মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স:)-এর কন্যা হযরত ফাতেমা যাহরা (স:)
পর্ব ২- উপাধিসমূহ
মুসলিম উম্মাহর নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে হযরত ফাতেমা যাহরাকে আদর্শ হিসেবে শ্রদ্ধা করে ও ভালবাসে। তাঁর নিজের নামের পাশাপাশি মুসলমানরা অনেক উপনামে তাঁকে অভিহিত করে। এ সব উপনাম হল তাঁর চারিত্রিক গুণাবলির সম্ভ্রমপূর্ণ প্রশংসার বহিঃপ্রকাশ। তাঁর উপাধি হল আয্-যাহরা – যার অর্থ হল ‘জ্যোতির্ময় ব্যক্তিত্ব’ অথবা ‘আলোকিত মহিয়সী নারী’। সাধারণত তাঁকে ‘ফাতেমা যাহরা’ নামে অভিহিত করা হয়। তিনি উম্মে আবিহা (তাঁর পিতার মা) নামেও পরিচিত। তাঁকে ‘বাতুল’ (পবিত্র ও অপবিত্রতামুক্ত) নামেও অভিহিত করা হয়। তিনি নামায, কুরআন তেলাওয়াত ও ইবাদাত-বন্দেগীতে তাঁর অধিকাংশ সময় ব্যয় করতেন। তাঁর আরও দু’টি নাম ছিল : শারীফা (মহানুভব) ও সাইয়্যেদা (সম্মানিতা নেত্রী)।
হযরত ফাতেমা যাহরা (স:) সকল মুসলমানের কাছে ছিলেন শ্রদ্ধার পাত্রী। তিনি ছিলেন পিতার স্নেহধন্য কন্যা, মমতাময়ী মা, দায়িত্বশীল স্ত্রী, একজন একনিষ্ঠ মুসলিম এবং সর্বোপরি নারীদের জন্য একজন পরিপূর্ণ আদর্শ। তাঁর পিতার সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত নিবিড়। হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তিনি অন্য মহিলাদের সাথে তুলনীয় ছিলেন না, তিনি ছিলেন অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র।
হযরত খাদীজার পর হযরত ফাতেমা ঐতিহাসিকভাবে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। হযরত ফাতেমার যোগ্যতা ও পবিত্র ফযীলতের জন্য ইসলামে তাঁর এ মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। হযরত ফাতেমার এ অবস্থানকে হযরত মারইয়াম (আ.)-এর অবস্থানের সাথে তুলনা করা যায়। হযরত ফাতেমাহ্ ছিলেন প্রথম মা‘সুম ইমাম হযরত আলী (আ.)-এর স্ত্রী, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ইমাম হাসান ও হোসাইন (আ.)-এর মাতা এবং নবীবংশের বাকি নয়জন মা‘সুম ইমাম তাঁরই বংশধর।
হিজরত
মহান আল্লাহর নির্দেশে হিজরতের সময় হযরত ফাতেমাও নবী পরিবারের অন্যদের সাথে হিজরত করেন। মহানবী (স:)-এর মদীনায় হিজরতের পর দ্বিতীয় পর্যায়ে হযরত সাওদা, ইমাম আলী (আ.)-এর মাতা ও অপর কিছুসংখ্যক লোক তাঁদের সাথে হিজরত করেন। হিজরতের এ কাফেলায় নেতৃত্ব দেন ইমাম আলী (আ.)।
মহানবী (স:)-এর হিজরতের পর তিনদিন ইমাম আলী (আ.) মক্কায় অবস্থান করেন। তিনি হিজরতের রাতে নিজের জীবন বাজি রেখে নবীজীর বিছানায় ঘুমান। মক্কার লোকদের গচ্ছিত কিছু আমানত ছিল নবীজীর কাছে, হিজরতের কারণে নবীজী ঐ মালগুলো তার প্রকৃত মালিকদের কাছে পৌঁছাতে পারেন নি। ইমাম আলী (আ.)-এর ওপর দায়িত্ব ছিল সেগুলো প্রকৃত মালিকের কাছে পৌঁছে দেয়ার। তিনি দায়িত্বশীলতার সাথে সে কাজটি সম্পন্ন করার পরই মহানবীর পরিবারসহ মদীনায় হিজরত করেন।#