পর্ব ৫- অভিযোগকারী নারীদের প্রতি হযরত খাদিজার (সা.) উপযুক্ত জবাব
কুরাইশ বংশের একদল ত্রুটি অন্বেষকারী মূর্খ নারী হযরত খাদিজা (সা.) সম্পর্কে অভিযোগ ও উপহাস করতে লাগল। তারা উপহাস করে বলতো:
“খাদিজার মত একজন প্রসিদ্ধ ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী বিত্তশালী নারীর এটা মানায় না যে একজন ইয়াতীম, রিক্তহস্ত, দরিদ্র ব্যক্তিকে বিয়ে করবে আর এটা কি নেক্কারজনক একটা বিষয় নয়?।”
যখন এই কথাটি হযরত খাদিজার (সা.) কানে পৌঁছালো তিনি তার কর্মচারীদেরকে সুস্বাদু খাবার তৈরীর নির্দেশ দিলেন। আর ঐ সকল নারীদেরকে দাওয়াত করলেন। যখন সবাই আহারে ব্যস্ত তখন হযরত খাদিজা (সা.) তাদের উদ্দেশ্যে বললেন:
“হে নারী সমাজ! তোমরা নাকি হযরত মুহাম্মদকে (সা.) বিয়ে করার বিষয়কে কেন্দ্র করে আমাকে উপহাস করছো। আমি তোমাদের কাছে জানতে চাই:
“হযরত মুহাম্মদের (সা.) মত ঐ ধরনের ভাল বৈশিষ্ট্যের অধিকারী দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি কি তোমাদের নজরে আছে? মক্কা ও মদীনার আশে পাশে এমন ব্যক্তিত্ববান কেউ কি আছে যিনি হযরত মুহাম্মদের (সা.) মত চরিত্র ও মর্যাদার দিক থেকে এত সৌন্দর্য্যপূর্ণ এবং পরিপূর্ণতার অধিকারী? আমি তার এই পূর্ণতার কারণেই তাকে বিবাহ করেছি, আর এমন কিছু তার সম্পর্কে শুনেছি ও দেখেছি যা অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদার অধিকারী। সুতরাং এটা উচিত নয় যে, তোমরা যা খুশি তাই বলবে ও অজ্ঞতাবশে কাউকে অশোভনীয় অপবাদ দিবে।”
হযরত খাদিজার (সা.) এ ধরনের হৃদয়গ্রাহী কথা শুনে সমস্ত নারীরা নিস্তব্ধ হয়ে গেলেন। তাদের এই নিস্তব্ধতা তারই সাক্ষ্য বহন করে যে, এ সম্পর্কে তাদের আর বলার মত কোন ভাষা নেই। হযরত খাদিজা (সা.) এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বুদ্ধিমত্তার সাথে ও আল্লাহর সন্তুষ্টচিত্তে তাদের কৃতকর্মের জবাব দিয়েছিলেন।
হযরত আদমের (আ.) বাণীতে হযরত খাদিজার (সা.) কৃতিত্বের কথা
হযরত খাদিজার (সা.) কৃতিত্ব বা মর্যাদার কথা বিশ্বের প্রথম মানব হযরত আদমের (আ.) সময় অর্থাৎ হযরত খাদিজার (সা.) জন্মেরও বহু শতাব্দী পূর্বে আলোচিত একটি বিষয় ছিল (হযরত আদম (আ.) হতে বর্ণিত) তিনি বলেছেন: কিয়ামতের দিন আমি সকল মানবজাতির সর্দার ও নেতা, কিন্তু এমন এক ব্যক্তি আসবে যিনি আমারই সন্তানগণের মধ্য থেকে আর তিনি রাসূলগণের মধ্যেও একজন রাসূল যার নাম মুহাম্মদ তিনি দু’দিক থেকে আমার চেয়েও বেশী মর্যাদার অধিকারী:
তার স্ত্রীর ক্ষেত্রে যিনি ছিলেন তার সর্বোত্তম সঙ্গী কিন্তু আমার স্ত্রী হাওয়া সে ধরনের ছিল না।
তিনি পরিপূর্ণভাবে অশুভ আত্মার উপর কর্তৃত্বের অধিকারী (এমন কি তারকে আউলা পর্যন্ত আঞ্জাম দেন নি) কিন্তু আমি ঐ রকম নই।
স্বামীর প্রতি হযরত খাদিজার (সা.) সহমর্মীতা
রাসূল (সা.) নবুয়্যত ঘোষণার প্রাক্কালে এক সাড়া জাগানো স্বপ্ন দেখেছিলেন ও খাদিজার (সা.) নিকট এসে এভাবে বর্ণনা করলেন: আমি স্বপ্নে দেখলাম আমার পেটের ভুরিকে স্বস্থান হতে সরে আনা হয়েছে। অতঃপর সেটাকে ধৌত ও পবিত্র করা হয়েছে এবং আবার সেটাকে স্বস্থানে রাখা হয়েছে।
হযরত খাদিজা (সা.) রাসূলের (সা.) স্বপ্নের কথা শুনে বললেন: “আপনার এই স্বপ্ন অতি উত্তম ও সৌভাগ্যের চিহ্ন বহন করে, আপনাকে সম্ভাষণ জানায়, আল্লাহ আপনার প্রতি কল্যাণ ব্যতীত কিছু করেন না।”
হযরত খাদিজা (সা.) এরূপ পরিস্থিতেও রাসূলের (সা.) সহচর, বন্ধু, বিশ্বস্ত সাথী ও দূর্দিনে সহমর্মী ছিলেন। যে কোন দূর্ঘটনা যেটা রাসূলের (সা.) অশান্তি বা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতো, আল্লাহ তায়ালা হযরত খাদিজার (সা.) মাধ্যমে সেই অশান্তি বা দুশ্চিন্তা দূর করে দিতেন এবং হযরত খাদিজাও (সা.) তাঁর কষ্ট দূর করে দিয়ে তাঁকে প্রশান্তি দান করতেন। হযরত খাদিজার (সা.) এই কর্মসূচীটি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।