বি ইসমেহি তায়ালা
পবিত্র রমযান মাসের ফযিলত ও আমল
فضیلت و اعمال ماه مبارک رمضان
تالیف و ترجمه : مولانا مجید الاسلام شاه
সংকলন ও অনুবাদ
মাওলানা মজিদুল ইসলাম শাহ
প্রকাশনায়
নূরুল ইসলাম একাডেমি, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত
بسم الله الرحمن الرحیم
ইমাম মাহদী (আ.)’এর বিশেষ তত্বাবধানে
নাম : পবিত্র রমযান মাসের ফযিলত ও আমল
সংকলণ ও অনুবাদ : মজিদুল ইসলাম শাহ, কুম, ইরান।
সম্পাদক : মুহম্মাদ রিজওয়ানুস সালাম খান, কুম, ইরান।
সহযোগিতায় : মিজানুর রহমান। কম্পোজ : মজিদুল ইসলাম শাহ
প্রচ্ছদ ভাবনা : মুস্তাক আহমদ
প্রকাশক : নূরুল ইসলাম একাডেমি, চন্ডীপুর, ঢোলাহাট, ২৪ পরগণা (দ.), পশ্চিম বঙ্গ, ভারত।
প্রকাশকাল : রমযানুল মোবারক, ১৪৩৮হিঃ, ১১ই জৈষ্ঠ, ১৪২৪বাঃ, মে, ২০১৭খৃঃ। হাদিয়া : ২৫ টাকা মাত্র
যোগাযোগ :
১. নূরুল ইসলাম একাডেমী, চন্ডীপুর ও আল-মাহদী(আ.) রিসার্চ সেন্টার, ঢোলাহাট, ২৪ পরগণা, ৯১৪৩০১৪৮৭০, ৯০৪৬৭৪০৯৪১।
২. আল কায়েম ইসলামীক রিসার্চ সেন্টার, কুমারপুর, ভবানীপুর, হলদিয়া, মেদিনীপুর (পূর্ব) মোবাইল নং ৯৮০০৬৪১৬৬০।
৩. ইমাম সাদিক(আ.) ইসলামীক সেন্টার, সাগর ক্লাব, ও বারাগোয়াল, উলুবেড়িয়া, হাওড়া, মোবাইল নং :৯২৩৯৮১৯০৭৩, ৮৪৭৮৯১৩৪৩৭।
৪. হুগলি ইমাম বাড়া, চুঁচুড়া, হুগলি, মোবাইল নং ৯৬৮১৩০৮৫০৯।
৫. নারকেল বেড়িয়া, ঢালিপাড়া, কুলিয়া, মাসিয়া, শরণীয়া, ঘোনারবন … উত্তর ২৪ পরগণা।
(গ্রন্থস্বত্ব প্রকাশকের জন্য সংরক্ষিত)
نام کتاب : فضیلت و اعمال ماه مبارک رمضان، تالیف ترجمه : مجید الاسلام شاه. ناشر : نورالاسلام اکادمی، چنڈی پور، ڈھولاهاٹ، مغربی بنگال، هندوستان. سال : رمضان المبارک، 1438هجری.مئی 2017 عیسوی، جیٹھ، 1424 بنگالی.
NAME : FAZILAT AND AMAL OF RAMZANUL MOBARAK, (IN BENGALI) TRANSLATE BY : MAJIDUL ISLAM SHAH. EDITED BY : MOHAMMAD RIZWAN SALAM KHAN. PUBLISHED BY : NOORUL ISLAM ACADEMY, CHANDIPUR, DHOLAHAT, 24 PGS (S.) , WEST BENGAL, INDIA. PUBLISHED IN : RAMZAN 1438 HJ. JAIESHTHA, 1424 BN. MAY, 2017 AD. Websit : www.noor-academy.com Email: [email protected]. Contac and whatsup no : +989394193523 +989193541204 |
সুচিপত্র
রোযার সর্ম্পকে আল্লার বাণী: 10
রোযার সম্পর্কে ইমামগণের কিছু বাণী: 15
পবিত্র রমযান মাসের প্রতিদিনের দোওয়া.. 20
ঈদের নামাযের কিছু মুস্তাহাব আমল: 29
প্রতিটি নামাযের পর পঠনীয় দোওয়া: 30
ভূমিকা
রমযান শন্দটি (رمضاء) আরবী শব্দমূল থেকে নেওয়া হয়েছে; যার অভিধানিক অর্থ হচ্ছে তীব্র তাপ এবং কোনো জিনিসকে পুড়িয়ে দেওয়াকে বলা হয়। যেহেতু এই মাসে মানুষের গুণাহকে মাফ করে কিংবা পুড়িয়ে দেওয়া; হয় তাই এই মাসকে রমযান বলা হয়।
হযরত মুহম্মাদ(স:) থেকে বর্ণিত: انما سمی الرمضان لانه یرمض الذنوب
অর্থ: রমযান মাসকে ‘রমযান’ নামে ডাকা হয়েছে, কারণ এই মাস গুনাহকে পুড়িয়ে দেয়।[1]
‘রমযান’ হচ্ছে একটি আরবী মাসের নাম এবং কোরআনে শুধুমাত্র এই মাসের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। রমযান মাস হচ্ছে চারটি মাসের মধ্যে অন্যতম মাস, যে মাসে যুদ্ধ করাকে আল্লাহ তায়ালা হারাম করেছেন।
রমযান মাস এমন একটি পবিত্র মাস যে মাসে আসমানি গ্রন্থ কোরআন, ইনজিল, তৌরাত, যাবুর ও সুহুফ অবর্তীণ হয়েছে। [2]
রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে পবিত্র রমযান মাস আল্লাহর মাস। হযরত মুহম্মাদ (স:)’র উম্মত এই পবিত্র মাসে আল্লাহর মেহমান হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে। আল্লাহ তায়ালা এই মাসে নিজের বান্দাদের অত্যন্ত স্নেহ ও ভালবাসার সাথে আপ্যায়ণ করেন।
হযরত মুহম্মাদ(স:) বলেন: পবিত্র রজব মাস আল্লাহর মাস, পবিত্র শাবান মাস আমার মাস এবং পবিত্র রমযান মাস আমার উম্মতের মাস। যদি কেউ এই পবিত্র মাসের সমস্ত রোযা পালন করে থাকে; তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাঁর সমস্ত গুনাহকে ক্ষমা করে দিবেন, তাঁর অবশিষ্ট জীবনের নিশ্চয়তা দান করবেন এবং তাকে কিয়ামতের দিনের সেই ভয়ংকর তৃষ্ণা ও ক্ষুধা থেকে নিরাপত্তায় রাখবেন। [3]
রমযান মাসের ফযিলত:
পবিত্র রমযান মাসের ফযিলত ও গুরুত্বসমূহ যদি কোনো ব্যক্তি লিখিত ভাবে প্রকাশ করতে চায়, তাহলে তাঁর পক্ষে রমযান মাসের পরিপুর্ণ ফযিলত বর্ণনা করা সম্ভব নয়। কারণ পবিত্র রমযানের ফযিলত ও গুণাবলী এত বেশি যা মানুষের দ্বারা বর্ণনা করা অসম্ভব। তা সত্ত্বেও আমি এখানে পবিত্র রমযান মাসের কিছু ফযিলত ও গুণাবলী বর্ণনা করার চেষ্টা করছি:
হযরত মু্হম্মাদ(স:)’র খুতবা:
হযরত আলী(আ:) থেকে বর্ণিত: হযরত মুহম্মাদ(স:) শাবান মাসের শেষ জুমার দিন একটি খোৎবা প্রদান করেন। আর সেই খোৎবায় পবিত্র রমযান মাসের আগমণের সুসংবাদ এবং উক্ত মাসের ফযিলত ও মর্যাদার প্রতি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন:
হে মানব সকল! তৈরি থাকো আল্লাহর পবিত্র রমযান মাস; বরকত, রহমত, এবং মাগফেরাতের বার্তা নিয়ে তোমাদের দিকে আসছে, পবিত্র রমযান মাস এমন একটি মাস যা আল্লাহর নিকট সমস্ত মাসের থেকে উত্তম, তার দিনগুলো সমস্ত দিনের থেকে উত্তম, তার রাত সমূহ সমস্ত রাতের থেকে উত্তম এবং তার সময় গুলো সমস্ত সময়ের থেকে উত্তম।
রমযান মাস এমন একটি মাস যে মাসে আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে নিজের অতিথি বানিয়েছেন, এই মাসে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর বিশেষ দয়া করেছেন। এই মাসে তোমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস যিকর ও নিদ্রাকে এবাদতে গণ্য করা হবে। এই মাসে তোমাদের আমল কবুল করা হবে, দোওয়া কবুল হবে। পবিত্র নিয়তে অন্তর থেকে আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা কর, যাতে এই মাসে রোযা রাখা আর কোরআন পাঠ করার তৌফিক দেয়। দুর্ভাগা ব্যক্তি হচ্ছে সে, যে নিজের গুনাহকে এই মহান পবিত্র মাসে মাফ (ক্ষমা) করাতে পারেনা এবং গুনাহগার রয়ে যায়।
এই মাসের ক্ষুধা ও তৃষ্ণার দ্বারা কিয়ামতের ক্ষুধা ও তৃষ্ণাকে স্মরণ কর, গরীব দরিদ্রদের সাদকা দান কর, সাহায্য কর, নিজের থেকে বড় ও মুরুব্বিদের সম্মান কর আর ছোটোদের সাথে উদারতা বজায় রাখ, নিজের আত্মীয় স্বজনদের সাথে আত্মীয়তা (সর্ম্পক) বজায় রাখ, নিজের জিহ্বাকে অশোভন কথা থেকে বাঁচাও। নিজের চক্ষুকে ওই সমস্ত জিনিস থেকে যা দেখা জায়েয নয় বন্ধ করে রাখো, নিজের কর্ণকে ওই সমস্ত কথা যা শ্রবণ করা জায়েয নয়, তা থেকে দূরে রাখো।
অনাথ শিশুদের উপর অনুগ্রহ কর যাতে তোমার পরে তোমার অনাথ সন্তানের প্রতি মানুষ অনুগ্রহ করে। নিজের গুনাহ থেকে তৌবা কর আর নামাযের সময় নিজের হাত দোওয়ার জন্য উঁচু কর, তার কারণ এই সময় খুবই ফযিলতের সময়, আল্লাহ তায়ালা নিজের মর্যাদা, সম্মান, রহমত ও অনুগ্রহর সাথে নিজের বান্দাদের দিকে দেখেন। আর যদি তোমরা কোনো গোপন কথা বলো সেটা শুনে, যদি তোমরা অন্তর থেকে আল্লাহকে ডাকো তবে তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবেন।
হে মানব সকল! তোমাদের জীবন তোমাদের আমলের কাছে দায়বদ্ধ। এবার তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা চেয়ে (অগ্রহণ যোগ্য আমল থেকে) নিজের জীবনকে মুক্তি দান কর। তোমাদের পিঠের উপর গুনাহর বোঝা আছে সেটিকে দীর্ঘ সিজদার দ্বারা হালকা কর। আর এটা জেনে রাখ যে সেই আল্লাহ যার যিকর সমস্ত জিনিস থেকে উত্তম তিনি নিজের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের শপথ করে বলেন: নামাযীদের আর সিজদাকারীদেরকে আযাব (শাস্তি) দেবেন না, আর ওই দিন যে দিন সমস্ত মানুষকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত করা হবে সেই দিন আল্লাহ তায়ালা নামাযীদের ও সিজদাকারীদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে ভয় দেখাবেন না।
হে মানব সকল! তোমাদের মধ্যে যদি কেউ একজন রোযাদার মোমিন ভাইকে ইফতার করায় তাঁর এই আমলের কারণে আল্লাহ তায়ালা তাকে একটি দাসকে মুক্তি করার সাওয়াব দান করবেন আর তার পূর্বের সমস্ত গুনাহকে ক্ষমা করে দেবেন।
জনগণ বলল: হে আল্লাহর রসূল! আমাদের (রোযাদার মোমিন ভাইকে ইফতার করানো) এই কাজের শক্তি নেই।
আল্লাহর রসূল বললেন: অর্ধেক খুরমা বা এক গ্লাস পানি দ্বারা অন্যকে ইফতার করিয়ে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।
হে মানব সকল! যদি কেউ নিজেকে এই মাসে ভাল চরিত্রের অধিকারী করে তুলে, তবে তার জন্য কেয়ামতের দিন পুলে সিরাত থেকে পার হওয়া সহজ হয়ে যাবে, যে দিন বেশির ভাগ মানুষের পা কাঁপতে থাকবে।
যদি কেউ এই মাসে নিজের থেকে ছোটদের সাথে ভাল ব্যবহার করে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর আমলের হিসাবও ভাল ভাবে নেবে। আর যদি কেউ এই মাসে নিজেকে খারাপ ব্যবহার থেকে বিরত থাকে আল্লাহ তায়ালাও কেয়ামতের দিন তার উপর রাগন্বিত হবেন না। যদি কেউ এই মাসে নিজের আত্মীয় স্বজনদের সাথে সম্পর্ক ভাল রাখে আর তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, আল্লাহ তায়ালাও কেয়ামতের দিন তার সঙ্গে নিজের রহমতের সাথে সাক্ষাৎ করবেন।
যদি কেউ এই মাসে নিজের আত্মীয় স্বজনদের সাথে সম্পর্ক বিছিন্ন করে আল্লাহ তায়ালাও কেয়ামতের দিন তার সাথে নিজের সম্পর্ক বিছিন্ন করে দেবে। যদি কেউ এই মাসে মুস্তাহাব নামায পড়ে আল্লাহ তায়ালা তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে দূরে রাখবেন।
যদি কেউ এই মাসে ফরয আমল করে, তবে আল্লাহ তায়ালা তাকে বছরের অন্য মাসের ফরয আমলের সত্তর গুণ সাওয়াব প্রদান করবেন।
যদি কেউ এই মাসে আহলে বাইত (আ:)এর উপর দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তায়ালা ওই দিন যে দিন আমলের পাল্লা হালকা হয়ে যাবে সেই দিন তার আমলের পাল্লা ভারি করে দেবেন। আর যদি কেউ এই মাসে কোরআন শরিফ তিলাওয়াত করে তাকে অন্য মাসেও কোরআন খতম করার সাওয়াব প্রদান করবেন।
হে মানব সকল! এই মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে, তোমরা আল্লাহর কাছে দোওয়া কর, যেন সেই দরজাকে নিজেদের গুনাহর মাধ্যমে বন্ধ কর না। আর এই মাসে জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তোমরা আল্লাহর কাছে দোওয়া কর, নিজের গুনাহর দ্বারায় সেটিকে দ্বিতীয়বার খুলো না।
এই মাসে শয়তানকে বেঁধে রাখা হয়েছে, তোমারা আল্লাহর কাছে দোওয়া কর, যেন শয়তান তোমাদের উপর প্রভাব ফেলতে না পারে।
হযরত আলী (আ:) বলেন: আমি দাঁড়িয়ে বললাম: হে আল্লাহর রসূল! এই মাসে সব থেকে উত্তম আমল কি? আল্লাহর রসূল (স:) বললেন: হে আবুল হাসান এই মাসে উত্তম আমল এটাই যে সেই সব আমল থেকে বিরত থাকো, যে সব আমলকে আল্লাহ তায়ালা হারাম করেছেন।
তাঁরপর আল্লাহর রসূল কাঁদতে লাগলেন, আমি বললাম: হে আল্লাহর রসূল! আপনি কাঁদছেন কেন? বললেন: হে আলী এই মাসে যে কষ্ট তোমাকে দেওয়া হবে সেটাই চিন্তা করে কাঁদছি। এমনকি আমি তোমাকে দেখছি যে তুমি তোমার আল্লাহর সামনে নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে আছো আর পৃথিবীর শ্রেষ্টতম জালেম ‘সামুদ’ কৌমের নাকার (উটনি) মত তোমার মাথার উপর আঘাত করে তোমার দাড়িকে তোমার রক্তে লাল করছে।
তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম: হে আল্লাহর রসূল! ওই সময় কি আমার দ্বীন সালামত (সুরক্ষিত) থাকবে, আল্লাহর রসূল বললেন: হে আলী তোমার দ্বীন সুরক্ষিত থাকবে। তাঁর পর বললেন: হে আলী! যদি কেউ তোমার সাথে ‘শত্রুতা’ করে সে আমার ‘শত্রু’ আর যে তোমাকে ‘মন্দ’ বলবে সে আমাকে ‘মন্দ’ বলবে। তার কারণ তুমি আমার রুহের মত আমার সাথে থাকো, তোমার ‘রুহ’ আমার ‘রুহ’, তোমার ‘সৃষ্টি’ আমার ‘সৃষ্টি’, আল্লাহ তায়ালা আমাকে আর তোমাকে সৃষ্টি করেছেন আর আমাকে ও তোমাকে নির্বাচন করেছেন।
হে আলী! তুমি আমার ওসি এবং আমার সন্তানদের পিতা আর আমার কন্যার স্বামী। আমার জীবনে এবং আমার পরবর্তীকালে আমার উম্মাতের তুমি অভিভাবক। তোমার ‘আদেশ’ আমার ‘আদেশ’, আর তোমার কোনো জিনিস থেকে ‘নিষেধ’ আমার নিষেধ হিসেবে গণ্য হবে।
শপথ সেই আল্লাহর, যে আমাকে নবী বানিয়ে এই পৃথিবীর বুকে পাঠিয়েছেন আর আমাকে সর্বোত্তম বানিয়েছেন। তুমি আল্লাহর সৃষ্টির উপর তাঁর হুজ্জত এবং তাঁর গোপন তথ্যের আমানতদার ও তাঁর বান্দাদের উপর তাঁর খলিফা।
১– বছরের সর্বত্তোম মাস:
পবিত্র রমযান মাস কোরআন অবতীর্ণের দিক থেকে একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য রাখে, যার কারণে এই পবিত্র মাসকে বছরের সর্বোত্তম মাস বলা হয়েছে। যেমন কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে;
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَن كَانَ مَرِيضاً أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
অর্থ: রমযান মাসই হল সেই মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্য পথের যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পুরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পুরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তায়ালার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।[4]
হযরত মুহম্মাদ (স:) পবিত্র রমযান মাসের সম্পর্কে বলেছেন: হে মানবগণ! আল্লাহর পবিত্র রমযান মাস তোমাদের জন্য বরকত, রহমত, ও মাগফেরতের বার্তা নিয়ে এসেছে। আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম যে মাস সমস্ত মাসের থেকে সেটি হল পবিত্র রমযান মাস, যে মাসের দিনগুলো অন্য সমস্ত দিনের থেকে এবং রাতসমূহ অন্য সমস্ত রাতের থেকে এবং সময়গুলো অন্য সমস্ত সময় থেকে উত্তম।
পবিত্র রমযান মাস, যে মাসে তোমাদেরকে আল্লাহর অতিথি হিসেবে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে এবং তোমরা আল্লাহর স্নেহ, দয়া, ভালোবাসার অংশীদার হয়েছ। পবিত্র রমযান মাসে তোমাদের নিঃশ্বাস নেওয়া আল্লাহর তসবী এবং ঘুমানো ইবাদত, তোমাদের আমলসমূহ কবুল করা হবে, এবং দোওয়া গ্রহণ করা হবে। রমযান মাস আল্লাহ তায়ালার নিজের বান্দাদের উপর লক্ষ্য রাখার সর্বোত্তম সময়।
২– এই পবিত্র মাসে আসমানি গ্রন্থের অবতীর্ণ হওয়া:
সমস্ত আসমানি গ্রন্থ যেমন: কোরআন শরিফ, তৌরাত, ইঞ্জিল, যাবুর, ও সুহুফ এই পবিত্র মাসে অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ:) থেকে বর্ণিত: সমস্ত কোরআন রমযান মাসে ‘বাইতে মামুরে’ অবতীর্ণ হয়েছে। তাঁর ঠিক কুড়ি বছর পরে হযরত মুহম্মাদ (স:)’র উপর নাযিল হয় আল কোরআন আর সুহুফে ইব্রাহিম রমযান মাসের প্রথম রাত্রে এবং তৌরাত রমযান মাসের ষষ্ঠ দিনে এবং ইঞ্জিল রমযান মাসের ত্রয়োদশ দিনে এবং যাবুর আঠারতম দিনে অবতীর্ণ হয়।
৩– রোযার সামর্থ্য:
রমযান মাসে আল্লাহ তায়ালা নিজের বান্দাদেরকে রোযা রাখার সামর্থ্য দান করেছেন। আর তোমাদের মধ্যে যে কেউ রমযান মাসে স্বস্থানে উপস্থিত থাকবে তাঁর উপর রোযা রাখা ফরয। [5]
রোযার সর্ম্পকে আল্লার বাণী:
১– রোযার আইন-কানুন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
অর্থাৎ: হে মোমিনগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেরুপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।[6]
২- সুনির্দিষ্ট সময়ে রোযা ফরয হওয়া: أَيَّاماً مَّعْدُودَاتٍ
অর্থাৎ: কিছু সুনির্দিষ্ট সময়ে রোযা রাখো। [7]
৩– অসহায় লোকেদের উপর রোযার কাযা:
فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضاً أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ
অর্থাৎ: তোমাদের মধ্যে যারা রোগী কিংবা সফর অবস্থাতে থাকবে, তাদেরকে অন্য সময়ে কাযা করতে হবে। [8]
৪– রোযা মানুষের জন্যে সর্বোত্তম:
وَأَن تَصُومُواْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
অর্থাৎ: রোযা রাখা তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমারা অবহিত হও। [9]
৫– রোযা রাখার সময়:
ثُمَّ أَتِمُّواْ الصِّيَامَ إِلَى الَّليْلِ
অর্থাৎ: অতঃপর তোমরা রোযা পরিপূর্ণ কর রাত্রি পর্যন্ত। [10]
৬– রোযা ফরয হওয়ার কারণ:
وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
অর্থাৎ: আল্লাহ প্রদত্ত পথ প্রদর্শনের দরুণ তাঁর মহিমা বর্ণনা কর। হয়তো তোমারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে।[11]
৭– অসুখের সময় রোযা ফরয না হওয়া:
يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ
অর্থাৎ: আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, কষ্ট দিতে চান না। [12]
রোযার কিছু উপকার ও ফযিলত:
ক– শক্তিশালী খোদাভীরুতা ও পরহেযগারী:
ঐকান্তিকতা; যেমন ভাবে আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারা ১৮৫ নম্বর আয়াতে বর্ণনা করেছেন।
ইমাম জাফর সাদিক (আ:) থেকে বর্ণিত: আল্লাহ তায়ালা বলেন: রোযা আমার পক্ষ হতে এবং তাঁর ফল আমি দেবো।[13]
হযরত ফাতেমা যাহরা (স:) থেকে বর্ণিত: আল্লাহ তায়ালা ঐকান্তিকতা দৃঢ় করার জন্যে রোযাকে ফরয করেছেন।
খ– মানসিক এবং শারীরিক স্বস্তি:
রোযা পালনের মাধ্যমে মানসিক স্বস্তি, আত্মার শান্তি ও শরীরের সতেজতা অর্জিত হয়।
হযরত মুহম্মাদ(স:) থেকে বর্ণিত: রোযা পালন কর, যাতে তোমরা সুস্থ্য থাকো। দ্বিতীয় হাদীসে বলেছেন: পাকস্থলী সমস্ত রোগের বাসস্থান এবং পানাহার থেকে বিরত থাকা সর্বোত্তম ঔষধ।[14]
হযরত ইমাম বাকের (আ:) থেকে বর্ণিত: রোযা এবং হজ্ব আত্মার শান্তির কারণ। [15]
গ- শয়তানের প্রবেশে বাধা সৃষ্টির কারণ:
হযরত আলী (আ:) হযরত মুহম্মাদ (স:) কে জিঙ্গাসা করলেন: হে আল্লাহর রসূল! এমন কোন জিনিস আছে যে শয়তানকে আমাদের থেকে বিরত রাখে ? হযরত মুহম্মাদ (স:) বললেন: ‘রোযা’ শয়তানের মুখমন্ডলকে কালো এবং ‘সাদকা’ তার পিঠকে ভেঙ্গে দেয়।[16]
এই কারণে রোযা মানুষদের মধ্যে শয়তানের প্রবেশে বাধা সৃষ্টির কারণ হয় এবং শয়তানের ধোকাকে নিষ্ফল করে।
ঘ- ধনী ও গরীবদের মধ্যে সমতা:
রোযাদার ব্যক্তি ক্ষুধা ও তৃষ্ণার সময় দরিদ্র ও গরীবদের স্মরণ করে তাদের কষ্ট ও যন্ত্রণা অনুভব করার সুযোগ পায়। হযরত ইমাম হাসান আসকারী (অ:) রোযা ফরয হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলেছেন: যাতে সম্পদশালী ব্যক্তিরা ক্ষুধার্তের কষ্ট অনুভব করে এবং তার ফলে দরিদ্র ও গরীবদের যেন সাহায্য প্রদান করে।[17]
ঙ- নৈতিক বৈশিষ্ট্যকে জীবিত করা:
হযরত ইমাম রেযা (আ:) রোযা ফরয হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলেছেন: যাতে মানুষ ক্ষুধা ও তৃষ্ণার কষ্টকে অনুভব করে এবং আখেরাতে নিজের চাহিদা অনুযায়ী স্থান অর্জন করতে পারে। রোযাদার ব্যক্তি ক্ষুধা ও তৃষ্ণার কারণে বিনীত, নম্র, ও ধৈর্যশীল হয়।
চ- শবেকদরের অস্তিত্ব এই মাসে:
শবেকদর এমন একটি রাত্রি যা হাজার মাসের থেকেও উত্তম এবং ফারিস্তা এই রাতে আল্লাহর অনুমতি নিয়ে যমিনে প্রবেশ করেন এবং মানুষের ভাগ্যকে সারা বছরের জন্য নির্ধারণ করেণ।[18] শবেকদরের অস্তিত্ব এই পবিত্র মাসে; এটি আল্লাহর নিয়ামত ও ভালবাসা মুহম্মাদ(স:)’র উম্মতের উপর। মানুষের এক বছরের ভাগ্য (জীবন, মৃত্যু, দৈনিক খাদ্য… ইত্যাদি) তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী, সামর্থ এবং সক্ষমতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। এই ফযিলতপূর্ণ রাতে মানুষ একাগ্রতা ও গভীর মনযোগের মাধ্যমে নিজের মধ্যে ফিরে আসতে পারে এবং এক বছরের সম্পাদিত আমলসমূহের ভুলত্রুটি সংশোধন করে নিতে পারে এবং এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সর্বোত্তম ভাগ্যকে নিজের জন্য নির্ধারিত করতে পারে। [19]
ছ- কোরআনের বসন্তকাল:
একথা স্পষ্ট যে কোরআনুল করিম এই পবিত্র মাসে অবতীর্ণ হয়েছে এবং উক্ত মাসে কোরআন পাঠ করা অত্যন্ত ফযিলত সম্পন্ন। ইসলামী রেওয়ায়েতের মধ্যে পাওয়া যায় যে পবিত্র রমযান মাস কোরআনের বসন্তকাল হিসেবে পরিচিত। যেমন হযরত ইমাম বাকের (আ:) থেকে বর্ণিত: প্রত্যেকটি জিনিসের বসন্ত আছে আর কোরআনের বসন্ত হল রমযান মাস। [20]
রোযার সম্পর্কে ইমামগণের কিছু বাণী:
১– রোযার গুরুত্ব:
ইমাম মুহম্মাদ বাকির (অ:) থেকে বর্ণিত:
بنی الاسلام علی خمسة اشیاء علی الصلوة و الزکوة و الصوم و الحج و الولایة
অর্থাৎ: ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি জিনিসের উপর রাখা হয়েছে। যথা নামায, রোযা, যাকাত, হজ্জ, বেলায়েত। [21]
একই হাদিস ইমাম জাফর সাদিক (আ:) থেকেও বর্ণিত:
بنی الاسلام علی خمس دعائم علی الصلوة و الزکوة و الصوم و الحج و الولایة
অর্থাৎ: ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি জিনিসের উপর রাখা হয়েছে। যথা নামায, রোযা, যাকাত, হজ্জ, বেলায়েত। [22]
২– রোযাদারদের মর্যাদা:
হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ:) থেকে বর্ণিত:
نوم الصائم عبادة و صمته تسبیح و عمله متقبل و دعاوه مستجاب عند افطاره دعوة لا ترد
অর্থাৎ: রোযাদার ব্যক্তির ঘুম হচ্ছে ইবাদত এবং নীরবতা হচ্ছে আল্লাহর গুণগান। তাদের আমল ও দোওয়া আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য এবং ইফতারের সময় তাদের দোওয়া প্রত্যাখ্যাত হয় না। [23]
৩– রোযার হিকমাত (দর্শন):
হযরত ফাতেমা যাহরা (স:) থেকে বর্ণিত : فرض الله الصیام تثبیتا للاخلاص
অর্থাৎ: নিষ্ঠা মজবুত হওয়ার জন্যে আল্লাহ রোযাকে ফরয করেছেন। [24]
ইমাম জাফর সাদিক (অ:) থেকে বর্ণিত: انّما فرض الله الصیام لیستوی به الغنی والفقیر
অর্থ: আল্লাহ তায়ালা রোযা ফরয করেছেন যাতে ধনি ও গরিবের মধ্যে সমতা বজায় থাকে। [25]
ইমাম আলী (অ:) থেকে বর্ণিত: فرض الله …الصیام ابتلاء للخلاص الخلق
অর্থ: আল্লাহ তায়ালা রোযা ফরয করেছেন নৈতিক চরিত্রের ঐকান্তিকতার পরীক্ষা নেওয়ার জন্যে।[26]
৪– রোযা শরীরের যাকাত:
আল্লাহর রসূল (স:) থেকে বর্ণিত : لکل شیئ زکواة و زکواة الابدان الصیام
অর্থাৎ: প্রত্যেকটি জিনিসের জন্যে যাকাত, আর শরীরের যাকাত হচ্ছে রোযা। [27]
৫– রোযা খাঁটি ইবাদত:
হযরত ইমাম আলী (আ:) থেকে বর্ণিত:
الصوم عبادة بین الله و خالقه لا یطلع علیها غیره و کذلک لا یجازی عنها غیره
অর্থাৎ: রোযা এমন একটি ইবাদত, যার সর্ম্পক আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে। এই সর্ম্পকের খবর আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ যানে না। সেই জন্যে রোযার সওয়াব আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ দিতে পারবে না।[28]
৬– রোযা জাহান্নামের আগুনের বিপক্ষে ঢাল:
হযরত ইমাম সাদিক (আ:) থেকে বর্ণিত: الا اخبرک بابواب الخیر؟ الصوم جنة من النار
অর্থাৎ: আমি কি তোমাদেরকে নেকির দরজার সর্ম্পকে কিছু বলতে পারি? তাঁর পর বললেন: রোযা জাহান্নামের আগুনের থেকে আত্মরক্ষা ঢাল স্বরুপ। [29]
হযরত মুহম্মাদ (স:) থেকে বর্ণিত: الصوم جنة من النار
অর্থ: রোযা জাহান্নামের আগুনের বিপক্ষে ঢাল। অর্থাৎ মানুষের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে রোযা।
৭– রোযা রসূল (স:)’র প্রিয়:
হযরত রসূল (স:) থেকে বর্ণিত:
انا من الدنیا احب ثلاثة اشیاء الصوم فی الصیف و الضرب بالسیف و اکرام الضیف
অর্থাৎ: আমি দুনিয়ার তিনটি জিনিস খুবই পছন্দ করি: সেগুলো হল- গ্রীষ্মকালের রোযা, আল্লাহর রাস্তায় তরবারি চালানো ও অতিথিদের শ্রদ্ধা করা। [30]
৮– রোযা সর্বোত্তম ইবাদত:
হযরত ইমাম আলী (আ:) থেকে বর্ণিত:
صوم القلب خیر من صیام اللسان خیر من صیام البطن
অর্থাৎ: অন্তরের রোযা জিহবার রোযার থেকে এবং জিহবার রোযা পেটের রোযার থেকে উত্তম।[31]
৯– রোযার বাস্তবতা:
হযরত ইমাম আলী (আ:) থেকে বর্ণিত:
الصیام اجتناب المحارم کما یمنع الرجل من الطعام و الشرب
অর্থাৎ: আল্লাহ যে-সমস্ত কাজকে হারাম করেছেন তার থেকে বিরত থাকাকেও রোযা বলা হয়, যেমন ভাবে মানুষ অন্ন থেকে বিরত থাকে। [32]
১০– ‘রোযা’ কিয়ামতের দিনকে স্মরণে রাখার চিহ্ন:
ইমাম রেযা (আ:) থেকে বর্ণিত:
انّما امروا بالصوم لکی یعرفوا الم الجوع والعطش فیستدلوا علی فقر الاخرة
অর্থ: মানব জাতিকে রোযা রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা ক্ষুধা এবং তৃষ্ণাকে অনুভব করতে পারে এবং যেন আখিরতের নিঃস্বম্বলতাকে অনুমান করতে পারে। [33]
প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা
১- যে সময় হযরত রসূল (স:) রমযান মাসের ফযিলত (মর্যাদা) বর্ণনা করছিলেন ওই সময় হজরত আলী (আ:) প্রশ্ন করলেন: রমযান মাসে সর্বোত্তম কাজ কি?
উত্তরে রসূল (স:) বললেন:
فقال یا ابا الحسن افضل الاعمال فی هذا الشهر الورع عن محارم الله
অর্থাৎ: আল্লাহর রসূল (স:) বললেন: হে আবুল হাসান! আল্লাহ যে সমস্ত কাজকে হারাম করেছে তার থেকে দূরে থাকাই সর্বোত্তম কাজ। [34]
২- হযরত রসূল (স:) একজন মহিলাকে দেখলেন, যে নিজের দাসিকে খারাপ ভাষা বলছে। রসূল (স:) ওই মহিলাকে ডেকে খাওয়ার অনুমতি দিলেন। মহিলা বললো: আমি রোযা আছি, রসূল (স:) বললেন: কেমন রোযা আছো, এখনি নিজের দাসিকে খারাপ ভাষা বলছিলে।
পবিত্র রমযান মাসের প্রতিদিনের দোওয়া
১ম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ اجْعَلْ صِيامي فيهِ صِيامَ الصّائِمينَ، وَقِيامي فيهِ قيامَ الْقائِمينَ، وَنَبِّهْني فيهِ عَنْ نَوْمَةِ الْغافِلينَ، وَهَبْ لى جُرْمي فيهِ يا اِلـهَ الْعالَمينَ، وَاعْفُ عَنّي يا عافِياً عَنْ الُمجْرِمينَ.
হে আল্লাহ ! আমার আজকের রোযাকে প্রকৃত রোযাদারদের রোযা হিসেবে গ্রহণ কর। আমার নামাযকে কবুল কর প্রকৃত নামাযীদের নামায হিসেবে। আমাকে জাগিয়ে তোলো গাফিলতির ঘুম থেকে। হে জগতসমূহের প্রতিপালক! এদিনে আমার সব গুনাহ মাফ করে দাও। ক্ষমা করে দাও আমার যাবতীয় অপরাধ। হে অপরাধীদের অপরাধ ক্ষমাকারী।
২য় রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ قَرِّبْني فيهِ اِلى مَرْضاتِكَ، وَجَنِّبْني فيهِ مِنْ سَخَطِكَ وَنَقِماتِكَ، وَوَفِّقْني فيهِ لِقِرآءَةِ ايـاتِكَ بِرَحْمَتِكَ يا اَرْحَمَ الرّاحِمينَ.
হে আল্লাহ! তোমার রহমতের উসিলায় আজ আমাকে তোমার সন্তুষ্টির কাছাকাছি নিয়ে যাও। দূরে সরিয়ে দাও তোমার ক্রোধ আর গজব থেকে। আমাকে তৌফিক দাও তোমার পবিত্র কোরআনের আয়াত তেলাওয়াত করার। হে দয়াবানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়াময়।
৩য় রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ ارْزُقْني فيهِ الذِّهْنَ وَالتَّنْبيهَ، وَباعِدْني فيهِ مِنَ السَّفاهَةِ وَالَّتمْويهِ، وَاجْعَلْ لى نَصيباً مِنْ كُلِّ خَيْر تُنْزِلُ فيهِ، بِجُودِكَ يا اَجْوَدَ الاَجْوَدينَ .
হে আল্লাহ! আজকের দিনে আমাকে সচেতনতা ও বিচক্ষণতা দান কর। আর আমাকে দূরে রাখ অজ্ঞতা, নির্বুদ্ধিতা ও ভ্রান্ত কাজ-কর্ম থেকে। এ দিনে যত ধরণের কল্যাণ দান করবে তার প্রত্যেকটি থেকে তোমার দয়ার উসিলায় আমাকে উপকৃত কর। হে দানশীলদের মধ্যে সর্বোত্তম দানশীল।
৪র্থ রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ قَوِّني فيهِ عَلى اِقامَةِ اَمْرِكَ، وَاَذِقْني فيهِ حَلاوَةَ ذِكْرِكَ، وَاَوْزِعْني فيهِ لاِداءِ شُكْرِكَ بِكَرَمِكَ، وَاحْفَظْني فيهِ بِحِفْظِكَ وَسَتْرِكَ، يا اَبْصَرَ النّاظِرينَ .
হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে তোমার নির্দেশ পালনের শক্তি দাও। তোমার জিকিরের মাধুর্য আমাকে আস্বাদন করাও। তোমার অপার করুণার মাধ্যমে আমাকে তোমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য প্রস্তুত কর। হে দৃষ্টিমানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দৃষ্টিমান। আমাকে এ দিনে তোমারই আশ্রয় ও হেফাজতে রক্ষা কর।
৫ম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ اجْعَلْني فيهِ مِنْ الْمُسْتَغْفِرينَ، وَاجْعَلْني فيهِ مِنْ عِبادِكَ الصّالِحينَ اْلقانِتينَ، وَاجْعَلني فيهِ مِنْ اَوْلِيائِكَ الْمُقَرَّبينَ، بِرَأْفَتِكَ يا اَرْحَمَ الرّاحِمينَ .
হে আল্লাহ! এই দিনে আমাকে ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের অন্তর্ভূক্ত কর। আমাকে শামিল কর তোমার সৎ ও অনুগত বান্দাদের কাতারে। হে আল্লাহ! অনুগ্রহ করে আমাকে তোমার নৈকট্যলাভকারী বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর। হে দয়াবানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়াবান।
৬ষ্ঠ রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ لا تَخْذُلْني فيهِ لِتَعَرُّضِ مَعْصِيَتِكَ، وَلاتَضْرِبْني بِسِياطِ نَقِمَتِكَ، وَزَحْزِحْني فيهِ مِنْ مُوجِباتِ سَخَطِكَ، بِمَنِّكَ وَاَياديكَ يا مُنْتَهى رَغْبَةِ الرّاغِبينَ.
হে আল্লাহ! তোমার নির্দেশ অমান্য করার কারণে এ দিনে আমায় লাঞ্চিত ও অপদস্থ করোনা । তোমার ক্রোধের চাবুক দিয়ে আমাকে শাস্তি দিওনা। সৃষ্টির প্রতি তোমার অসীম অনুগ্রহ আর নিয়ামতের শপথ করে বলছি তোমার ক্রোধ সৃষ্টিকারী কাজ থেকে আমাকে দূরে রাখো। হে সর্বশ্রেষ্ঠ আবেদন কবুল কারী।
৭ম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ اَعِنّي فِيهِ عَلى صِيامِهِ وَقِيامِهِ، وَجَنِّبْني فيهِ مِنْ هَفَواتِهِ وَآثامِهِ، وَارْزُقْني فيهِ ذِكْرَكَ بِدَوامِهِ، بِتَوْفيقِكَ يا هادِيَ الْمُضِلّينَ.
হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে রোযা পালন ও নামায কায়েমে সাহায্য কর। আমাকে অন্যায় কাজ ও সব গুনাহ থেকে রক্ষা করো। তোমার তৌফিক ও শক্তিতে সবসময় আমাকে তোমার স্মরণে থাকার সুযোগ দাও। হে পথ হারাদের পথ প্রদর্শনকারী।
৮ম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ ارْزُقْني فيهِ رَحْمَةَ الاَيْتامِ، وَاِطْعامَ اَلطَّعامِ، وَاِفْشاءَ السَّلامِ، وَصُحْبَةَ الْكِرامِ، بِطَولِكَ يا مَلْجَاَ الاْمِلين.
হে আল্লাহ! তোমার উদারতার উসিলায় এ দিনে আমাকে এতিমদের প্রতি দয়া করার, ক্ষুধার্তদের খাদ্য দান করার, শান্তি প্রতিষ্ঠা করার ও সৎ ব্যক্তিদের সাহায্য লাভ করার তৌফিক দাও। হে আকাঙ্খাকারীদের আশ্রয়স্থল।
৯ম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ اجْعَلْ لي فيهِ نَصيباً مِنْ رَحْمَتِكَ الْواسِعَةِ، وَاهْدِني فيهِ لِبَراهينِكَ السّاطِعَةِ، وَخُذْ بِناصِيَتي اِلى مَرْضاتِكَ الْجامِعَةِ، بِمَحَبَّتِكَ يا اَمَلَ الْمُشْتاقينَ.
হে আল্লাহ! এদিনে আমাকে তোমার রহমতের অধিকারী কর। আমাকে পরিচালিত কর তোমার উজ্জ্বল প্রমাণের দিকে। হে আগ্রহীদের লক্ষ্যস্থল। তোমার ভালোবাসা ও মহব্বতের উসিলায় আমাকে তোমার পূর্ণাঙ্গ সন্তুষ্টির দিকে নিয়ে যাও।
১০ম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ اجْعَلْني فيهِ مِنَ الْمُتَوَكِّلينَ عَلَيْكَ، وَاجْعَلْني فيهِ مِنَ الْفائِزينَ لَدَيْكَ، وَاجْعَلْني فيهِ مِنَ الْمُقَرَّبينَ اِلَيْكَ، بِاِحْسانِكَ يا غايَةَ الطّالِبينَ.
হে আল্লাহ! তোমার প্রতি যারা ভরসা করেছে আমাকে সেই ভরসাকারীদের অন্তর্ভূক্ত কর। তোমার অনুগ্রহের মাধ্যমে আমাকে শামিল করো সফলকামদের মধ্যে এবং আমাকে তোমার নৈকট্যলাভকারী বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত করে নাও। হে অনুসন্ধানকারীদের শেষ গন্তব্য।
১১তম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ حَبِّبْ اِلَيَّ فيهِ الاِْحْسانَ، وَكَرِّهْ اِلَيَّ فيهِ الْفُسُوقَ وَالْعِصْيانَ، وَحَرِّمْ عَلَيَّ فيهِ السَّخَطَ وَالنّيرانَ بِعَوْنِكَ يا غِياثَ الْمُسْتَغيثينَ.
হে আল্লাহ! এ দিনে সৎ কাজকে আমার কাছে প্রিয় করে দাও আর অন্যায় ও নাফরমানীকে অপছন্দনীয় কর । তোমার অনুগ্রহের উসিলায় আমার জন্য তোমার ক্রোধ ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হারাম করে দাও। হে আবেদনকারীদের আবেদন শ্রবণকারী।
১২ তম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ زَيِّنّي فيهِ بِالسِّتْرِ وَالْعَفافِ، وَاسْتُرْني فيهِ بِلِباسِ الْقُنُوعِ وَالْكَفافِ، وَاحْمِلْني فيهِ عَلَى الْعَدْلِ وَالاِنْصافِ، وَآمِنّي فيهِ مِنْ كُلِّ ما اَخافُ، بِعِصْمَتِكَ يا عِصْمَةَ الْخائِفينَ.
হে আল্লাহ! এদিনে আমাকে আত্মিক পবিত্রতার অলঙ্কারে ভূষিত কর। অল্পে তুষ্টি ও পরিতৃপ্তির পোশাকে আবৃত্ত কর। ন্যায় ও ইনসাফে আমাকে সুসজ্জিত কর। তোমার পবিত্রতার উসিলায় আমাকে ভীতিকর সবকিছু থেকে নিরাপদে রাখ। হে খোদা ভীরুদের রক্ষাকারী।
১৩ তম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ طَهِّرْني فيهِ مِنَ الدَّنَسِ وَالاَقْذارِ، وَصَبِّرْني فيهِ عَلى كائِناتِ الاَقْدارِ، وَوَفِّقْني فيهِ لِلتُّقى وَصُحْبَةِ الاَبْرارِ، بِعَوْنِكَ يا قُرَّةَ عَيْنِ الْمَساكينَ .
হে আল্লাহ! এদিনে আমাকে কলুষতা ও অপবিত্রতা থেকে পবিত্র কর। যা কিছু তকদীর অনুযায়ী হয় তা মেনে চলার ধৈর্য আমাকে দান কর। তোমার বিশেষ অনুগ্রহে আমাকে তাকওয়া অর্জন এবং সৎ কর্মশীলদের সাহচর্যে থাকার তৌফিক দাও। হে অসহায়দের আশ্রয়দাতা।
১৪ তম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ لا تُؤاخِذْني فيهِ بِالْعَثَراتِ، وَاَقِلْني فيهِ مِنَ الْخَطايا وَالْهَفَواتِ، وَلا تَجْعَلْني فيهِ غَرَضاً لِلْبَلايا وَالاْفاتِ، بِعِزَّتِكَ يا عِزَّ الْمُسْلِمينَ.
হে আল্লাহ! এদিনে আমাকে আমার ভ্রান্তির জন্যে জিজ্ঞাসাবাদ করো না। আমার দোষ-ত্রুটিকে হিসেবের মধ্যে ধরো না। তোমার মর্যাদার উসিলায় আমাকে বিপদ-আপদ ও দুর্যোগের লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত করো না। হে মুসলমানদের মর্যাদা দানকারী।
১৫ তম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ ارْزُقْني فيهِ طاعَةَ الْخاشِعينَ، وَاشْرَحْ فيهِ صَدْري بِاِنابَةِ الْمخْبِتينَ، بِاَمانِكَ يا اَمانَ الْخائِفينَ.
হে আল্লাহ ! এদিনে আমাকে তোমার বিনয়ী বান্দাদের মতো আনুগত্য করার তৌফিক দাও। তোমার আশ্রয় ও হেফাজতের উসিলায় আমার অন্তরকে প্রশস্ত করে খোদাভীরু ও বিনয়ী বান্দাদের অন্তরে পরিণত কর। হে খোদাভীরু মুত্তাকীদের আশ্রয়দাতা।
১৬ তম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ وَفِّقْني فيهِ لِمُوافَقَةِ الاَبْرارِ، وَجَنِّبْني فيهِ مُرافَقَةَ الاْشْرارِ، وَآوِني فيهِ بِرَحْمَتِكَ اِلى دارِ الْقَـرارِ، بِاِلهِيَّتِكَ يا اِلـهَ الْعالَمينَ .
হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে তোমার সৎবান্দাদের সাহচর্য লাভের তৌফিক দাও। আমাকে মন্দ লোকদের সাথে বন্ধুত্ব থেকে দূরে সরিয়ে রাখো। তোমার খোদায়ীত্বের শপথ করে বলছি, আমাকে তোমার রহমতের বেহেশতে স্থান দাও। হে জগতসমূহের প্রতিপালক।
১৭ তম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ اهْدِني فيهِ لِصالِحِ الاَعْمالِ، وَاقْضِ لي فيهِ الْحَوائِجَ وَالاْمالَ، يا مَنْ لا يَحْتاجُ اِلَى التَّفْسيرِ وَالسُّؤالِ، يا عالِماً بِما في صُدُورِ الْعالَمينَ، صَلِّ عَلى مُحَمَّد وَآلِهِ الطّاهِرينَ.
হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে সৎকাজের দিকে পরিচালিত কর। হে মহান সত্ত্বা যার কাছে প্রয়োজনের কথা বলার ও ব্যাখ্যা দেয়ার দরকার হয় না। আমার সব প্রয়োজন ও আশা-আকাঙ্খা পূরণ করে দাও। হে তাবত দুনিয়ার রহস্যজ্ঞানী! হযরত মুহম্মাদ (সঃ) এবং তাঁর পবিত্র বংশধরদের ওপর রহমত বর্ষণ কর।
১৮ তম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ نَبِّهْني فيهِ لِبَرَكاتِ اَسْحارِهِ، وَنَوِّرْ فيهِ قَلْبي بِضياءِ اَنْوارِهِ، وَخُذْ بِكُلِّ اَعْضائي اِلَى اتِّباعِ آثارِهِ، بِنُورِكَ يا مُنَوِّرَ قُلُوبِ الْعارِفينَ.
হে আল্লাহ ! এ দিনে আমাকে সেহরীর বরকতের উসিলায় সচেতন ও জাগ্রত করে তোল। সেহরীর নূরের ঔজ্জ্বল্যে আমার অন্তরকে আলোকিত করে দাও। তোমার নূরের উসিলায় আমার প্রত্যেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গে তোমার নূরের প্রভাব বিকশিত কর। হে সাধকদের অন্তর আলোকিতকারী !
১৯ তম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ وَفِّرْ فيهِ حَظّي مِنْ بَرَكاتِهِ، وَسَهِّلْ سَبيلي اِلى خَيْراتِهِ، وَلا تَحْرِمْني قَبُولَ حَسَناتِهِ، يا هادِياً اِلَى الْحَقِّ الْمُبينِ.
হে আল্লাহ! আমাকে এ মাসের বরকতের অধিকারী কর। এর কল্যাণ অজর্নের পথ আমার জন্য সহজ করে দাও। এ মাসের কল্যাণ লাভ থেকে আমাকে বঞ্চিত করো না। হে স্পষ্ট সত্যের দিকে পথনির্দেশকারী।
২০ তম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ افْتَحْ لي فيهِ اَبْوابَ الْجِنانِ، وَاَغْلِقْ عَنّي فيهِ اَبْوابَ النّيرانِ، وَوَفِّقْني فيهِ لِتِلاوَةِ الْقُرْآنِ، يا مُنْزِلَ السَّكينَةِ فى قُلُوبِ الْمُؤْمِنينَ.
হে আল্লাহ! এ দিনে আমার জন্যে বেহেশতের দরজাগুলো খুলে দাও এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দাও। আমাকে কোরআন তেলাওয়াতের তৌফিক দান কর। হে ঈমানদারদের অন্তরে প্রশান্তি দানকারী।
২১ তম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ اجْعَلْ لى فيهِ اِلى مَرْضاتِكَ دَليلاً، وَلا تَجْعَلْ لِلشَّيْطانِ فيهِ عَلَيَّ سَبيلاً، وَاجْعَلِ الْجَنَّةَ لى مَنْزِلاً وَمَقيلاً، يا قاضِيَ حَوائِجِ الطّالِبينَ.
হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে তোমার সন্তুষ্টির দিকে পরিচালিত কর। শয়তানদের আমার উপর আধিপত্য বিস্তার করতে দিওনা। জান্নাতকে আমার গন্তব্যে পরিণত কর। হে প্রার্থনাকারীদের অভাব মোচনকারী।
২২ তম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ افْتَحْ لى فيهِ اَبْوابَ فَضْلِكَ، وَاَنْزِلْ عَلَيَّ فيهِ بَرَكاتِكَ، وَوَفِّقْني فيهِ لِمُوجِباتِ مَرْضاتِكَ، وَاَسْكِنّي فيهِ بُحْبُوحاتِ جَنّاتِكَ، يا مُجيبَ دَعْوَةِ الْمُضْطَرّينَ .
হে আল্লাহ! আজ তোমার করুণা ও রহমতের দরজা আমার সামনে খুলে দাও এবং বরকত নাজিল কর। আমাকে তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের তৌফিক দাও। তোমার বেহেশতের বাগানের মাঝে আমাকে স্থান করে দাও। হে অসহায়দের দোয়া কবুলকারী।
২৩ তম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ اغْسِلْني فيهِ مِنَ الذُّنُوبِ، وَطَهِّرْني فيهِ مِنَ الْعُيُوبِ، وَامْتَحِنْ قَلْبي فيهِ بِتَقْوَى الْقُلُوبِ، يا مُقيلَ عَثَراتِ الْمُذْنِبينَ.
হে আল্লাহ! আমার সকল গুনাহ ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে দাও। আমাকে সব দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র কর। তাকওয়া ও খোদাভীতির মাধ্যমে আমার অন্তরকে সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কর। হে অপরাধীদের ভুল-ত্রুটি মার্জনাকারী।
২৪ তম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ اِنّي اَسْأَلُكَ فيهِ ما يُرْضيكَ، وَاَعُوذُبِكَ مِمّا يُؤْذيكَ، وَاَسْأَلُكَ التَّوْفيقَ فيهِ لاَنْ اُطيعَكَ وَلا اَعْصيْكَ، يا جَوادَ السّائِلينَ.
হে আল্লাহ! আজ তোমার কাছে ঐসব আবেদন করছি যার মধ্যে তোমার সন্তুষ্টি রয়েছে। যা কিছু তোমার কাছে অপছন্দনীয় তা থেকে তোমার আশ্রয় চাই। তোমারই আনুগত্য করার এবং তোমার নাফরমানী থেকে বিরত থাকার তৌফিক দাও। হে প্রার্থীদের প্রতি দানশীল।
২৫ তম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ اجْعَلْني فيهِ مُحِبَّاً لاَوْلِيائِكَ، وَمُعادِياً لاَعْدائِكَ، مُسْتَنّاً بِسُنَّةِ خاتَمِ اَنْبِيائِكَ، يا عاصِمَ قُلُوبِ النَّبِيّينَ .
হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে তোমার বন্ধুদের বন্ধু এবং তোমার শত্রুদের শত্রু করে দাও। তোমার আখেরী নবীর সুন্নত ও পথ অনুযায়ী চলার তৌফিক আমাকে দান কর। হে নবীদের অন্তরের পবিত্রতা রক্ষাকারী।
২৬ তম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ اجْعَلْ سَعْيي فيهِ مَشْكُوراً، وَذَنْبي فيهِ مَغْفُوراً وَعَمَلي فيهِ مَقْبُولاً، وَعَيْبي فيهِ مَسْتُوراً، يا اَسْمَعَ السّامِعينَ.
হে আল্লাহ! এ দিনে আমার প্রচেষ্টাকে গ্রহণ করে নাও। আমার সব গুনাহ মাফ করে দাও। আমার সব আমল কাজ কবুল করো এবং সব দোষ-ত্রু টি ঢেকে রাখ। হে সর্বশ্রেষ্ঠ শ্রোতা।
২৭ তম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ ارْزُقْني فيهِ فَضْلَ لَيْلَةِ الْقَدْرِ، وَصَيِّرْ اُمُوري فيهِ مِنَ الْعُسْرِ اِلَى الْيُسْرِ، وَاقْبَلْ مَعاذيري، وَحُطَّ عَنّيِ الذَّنْبَ وَالْوِزْرَ، يا رَؤوفاً بِعِبادِهِ الصّالِحينَ.
হে আল্লাহ! আজকের দিনে আমাকে শবেকদরের ফজিলত দান কর। আমার কাজ কর্মকে কঠিন থেকে সহজের দিকে নিয়ে যাও। আমার অক্ষমতা কবুল কর এবং ক্ষমা করে দাও আমার সব অপরাধ। হে যোগ্য বান্দাদের প্রতি মেহেরবান।
২৮ তম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ وَفِّرْ حَظّي فيهِ مِنَ النَّوافِلِ، وَاَكْرِمْني فيهِ بِاِحْضارِ الْمَسائِلِ، وَقَرِّبْ فيهِ وَسيلَتى اِلَيْكَ مِنْ بَيْنِ الْوَسائِلِ، يا مَنْ لا يَشْغَلُهُ اِلْحـاحُ الْمُلِحّينَ .
হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে নফল এবাদতের পর্যাপ্ত সুযোগ দাও। ধর্মীয় শিক্ষার মর্যাদায় আমাকে ভূষিত কর। তোমার নৈকট্য লাভের পথকে আমার জন্যে সহজ করে দাও। হে পবিত্র সত্ত্বা! যাকে, অনুরোধকারীদের কোন আবেদন নিবেদন, ন্যায়বিচার থেকে টলাতে পারে না।
২৯ তম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ غَشِّني فيهِ بِالرَّحْمَةِ، وَارْزُقْني فيهِ التَّوْفيقَ وَالْعِصْمَةَ، وَطَهِّرْ قَلْبي مِنْ غَياهِبِ التُّهْمَةِ، يا رَحيماً بِعِبادِهِ الْمُؤْمِنينَ.
হে আল্লাহ! আজ আমাকে তোমার রহমত দিয়ে ঢেকে দাও। গুনাহ থেকে মুক্তিসহ আমাকে সাফল্য দান কর। আমার অন্তরকে মুক্ত কর অভিযোগ ও সন্দেহের কালিমা থেকে। হে ঈমানদার বান্দাদের প্রতি দয়াবান।
৩০ তম রমযানের দোওয়া
اَللّـهُمَّ اجْعَلْ صِيامى فيهِ بِالشُّكْرِ وَالْقَبُولِ عَلى ما تَرْضاهُ وَيَرْضاهُ الرَّسُولُ، مُحْكَمَةً فُرُوعُهُ بِالاصُولِ، بِحَقِّ سَيِّدِنا مُحَمَّد وَآلِهِ الطّاهِرينَ، وَالْحَمْدُ للهِ رَبِّ الْعالَمينَ .
হে আল্লাহ! তুমি ও তোমার রসূল ঠিক যেমনভাবে খুশি হবে সেইভাবে আমার রোযাকে পুরস্কৃত কর এবং কবুল করে নাও। আমাদের নেতা হযরত মুহম্মাদ (সঃ) ও তাঁর পবিত্র বংশধরদের উসিলায় আমার সব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আমলকে মূল এবাদতের সাথে যোগ করে শক্তিশালী কর। আর সব প্রশংসা ও স্তুতি জগতসমূহের প্রতিপালক একমাত্র আল্লাহর।[35]
পবিত্র রমযান মাসের আমল
ঈদের নামাযের পদ্ধতি:
ঈদের নামায দুই রাকাত প্রথম রাকাতে সুরা হামদের পর সুরা ‘আলা’ আর দ্বিতীয় রাকাতে সুরা হামদের পর সুরা ‘শামস’ পড়তে হয়। প্রথম রাকাতে পাঁচবার কুনুত আর দিত্বীয় রাকাতে চারবার কুনুত পড়তে হয়।
দোওয়ায়ে কুনুত:
اَللّهُمَّ اَهْلَ الْکبْرِیاءِ وَ الْعَظِمَة وَ اَهْلَ الْجُودِ وَ الْجَبَرُوتِ وَ اَهْلَ الْعَفْوِ وَ الرَّحْمَةِ وَ اَهْلَ التَّقْوی وَالْمَغْفِرَةِ اَسْئَلُک بِحَقِّ هذَا الْیَوْمِ الَّذِی جَعَلْتَهُ لِلْمُسْلِمینَ عیداً وَ لِمحَمَّد صَلَّی اللّهُ عَلَیْهِ وَ آلِهِ ذُخْراً وَ شَرَفاً وَ کرامَةً وَ مَزیداً اَنْ تُصَلِّی عَلی مُحَمَّد وَ آلِ مُحَمَّد وَ اَنْ تُدْخِلَنِی فی کلِّ خَیْر اَدْخَلْتَفیهِ مُحَمَّداً وَ آلَ مُحَمَّد وَ اَنْ تُخْرِجَنی مِنْ کلِّ سُوء اَخْرَجْتَ مِنْهُ مُحَمَّداً وَ آلَ مُحَمَّد صَلَواتُک عَلَیْهِ وَ عَلَیْهِمْ اَللّهُمَّ اِنّی اَسْئَلُک خَیْرَ ما سَئَلَک بِهِ عِبادُک الصّالِحُونَ وَ اَعُوذُ بِک مِمّا اسْتَعاذَ مِنْهُ عِبادُک الْمـُخْلَصُونَ.
ঈদের নামাযের কিছু মুস্তাহাব আমল:
ঈদের নামাযের কিছু মুস্তাহাব আমল যা নিচে বর্ণনা করা হচ্ছে শুধু মাত্র সওয়াবের জন্য সেগুলোকে মেনে চলা দরকার।
১- ঈদের নামায উচ্চ কন্ঠস্বরে পাঠ করা।
২- নামাযের পর দুটো খুতবা পাঠ করা নামাযে জুমার মতো শুধু তফাৎ এই টুকু যে নামাযে জুমার আগে খুতবা পড়তে হয় আর নামাযে ঈদের পর খুতবা পড়তে হয়। (আর এই খুতবা ওই সময় হবে যখন নামায জামাআতের সঙ্গে আদায় করা হবে)।
৩- উক্ত নামাযে নির্দিষ্ট সূরার শর্ত নেই যে কোনো সূরা পাঠ করা যায়। কিন্তু প্রথম রাকাতে সূরা ‘আলা’ এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ‘শামস’ পাঠ করা উত্তম।
৪- ঈদলফিতরের দিন নামাযের পূর্বে খুরমা দ্বারা ইফতার করা।
৫- ঈদের নামাযের পূর্বে গোসল করা এবং নামাযের পূর্বে ও পরে ওই দোওয়া গুলো পাঠ করা যেগুলো বিভিন্ন দোওয়ার পুস্তকে বর্ণিত হয়েছে।
৬- ঈদের নামাযে যমিনের উপর সিজদা করা এবং তাকবির বলার সময় হাতকে উঁচু করা।
৭- ঈদুল ফিতরের রাতে মাগরিব ও ঈশার নামাযের পর এবং ঈদের দিন ফজর, যোহর, আসরের নামাযের পর এবং ঈদের নামাযের পর এই তাকবির বলা
اَللّهُ اَکبَرُ، اَللّهُ اَکبَرُ، لا إلهَ إلاّ اللّهُ وَ اَللّهُ اَکبَرُ، اللّهُ اَکبَرُ وَ لِلّهِ الْحَمْدُ، اَللّهُ اَکبَرُ عَلی ما هَدانا
প্রতিটি নামাযের পর পঠনীয় দোওয়া:
بسم الله الرحمن الرحیم
اَللّهُمَّ اَغْنِ كُلَّ فَقيرٍ اَللّهُمَّ اَشْبِعْ كُلَّ جايِعٍ اَللّهُمَّ اكْسُ كُلَّ عُرْيانٍ اَللّهُمَّ اَدْخِلْ عَلى اَهْلِ الْقُبُورِ السُّرُورَ اَللّهُمَّ اقْضِ دَيْنَ كُلِّ مَدينٍ اَللّهُمَّ فَرِّجْ عَنْ كُلِّ مَكْرُوبٍ اَللّهُمَّ رُدَّ كُلَّ غَريبٍ اَللّهُمَّ فُكَّ كُلَّ اَسيرٍ اَللّهُمَّ اَصْلِحْ كُلَّ فاسِدٍ مِنْ اُمُورِ الْمُسْلِمينَ اَللّهُمَّ اشْفِ كُلَّ مَريضٍ اَللّهُمَّ سُدَّ فَقْرَنا بِغِناكَ اَللّهُمَّ غَيِّرْ سُوءَ حالِنا بِحُسْنِ حالِكَ اَللّهُمَّ اقْضِ عَنَّا الدَّيْنَ وَاَغْنِنا مِنَ الْفَقْرِ اِنَّكَ عَلى كُلِّشَىءٍ قَديرٌ
بسم الله الرحمن الرحیم
یا عَلِیُّ یا عَظیمُ، یا غَفُورُ یا رَحیمُ، اَنْتَ الرَّبُّ الْعَظیمُ الَّذی لَیْسَ كَمِثْلِهِ شَیءٌ وَهُوَ السَّمیعُ الْبَصیرُ، وَهذا شَهْرٌ عَظَّمْتَهُ وَكَرَّمْتَهْ، وَشَرَّفْتَهُ وَفَضَّلْتَهُ عَلَى الشُّهُورِ، وَهُوَ الشَّهْرُ الَّذی فَرَضْتَ صِیامَهُ عَلَیَّ، وَهُوَ شَهْرُ رَمَضانَ، الَّذی اَنْزَلْتَ فیهِ الْقُرْآنَ، هُدىً لِلنّاسِ وَبَیِّناتٍ مِنَ الْهُدى وَالْفُرْقانَ، وَجَعَلْتَ فیهِ لَیْلَةَ الْقَدْرِ، وَجَعَلْتَها خَیْراً مِنْ اَلْفِ شَهْرٍ، فَیا ذَا الْمَنِّ وَلا یُمَنُّ عَلَیْكَ، مُنَّ عَلَیَّ بِفَكاكِ رَقَبَتی مِنَ النّارِ فیمَنْ تَمُنَّ عَلَیْهِ، وَاَدْخِلْنِی الْجَنَّةَ بِرَحْمَتِكَ یا اَرْحَمَ الرّاحِمینَ.Top of FormBottom of Form
শবে কদরের আমল:
রমযান মাসের ১৯, ২১, ২৩ এর রাতকে শবে কদর বলা হয় যে-রাতে আল্লাহ তায়ালা কোরআন অবতীর্ণ করেছেন আর এই মাসের ঐ রাত গুলোকে হাজার রাতের থেকে উত্তম বানিয়েছেন।
এই রাতে দুই ধরনের আমল আছে। ১– এই তিন রাতের জন্য একই আমল ২– প্রত্যেক রাতের জন্য আলাদা আলাদা আমল।
যৌথ আমল:
১– গোসল
২– দুই রাকাত নামাযে শবে কদর, প্রতি রাকাতে সূরা হামদের পর সাত বার সূরা তৌহিদ।
৩– নামাযের পর ৭০ বার استغفر الله و اتوب الیه
৪– যিয়ারতে ইমাম হোসায়েন (আ:)
৫– কোরআনী আমল, কোরআন সামনে খুলে রেখে এই দোওয়া পড়তে হবে।
بسم الله الرحمن الرحیم
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِكِتَابِكَ الْمُنْزَلِ وَ مَا فِيهِ وَ فِيهِ اسْمُكَ الْأَكْبَرُ وَ أَسْمَاؤُكَ الْحُسْنَى وَ مَا يُخَافُ وَ يُرْجَى أَنْ تَجْعَلَنِي مِنْ عُتَقَائِكَ مِنَ النَّارِ.
তাঁর পর কোরআন মাথার উপর রেখে এই দোওয়া পড়তে হবে।
اللَّهُمَّ بِحَقِّ هَذَا الْقُرْآنِ وَ بِحَقِّ مَنْ أَرْسَلْتَهُ بِهِ وَ بِحَقِّ كُلِّ مُؤْمِنٍ مَدَحْتَهُ فِيهِ وَ بِحَقِّكَ عَلَيْهِمْ فَلا أَحَدَ أَعْرَفُ بِحَقِّكَ مِنْكَ
তাঁর পর بِكَ يَا اللَّهُ দশবার بِمُحَمَّدٍ দশবার بِعَلِيٍّ দশবার بِفَاطِمَةَ দশবার بِالْحَسَنِ দশবার بِالْحُسَيْنِ দশবার بِعَلِيِّ بْنِ الْحُسَيْنِ দশবার بِمُحَمَّدِ بْنِ عَلِيٍّ দশবার بِجَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ দশবার بِمُوسَى بْنِ جَعْفَرٍ দশবার بِعَلِيِّ بْنِ مُوسَى দশবার بِمُحَمَّدِ بْنِ عَلِيٍّ দশবার بِعَلِيِّ بْنِ مُحَمَّدٍ দশবার بِالْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ দশবার بِالْحُجَّةِ দশবার, তাঁর পর নিজের প্রয়োজন আনুযায়ী দোওয়া করা।
শবে কদরের খাস আমল:
উনিশের রাতের আমল: ১– একশ বার استغفر الله و اتوب الیه পড়া ২– اللهم العن قتله امیر المومنین
তাছাড়া অন্য দোওয়াও আছে যা বিভিন্ন দোওয়ার বইয়ে আছে পড়তে পারেন।
একুশে রমযামের রাতের আমল:
১– রমযান মাসের শেষ দশ রাতের দোওয়া।
২– দোওয়া জৌশনে কাবির।
৩– হযরত আলী (আ:)’র মাসায়েব (শোক প্রকাশ করা) বর্ণনা করা।
তেইশে রমযানের রাতের আমল:
১– সূরা আনকাবুত ও সূরা রুম পড়া
২– সূরা দুখান পড়া
৩– এক হাজার বার সূরা ইন্না আনযালনা পড়া
৪– দোওয়া ফরয (আত্ম প্রকাশের জন্য দোওয়া করা) পড়া
৫– একশ রাকাত নামায আদায় করা, যার প্রতিটি রাকাতে সূরা ‘হামদের’ পর দশবার সূরা ‘তৌহিদ’ পড়তে হবে।
৬– এই দোওয়া পড়তে হবে:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَمْسَيْتُ لَكَ عَبْداً دَاخِراً لا أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعاً وَ لا ضَرّاً وَ لا أَصْرِفُ عَنْهَا سُوءاً أَشْهَدُ بِذَلِكَ عَلَى نَفْسِي وَ أَعْتَرِفُ لَكَ بِضَعْفِ قُوَّتِي وَ قِلَّةِ حِيلَتِي فَصَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ وَ أَنْجِزْ لِي مَا وَعَدْتَنِي وَ جَمِيعَ الْمُؤْمِنِينَ وَ الْمُؤْمِنَاتِ مِنَ الْمَغْفِرَةِ فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَ أَتْمِمْ عَلَيَّ مَا آتَيْتَنِي فَإِنِّي عَبْدُكَ الْمِسْكِينُ الْمُسْتَكِينُ الضَّعِيفُ الْفَقِيرُ الْمَهِينُ اللَّهُمَّ لا تَجْعَلْنِي نَاسِياً لِذِكْرِكَ فِيمَا أَوْلَيْتَنِي وَ لا [غَافِلا] لِإِحْسَانِكَ فِيمَا أَعْطَيْتَنِي وَ لا آيِساً مِنْ إِجَابَتِكَ وَ إِنْ أَبْطَأَتْ عَنِّي فِي سَرَّاءَ [كُنْتُ ] أَوْ ضَرَّاءَ أَوْ شِدَّةٍ أَوْ رَخَاءٍ أَوْ عَافِيَةٍ أَوْ بَلاءٍ أَوْ بُؤْسٍ أَوْ نَعْمَاءَ إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ
৬– দোওয়া জৌশনে কাবির
৭– দোওয়া মাকারিমে আখলাক
৮– দোওয়া তৌবা পড়া
৯– সারা রাত কোরআন দোওয়া ও নামায পড়া এবং সারা রাত জেগে থাকা।
ফলাফল:
পুর্বের আলোচনার ভিত্তিতে আমরা জানতে পারলাম যে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন শুধুমাত্র এবাদতের জন্য কিন্তু তা সত্ত্বেও মানুষ তাঁর ইবাদত না করে শয়তানের চক্রান্তে পড়ে গুনাহে লিপ্ত হয় কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাঁর পরেও মানুষকে গুনাহ থেকে বেরিয়ে আশার এবং নিজেকে পাক ও পবিত্র করার জন্য নানাবিধ উপায় দেখিয়েছেন, আর উক্ত উপায়সমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘রমযান মাস’। যে মাসে মানুষ আল্লাহর নির্দেশিত আমলসমূহ সম্পাদনের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি নিজেকে সব ধরনের মন্দকর্ম থেকে বিরত রাখতে পারে এবং শয়তানের ধোকা থেকেও নিজেকে নিরাপদ রাখতে সক্ষম হয়। আর এ উত্তম পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে মানুষ নিজেদেরকে আল্লাহর পছন্দনীয় উচ্চ স্থানে নিয়ে যেতে পারে; যে স্থানটাকে ‘তাকামুল’ বা পরিপূর্ণতা বলা হয়।
সুতরাং আমরা এখন এ ফলাফলে উপনীত হতে পারি- মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য সবসময় মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করেন, আর সেই কারণেই তিনি বছরের বারটি মাসের মধ্যে রমযান মাসকে অধিক গুরুত্ব এবং ফযিলতে পরিপূর্ণ করেছেন, যা অন্য কোনো মাস বা সময়ের সাথে তুলনাযোগ্য নয়। যাতে করে মানুষ এই মাসে আল্লাহর প্রদত্ত সুযোগসমূহের উত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের গুনাহসমূহ ক্ষমা করিয়ে নিতে পারে এবং অধিক এবাদতের মাধ্যমে বেশি বেশি সওয়াব ও নেকি অর্জন করতে পারে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমযান মাসের ফযিলত ও গুরুত্ব অনুধাবন করার তৌফিক দান করুন। -আমীন- *****
তথ্যসুত্র
১– কোরআন কারিম
২– নাহজুল বালাগা
৩– ওসায়েলুশ শিয়া
৪– বিহারুল আনওয়ার
৫– গারারূল হেকাম
৬– রওযাতুল মুত্তাকিন
৭– মওয়ায়েযুল আদাদিয়া
৮– মানলা ইয়াহযারুল ফাকিহ
৯– তাফসিরে আল মিযান
১০– ফুরুয়ে কাফী
১১– মুস্তাদরেকুল ওসায়েল
১২– মিযানুল হিকমা
১৩– শরহে নাহজুল বালাগা ইবনে আবিল হাদিদ
১৪– উসুলে কাফী
যোগাযোগ:
website: http://www.noor-academy.com
Email: [email protected]
whatsup : +989394193523
[1] (বিহারুল আনওয়ার খ: ৫৫ পৃ: ৩৪১)
[2] (কাফী খ:২ পৃ:৬২৮)
[3] (ওসায়েলুশ শিয়া খ:২ পৃ: ৬২৮)
[4] (সুরা বাকারা আয়াত ১৮৫)
[5] (সুরা বাকারা ১৮৫)
[6] (সুরা আল বাকারা ১৮৩)
[7] (সুরা আল বাকেরা ২০৩)
[8] (সুরা আল বাকেরা ১৮৪)
[9] (সুরা আল বাকারা ১৮৪)
[10] (সুরা আল বাকারা ১৮৭)
[11] (সুরা আল বাকারা ১৮৫)
[12] (সুরা আল বাকেরা ১৮৫)
[13] (মিযানুল হিকমা খ: ৭ পৃ: ৩২০৭)
[14] (মিযানুল হিকমা খ: ৭ পৃ: ৩২০৭)
[15] (মিযানুল হিকমা খ: ৭ পৃ: ৩২০৭)
[16] (মুস্তাদরেকুল ওসায়েল খ: ৭ পৃ: ১৫৪)
[17] (মিযানুল হিকমা খ: ৭ পৃ: ৩২০৭)
[18] (সুরা আল কদর ১-৫)
[19] (তাফসিরে আল মিযান খ: ১৮ পৃ: ১৩২ , খ: ১৯ পৃ: ৯০)
[20] (ওসায়েলুশ শিয়া খ: ৬ পৃ: ২০৩)
[21] (ফুরুয়ে কাফী খ:৪ পৃ:৬২ হাদিস ১)
[22] (বিহারুল আনওয়ার খ:৭৬প:২৫৭)
[23] (বিহারুল আনওয়ার খ:৯৬প:২৫৩)
[24] (বিহারুল আনওয়ার খ:৯৬প:৩৬৮ ও এলালুশ শারায়ে খ:১প:২৪৬ )
[25] (মানলা ইয়াহযারুল ফাকিহ খ:১ পৃ:৪৩ হাদিস ১)
[26] (নাহজুল বালাগা হিকমাত ২৫২)
[27] (বিহারুল আনওয়ার খ:৯৬প:২৪৬, ওসুলে কাফী খ:৪ পৃ:৬২ হাদিস ৩)
[28] (শরহে নেহজুল বালাগা ইবনে আবিল হাদিদ খ:২০প:২৯৬)
[29] (রওযাতুল মুত্তাকিন খ:৩প:২২৮)
[30] (মওয়ায়েযুল আদাদিয়া প:৭৬)
[31] (গারারুল হেকাম খ:১প:৪১৭)
[32] (বিহারুল আনওয়ার খ:৯৬প:২৯৪)
[33] (ওসায়েলুশ শিয়া খ:৪ পৃ:৪ হাদিস ৫, এলালুশ শারায়ে পৃ:১০)
[34] (ওয়াসায়েল খ:১০প:৩০৩)
[35] ( ‘আলবালাদুল আমিন’ ও ‘মিসবাহুল কাফআমি’)