সোমবার, 23 ডিসেম্বর , 2024 برابر با Monday, 23 December , 2024

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স:)-এর কন্যা হযরত ফাতেমা যাহরা (স:)

পর্ব ১- বিশ্বনারীকুল নেত্রী হযরত ফাতেমা যাহরা (স:) ছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স:)-এর কন্যা। সারা বিশ্বের মুসলমানগণ তাঁকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স:)-এর প্রথমা স্ত্রী হযরত খাদীজা (স:)-এর গর্ভজাত সন্তান। তিনি মহানবী (স:)-এর নবুওয়াতের ঘোষণার পঞ্চম বছরে ২০শে জমাদিউস সানি শুক্রবার মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন।

মহানবী (স:)-এর আরও কয়েকজন সন্তান ছিলেন। কিন্তু তাঁরা কেউই দীর্ঘ জীবনের অধিকারী ছিলেন না; সকলেই স্বল্প বয়সে ইন্তেকাল করেন। হযরত ফাতেমা যাহরার মাধ্যমেই মহানবী (স:)-এর বংশধারা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। হযরত ফাতেমা যাহরার জন্মদিবসকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে উদযাপন করে থাকে।

শৈশবকাল

তৎকালীন আরব সমাজের রীতি ছিল সদ্যজাত শিশুকে লালন-পালন করার জন্য ‘দুধ-মা’ নিয়োগ করা। কিন্তু হযরত ফাতেমা যাহরা জন্মের পর তৎকালীন আরব সমাজের সেই রীতি অনুযায়ী তাঁকে লালন-পালন করার জন্য ‘দুধ-মা’-এর নিকট হস্তান্তর করার পরিবর্তে তাঁর মা নিজেই এ দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর শৈশব কেটেছে মক্কায় পিতা-মাতার নিবিড় সাহচর্যে। তখন কুরাইশদের অত্যাচারে তাঁর পিতা জীবনের কঠিন সময় অতিক্রম করছিলেন। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায় : একদিন মহানবী (স:) কা’বা ঘরে নামায আদায় করছিলেন। এ সময় আবু জেহেল ও তার কিছু সাঙ্গপাঙ্গ নবীজীর পিঠের ওপর উটের নাড়িভুঁড়ি চাপিয়ে দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে হযরত ফাতেমা নবীজীর কাছে চলে এলেন এবং নিজ হাতে সেসব নোংরা ময়লা সরিয়ে দেন, আর নবীজীকে কষ্টদানকারীদেরকে তিরস্কার করেন। তাঁর মায়ের ইন্তেকালের পর হযরত ফাতেমাকে এ রকম বহু দুঃখজনক পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়েছিল। মা খাদীজার মৃত্যুর পর তাঁর পিতা রাসূলে খোদা (স:)-কে তিনি এমন ভক্তি সহকারে সেবাযত্ন করতেন যে, তাঁকে ‘উম্মে আবিহা’ অর্থাৎ ‘তাঁর পিতার মা’ হিসেবে অভিহিত করা হতো। রাসূলুল্লাহ্ (স:)-কে কুরাইশদের ক্ষতি থেকে রক্ষাকারী তাঁর চাচা হযরত আবু তালিবের মৃত্যু এবং একই বছরে হযরত খাদীজার ইন্তেকাল রাসূলে খোদার পরিবারের জন্য কঠিনতম সময় বয়ে নিয়ে আসে।

হযরত খাদীজার ইন্তেকালের পর পরিবারের দেখা-শোনার জন্য মহানবী (স:) সাওদা নামক একজন বিধবাকে বিয়ে করেন। শিশু ফাতেমা যাহরাকে শিক্ষা দেয়ার জন্য সাওদাকে বলা হলে তিনি জবাব দেন, ‘আমি কিভাবে তাঁকে শিক্ষা দিতে পারি যিনি নিজেই একজন পবিত্রা এবং উচ্চ মর্যাদাশীল ব্যক্তিত্ব? তাঁর কাছ থেকে আমার নিজেরই শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।’

তাঁর শিশুকাল এভাবে অত্যন্ত পবিত্র ও সম্মানজনক পরিবেশে অতিবাহিত হয়। তারপর তিনি লক্ষ্য করলেন, তাঁর পিতা মহানবী (স:) শত্রুবেষ্টিত পরিবেশে ইসলামের বাণী প্রচার করছেন। হযরত আবু তালিব ও হযরত খাদীজার ইন্তেকালের পর এ শত্রুতা প্রকট আকার ধারণ করে। ইসলামের বাণী প্রচারের কারণে কাফেররা মহানবী (স:)-এর ওপর এত ক্ষিপ্ত হয়েছিল যে, তারা তাঁর ওপর পাথর নিক্ষেপ করে। এতে তাঁর শরীর ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত হয়ে যায়। হযরত ফাতেমা যাহরা রাসূলে খোদার সে ক্ষত-বিক্ষত দেহের শুশ্রূষা করেন।

রাসূলুল্লাহ্ (স:)-এর জীবন নাশের জন্য শত্রুরা যে পরিকল্পনা করেছিল তা-ও হযরত ফাতেমা  জানতে পেরেছিলেন। কিন্তু তা জেনেও তিনি ভীত হতাশাগ্রস্ত হন নি।#

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।