাহর রাগান্বীত এবং তার খুশি আল্লাহর খুশি, ফাতেমা যাহরা কি নিজের পিতার সুন্নত থেকে অবগত ছিলেন না? [9]
হযরত ফাতেমা যাহরা কি কবর যিয়ারত করে পিতার সুন্নতের বিরোধীতা করেছেন? সত্যিই কী ইবনে তাইমিয়া একথা জানতো না? যেমন সে দাবী করে যে, পূর্বের ফকীহগণের কেউ একজনও কবর যিয়ারত বা ওলিগণের পবিত্র স্থানে নামায আদায় করার মুস্তাহাব হওয়ার সম্পর্কে ফতোয়া দেয়নি?
ঘ– হযরত মুহম্মাদ (স:)এর যুগ থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত মুসলমানদের মধ্যে এই নিতি চলে আসছে যে, তারা সালেহীন বা মোমিনগণের কবরে দোয়া ও নামায আদায় করে। যার কিছু নমুনা নিম্নে তুলে ধরলাম:
১– ওমর ইবনে খাত্তাবের কাজ করার পদ্ধতি:
তাবারী ‘রিয়াযুন নাযরা’ নামক পুস্তকে লেখেন: এক সময় ওমর নিজের সাথীদের সাথে হজ্ব আদায় করার জন্য বের হয়েছিলেন রাস্তায় একজন বৃদ্ধ তাঁর কাছে সাহায্য চাইলো। হজ্ব থেকে ফেরার পথে ‘আবওয়া’ নামক স্থানে ওই বৃদ্ধের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো, পরে জানতে পারল যে সেই বৃদ্ধ মৃত্যুবরণ করেছে। যখনই এই খবর শুনলো তড়ি ঘড়ি তার কবরে গিয়ে তার জন্য নামায আদায় করলেন এবং কবরে মাথা রেখে কাঁদলেন। [10]
ইমাম শাফেয়ী বলেন: আমি আবুহানিফার কবর থেকে তাবার্রুক সংগ্রহ করেছি, যখনই কোনো সমস্যা দেখা দেয় দুই রাকাত নামায আদায় করে তার কবরে গিয়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। [11]
একটি রেওয়ায়েতে বর্ণনা হয়ছে যে, যহারী বলেন: মারুফ কারখীর কবরে প্রয়োজন পূরণ হওয়া একটি অভিজ্ঞতামূলক বিষয় এই ভাবে বলা হয়েছে যে যদি কনো মানুষ তার কবরে একশবার সুরা (قل هو الله) পাঠ করে আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজন চায় তাহলে তা পূরণ হবে। [12]
ইব্রাহিম হারবী বলেন: মারুফ কারখীর কবর যহারীর জন্য অভিজ্ঞতামূলক গোপন স্থান ছিল।
যাহাবী উক্ত সম্পর্কে বলেন: এই কবরে অসুস্থ লোকেদের দোয়া কবুল হয় তার কারণ পবিত্র স্থানগুলোতে দোয়া কবুল হয়ে থাকে। [13]
আহমাদ ইবনে ফাতহ বলেন: আমি বাশার তাবেয়ীর কাছে মারুফ কারখীর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম তখন সে উত্তরে বললেন: যে ব্যক্তি চায় যে, তার দোয়া কবুল হোক তাহলে সে মারুফ কারখীর সমাধীস্তলে গিয়ে দোয়া করুক ইন্শাআল্লাহ তার দোয়া কবুল হবে। [14]
ইবনে সায়াদ থেকে উক্ত সম্পর্কে বর্ণনা হয়েছে যে, মারুফ কারখীর কবর থেকে বৃষ্টির জন্য দোয়া চাওয়া হয় আর কবর স্পষ্ট এবং লোকেরা দিবারাত্রী তার যিয়ারত করে থাকে। [15]
যুযরী বলেন: শাফেয়ীর কবরে দোয়া কবুল হয়। [16]
৫– বুকরাভী হানাফীর কবরে (মৃত্যু ৪০৩):
বুকরাভী হানাফী ‘কারাফা’ নামক স্থানে দাফন আছে তার কবর একটি বিখ্যাত যিয়ারতের স্থান। লোকেরা সেখান থেকে তাবার্রুক সংগ্রহ করে আর এটাও বলা হয় যে, তার কবরে দোয়া কবুল হয়। [17]
৬– হাফিয আমিরীর কবরে (মৃত্যু ৪০৩):
বর্ণনা হয়েছে যে, লোকেরা রাত্রির সময় তার কবরে একত্রিত হয়ে তার জন্য কুরআন পাঠ করে ও দোয়া করে। [18]
৭– আবুবকর ইস্ফাহানীর কবর (মৃত্যু ৪০৬):
আবুবকর ইস্ফাহানী নিশাপুরের পাশে ‘হেয়রা’ নামক স্থানে দাফন আছেন। তার কবর স্পষ্ট এবং যিয়ারতের স্থান। কথিত আছে যে তার কবরে বৃষ্টির জন্য দোয়া করলে সেই দোয়া কবুল হয়। [19]
সাইয়েদা নাফিসা খাতুন আবু মুহম্মাদ, হাসান বিন যায়েদ ইমাম হাসান (আ:)এর মেয়ে এবং ইসহাক বিন ইমাম জাফর সাদিক (আ:)এর স্ত্রী। ইবনে খালকান বলেন: সে মিশরে ‘দারবুস সাবা’ নামক স্থানে দাফন আছেন তার কবরে দোয়া কবুল হয় আর এটা একটি অভিজ্ঞতামূলক বিষয়। [20]
ঙ– আহলে সুন্নাতের বিখ্যাত আলেম জালালুদ্দীন সূয়ুতী মিরাজের ঘটনা আর ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র ইবনে জযিয়ে হযরত হাজরা আর হযরত ইসমাইলের ঘটনা বর্ণনা করার পর যিয়ারত হারাম হওয়ার বিশ্বাসের সম্পর্কে তার বিরোধীতা করেছে। [21]
ইবনে তাইমিয়ার দ্বিতীয় ফতোয়া:
ইবনে তাইমিয়া আর একটি ফতোয়াতে সাহাবাগণের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন যে, তারা দোওয়ার সময় হযরত মুহম্মাদ (স:)এর সামনে দাঁড়াতেন না কিন্তু তার কবরের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন। [22]
উক্ত দাবীর উত্তর:
আমরা উক্ত দাবীর তিন ধরনের উত্তর দেবো
(১)- ইবনে তাইমিয়া উক্ত বিষয় সম্পর্কে কোনো সাহাবার নাম উল্লেখ করেন নি যে, কোন সাহাবী দোওয়ার সময় নিজের মুখ কবর থেকে ফিরিয়ে নিয়েছে। যার ফলে তার দাবীর বিপরীত হওয়া প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর যে নিজে একজন সাহাবী ছিলেন ইবনে তাইমিয়ার বিপরীত মতামত বর্ণনা করেন: মুস্তাহাব আমলের মধ্যে থেকে একটি হল হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে দোয়া করার সময় কবরের দিকে মুখ আর কিবলার দিকে পিঠ করে দাঁড়ানো। [23]
(২)- এতে কোনো সমস্যা নেই যে মানুষ দোয়া করার সময় কবের দিকে মুখ করে দাঁড়ালে তার কারণ কোরআনের আয়াত বলে: أَيْنَمَا تُوَلُّواْ فَثَمَّ وَجْهُ اللّهِ))
অর্থ: তুমি যে দিকেই মুখ ফিরাবে, সেদিকেই আল্লাহ বিরামান,। [24]
(৩)- ফকীহগণের ফতোয়া ইবনে তাইমিয়া ও তার অনুসারীগণের কথার বিপরীত। নমুনা স্বরূপ কিছু ফতোয়া তুলে ধরছি:
যখন মানসুর ইমাম মালিককে জিজ্ঞাসা করলো যে, হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে দোয়া করার সময় কবরের দিকে মুখ করবো না কিবলার দিকে?
তখন ইমাম মালিক উত্তরে বললেন: কি কারণে হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে চাও তুমি কি জানো না হযরত মুহম্মাদ (স:) তোমার এবং তোমার বাবা আদম (আ:)এর কিয়ামত পর্যন্ত মাধ্যম আছেন?
অতঃপর হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরের দিকে মুখ করে শাফায়াত চাও, আল্লাহ তায়ালা তার শাফায়াত কবুল করেন…। [25]
এই প্রশ্নোত্তর থেকে স্পষ্ট যে, হযরত মুহম্মাদ (স:) কবরে দোয়া করা একটি ফযিলতপূর্ণ কাজ এবং তাতে কোনো রকম কোনো সন্দেহ নেই তবে মানসুর যে বিষয় সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল সেটা হল যে, দোয়া করার সময় কিবলার দিকে মুখ করা বেশি ফযিলত নাকি কবরের দিকে? [26]
খুফ্ফাজী বলেন: শাফেয়ী এবং সাধারণ আলেমগণের মতামত এটাই যে, হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে দোয়া চাওয়ার সময় কিবলার দিকে পিঠ করা এবং কবরের দিকে মুখ করা দরকার। আবু হানিফা থেকেও এই ফতোয়া বর্ণনা হয়েছে। [27]
কামাল ইবনে হামাম বলেন: আবু হানিফা থেকে বর্ণনা হয়েছে যে, তিনি দোয়া করার সময় কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন আর একথা অগ্রহণযোগ্য তার কারণ আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, (কবরের দিকে মুখ করা আর কিবলার দিকে পিঠ করা একটি মুস্তাহাব আমল) এবং আবু হানিফার কথা সঠিক। কিরমানির একথা বলা যে, (আবু হানিফার মাযহাব উক্ত মাসয়ালায় তার বিপরীত) একথা ঠিক নয়। কারণ হযরত মুহম্মাদ (স:) জীবিত আছেন এবং নিজের যায়েরদের দেখেন। ঠিক ওই ভাবে যদি জীবিত থাকতেন তখন নিজের যায়েদেরকে যারা কিবলার দিকে পিঠ করে তাদেরকে নিজের কাছে ডাকতেন।[28]
ইব্রাহিম হারবী নিজের ‘মানাসিকে’ লেখেন: হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে দোয়া করার সময় কিবলার দিকে পিঠ কর আর কবরের মাঝে দাঁড়াও। [29]
আবু মুসা থেকে বর্ণনা হয়েছে যে মালিক বলেন: যে কেউ হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে আসতে চায় তাকে কিবলার দিকে পিঠ করা দরকার এবং কবরের দিকে মুখ করে তার উপর দরুদ পাঠ করা আর দোয়া করা দরকার। [30]
সামহুদি বলেন: শাফেয়ী এবং তার সাহাবা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কবরে দাঁড়িয়ে কিবলার দিকে পিঠ এবং রওযার দিকে মুখ করা দরকার, আহমাদ ইবনে হাম্বালেরও একই মতামত। [31]
আবু হানিফা থেকে বর্ণিত: আইউব সাখতিয়ানী কিবলা দিকে পিঠ এবং কবরের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ক্রন্দন করলো। [32]
ইবনে জামাআ বলেন: আবু হানিফার ফতোয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যায়েরদের এতবার কবরের চক্কর লাগানো দরকার যে, যখনি দাঁড়াবে মুখটা যেন কবরের দিকে থাকে তার পর দরুদ পাঠ করা।
কিন্তু কিরমানী অন্যদের থেকে আলাদা বলেছেন: যায়েদের সালাম করার সময় কবরের দিকে পিঠ করে দাঁড়ানো দরকার। [33]
ইব্রাহিম ইবনে সায়াদ বলেন: আমি ইবনে মানকাদিরকে দেখলাম সে মসজিদে নাবাভীতে প্রবেশের স্থান নামায আদায় করছিলেন। ওখান থেকে উঠে কিছু দূর যাওয়ার পর কিবলা দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে দুটো হাত উঁচু করে দোয়া করলেন। তার পর কিবলার দিক থেকে মুখ সরিয়ে দুটো হাথকে এমন ভাবে উঁচু করলেন যেমন তরবারীকে তার গেলাফ থেকে বের করা হয় এবং দোয়া করলেন। মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়ও অনুরূপ আচারণ করলেন যেমন ভাবে কাউকে খোদা হাফিয করা হয়। [34]
(৪)- যে স্থানে যেখানে হযরত মুহম্মাদ (স:) দাফন আছেন সেখানে যদি মানুষ নামায আদায় করে তাহলে এতে সমস্যা কোথায় যেমন ভাবে ওই পাথরের উপর নামায আদায় করা হয় যেখানে হযরত ইব্রাহিম(আ:) দাঁড়িয়ে ছিলেন আর এটা এই কারণে যে, ওখানে ইব্রাহিম(আ:)এর পায়ের চিহ্ন আছে যার কারণে সেই পাথরের এত মর্যাদা। আল্লাহ তায়ালা উক্ত সম্পর্কে বলেন:
وَاتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى))
অর্থ: এবং (আদেশ দিয়েছিলাম) ইবরাহীমের দাঁড়ানোর (এ) স্থানকে নামাযের স্থানরূপে গ্রহণকর। [35]
ইবনে তাইমিয়ার আর একটি কথা এবং তার উত্তর:
ইবনে তাইমিয়ার আর একটি ফতোয়া এই যে, (বাড়িতে নামায আদায় করা নবীগণ ও সালেহীনদের কবরে নামায আদায় করা থেকে বেশি ফযিলত রাখে)।[36]
এটা এমন একটি কথা যার কোনো অস্তিত্ব নেই কারণ পূর্বের ফকীহগণ কেউ এই ধরনের কথা বলেন নি শুধুমাত্র ইবনে তাইমিয়া দাবী করছেন যে পূর্বের ফকীহগণ উক্ত বিষয়কে পরিষ্কার ভাবে বর্ণনা করেছেন।
তার দলিলের উপর গবেষণা এবং তার উপর সমালোচনা:
ওহাবীরা কবরের কাছে নামায আদায় করাকে কিছু হাদীস দ্বারা প্রমাণ করে থাকে যে, হযরত মুহম্মাদ (স:) বলেছেন:
(لعن الله الیهود! واتخذوا قبور انبیائهم مساجد)
অর্থ: আল্লাহর অভিশাপ বর্ষণ হোক ইহুদীদের উপর যারা নিজের নবীগণের কবরকে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত করেছে।
দ্বিতীয় হাদীসে হযরত মুহম্মাদ (স:) বলেন:
(اللهم لا تجعل قبری و ثنا یعید” اشتد غضب الله علی قوم اتخذوا قبور انبیائهم مساجد)
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার কবরকে মূর্তি বানিয়ো না যাতে তার ইবাদত করা হয়, আল্লাহ ওই সম্প্রদায়ের উপর নিজের ক্রোধ অধিক করুক যারা নিজের নবীগণের কবরকে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছে। [37]
আমরা দ্বিতীয় হাদীসের কয়েকটা দিক থেকে উত্তর দিচ্ছি:
১– উক্ত হাদীসের সনদে প্রতিবন্ধকতা পাওয়া যায় তার কারণ উক্ত হাদীসের সনদে এমন একজন রাভীর কথা বলা হয়েছে যাকে আহলে সুন্নাতের ‘রেজাল’ শাস্ত্রের আলেমগণ দুর্বল বলেছেন। [38]
ওই রাভীদের মধ্যে আব্দুল ওয়ারিস একজন যাকে ‘রেজাল’ শাস্ত্রের আলেমগণ গ্রহণযোগ্য মনে করেন না এবং তার পিছনে নামায ও আদায় করেন না।
২– উক্ত হাদীস ইবনে তাইমিয়া এবং তার অনুসারীদের মতামতের বিপরীত। তার কারণ তারা এই হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে (কবরে নামায আদায় করা বা তার উপর মসজিদ প্রতিষ্টা জায়েয নয়)। কিন্তু হাদীস বহিরাগত ভাবে হাবশার চার্চ গুলোর দিকে এশারা করছে কারণ যখনি কোনো ভালো মানুষ মৃত্যুবরণ করতো তখন তার কবরের উপর চার্চ তৈরী করা হতো এবং চিত্র তৈরী করে স্থাপন করা হত।
এই কারণে যারা নবীদের কবরকে মসজিদ তৈরী করে তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা হত কারণ তারা চিত্র তৈরী করে তার ইবাদত করতো, এবং চিত্র ও কবরের দিকে মুখ করে সিজদা করতো।
এটা পরিষ্কার যে, কবরের উপর মসজিদ তৈরী থেকে নিষেধ করার কারণ এইটাই। তা না হলে যদি কোনো মানুষ কবরের উপর মসজিদ তৈরী করে আর যদি কিবলা মুখি হয়ে নামায আদায় করা হয় তাহলে এতে সমস্যা কোথায়। যেমন ভাবে আজকেও মুসলমানেরা মসজিদে নবী বা জামে মসজিদে বানু উমাইয়া দামেষ্কেকে (যেখানে হযরত যাকারিয়া (আ:)এর কবর আছে) নামায আদায় করে।
৩– কারতাবী, নাওয়াভী, কাসতালানী, এবং বাইযাবী উক্ত হাদীস থেকে যে অর্থ নিয়েছে সেটা ইবনে তাইমিয়া এবং তার অনুসারীদের বিপরীত। অন্যান্য স্থানে ওই অর্থ নিয়েছে যা আমরা পূর্বে বর্ণনা করেছি। [39]
৪– আহলে সুন্নতের ফকীহগণ নিজেদের ফতোয়াই ওহাবীদের সন্দেহের বিপরীত ফতোয়া দিয়েছেন। আমরা এখানে তাদের কিছু মতামত তুলে ধরছি:
ইমাম মালিকের ছাত্র ইবনে কাসিম থেকে বর্ণিত: একজন মানুষ চাদর পরিধান করে কবরে নামায আদায় করা সেই কবরের নিকট এটা কী ইমাম মালিকের নিকট জায়েয?
তখন তিনি বললেন: ইমাম মালিক কবরস্থানে নামায আদায় করা থেকে বিরোধীতা করেন না কারণ তিনি নিজেই কবরস্থানে নামায আদায় করতেন এমনকি তার সামনে পিছনে ডানদিকে বামদিকে কবর থাকতো।
ইমাম মালিক বলেন: কবরের সামনে নামায আদায় করলে কোনো সমস্যা নেই।
ইমাম মালিক বলতেন যে, আমি শুনেছি কিছু সাহাবাগণও কবরের সামনে নামায আদায় করতেন। [40]
যদি কোনো ব্যক্তি কোনো ভালো মানুষের কবরের উপর এই উদ্দেশে মাসজিদ তৈরী করে যে, ওই ইবাদতের সোয়াব সেই ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছাবে এবং নামায আদায় করার সময় তার সম্মান বা তার দিকে মনোযোগ না দেওয়া হয় তাহলে কোনো সমস্যা নেই। যেমন ভাবে হযরত ইসমাইলের কবর কাবা ঘরের পাশে মসজিদুল হারামের ভিতরে সেখানে নামায আদায় করা অন্য স্থান থেকে বেশি ফযিলত রাখে। [41]
ঠিক এই ভাবে তিনি বলেন: যদি কবরের স্থানে মসজিদ তৈরী করা হয় বা রাস্তায় হয় বা কোনো মানুষ ওখানে বসে থাকে বা কোনো আল্লাহর ওলি বা কোনো মনিষির কবর হোক যে আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ চেষ্টা করেছে যার ফলে তার মর্যাদা জন্যে (যা সূর্যের মতো জমিনের উপর চকচক করছে) বা এটা বলার জন্যে যে, কবরের মালিক আল্লাহর ওলি তার থেকে তাবার্রুক অর্জন করা বা তার কবরে দোয়া চাওয়া যার ফলে দোয়া কবুল হয়। যদি এই ধরনের কোনো কাজ হয় তাহলে কোনো সমস্যা নেই। কারণ মানুষের আমল তার নিয়তের উপর নির্ভর করে। [42]
কাওসার বলেন: আবু মালেকি নিজের মতামত এই ভাবে বর্ণনা করেছেন: যদি কেউ কোনো ভালো মানুষের কবরে মসজিদ তৈরী করে বা তার কবরে নামায আদায় করে আর তার ইচ্ছে শুধু সেখান থেকে তাবার্রুক অর্জন করা বা ওখানে দোয়া কবুল করানো হয় তাহলে কোনো সমস্যা নেই আর তার প্রমাণ হযরত ইসমাইল (আ:)এর কবর যা মসজিদুর হারামে কাবা ঘরের পাশে আছে ওখানে নামায আদায় করা অন্য স্থানের থেকে বেশি ফযিলত। [43]
বাগভী বলেন: কিছু আলেমগণ বলেন যে, কবরস্থান বা কবরের কাছে নামায আদায় করা এতে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু ওই শর্তে যেন নামাযের স্থান পবিত্র থাকে।
একটি রেওয়ায়েতে বর্ণনা হয়েছে যে, একদিন হযরত ওমর, আনাস ইবনে মালিকে একটি কবরের পাশে নামায আদায় করতে দেখে তাকে বললেন: এটাকি কবর! এটাকি কবর! কিন্তু তাকে এটা বললেন না যে, দ্বিতীয় বার নামায আদায় কর।
মালিক থেকে বর্ণনা হয়েছে যে, কবরস্থানে নামায আদায় করা কোনো মন্দ কাজ নয়।
মালিক বলেন: কিছু স্থানে (হাম্মাম এবং কবরস্থান) নামায আদায় করা নিষেধের প্রমাণ নেই যেখানে সাধারণতঃ অপবিত্র জিনিস বর্জিত হয় যেমন হাম্মাম। এই কারণে ওখানে নামায আদায় করাকে মাকরুহ বলা হয়েছে। আর কবরস্থানে নামায আদায় করাকে এই জন্য নিষেধ করা হয়েছে যে, ওখানকার মাটিতে মৃত ব্যক্তির রক্ত এবং হাড় মিশ্রিত থাকে এবং নিষেধের ব্যাপারটা অপবিত্রতার কারণে বলা হয়েছে। তবে যদি কোনো মানুষ একটা নির্দিষ্ট স্থান তৈরী করে তাহলে সেখানে নামায আদায় করতে কোনো সমস্যা নেই। [44]
এতসব প্রমাণ বর্ণনা করার পরও কী ওহাবীদের কাছে কোনো রাস্তা আছে যে, তারা কবরে নামায আদায়কারীদের উপর কাফির এবং শিরকের অপবাদ লাগাতে পারবে আর এটা বলতে পারবে যে, এরা কবরে শুয়ে থাকা ব্যক্তির ইবাদত করে। যেমন ভাবে ইমাম মালিক ও হাসান বাসারী কবরের মাঝে নামায আদায় করতেন।
[1] (আল মুসান্নিফ আব্দুর রাজ্জাক খ:৩ পৃ: ৫৬৯)
[2] (আস সুনানুল কুবরা খ: ৪ পৃ: ৭৮)
[3] (আস সুনানুল কুবরা খ:১ পৃ: ১৩১)
[4] (আত তাজুল জামেও লিল উসুল খ: ২ পৃ: ৩৮১, মিরকাতুল মাফাতী খ: ৪ পৃ:২১৫, আত তামহিদ খ:৩ প:২৩৪)
১ (রেসালায়ে যিয়ারতে কুবুর পৃ:২৮)
[7] (ওফাউল ওফা বেআখবারিল মুস্তাফা খ:৪ হাদীস ১৩৭৬, আল মাওয়ায়েবুল লাদুন্নিয়া খ:৩ পৃ:৪০৯)
[8] (আল মুসান্নিফ খ:৩ পৃ:৫৭২, মুস্তাদরাকুল আলাস সাহিহায়েন খ:১ পৃ:৫৩৩ )
[9] (ফাতহুল বারি খ: ৭ পৃ:১৩১)
[10] (আর রিয়াযুন নাযরা খ:২ পৃ:২৩০)
[11] (সুলহুল আখওয়ান পৃ:৮৩, তারিখে বাগদাদ খ:১ প:১২৩)
[12] (তারিখে বাগদাদ খ:১ পৃ:১২২)
[13] (সায়রে আলামুল নাবলা খ:৯ পৃ:৩৪৩)
[14] (সাফ্ফাতুস সুফু খ:২ পৃ:৩২৪)
[15] (তাবকাতুল কুবরা খ:১ পৃ:২৭)
[16] (গায়াতুন নেহায়া ফি তাবকাতুল করা খ:২ পৃ:৯৭)
[17] (আল জাওয়াহেরুল মুযিয়া খ:১ পৃ:৪৬১)
[18] (আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া খ:১১ পৃ:৩৫১)
[19] (অফিয়াতুল আয়ান খ:৪ পৃ:২৭২)
[20] (অফিয়াতুল আয়ান খ:৫ পৃ:৪২৪)
[21] (কাশফুল ইরতিয়াব পৃ:৩৪০)
[22] (রেসালায়ে যিয়ারতিল কুবুর পৃ:২৬)
[23] (ফাযলুস সালাত আলান নবী পৃ: ৮৪ হাদীস ১০১, কাশফুল ইরতিয়াব পৃ:২৪৭ ও ৩৪০, আল গাদির খ:৫ পৃ:১৩৪)
[24] (সুরা বাকারা আয়াত ১১৫)
[25] (ওফাউল ওফা বেআখবারিল মুস্তাফা খ:৪ হাদীস ১৩৭৬, আল মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া খ:৩ পৃ:৪০৯, আল ফুরুক, সুনহাজী খ:৩ পৃ:৫৯)
[26] (আশ শিফাও বেতারিফে হুকুকিল মুস্তাফা খ:২ পৃ:৯২, আল গাদির খ:৫ পৃ:১৩৫, কাশফুল ইরতিয়াব পৃ: ২৪০, ২৫৫, ২৬১)
[27] (শরহুশ শিফা খ:৩ পৃ:৫১৭)
[28] (ওফাউল ওফা বেআখবারিল মুস্তাফা খ:৪ হাদীস ১৩৮৭, আল মুগনী লেইবনে কেদামা খ:৩ পৃ:২৯৮, আশ শারহুল কাবির খ:৩ পৃ:৪৯৫)
[29] (শিফাউস সেকাম পৃ:১৬৯, শারহুশ শিফা খ:৩ পৃ:৫১৭, কাশফুল ইরতেয়াব পৃ:৩৬২)
[30] (আল মাজমু খ:৮ পৃ:২০১)
[31] (ওফাউল ওফা বেআখবারিল মুস্তাফা খ:৪ পৃ:১৩৭৮)
[32] (আল মারেফাতো ওয়াত তারিখ খ:৩ পৃ:৯৭, কাশফুল ইরতিয়াব পৃ:২৬১)
[33] (ওফাউল ওফা বেআখবারিল মুস্তাফা খ:৪ পৃ:১৩৭৮)
[34] (সেয়রে আলামুন নাবলা খ:৫ পৃ:৩৫৮, তারিখে দামিশ্ক খ:৫৬ পৃ:৪৮)
[35] (সুরা বাকারা ১২৫)
[36] (ওফাউল ওফা বেআখবারিল মুস্তাফা খ:৪ পৃ:১৩৭৮)
[37] (মাসনাদে আহমাদ খ:২ পৃ:২৪৬, আল মোতা ইবনে মালিক খ:১ পৃ:১৭২)
[38] (মিযানুল এতেদাল খ:৪ পৃ:৪৩০ ও খ:২ পৃ:৩)
[39] (ইরশাদুস সারী খ:২ পৃ:৯৯ ও খ:৩ পৃ:৪৯৭, সহীহ মুসলিম খ:৭ পৃ:২৭)
[40] (আল মোদাওবেনাতুল কুবরা খ:১ পৃ:৯০)
[41] (আল হাদিকাতুন নাদিয়া খ:২ পৃ:৬৩১)
[42] (আল মোদাওবেনাতুল কুবরা খ:১ পৃ:৯০)
[43] (আল মাকালাতুল কাওসারী পৃ:২৪৬, শারহে সহীহ মুসলিম খ:২ পৃ:২৩৪)
[44] (শারহুস সুন্নাহ খ:২ পৃ:৩৯৮)