বি ইসমেহি তায়ালা
(১) মাহফিল ও মিলাদ (برگزاری جشن ها)
(২) ক্রন্দন ও শোকের মজলিস পালন করা
(گریه و اقامه مجالس عزا)
تالیف و ترجمه : مجید الاسلام شاه
সংকলন ও অনুবাদ
মজিদুল ইসলাম শাহ
সূচিপত্র
উল্লেখিত হাদীসের উপর আপত্তি বা প্রতিবাদ: 5
ক্রন্দন ও শোকের মজলিস পালন করা.. 8
ক্রন্দন ও শোকের মজলিস পালন করার ইতিহাস: 9
হযরত মুহম্মাদ (স:)এর অনুসরনীয় নীতি: 10
সাহাবীগণ আর তাবেইণগণের নীতি: 11
রাস্তায় বা গলিতে ইমামের জন্য শোক মিছিল বাহির করা: 11
ইমাম হোসায়েন (আ:)এর শোক পালন: 13
মাহফিল ও মিলাদ
জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে মাহফিল (জন্মোৎসব) বা মিলাদের আয়োজন করা হল একটি শরয়ী এবং ‘মোবাহ’ (বৈধ) কাজ, যেটি মুসলমানদের মধ্যে পূর্ব যুগ থেকে প্রচলন এবং বর্তমান পর্যন্ত সেটিকে পালন করা হয়। কিন্তু ওহাবীদের বিশ্বাস অনুযায়ী হযরত মুহম্মাদ (স:)এর জন্য মিলাদ বা কুরআন পাঠ করা, কবিতা পাঠ করা, এবং তাবার্রুক বিতরণ করা, এই সমস্ত জিনিস পালন করা ঠিক নয়। এসম্পর্কে ইবনে তাইমিয়া বলেন: ঈদের সময় মাহফিল বা মিলাদ করা বিদআত এবং এর কোনো ভিত্তি নেই। অতিতে পূর্বপূরুষরা কেউ এই ভাবে এক সাথে ঈদ হিসেবে খুশি পালন করেনি আর এই দিনে কোনো বিশেষ আমল ও করেনি। এগুলো খ্রিষ্টানদের চিহ্ণ যা তারা হযরত ঈসার(আ:) জন্ম দিন উপলক্ষে খুশি মানায় বা এগুলো খ্রিষ্টানদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে।
ঠিক এই ভাবে মিলাদুন নবীও খ্রিষ্টানদের আমলের অনুরুপ বা হযরত মুহম্মাদ (স:)এর সম্মানের কারণ। যদি এই আমলে কোনো নেকি বা শরয়ী অনুযায়ী কোনো সাক্ষী প্রমাণ থাকতো তাহলে পূর্বপূরুষরাও এই আমলকে আরও ভালো ভাবে পালন করতো। [1]
মুহম্মাদ হামিদুল ফকীহ এসম্পর্কে নিজের মতামত দিয়ে বলেন: ওলিগণের মৃত্যুকে স্বরণ করে কোন অনুষ্ঠান পালন করা বা তাদের জন্মদিন উপলক্ষে খুশি পালন করা, এটি তাদের এক ধরনের ইবাদত বা সম্মান করাকে বোঝায়। [2]
ওহাবীগণ এই অবৈধ চিন্তাধারার জন্য কিছু রেওয়ায়েতের সাহায্য নিয়ে থাকে:
প্রথম হাদীস: আবু হুরাইরা বলেন: হযরত মুহম্মাদ (স:) থেকে বর্ণিত:
(لا تجعلوا بيوتكم قبورا و لا تجعلوا قبري عيدا و صلوا علي فان صلاتكم تبلغني حيث كنتم)
“নিজেদের ঘরকে কবর বানিয় না আর আমার কবরকে ঈদ (খুশির স্থান) বানিয় না, বরং আমার জন্য দরুদ পাঠ কর কারণ আমি যেখানেই থাকি তোমারদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছায়”। [3]
দ্বিতীয় হাদীস: হযরত মুহম্মাদ (স:) থেকে বর্ণিত: হযরত মুহম্মাদ (স:) বলেন: কবরকে ঈদ (খুশির স্থান) বানিও না।
উক্ত হাদীস সম্পর্কে আপত্তি:
মনে রাখবেন এই মতামতের উপর কয়েকটি আপত্তি রয়েছে:
১- মিলাদুন নবী পালন করা আর তাঁর ইবাদত করা দুটোর মধ্যে অনেক তফাত আছে কারণ ইবাদতে তিনটি মূল জিনিসের একটি হওয়া দরকার। ক)- যার ইবাদত করা হচ্ছে (معبود) তাঁর (الوهيت) উপাষ্য হওয়াতে বিশ্বাস রাখা। খ)- যার ইবাদত করা হচ্ছে তাঁর (رب) প্রতিপালক হওয়ার বিশ্বাস রাখা। গ)- এবিশ্বাস রাখা যে (رب) প্রতিপালকের সমস্ত কাজ মাবুদের (معبود) কাছে রয়েছে।
যদি নিরপেক্ষ ভাবে দেখা যায় তাহলে বোঝা যাবে যে, যারা মিলাদ বা মাহফিল করে তাদের মধ্যে এই ধরনের বিশ্বাস থাকে না বরং তারা এই আমলের দ্বারা হযরত মুহম্মাদ (স:)এর ভালোবাসাকে প্রকাশ করে আর এই ভালোবাসা প্রকাশ করার আদেশ কোরআনে আছে যেমন:
قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَآؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُواْ حَتَّى يَأْتِيَ اللّهُ بِأَمْرِهِ وَاللّهُ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ
(হে রসূল!) তুমি বল, তোমাদের পিতৃপুরম্নষ, সন্ত্মান-সন্ত্মতি, ভাইরা, স্ত্রীরা, আত্মীয়-স্বজন, তোমদের অর্জিত ধন-সম্পদ এবং সেই ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা হওয়ার আশংকা করছ এবং সেই বাসস্থান যা তোমরা পছন্দ কর, (এ সমস্ত্মই) যদি তোমাদের নিকট আল্লাহ ও তাঁর রসূল এবং তাঁর পথে জিহাদ করা অপেক্ষা অধিকতর প্রিয় হয়, তবে তোমরা অপেক্ষা কর যতক্ষণ না আল্লাহ তার আদেশ (শাস্ত্মি) প্রেরণ করছেন; এবং আল্লাহ অবাধ্য পম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না । [4]
ঠিক এই ভাবে হযরত মুহম্মাদ (স:) ও হুকুম দিয়েছেন: তিনি বলেন:
(لا يومن احدكم حتي اكون انا و اهل بيتي احب اليه من نفسه)
“তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি ওই সময় পর্যন্ত ঈমান্দার হতে পারবে না যতক্ষন সে নিজের থেকে বেশি আমাকে ও আমার আহলে বাইতকে ভালো না বাসবে”। [5]
২- স্বয়ং ইবনে তাইমিয়ার কথা অনুযায়ী প্রতিটি জিনিসের মূল হল তার ‘মোবাহ’ হওয়া। [6]
এই কারণে ওই হাদীস যার দ্বারায় ওহাবীরা প্রমাণিত করে থাকে সনদ এবং সংকেত সম্পর্কে বিকৃত আর এছাড়া জন্ম দিবস উপলক্ষে মিলাদ বা মাহফিল করা সম্পর্কে নিষেধ করা হয়েছে।
৩- যদি মেনেও নেওয়া যায় যে, মিলাদ করা সম্পর্কে কোনো রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়নি তবুও তার জায়েয হওয়া সম্পর্কে সুনিশ্চিত দলিল আছে এবং সেটাও কুরআন থেকে হযরত মুহম্মাদ (স:) এবং তাঁর আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা, যেটাকে কুরআন ও সুন্নত সেই মিলাদ ও মাহফিলের ভিত্তি হিসেবে বর্ণনা করেছে। আর এই মিলাদের জন্য এক স্থান উপস্থিত হওয়া সেই ভালবাসকে স্পষ্ট করে।
৪- ইবনে তাইমিয়া প্রতিটি জিনিসের হালাল ও হারামের মানদণ্ড পূর্বপুরুষদেরকেই বানায়। সত্যিকারেই কি কুরআন ও সুন্নত মানদণ্ড না পূর্বপুরুষের আমল? তাছাড়া আমরা জানি যে, স্বয়ং পূর্বপুরুষগণও বিভিন্ন যুগে মাহফিল ও মিলাদ করেছেন।
আলেমগণের কথার নমুনা:
৫- আহলে সুন্নত আলেমগণের কথা মাহফিল ও মিলাদ পালন করা সম্পর্কে মুসলমানদের প্রচলিত ও তার দুই ধরনের উদাহরণের দিকে ইশারা করছি:
ক)- কাসতালানী (মৃত্যু ৯২৩ হিজরী সনে) বলেন: মুসলিমগণ প্রতি বছর হযরত মুহম্মাদ (স:)এর জন্মবার্সিকী উপলক্ষে মিলাদ বা মাহফিল করতেন এবং খাদ্য বিতরন করতেন।
আল্লাহর রহমত বর্ষীত হোক তাদের উপর যারা আল্লাহর নবীর জন্মদিনে মিলাদ বা মাহফিল করেন। [7]
খ)- মক্কা শরিফের কাযী ‘হুসায়েন ইবনে মুহম্মাদ’ দিয়ার বাকারী নামে বিখ্যাত (মৃত্যু ৯৬৬ হিজরী সনে) নিজের ইতিহাসে লেখেন: মুসলিমগণ সব সময় আল্লাহর নবীর জন্মদিবস উপলক্ষে মিলাদ ও মাহফিল করতেন, কবিতা পাঠ করতেন, সাদকা দিতেন, মানুষজনকে খাবার খাওয়াতেন আর খুশি মানাতেন এছাড়া দারিদ্রদের সাহায্য করতেন আর প্রতিটি যুগে হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কেরামতপ্রকাশ হত। [8]
এই সমস্ত প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারলাম যে, প্রতিটি যুগে মুসলমানদের এই আমলের উপর ইজমা ছিল।
ইবনে এবাদ বলেন: আমার জন্য এটি স্পষ্ট যে, মুসলমানদের ঈদের মধ্যে একটি ঈদ হল আল্লাহর নবীর জন্মদিন। আর যেকোনো আমল মিলাদের ভিত্তিতে পালন করা হচ্ছে একটি ‘মুবাহ’ কাজ। [9]
৬৩০ হিজরী সনে আবু সাঈদ আরবিলি এই ধরনের মিলাদ ও মাহফিলকে স্থায়ী ও জীবিত রাখার জন্যে সব থেকে বেশি উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
কিছু সংখ্যক মানুষ বলেন: সর্ব প্রথম মিশরের ফাতেমীয়া খলিফা (আল মজিয লেদিনিল্লা) ৩৬১ হিজরী সনে শাওয়াল মাসে ‘কাহেরা’ শহরে মিলাদের আয়োজন করেছিলেন। [10]
সামান্য চিন্তা করলে বোঝা যাবে যে, স্বয়ং কুরআন হযরত মুহম্মাদ (স:)এর সম্মান করার হুকুম দিয়েছেন: فَالَّذِينَ آمَنُواْ بِهِ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَاتَّبَعُواْ النُّورَ الَّذِيَ أُنزِلَ مَعَهُ أُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
“অতএব যারা তাতে বিশ্বাস করে ও তাতে মান্য করে ও তাতে সাহায্য করে আর অনুসরণ করে সেই আলো যা তাঁর সঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে এরা নিজেরাই হচ্ছে সফলকাম”।
এই কারণে মিলাদ বা মাহফিল পালন করা হল একটি কোরআনী আদেশ এবং হযরত মুহম্মাদ (স:)এর সম্মানের সত্যতাকে প্রমাণ করে।
উল্লেখিত হাদীসের উপর আপত্তি বা প্রতিবাদ:
আমরা পূর্বে বর্ণনা করেছি যে, ওহাবীরা মিলাদ বা মাহফিল পালন করা থেকে বারণ করার উপর দুটো হাদীস থেকে প্রমাণ করে থাকে যার প্রথম হাদীস গবেষণার পর বাতিল করা হয়েছে আর দ্বিতীয় হাদীস সম্পর্কে এখানে পর্যালোচনা করছি। ওহাবীদের উক্তি হল হযরত মুহম্মাদ (স:) থেকে বর্ণিত: (لاتجعلوا قبري عيدا) আমার কবরকে ঈদ (খুশি) পালনের স্থানে পরিনত করো না।
এই হাদীসে বিভিন্ন দিক থেকে প্রতিবন্ধকতা পাওয়া যায়।
১- আহমাদ ইবনে হাম্বাল এই হাদীসকে আর এক ভাবে বর্ণনা করেছেন যে, সোহেল ইবনে আবু সালেহ বলেন: হযরত মুহম্মাদ (স:) থেকে বর্ণিত হয়েছে: (اللهم لا تجعل قبري وثنا) হে আল্লাহ ! আমার কবরকে মূর্তি বানাবেন না। [11]
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল সাহাবীগণ এই হাদীসের সনদে আপত্তি জানিয়েছেন। [12]
২- এই হাদীস অর্থ হিসেবে সঠিক নয় কারণ ঈদের সম্পর্ক হচ্ছে বিশেষ একটি সময় থেকে।
তাছাড়া কবর হচ্ছে একটি বিশেষ স্থানের নাম। আর ঈদ হলো বিশেষ সময় বা অনুষ্ঠানের নাম যেমন: জুমার দিন এবং ‘ফিতর’ এর দিন ঈদের দিন। এই কারণে এই শব্দ (আমার কবরকে ঈদ বানিয় না) তাঁর দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়।
৩- এই হাদীসের সনদ দুর্বল। কারণ যে হাদীসে ‘ঈদান’ শব্দ ব্যবহার হয়েছে তার রাবী হচ্ছে আব্দুল্লাহ ইবনে নাফে। বুখারী তার সম্পর্কে বলেন: আব্দুল্লাহ ইবনে নাফের মুখস্ত হাদীসগুলো যা সে বর্ণনা করে তার মধ্যে কিছু হাদীস বিখ্যাত আবার কিছু হাদীস অজ্ঞাত। [13]
আহমাদ ইবনে হাম্বাল নাফের সম্পর্কে বলেন: সে একজন দুর্বল ব্যক্তি ছিল। [14]
দ্বিতীয় হাদীস যেখানে ‘উসনা’ এর কথা বলা হয়েছে তার রাবী হচ্ছে সোহেল ইবনে আবু সালেহ।
তার সম্পর্কে আবু হাতেম বলেন: সহেলের বর্ণিত হাদীস লিখতে কোনো অসবিধা নেই তবে তা থেকে কোনো জিনিস প্রমাণ করা যাবে না।
অন্য দিকে আহলে সুন্নতের আলেমগণ এই হাদীসকে বর্ণনা করেছেন, মানযারী বলেন: এই হাদীস মানুষকে খুব বেশি হযরত মুহম্মাদ (স:)এর যিয়ারতের দিকে উৎসাহ করে, এবং এও বলেন: যেন এমন না হয় যে, বছরে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে যিয়ারত করা হোক, যেমন বছরে দুই ঈদ আসে আর তাতে মানুষ মিলাদ ও মাহফিল করে। [15]
সাবকী এই হাদীসের সম্পর্কে বলেন: এই হাদীসে এই সম্ভবনা পাওয়া যায় যে, হযরত মুহম্মাদ (স:) বলেছেন: আমার যিয়ারতের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় বা কাল বাছাই করো না, যেমন কিছু সমাধীস্থলে ঈদের নির্দিষ্ট সময়ে যিয়ারত করা হয়। [16]
ক্রন্দন ও শোকের মজলিস পালন করা
ক্রন্দন ও শোকের মজলিস পালন করার ইতিহাস:
ইতিহাস ও রেওয়ায়েত এটাই বলে যে, হযরত মুহম্মাদ (স:), সাহাবা, ও তাবেয়ীগণ মৃত বা শহিদগণের প্রতি ক্রন্দন করতেন আর অন্যদেরকে ও একাজের জন্য উৎসাহিত করতেন। যেমন হযরত আয়েশা (র:)হযরত মুহম্মাদ (স:)এর মৃত্যুর পর শোকাহত হয়ে নিজের মুখে হাত চাপড়াতেন।
এছাড়া ইতিহাসে পাওয়া যে যখনি কোনো মহান ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করতেন তখন তাঁর বিচ্ছেদে শোক মজলিস অনুস্ঠিত করা হতো। তার কিছু নমুনা তুলে ধরছি:
উসামা বিন যায়েদ বলেন: হযরত মুহম্মাদ (স:) নিজের নাতির মৃত্যুর খবর পেয়ে কিছু সাহাবীকে সাথে নিয়ে মেয়ের বাড়ি এলেন। মৃতদেহকে হাতে তুললেন তখন চোখ থেকে অশ্রু বাহির হচ্ছিল আর মুখ থেকে কিছু বলছিলেন। [17]
ওহোদ যুদ্ধের পর হযরত মুহম্মাদ (স:) আনসার গোত্রের নারীদের উদ্দেশ্যে বললেন: (যারা নিজেদের স্বামির জন্যে ক্রন্দন করছিলেন) (ولكن حمزه لا بواكي له) কিন্তু হামযার উপর ক্রন্দন করার কেউ নেই।
রাবী বলেন: হযরত মুহম্মাদ (স:) কিছু সময় বিশ্রাম নিলেন আর যখন উঠলেন তখন দেখলেন নারীরা আগে হযরত হামযার জন্য ক্রন্দন করছেন। এসম্পর্কে ইবনে আব্দুল বর বলেন: এই পরিবেশ এখনো আছে যে, মানুষ কোনো মৃত ব্যক্তির উপর ক্রন্দন করার আগে হযরত হামযার উপর ক্রন্দন করে। [18]
হাকিম নিশাবুরী এসম্পর্কে এই ভাবে বলেন: একদিন হযরত মুহম্মাদ (স:) মৃত ব্যক্তির লাশকে গোরস্তানে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাইরে এলেন হযরত ওমরও সাথে ছিলেন। সেই নারীরা কান্নাকাটি শুরু করে তখন হযরত ওমর তাদেরকে তা থেকে বারণ করলেন ও তর্জন করলেন। হযরত মুহম্মাদ (স:) বললেন: (ياعمر دعهن فان العين دامعه و النفس مصابه و العهد قريب) হে ওমর! এদেরকে ছেড়ে দাও। নিশ্চয় চক্ষু ক্রন্দন অবস্থায়, অন্তর দুর্যোগপ্রাপ্ত, এবং সময় ও বেশি পার হয় নি। [19]
এই রেওয়ায়েতগুলো থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এই আমলগুলো হযরত মুহম্মাদ (স:)এর সুন্নত, কখনো হারাম ছিল না। তবে হযরত ওমর সেই সুন্নতের খেয়াল না করে নারীদেরকে তাদের আত্মীয়স্বজনদের জন্য ক্রন্দন করার ফলে তর্জন করেছিলেন।
হযরত মুহম্মাদ (স:)এর অনুসরনীয় নীতি:
ইতিহাস ও নীতি আমাদেরকে একথা বলে যে হযরত মুহম্মাদ (স:) নিজের পুত্র ইব্রাহিম, দাদা আন্দুল মুত্তালিব, চাচা আবু তালিব ও হামযা, মা হযরত আমেনা বিনতে ওহাব, হযরত আলী’র মা হযরত ফাতেমা বিনতে আসাদ, উসমান ইবনে মাযউন, এই সমস্ত মানুষের জন্য ক্রন্দন করেছেন।
হযরত ইব্রাহিমের জন্য ক্রন্দন করার সময় জিজ্ঞাসা করা হল আপনি কি কারণে ক্রন্দন করছেন? হযরত মুহম্মাদ (স:) বললেন: (تدمع العينان و يحزن القلب و لا نقول ما يسخط الرب) নিশ্চয় চক্ষু ক্রন্দন অবস্থায়, অন্তর দুর্যোগপ্রাপ্ত, আর আমি এমন কথা বলি না যার কারণে রব আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন উসমান ইবনে মাযউন মৃত্যুবরণ করলেন তখন হযরত মুহম্মাদ (স:) তার মৃত লাশকে চুম্বন করে ক্রন্দন করলেন। [20]
সাহাবীগণ আর তাবেইণগণের নীতি:
সাহাবীগণ আর তাবেয়ীগণের নীতিও এরূপ ছিল যে, তাঁরা তাঁদের আত্মীয়-স্বজনদের মৃত্যুতে ক্রন্দন করতেন। একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন হযরত আলী (আ:)এর কাছে মালিকে আশ্তরের মৃত্যুর খবর এল তখন তিনি কথোপকথোনের মাঝে বললেন:
(علي مثله فلتبك البواكي) ক্রন্দন করা ব্যক্তির জন্য সুযোগ্য এটাই যে সে তারই মতো মানুষের জন্য ক্রন্দন করবে। [21]
এবাদ বলেন: হযরত আয়েশা (রা:) বলতেন: হযরত মুহম্মাদ (স:)এর মৃত্যুর সময় তাঁর মাথা বালিসের উপরে রাখলাম আর অন্য নারীদের সাথে বুকে ও মুখে হাত চাপড়ালাম। [22]
উসমান বলেন: যখন আমি ওমরের নিকট নোমান ইবনে মাকরামের মৃত্যুর খবর দিলাম তখন ওমর নিজের মাথার উপর হাত রেখে ক্রন্দন করলেন। [23]
মুহম্মাদ ইবনে ইয়াহিয়াহ যোহায়লী নিশাবুরী যখন আহমাদ ইনবে হাম্বালের মৃত্যুর খবর শুনলেন তখন বললেন: সমস্ত বাগদাদবাসীদর নিজ নিজ বাড়িতে নোহা পাঠ ও মজলিস করা দরকার।
রাস্তায় বা গলিতে ইমামের জন্য শোক মিছিল বাহির করা:
রাস্তায় বা গলিতে শোক মিছিল বের করা এমন একটি বিষয় যা পূর্বে মুসলমানদের মধ্যে প্রচলন ছিল। নাসফী বলেন: আমি আহলে সুন্নত ওয়া জামাতের একজন মহান হাফেজ আবু আলী আন্দুল মুমেন ইবনে খালাফ (মৃত্যু ৩৪৬ হিজরী সনে) এর জানাযায় শরিক ছিলাম হঠাৎ চারশ ঢোলের আওয়ায শুনতে পেলাম। [24]
যাহাবী বলেন: জবিনি (মৃত্যু ২৫ রাবিউস সানি ৪৭৮ হিজরী সনে) মানুষ তাঁর মেম্বারকে ভেঙ্গে তাবার্রুক হিসেবে নিয়ে গেলেন, এবং তাঁর মৃত্যুর শোকে দোকান বন্ধ করে মারসিয়া পাঠ করলেন। তাঁর চার শ শিষ্য ছিল যারা তাঁর মৃত্যুর শোকে কলম ও দাওয়াত ভেঙ্গে ফেলে এবং তাঁর জন্য শোক পালন করে। এবং তারা একবছরের জন্য নিজেদের মাথা থেকে ‘আমামা’ খুলে রাখে এবং মাথা ঢাকার মতো কারও ক্ষমতা ছিল না। এবং শিষ্যরা শহরে ঘুরে ঘুরে শোক পালনে মগ্ন ছিল। [25]
তার পর ইবনে তাইমিয়ার চিন্তাধারার অনুসারি যাহাবী বলেন: এই ধরনের আমল আজামিদের রসম ও নিয়ম ছিল আর নবীর সুন্নত আমলকারি আলেমগণ এই ধরনের কাজ করতেন না।
কিন্তু দ্বিতীয় স্থানে ৩৫১ হিজরী সনে মাযুদ দওলার শাসন কালে বাগদাদে ইমাম হোসায়েন (আ:)এর শোক পালনের জন্য বাজার বন্ধ হওয়া বা মাতমে বুক চাপড়ানো সম্পর্কে নিজের হিংসার কারণে বলেন: হে আল্লাহ ! আমাদের বিবেক বুদ্ধিকে মুজবুত কর। [26]
এটা স্পষ্ট যে, যাহাবীর একথা অসহিষ্ণুতা ছাড়া অন্য কিছু হতে পারেনা। এই কারণে আহলে সুন্নতের আলেমগণ যাহাবীর কথার উত্তর দিয়েছেন। যেমন: সাবকী বলেন: ইমাম নিজেই কোনো দিন এই ধরনের কাজ করেন নি আর না কাউকে এই কাজের জন্য ওসিয়ত করেছেন যে, আমার মৃত্যুর পর এই ভাবে করবে, এছাড়া জয়াইনি এমন এক মহান ব্যক্তি ছিলেন যে তার মৃত্যুর শোক তার শিষ্যরা সহ্য করতে পারেনি, একথা গ্রহণযোগ্য নয়। [27]
কিন্তু চিন্তার বিষয় হল যে, যখন জয়াইনীর কথা উঠলো তখন সাবকী কিভাবে যাহাবীর নিন্দা করলো, কিন্তু যখন ইমাম হোসায়েন (আ:)এর কথা আসলো তখন সাবকী বা অন্য আলেমগণ কোথায় ছিল তারা তখন কিছু বললেন না কেন?
খালিদ রাবয়ী ‘ওমর ইবনে আব্দুল আযিযের’ শোক পালন সম্পর্কে বলেন: তৌরাত গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, ওমর ইবনে আব্দুল আযিযের মৃত্যুর শোকে চল্লিশ দিন ধরে জমিন ও আসমানে ক্রন্দন করা হবে। [28]
ইমাম হোসায়েন (আ:)এর শোক পালন:
ইবনে কাসির ‘আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া’ নামক পুস্তকে লেখেন: মালাক নাসিরের (হালাব শহরের হাকিম) যুগে আশুরার দিন কারবালার শোক বর্ণিত করার জন্য একটি দরখাস্ত দেওয়া হল।
সিবতে ইবনে জওযি মেম্বারে এসে কিছুক্ষন নীরব থাকার পর মাথা থেকে পাগড়ি খুলে খুব ক্রন্দন করলেন আর এই কবিতা পাঠ করলেন:
ويل لمن الشفعاء خصمائه والصور في نشر الخلائق ينفخ
لابد ان ترد القيامة فاطم و قميصها بدم الحسين ملطخ
অর্থ: আপসোস সেই ব্যক্তির উপর যখন সুর বাজানো হবে তখন তার শাফাআতকারী তারই শত্রু হবে। এবং ফাতেমা যাহরা নিজের ছেলের রক্তে ভরা কাপড় নিয়ে মাহশারের ময়দানে আসবেন।
এই কথা বলে মেম্বার থেকে নেমে সোজা নিজের বাড়ির দিকে চলেগেলেন। [29]
স্পষ্ট রেওয়ায়েত আর ঐতিহাসিক প্রমাণের ভিত্তিতে মজলিস, মাতম, শোক পালন, নোহা পাঠ, ক্রন্দন, নিজের আত্মীয় স্বজনদের জন্য দুঃখিত থাকা, মুখে বা বুকে হাত চাপড়ানো, বাজার বন্ধ রাখা এবং এছাড়া অনান্য চিহ্ন মুসলমানদের ইতিহাসে প্রচলন ছিল।
মৃতদের জন্য ক্রন্দন করা:
যারা মৃতদের জন্য ক্রন্দন করাকে হারাম বলে তারা এই হুকুমের বিষয় কয়েক ভাবে প্রমাণ দেয়।
১- ওই সক্রান্ত হাদীস যেগুলো হযরত ওমর, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর বা অন্যদের কাছ থেকে বর্ণিত হয়েছে তার অর্থ হল ‘আত্মীয় স্বজনদের উপর ক্রন্দনের কারণে মৃত ব্যক্তিরদের উপর আযাব নাযিল হয়। [30]
কিন্তু কিছু রেওয়ায়েত থেকে বোঝা যায় যে, রাবী বর্ণনা করার সময় ভুল করেছে বা পুরোপরি মূল হাদীসকেই ভুলে গেছে।
ইবনে আব্বাস বলেন: ওমরের ওফাতের পর যখন এই হাদীস হযরত আয়েশা (রা:)এর কাছে পেশ করা হল তখন হযরত আয়েশা (রা:) বললেন: আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক আল্লাহর শপথ। আল্লাহর রসূল এই ধরনের কোনো কথা বলেন নি। বরং এই কথা বলেছিলেন:
(ان الله ليزيد الكافر عذابا ببكاء اهله) নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কাফিরদের উপর তাদের আত্মীয় স্বজনদের ক্রন্দনের কারণেই আযাবকে বাড়িয়ে দেয়।
তার পর হযরত আয়েশা (র:) বলেন: (ولا تزر وازرة وزر اخري) এবং কোনো ব্যক্তি অন্য কারো গুনাহর বোঝা নিজের উপর নেবে না। (সুরা ফাতির ১৮) আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর সেখানে উপস্থিত ছিলেন কিন্তু হযরত আয়েশার(র:) কথার উত্তরে কিছু বললেন না। [31]
আরও একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরের এই রেওয়ায়েত হযরত আয়েশা (র:)এর কাছে উপস্থাপন করা হল তখন আয়েশা (র:) বললেন: আল্লাহ তায়ালা আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরকে মাফ করুন, সে মিথ্যা বলেনি বরং হয়তো সে ভুলে গেছে বা বর্ণনায় ভুল হয়েছে।
এক সময় হযরত মুহম্মাদ (স:) একটি ইহুদী নারীর কবরের কাছ থেকে যাচ্ছিলেন সেখানে তার আত্মীয় স্বজনদের ক্রন্দন করতে দেখে বললেন: (انهم ليبكون عليها و انها لتعذب في قبرها) অর্থ: ওরা ওদের আত্মীয়দের জন্য ক্রন্দন করছে অথচ সেদিকে তার কবরে আযাব হচ্ছে।
রেওয়ায়েতের ব্যাখ্যা:
আহলে সুন্নত আলেমগণ ওই রেওয়ায়েতের ব্যাখ্যা করে বলেন: ওই হাদীসগুলোর অর্থ হল তারা ক্রন্দনের সাথে এমন দৃশ্য বা এমন বৈশিষ্ট্য মানুষের সামনে প্রকাশ বা বর্ণিত করতো যা শরীয়তি দিক থেকে হারাম। যেমন: তারা বলতো: হে ঘর ধ্বংসকারী! হে নারীদের বিধবাকারী! ইত্যাদি
ইবনে জরাই, কাজি আইয়ায এবং অন্যরা এই রেওয়ায়েতের ব্যাখ্যা করে বলেন: আত্মীয় স্বজনদের ক্রন্দন শুনে মৃত ব্যক্তি মনে কষ্ট ও দুঃখ্য পায়।
এছাড়া অন্য একটি ব্যাখ্যা হযরত আয়েশা (র:) থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন: যখন আত্মীয় স্বজনেরা ক্রন্দন করে তখন কাফির বা অন্য ব্যক্তির উপর তার গুনাহর কারণে আযাব হয় আত্মীয় স্বজনদের ক্রন্দনের কারণে নয়। [32]
আল্লামা মাজলিসি (র:)এসম্পর্কে বলেন: উক্ত হাদীসে (باء) শব্দের অর্থ হল (مع) অর্থাৎ যখন মৃত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজন তার জন্য ক্রন্দন করে তখন সে তার নিজের আমলের কারণে আযাবের সম্মুখীন হয়। [33]
২- মৃতদের জন্য ক্রন্দন করার দ্বিতীয় প্রমাণ হল ওই রেওয়ায়েত যেটিকে ‘মুত্তাকি হিন্দি’ হযরত আয়েশা (র:)এর থেকে বর্ণিত করেছেন। মুত্তাকি হিন্দি বলেন: হযরত মুহম্মাদ (স:)এর কাছে যখন জাফার ইবনে আবি তালিব, যায়েদ ইবনে হারেসা, আর আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহ-এর শাহাদতের খবর পৌঁছালো তখন নবী (স:)এর চেহারায় দুঃখ্যের চিহ্ন দেখা গেল। আমি দরজার ছিদ্র থেকে দেখছিলাম সেই সময় একজন ব্যক্তি এসে বললো: হে আল্লাহর রসূল নারীরা জাফারের জন্য ক্রন্দন করছে। তখন হযরত মুহম্মাদ (স:) বললেন:
(فارجع اليهن فاسكتهن فان ابين فاحث في وجوههن. افواههن. التراب)
অর্থ: ওদের কাছে যাও আর চুপ করতে বলো, আর যদি চুপ না করে তাহলে ওদের মুখে মাটি ফেলো। [34]
এই রেওয়ায়েত কয়েক দিক থেকে আপত্তি জনক।
ক)- (স্বয়ং আল্লাহর রসূল (স:) মৃত বক্তির এবং শহিদদের জন্য ক্রন্দন করতেন এবং অন্যদেরকে ও জাফর ও হামযার উপর ক্রন্দন করতে উৎসাহ দিতেন আর যখন হযরত ওমর নারীদেরকে ক্রন্দন করতে বারণ করলেন তখন হযরত মুহম্মাদ (স:) বললেন: ওদেরকে ছেড়ে দাও, চক্ষু ক্রন্দন অবস্থায় আছে…) (তাআরুয) রেওয়ায়েতের মধ্যে কোনো মিল নেই।[35]
খ)- এই হাদীসের রাভীদের মধ্যে একজন হল ‘মুহম্মাদ ইবনে ইসহাক ইবনে খাইয়ার’ যার সম্পর্কে রেজাল শাস্ত্রের আলেমগণ বিভিন্ন ধরনের মতামত দিয়েছেন। ইবনে নমায়ের বলেন: সে অজ্ঞাত আর বাতিল রেওয়ায়েতগুলোকে বর্ণিত করে।
আহমাদ ইবনে হাম্বাল বলেন: ইবনে ইসহাক হাদীসে প্রতারনা করে আর দুর্বল হাদীসকে সত্য বলে বর্ণিত করে। [36]
৩- ক্রন্দনের হারাম মনে হওয়ার তৃতীয় প্রমাণ হল খুদ হযরত ওমরের আমল। নাসর ইবনে আবি আসিম বলেন: একরাতে হযরত ওমর মদিনার নারীদের কান্নার শব্দ শুনে তাদের উপর হামলা করে তাদেরকে মারধর করে যার ফলে একজন নারীর মাথার চুল খুলে যায়। মানুষজন বললেন: নারীটির চুল দেখা যাচ্ছে, তখন বললেন: ওই নারীর কোনো সম্মান নেই। [37] এই রেওয়ায়েতে কয়েক ভাবে চিন্তা করার দরকার আছে:
১- হযরত ওমর এমন ঘরে হামলা করেন যে ঘরে বেগানা নারীরা ছিল আর ঠিক এমনই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায় ওহিগৃহে হামলা করে।
২- হযরত ওমরের আমল কি হুজ্জত (দলিল)? সে কি মাসুম ছিলেন? কেউ তাঁর মাসুম হওয়ার দাবি করে না। ইমাম গাযালি হযরত আবু বাকার ও ওমরের কথার হুজ্জত হওয়াকে ভিত্তিহীন বলেছেন এবং আরও বলেন: ভিত্তিহীন মূলনীতির মধ্যে দ্বিতীয় মূলনীতি হল সাহাবিগণের কথা হুজ্জত হওয়া। কিছু মানুষ বলেন: সাহাবীদের মতামত পুরোপুরি হুজ্জত, আবার কিছু মানুষ বলেন: সাহাবীদের মতামত যদি অনুমান ভিত্তিক না হয় তাহলে হুজ্জত হবে… ইত্যাদি।
তার পর গাযালী বলেন: এই সমস্ত মতামত বাতিল, কারণ যে ব্যক্তি মাসুম নয় তার মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলক্রমে ভুল হওয়ার সম্ভবনা পাওয়া যায় এই কারণে সেই ব্যক্তির কথা কোনো মতে (দলিল) হুজ্জত হতে পারে না। [38]
৩- ওই স্থানগুলোতে যেখানে খলিফার মতামত হযরত মুহম্মাদ (স:)এর সুন্নত বা কর্মের বিপরীত সেই রেওয়ায়েতের একটি হল যে, হযরত মুহম্মাদ (স:) ওমরকে বললেন: হে ওমর! ওই নারীদেরকে ছেড়ে দাও। [39]
ঠিক একই ভাবে হযরত আয়েশা (র:)এই ধরনের কথা বলেন: আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক ওমরের উপর হয়তো সে ভুলে গিয়েছে নয় সে বর্ণিত করতে ভুল করেছে।
যা কিছু বর্ণিত করা হয়েছে এগুলো সেই প্রমাণের সারাংশ যেগুলো ওহাবীদের দাবীকে বাতিল করার জন্যে বর্ণিত করা হয়েছে। এবং আমরা এতটুকুকেই যথেষ্ট মনে করি কারণ যে ব্যক্তি শ্রবণ করার কর্ন রাখে তার জন্য এতটাই যথেষ্ট।
(الحمد لله رب العالمين)
[1] (ইকতেযাউস সিরাতুল মুস্তাকিম পৃ:২৯৪)
[2] (আল মিলাল ওয়ান নিহাল খ:৪ পৃ:৩২০)
[3] (মাসনদে আহমাদ খ:২ পৃ:৩৬৭)
[4] (সুরা তওবা ২৪)
[5] (আদ দুররুল মানসুর খ:৪ পৃ:১৫৭)
[6] (মাজমুউল ফাতাভী খ:৪ পৃ:১৯৬)
[7] (আল মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া খ:১ পৃ:২৭)
[8] (তারিখুল খামিস খ:১ পৃ:৩২৩)
[9] (আল মাওয়াসিম ওয়াল মারাসিম পৃ:২২)
[10] (বহুসো ফিল মিলাল ওয়ান নেহাল খ:৪ পৃ:৩২৩)
[11] (মাসনাদে আহমাদ খ:২ পৃ:২৪৬)
[12] (সেয়রে আলামুন নাবলা খ:৪ পৃ:৪৮৪)
[13] (আত তারিখুল কাবির ৬৮৭)
[14] (মিযানুল এতেদাল খ:৩ পৃ২৪৩, তেহযিবুল কামাল খ:১২ পৃ:২২৩)
[15] (শাফাউস সেকাম পৃ:১৭৭)
[16] (শাফাউস সেকাম পৃ:১৭৭)
[17] (সনানে নাসাঈ খ:৪ পৃ:২২)
[18] (আল ইসতেআব খ:১ পৃ:৩৭৪)
[19] (আল মাস্তাদরাক আলাস সাহিহায়েন খ:১ পৃ:৩৮১, মুসনাদে আহমাদ খ:২ পৃ:৪৪৪)
[20] (আল মাস্তাদরাক আলাস সাহিহায়েন খ:১ পৃ:৫১৪)
[21] (সেয়রে আলামুল নাবলা খ:৪ পৃ:৩৪, আল কামিল ফিত তারিখ খ:৩ পৃ:২২৭)
[22] (সিরাতুন নবুওয়াত খ:৬ পৃ:৭৫, মাসনাদে আহমাদ খ:৬ পৃ:২৭৪)
[23] (আল মাস্তাদরাক আলাস সাহিহায়েন খ:৩ পৃ:৩৩২, আল মুসনিফ লে ইবনে আবি শায়বা খ:৩ প:৪৫, মুসনাদে আহমাদ খ:৬ পৃ: ২৭৪, আস সিরাতুন নাবাভিয়া খ:৬ পৃ:৭৫ )
[24] (সেয়রে আলামুন নাবলা খ:১৫ পৃ:৪৮০, তারিখে ইবনে আসাকির খ:১০ পৃ:২৭২)
[25] (সেয়রে আলামুন নাবলা খ:১৮ পৃ:৪৬৮, তারিখে বাগদাদ পৃ:৯৩, ওফিয়াতুল আয়ান খ:৩ পৃ:১৪৯)
[26] (আল ইবর খ:৩ পৃ:৮৯, তারিখুল ইসলাম পৃ:১১)
[27] (তাবকাতুশ শাফিয়া খ:৫ পৃ:১৮৪)
[28] (তারিখুল খুলফা ‘সুয়ূতী’ খ:১ পৃ:২৪৫)
[29] (আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া খ:১৩ পৃ:২০৭)
[30] (জামেউল উসুল খ:১১ পৃ:৯৯ হাদীস ন: ৮৫৭, আস সিরাতুন নাবাভিয়া খ:৩ পৃ:৩১০, সুনানে ইবনে মাজা খ:১ পৃ:৫০৬ হাদীস ন: ১৫৮৯)
[31] (আল মাজমু খ:৫ পৃ:৩০৮, সহীহ বুখারী খ:১ পৃ:৪৩২)
[32] (আল মাজমু খ:৫ পৃ:৩০৮)
[33] (বেহারুল আনওয়ার খ:৭৯ পৃ:১০৯)
[34] (কানযুল উম্মাল খ:১৫ পৃ:৭৩২, আল মুসনাফ লেইবনে আবি শায়বা খ:৩ পৃ:২৬৫)
[35] (সনানে নাসায়ী খ:৫ পৃ:৯১, মুসনাদে আহমাদ খ:৩ পৃ:৩৩৩, আল মুস্তাদরাক আলাস সাহিহায়েন খ:১ পৃ:৩৮১)
[36] (তাহযিবুল কামাল খ:১৬ পৃ:৭০)
[37] (কানযুল উম্মাল খ:৫ পৃ:৭৩১, আল মুসনিফ আব্দুর রাজ্জাক খ:৩ পৃ:৫৫৭ হাদীস ৬৬৮২)
[38] (আল মুস্তাশফা খ:১ পৃ:২৬০, দেরাসাতুল ফিকহিয়া ফি মাসায়েলিল খেলাফিয়া পৃ:১৩৮)
[39] (মুসনাদে আহমাদ খ:৩ পৃ:৩২৩)