সোমবার, 23 ডিসেম্বর , 2024 برابر با Monday, 23 December , 2024

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, তার দেশ যে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে চায় না তা শত্রুরাও জানে। কিন্তু তারা ইরানকে শান্তিপূর্ণ কাজেও পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দিতে চায় না বলে এদেশের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।

আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী আজ (বৃহস্পতিবার) তাবরিজ গণঅভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে ওই প্রদেশের জনগণের এক সমাবেশে ভার্চুয়ালি দেয়া এক ভাষণে এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আজ হোক অথবা কাল আমাদেরকে বেসামরিক কাজে পরমাণু জ্বালানীর ওপর নির্ভরশীল হতেই হবে। আজ যদি আমরা এই প্রযুক্তি পুরোপুরি আয়ত্বে না আনি আগামীকাল আমরা পিছিয়ে পড়ব। সেদিন যাতে শত্রুদের মুখাপেক্ষী হতে না হয় সেজন্যই আমরা পরমাণু কর্মসূচির প্রতি এতটা গুরুত্ব দিচ্ছি। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পরমাণু শক্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে। কাজেই আমাদেরকে এই খাতে ব্যাপকভাবে গবেষণা চালাতে হবে।

আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী ভিয়েনায় চলমান পরমাণু সমঝোতা পুনরুজ্জীবনের সংলাপের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ২০১৫ সালে যখন পরমাণু সমঝোতা সই হয় তখন আমার কিছু দিকনির্দেশনাকে আমলে না নেয়ার কারণে বর্তমান অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

ভাষণের অন্য অংশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার আধিপত্যের দিনগুলে শেষ হতে যাচ্ছে। এ অঞ্চলের দেশগুলোর জনগণ সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে।

সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ইরানের তরুণ সমাজকে বিপ্লবের চেতনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়- জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য তারা শত শত কোটি ডলার খরচ করে বিপ্লবের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা দেশের সরকারের সঙ্গে জনগণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায়। এ লক্ষ্যে তারা ইরানের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছে। কিন্তু ইরানি জনগণ যদি অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলা করতে পারে তাহলে শত্রুরা হতাশ হবে।

আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, অভ্যন্তরীণভাবে অর্থনৈতিক তৎপরতা শক্তিশালী করে বিদেশ-নির্ভরতা কমাতে হবে। ইরানি কূটনীতিকরা এদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করার জন্য [ভিয়েনায়] যে আলোচনা চালাচ্ছেন সেটিও প্রশংসনীয়। তবে দেশের অর্থনীতিকে মুক্তি দিতে চাইলে অভ্যন্তরীণভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। ইরানের অর্থনীতিকে বহিঃশক্তির ওপর নির্ভর করা যাবে না।

ফার্সি ১৩৫৬ সালের ২৯ বাহমান তথা ১৯৭৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় তাবরিজ শহরের জনগণ তৎকালীন স্বৈরাচারী শাহ সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। সেদিন শাহ সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় বহু মানুষ শহীদ হয়েছিলেন।

পরবর্তীতে ওই ঘটনার চেহলামের স্মরণে কোমসহ ইরানের অন্যান্য শহরেও শাহ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং এর ফলে জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। অবশেষ পরের বছর ২২ বাহমান অর্থাৎ ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের চূড়ান্ত বিজয় ঘটে। বিপ্লবের চূড়ান্ত দিনগুলোর সূচনা তাবরিজের গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু হয়েছিল বলে প্রতি বছর দিনটিকে গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।